শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৩

জনগণ প্রহসনের নির্বাচন চায় না


ক্ষমতা অর্জন কোনো মন্দ বিষয় নয়। তবে ক্ষমতার ভালো-মন্দ দু’টি দিকই রয়েছে। ক্ষমতা মানুষের কল্যাণ সাধন করতে পারে, আবার দুঃখের মাত্রা বাড়াতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করে ক্ষমতাবানদের জীবন দৃষ্টি ও আচরণের ওপর। বর্তমান সময়ে আমরা ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্রটাই বেশি লক্ষ্য করছি। একথা একেবারে গ্রামীণ সমাজ থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজ এবং রাষ্ট্রীক পরিম-ল থেকে শুরু করে বৈশ্বিক পরিম-লের ক্ষেত্রেও সমান সত্যি। যে স্তরে যারাই ক্ষমতাবান থাকেন তাদের অর্থবল, জনবল যেমন থাকে; তেমনি নিজেদের সুরক্ষার জন্য তারা নিত্যনতুন আইন বানান, আইনের  অপব্যাখ্যা দেন, আবার আইন অমান্যও  করেন। ক্ষমতার সদ্ব্যবহারের বদলে এরা ক্ষমতাদর্পী  হয়ে ওঠেন। আমরা জানি দর্প বা অহংকার পতনের মূল। কিন্তু পতনের আগ পর্যন্ত ক্ষমতাদর্পী কর্তৃশময বাদীরা তা বুঝতে চান না। যেমন বুঝতে চাননি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতাদর্পী শাসকরা। তবে পতনের পর সোভিয়েত পলিটব্যুরোর এক সদস্য অনুতপ্ত হয়ে স্বীকার করেছেন যে, নেতৃত্বের দায়িত্ব পালনের বদলে কর্তৃত্বের ছড়ি ঘোরানোর কারণেই আমাদের পতন হয়েছে। এটাই ইতিহাসের সত্য। ক্ষমতার দর্প দেখিয়ে কিংবা কৌশল করে আখেরে টিকে থাকা যায় না। টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন ন্যায় ও জনকল্যাণের চেতনা এবং সাধনা।
বর্তমান সময়ে আমরা বাংলাদেশেও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ক্ষমতার দর্প ও নানা চাতুর্য লক্ষ্য করছি। ক্ষমতার স্বার্থে নিত্যনতুন আইন ও আইনের  নিজস্ব ব্যাখ্যা যে জনকল্যাণ ও জনগণের জন্য কোনো কাক্সিক্ষত বিষয় নয়, তা ক্ষমতাসীনরা বুঝতে চান না। এতে যে জনমনে ক্ষোভের মাত্রা বাড়ে এবং জনসমর্থন হ্রাস পায় তা ক্ষমতাসীনরা উপলব্ধি করতে পারেন কিনা জানি না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন। দেশে-বিদেশে এ নিয়ে আলোচনা এবং পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি অব্যাহত রয়েছে। ভারতের প্রভাবশালী টাইমস অব ইন্ডিয়া গ্রুপের বাংলা দৈনিক ‘এই সময়’-এর সম্পাদকীয়তেও লেখা হয়েছে : বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী জোট (১৮ দল) যদি নির্বাচনে না থাকে, তাহলে সেই নির্বাচন হবে প্রহসনের নামান্তর। বিপুল সংখ্যক ভোটারকে সরিয়ে রেখে ভোট করে যে সরকার গঠিত হবে তা যে জনতার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না তা ভালো করেই বোঝেন শেখ হাসিনা। তাই তাকে কোনো একটা রফায় পৌঁছতেই হবে।
রফায় পৌঁছতে হলে তো সংলাপের প্রয়োজন। ক্ষমতায় থাকার কারণে একটি সফল সংলাপের জন্য যথাযথ ভূমিকা পালনের দায়টা সরকারের ওপরই বর্তায়। কিন্তু এ ব্যাপারে শুধু কথামালা ছাড়া কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সরকার এখনো সমর্থ হয়নি। তাই জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, সরকার কি প্রধান বিরোধী জোটকে বাদ দিয়ে একটি সাজানো নির্বাচন করতে চায়? এমন নির্বাচন তো গণতান্ত্রিক নির্বাচন হবে না। তাই জনগণও এই নির্বাচনকে মেনে নেবে না। তা হলে আমাদের জন্য কেমন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে? এই বিষয়টি তো শাসক গোষ্ঠীর না বোঝার কথা নয়। তা হলে গণআকাক্সক্ষার অনুকূলে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা কোথায়? সংকীর্ণ স্বার্থ ভুলে জাতীয় স্বার্থে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোনো সিদ্ধান্ত নেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads