বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

এরশাদ যা তাই করেছেন! এতে অবাক হবার কিছু নেই


বেশ কিছুদিন যাবত সাবেক রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলে আসছিলেন “বিএনপি নির্বাচনে না গেলে আমিও যাবো না।” কেউ কেউ তার এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করলেও আমি বলেছিলাম এ বক্তব্যের অর্থ হলো বিএনপি না গেলেও আমি নির্বাচনে যাবো। ক’দিন আগে এক টকশোতে জনাব মাহমুদুর রহমান মান্না ও জনাব আসিফ নজরুল এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। জনাব আসিফ নজরুল বলেন “এরশাদ সাহেবের কথা বিশ্বাস করা যায় না তিনি সকালে এক কথা বলেন বিকালে বলেন অন্যটা। একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাধারণ ব্যক্তিত্ব থাকা উচিত” জনাব এরশাদের একটি পুরাতন বক্তব্য তুলে ধরি যদিও ইতোপূর্বের বেশ কটি লেখায় একথা বলেছিলাম। প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকগণ এরশাদ সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন “স্যার নারীদের প্রতি আপনার একটা বিশেষ আকর্ষণ এর কারণ কি?” উত্তরে জনাব এরশাদ বলেন “দেখেন আল্লাহ আমাকে এত সুন্দর একটা চেহারা দিয়েছেন যে, মহিলারা আমাকে দেখলে পাগল হয়ে যায় আমার কি দোষ বলুন।” এই হলো জনাব এরশাদ। তিনি ক’দিন আগে বলেন, “আমি নির্বাচনে গিয়ে শেষ বয়সে জাতীয় বেঈমান হতে চাই না।” গতকাল টিভি’র পর্দায় দেখলাম তিনি বললেন আমি নির্বাচন করবো তবে কোনটা তার আসল কথা? একজনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো “রোজা ভেঙেছেন কয়টা? সে উত্তর করলো একটাও ভাঙিনি। অপরজন বললো সে তো রোজা রাখেইনি ভাঙে কিভাবে? আমরাও কথায় কথায় বলি ঈমানে কই বা আমি বেঈমান হতে চাই না।
প্রকৃতপক্ষে ঈমান থাকলেই বেঈমান হওয়ার প্রশ্ন আসে। তবে জনাব এরশাদকে ধন্যবাদ দেই তিনি মোটামুটি চৌকস। তিনি বুঝতে পেরেছেন বর্তমান সরকার যে ফাঁদ পেতেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ হয় অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন কিংবা কোন কাকতালীয় ঘটনা ব্যতীত তারা ক্ষমতার মসনদ ছাড়ছে না। যেমন বর্তমান সংবিধানে বলা আছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অন্য একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। সংগত কারণেই যদি নির্বাচন না হয় তবে পরবর্তী নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই ক্ষমতায় থাকবেন। অন্যদিকে যুবরাজ সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন “আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় যাবে।” জয় খুলনায় এক অনুষ্ঠানে বলেন একটি সরকার যদি ১০/১৫ বছর ক্ষমতায় না থাকে তবে দেশের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। আমরা যদি সরকারের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারি তবে বাংলাদেশ হতে পারে মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুর।” অন্যদিকে আমাদের দেশে বসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ভারতে গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, দু’দেশই চায় অর্থাৎ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন “বাংলাদেশ প্রশ্নে আমেরিকা ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়”। জাসদ নেতা মঈনুদ্দিন খান বাদল ও হাসানুল হক ইনুর কথাবার্তা সব মিলে মনে হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতাতো ছাড়বেই না অন্য কাউকে ক্ষমতায় আসতেও দিবে না। তাই জনাব হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ তার দলীয় কর্মীদেরকে এতদিন যে সুযোগ-সুবিধার আশ্বাস দিয়ে আসছিলেন তা পূরণ করতে হলে ক্ষমতায়  যেতে হবে। ক্ষমতায় যেতে না পারলে কর্মীদের সুযোগ দেয়া যাবে না আর তা হবে কর্মীদের সাথে বেঈমানী। সঙ্গত কারণেই তিনি বলেছেন, ‘আমি শেষ বয়সে জাতীয় বেঈমান হয়ে মরতে চাই না’। এর অর্থ হলো যেভাবেই হোক ক্ষমতায় গিয়ে কর্মীদের মনের আশা পূরণ করবো। প্রশ্ন হচ্ছে, জনাব এরশাদ সাহেবের এ তত্ত্বকথা যদি আমরা বুঝতে না পারি সেটা কি এরশাদের দোষ? না কি আমাদের অযোগ্যতা? তার একান্ত আস্থাভাজন জনাব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এ মঞ্জু সম্পর্কে জনাব এরশাদ একবার মন্তব্য করেছিলেন, ‘মঞ্জুর প্রতি আমার একটা দুর্বলতা আছে’।  অর্থাৎ মঞ্জুকে তিনি ভালবাসেন। ১৯ নবেম্বর পত্রিকায় দেখা গেলো সেই মঞ্জুই বলেছেন, ‘হি ইজ দ্যা রিয়েল পলিটিশিয়ান।’ এরশাদ সম্পর্কে এমন মন্তব্য করে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আরও বলেন, তিনি নিজে রাজনীতি করেন এবং অন্যকে রাজনীতি করান। বিগত দিনে তিনি দুই নেত্রীকে নিয়ে অনেক খেলা খেলেছেন।’ এবার আসি ১৯ নবেম্বর প্রথম আলোর কার্টুন প্রসঙ্গে। প্রথম আলো একটি বাস্তব কার্টুন ছেপেছে, তা হলো একটি বলদ গরুর গলায় মালা পরানো আর রশি ধরে গরুটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ওই গরুটির দেহের পুরো অংশটা গরু কেবল মুখটা ছিল জনাব এরশাদ সাহেবের। এমন একটি দুর্যোগ মুহূর্তে প্রথম আলোর এ কার্টুন সত্যিই সাহসিকতার পরিচয় বহন করে। বিএনপি নেতা সময়ের সাহসী সন্তান জনাব রুহুল কবির রিজভী আহমদ বরাবরই অত্যন্ত মোলায়েম ভাষায় কথা বলেন। তিনি বলেছেন, ‘এরশাদ সাহেবের দ্বৈতনীতি’ এতো সহজ কথায় কি আর এরশাদ সাহেবের গায়ে লাগে? টিভির এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মুন্নী সাহা জিজ্ঞেস করেছিল, জনাব এরশাদকে ‘আপনার একটা বদনাম আছে-আপনি নারীদের প্রতি আসক্ত’। উত্তরে জনাব এরশাদ বলেন, ‘বিদিশার কথা বলছো, সেই তো আমাকে আগে চিঠি দিয়েছে, আমি দেখাতে পারবো’। এই হলো আমাদের এক সময়ের প্রধান সেনাপতি পরে রাষ্ট্রপতি এবং বর্তমানে একটি দলের চেয়ারম্যান রিয়েল পলিটিশিয়ান নামে খ্যাত জনাব এরশাদ সাহেবের চরিত্র। শেষ বয়সে জাতীয় বেঈমান না হয়ে হলেন গরুমার্কা কার্টুন, তাও আবার বলদ গরু। এর চাইতে গরুমার্কা ঢেউটিনের মূল্য বেশি নয় কি? অবশ্য এরশাদ সাহেবেরও প্রকৃতপক্ষে কিছু করার নেই। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যখন এ সকাল বিকাল তত্ত্ব প্রয়োগ করলেন অর্থাৎ সকালে এক কথা আর বিকালে এক কথা তখন কর্মীরা বিদ্রোহ করলে তিনি বলেন, ‘আমি যা বুঝি তোমরা তা বুঝ না।’ অর্থাৎ তার কানের সাথে একটা রশি লাগানো আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী নাটকের জন্য যতটুকু সরকারের সমালোচনা করতে এরশাদ সাহেবকে বলেছেন, তার একটু বেশি বললেই ওই রশি ধরে টান মারেন, তখনই এরশাদ সাহেব আবার সকালের কথাকে বিকালে অন্য রূপ দান করেন। বর্তমানে তার কোনো উপায় নেই, যদি নির্বাচনে বলদ গরুর ভূমিকায় না থাকেন তবে পুরাতন মামলাগুলো চাঙ্গা করে আবার লাল বিল্ডিংয়ে যেতে হতে পরে।
এ ভয়েই প্রকৃত কথা হলো শেষ বয়সে জেলে যেতে চাই না। এ কথাটা বলেছেন, শেষ বয়সে জাতীয় বেঈমান হতে চাই না। একথায় আরও বুঝা যায়, তাহলে যৌবন বয়সে বেঈমান ছিলেন? যৌবন বয়সে যারা ভোট কেটে রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারেন, শেষ বয়সেও তারা প্রহসনের নির্বাচনে যেতে পারেন, এতে অবাক হবার কিছু নেই। অতএব বলা যায়, এরশাদ যা তাই করেছেন, এতেও অবাক হবার কিছু নেই।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads