শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৩

মিসরে গণহত্যা এবং গভীর রাজনৈতিক সংকট


ক্রিকেট খেলায় সেঞ্চুরি করার মধ্য দিয়ে কৃতিত্ব রয়েছে। ভারতের শচীন টেন্ডুলকার, পাকিস্তানের সাঈদ আনোয়ার ও শহিদ আফ্রিদি, শ্রীলংকার জয়সুরিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারার মতো বিশ্বসেরা খেলোয়াড়রা ডাবল এমনকি ট্রিপল সেঞ্চুরি পর্যন্ত করেছেন। পাঠকরা তাই বলে ভাববেন না, ক্রিকেটের সেঞ্চুরি নিয়ে নিবন্ধ লেখার জন্য বসেছি। সেঞ্চুরির কথাটা আসলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী মিসরের সেনাবাহিনী মনে করিয়ে দিয়েছে। গত ৩ জুলাই সেদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর গণহত্যার ভয়ংকর পথে পা বাড়িয়ে সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করেছে মিসরের সেনাবাহিনী। গত ১৪ আগস্ট সকাল থেকে রাজধানী কায়রোর বিভিন্ন এলাকায় মুরসি সমর্থকদের ওপর সেনাবাহিনী সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়েছে। এর ফলে প্রাণ হারিয়েছেন অস্যংখ্য মানুষ, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। সেনাবাহিনী এমনকি অস্থায়ী সব হাসপাতালও উৎখাত করেছে। চিকিৎসারত ডাক্তারদের পর্যন্ত বন্দুকের মুখে বের করে দিয়েছে তারা। গুলীবিদ্ধ নিহতদের সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও পরদিন পর্যন্ত সরকারিভাবেই সাড়ে পাঁচশজনের কথা স্বীকার করা হয়েছে। অন্যদিকে মুরসির দল ইসলামী ব্রাদারহুড দাবি করেছে, এই সংখ্যা দু’ হাজারের বেশি। সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির প্রায় সরাসরি নেতৃত্বে গঠিত অস্থায়ী সরকার সারা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। রাজধানীসহ দশটি প্রদেশে কারফিউও জারি করা হয়েছে। এসবের মাধ্যমে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে সব ধরনের মিছিল ও সভা-সমাবেশ। ২৫টি প্রদেশের মধ্যে ১৯টিতেই সেনাবাহিনীর জেনারেলদের গবর্নর পদে নিযুক্তি দেয়া হয়েছে। সরকার সেই সাথে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলী চালানোর ঘোষণাও প্রচার করেছে।
স্মরণ করা দরকার, প্রায় ৮৪ বছর ধরে নিষিদ্ধ অবস্থায় থাকা ইসলামী ব্রাদারহুডের প্রার্থী হিসেবে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসিকে মেয়াদের এক বছরও পূর্ণ করতে দেয়া হয়নি। এর আগে প্রায় তিন দশকের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি। প্রচ- গণআন্দোলনের মুখে তার পতন ঘটে ১০ ফেব্রুয়ারি। হোসনি মোবারক ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৮১ সালের ১৪ অক্টোবর, প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত নিহত হওয়ার আটদিন পর। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা হিসেবে মোবারক চারবার প্রেসিডেন্ট পদে ‘নির্বাচিত’ হয়েছিলেন। সেগুলো এমন নির্বাচন ছিল যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীরা পাত্তাই্ পেতেন না। শেষবার ২০০৫ সালে নির্বাচনে মোবারক কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকেই দাঁড়াতে দেননি। সময়ে সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও মিসর আসলে ছিল অঘোষিত সামরিক শাসনের অধীনে। এরও শুরু হয়েছিল ১৯৫২ সালে রাজা ফারুককে উৎখাত করার পর থেকে। প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন কর্নেল গামাল আবদেল নাসের। নাসেরের আমলে ১৯৫৬ সালে সুয়েজ খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইসরাইলের সঙ্গে মিসরের যুদ্ধ হয়েছিল। সে যুদ্ধে গোটা বিশ্ব দাঁড়িয়েছিল মিসরের পক্ষে। প্রেসিডেন্ট নাসের সে সময় সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। অমন অবস্থান সম্মানজনক হলেও মিসরকে তিনি গণতন্ত্রের পথে এগোতে দেননি। ১৯৭০ সালে নাসেরের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় এসেছিলেন আরেক জেনারেল আনোয়ার সাদাত। সেনাবাহিনীর এক সদস্যের গুলীতে তিনি মারা যাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন হোসনি মোবারক। তিনি ছিলেন বিমান বাহিনীর প্রধান। এভাবেই মিসরে বছরের পর বছর ধরে চলেছে সামরিক শাসন। হোসনি মোবারকের ৩০ বছরই মিসর ছিল জরুরি অবস্থার অধীনে।
মিসরে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে হোসনি মোবারেকের পতনের পর, ২০১২ সালের ৩০ জুন। প্রথম সে নির্বাচনে ৫১.২ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন মুরসি। তিনি ছিলেন আল-ইখওয়ান আল-মুসলিমুন বা ইসলামী ব্রাদারহুডের প্রার্থী। ১৯২৮ সালে ইসলামী ব্রাদারহুড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও রাজনীতিক হাসান আল বান্না। ১৯৪৮ সালে তাকে হত্যা করা হয়। একযোগে ইসলামী ব্রাদারহুডের ওপর নেমে আসে সরকারের প্রচ- দমন-নির্যাতন। ১৯৫৪ সালে নাসেরকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ইসলামী ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর চলতে থাকে প্রচ- নির্যাতন। সুদীর্ঘ এ সময়কালে মুসলিম ব্রাদারহুডের কয়েকজন নেতাকে এমনকি ফাঁসিতেও প্রাণ হারাতে হয়েছে। কিন্তু এত প্রতিকূলতার পরও মুসলিম ব্রাদারহুড শুধু টিকেই থাকেনি, গোপন তৎপরতার মাধ্যমে মিসরের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের অবস্থানেও পৌঁছে গিয়েছিল। এজন্যই মোহাম্মদ মুরসি ৫১.২ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পেরেছিলেন। কিন্তু নির্বাচিত হলেও এবং দেশের জন্য একটি সংবিধান রচনা ও গণভোটের মাধ্যমে সে সংবিধানকে পাস করিয়ে নিলেও রাষ্ট্রীয় কোনো একটি ক্ষেত্রেই মোহাম্মদ মুরসিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে বা পদক্ষেপ নিতে দেয়া হয়নি। মুরসি ও তার সমর্থকরা প্রকাশ্যেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। বাজেট ও ব্যয়সহ সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না বলে গত বছরের আগস্টে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করা সত্ত্বেও রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট মুরসি সেনাবাহিনীর কোনো সহযোগিতা পাননি। পাশাপাশি ছিল স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের সাজিয়ে যাওয়া বিচার বিভাগ, পুলিশ ও প্রশাসন। অর্থাৎ সবদিক থেকেই প্রেসিডেন্ট মুরসি প্রচ- প্রতিকূল এক অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলেন, যার কারণে সদিচ্ছা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও তার পক্ষে জনকল্যাণমূলক কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ঘটনাপ্রবাহে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন এল বারাদেইয়ের মতো পাশ্চাত্যের ক্রীড়নক রাজনীতিকরা। ৩ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে প্রমাণিত হয়েছে, মুরসি তথা মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধাচরণের মধ্য দিয়ে মিসরে প্রকৃতপক্ষে ইসলামী শক্তির বিরুদ্ধেই অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে সত্য, কিন্তু এ তথ্যও স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, এই এল বারাদেই-ই প্রধান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক পরিদর্শক হিসেবে সাদ্দাম হোসেনের ইরাকে ব্যাপক মানববিধ্বংসী সমরাস্ত্র রয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার সে মিথ্যাচারকে অবলম্বন করেই যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালিয়েছিল। সেই থেকে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে একের পর এক রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন ঘটেছে। এই প্রক্রিয়ায় মিসরেও এল বারাদেইকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু মুসলিম ব্রাদারহুডের জনপ্রিয়তার কাছে চুপসে যেতে হয়েছে এল বারাদেইকে। তিনি এবং তার ইসলামবিরোধী বিদেশী সমর্থকরা যে নীরবে বসে থাকেনি তারই প্রমাণ পাওয়া গেছে মুরসি বিরোধী অভ্যুত্থানে।
তারও আগে মূলত সেনাবাহিনীর অসহযোগিতাজনিত অক্ষমতাকে মোহাম্মদ মুরসি ও ইসলামী ব্রাদারহুডের অযোগ্যতা হিসেবে প্রচার করেছে ক্ষমতালোভী চক্র। এই গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন মোহাম্মদ এল বারাদেইয়ের মতো পাশ্চাত্যের ক্রীড়নক রাজনীতিকরা। তারা সম্মিলিতভাবে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুরসি বিরোধী বিক্ষোভ উস্কে দিয়েছে। হোসনি মোবারকের পতনের পর রাতারাতি কোনো সুফল ভোগ করতে না পারায় তরুণরাও নতুন করে রাজপথে নেমে এসেছে। তারা লক্ষ্যই করেনি যে, প্রেসিডেন্ট মুরসির কথিত ব্যর্থতা বা অযোগ্যতার পেছনে দায়ী আসলে ছিল সেনাবাহিনী। বিরামহীন উস্কানিতে বিক্ষুব্ধ তরুণদের পাশাপাশি মুসলিম ব্রাদারহুড বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও রাজপথে আন্দোলন করেছে। সে অবস্থার সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনী প্রসিডেন্ট মুরসিকে হঠাৎ ৩ জুলাই পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠন এবং সংবিধান সংশোধন করাসহ বেশকিছু শর্ত পূরণের দাবি জানিয়েছিল সেনাবাহিনী। ওদিকে মুরসির পদত্যাগের দাবিতে রাজধানী কায়রোর তাহরির স্কয়ারে শুরু হয়েছিল গণসমাবেশ। কিন্তু প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি সেনাবাহিনীর দাবি ও আল্টিমেটাম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে মুরসি ঘোষণা করেছিলেন, জীবন দিতে হলেও অবৈধ কোনো শক্তির অশুভ ইচ্ছার কাছে তিনি নতি স্বীকার করবেন না। তিনি বরং জনগণের ইচ্ছা ও আশা-আকাক্সক্ষা এবং দেশের সংবিধানকে সমুন্নত রাখবেন। প্রেসিডেন্ট মুরসির এই অস্বীকৃতি ও বলিষ্ঠ অবস্থান সেনাবাহিনীকে ক্ষুব্ধ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইসলামবিরোধী পাশ্চাত্যের ক্রীড়নক হিসেবে চিহ্নিত সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ এল বারাদেইসহ কিছু রাজনৈতিক নেতা ও দলের সমর্থন নিয়ে সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে ৪ জুলাই। সেদিন থেকেই কায়রোর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্থানে অবস্থান নিয়েছিলেন মুরসির সমর্থক লাখ লাখ নারী-পুরুষ। এসব স্থানে দিনের পর দিন অবস্থান করেছেন তারা। বন্দি প্রেসিডেন্ট মুরসির মুক্তি ও পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন তারা। তাদের ওপরই গত বুধবার দিনভর সশস্ত্র অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। তুরস্ক একে গণহত্যা বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি অস্ত্রের মুখে সমাবেশ প- করতে এবং মুরসি সমর্থকদের রাজধানী কায়রো থেকে তাড়িয়ে দিতে পারলেও সেনাবাহিনীর পক্ষে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে না বলেই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মন্তব্য করেছেন। কারণ, মোহাম্মদ মুরসি শুধু গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্টই নন, এমন এক দল ইসলামী ব্রাদারহুডের প্রতিনিধিওÑ যে দলটি নিষেধাজ্ঞা এবং নিষ্ঠুর দমন-নির্যাতনের মধ্যেও দীর্ঘ ৮৪ বছর ধরে বিকশিত তো হয়েছেই, জনপ্রিয়তারও শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল। অমন একটি দলকে কেবলই বন্দুকের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে রাখা কিংবা নির্মূল করা সম্ভব হতে পারে না। পরিবর্তনের হাওয়াও এরই মধ্যে বইতে শুরু করেছে। আল-আজহার ইউনিভার্সিটির গ্র্যান্ড মুফতি তথা মিসরের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা সরকারের প্রতি তার সমর্থন প্রত্যাহার করার পাশাপাশি গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। অন্তরালে যে উদ্দেশ্যই থেকে থাকুক না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলোও নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিসরের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে সেনা শাসনে অতীষ্ঠ ও পিছিয়ে পড়া মিসরের সাধারণ মানুষও নতুন করে সেনাবাহিনীর অধীনস্থ হতে সম্মত হবে না। সবাই প্রেসিডেন্ট পদে মোহাম্মদ মুরসির পুনর্বহাল হয়তো চাইবে না কিন্তু সংবিধান, গণতন্ত্র এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠবে। সে ইঙ্গিত এর মধ্যে পাওয়াও যাচ্ছে। পাশ্চাত্যের দালাল হিসেবে চিহ্নিত মোহাম্মদ এল বারাদেই অভিযান শুরুর দিনটিতেই ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ফলেও পরিষ্কার হয়েছে, সেনাবাহিনী নতুন করে এক গভীর সংকটের মুখেই পড়েছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা মোটেও সহজ হবে না। সেনাবাহিনীকে বরং জনগণের ইচ্ছার কাছে নতিস্বীকার করতে হবে। যতো রোডম্যাপই ঘোষণা করা হোক না কেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যদিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকরাও বলেছেন, নতুন করে রক্তক্ষয় ও প্রাণহানি ঘটানোর পরিবর্তে গণগন্ত্রের পথে পা বাড়ালেই সেনাবাহিনী যেমন অশুভ পরিণতি এড়াতে পারবে, মিসরও তেমনি পারবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে। ওদিকে ক্ষমতাচ্যুত হলেও প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির পেছনে রয়েছে এমন এক রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুড, ২০১১ সালে হোসনি মোবারকের পতন পর্যন্ত যে দলটিকে নিষিদ্ধ অবস্থায় কাটাতে হয়েছিল। সুবিধাবাদী ও পাশ্চাত্যের ক্রীড়নক রাজনীতিকদের সহযোগিতা নিয়ে সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও তার দলই আবারও ক্ষমতায় আসতে পারেÑ এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাছাড়া মুসলিম ব্রাদারহুড এই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেশজুড়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলার যে ঘোষণা দিয়েছে তাকেও বিবেচনায় রাখা দরকার। সব মিলিয়ে বলা যায়, মিসর আসলে নতুন করে এক গভীর সংকটের মধ্যেই পড়েছে। শান্তি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি মিসরকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে চাইলে সেনাবাহিনীকে অবশ্যই ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে। আবারও সুযোগ দিতে হবে গণতন্ত্রকে, যার সূচনা করতে হলে হয় মোহাম্মদ মুরসিকে প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্বহাল করতে হবে নয় তো আয়োজন করতে হবে নতুন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads