বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৩

মেয়াদ শেষে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই


বৃ
 গণতান্ত্রিক পরিবেশে ও সাংবিধানিক নিয়মে জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। পাঁচ বছর পার হলে এই সরকারের আর মতায় থাকা বেমানান। এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে মনে হবে, নির্বাচন ও জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা চলছে। আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ভাষাতে আগামী নির্বাচন নিয়ে মতাসীনদের দুরভিসন্ধি ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই মতায় থাকবেন। নির্বাচন হবে না কেন? আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই বা সময় শেষে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া আবার মতায় থাকবেন কেনÑ এ প্রশ্ন জনগণের। মেয়াদ পূর্ণ হলে অতিরিক্ত এক দিনও মতায় থাকা সমীচীন নয় বলে জনগণ মনে করে। কার্যত মোহাম্মদ নাসিমের কথায় সরকারের এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কথাই প্রকাশ পেয়েছে। তা ছাড়া সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভাষাতেও জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলার দুরভিসন্ধি ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে খবর আছে আগামীতে আওয়ামী লীগ আবার মতায় যাবে। এটা অনভিজ্ঞ, অযৌক্তিক, অবিবেচনাপ্রসূত মন্তব্য। আগামীতে কে বা কোন দল মতায় যাবে এটি নির্ধারণ করবে জনগণ ভোটের মাধ্যমে। এ খবর আগেই কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে থাকার কথা নয় এবং থাকার প্রশ্নই আসে না। এ খবর জয় আগে কিভাবে পেলেন এটি নিয়ে জনগণ, রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বত্রই তোলপাড় চলছে। তা না করে সরকার যদি একতরফা কোনো নির্বাচনের পথে হাঁটে অথবা পঞ্চদশ সংশোধনীর সুযোগ নিয়ে মতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে, তাহলে তা মতাসীনদের জন্য বুমেরাং হতে বাধ্য। এ ধরনের কোনো দুরভিসন্ধি ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য জনগণ প্রস্তুত। এর জন্য কোনো রাজনৈতিক শক্তি বা আন্দোলনের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কেননা, বর্তমানে গণমাধ্যম ও জনগণের সম্মিলিত শক্তি যেকোনো রাজনৈতিক শক্তির চেয়ে আরো অধিক শক্তিশালী। সিটি করপোরেশন নির্বাচন তার উদাহরণ। এখানে জনগণ ও গণমাধ্যমের শক্তিই পালন করেছে নিয়ামকের ভূমিকা। এই দুই শক্তি ব্যর্থ করে দিয়েছে নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর সব মেশিনারি। সুতরাং ভোটারবিহীন একতরফা কোনো নির্বাচন বা সংবিধানের দোহাই দিয়ে মতা কুগিত করে রাখার দিন শেষÑ এই অনিবার্য বাস্তবতা মতাসীন দল যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবে, তত তাদের সর্বনাশের সম্ভাবনা কমে আসবে। লণীয়, গত কিছুদিন আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণ যাকে ভোট দিয়েছে তিনিই নির্বাচিত হয়েছেন। এটিই গণতান্ত্রিক নিয়ম। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে এ নিয়মের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অপরিহার্য। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, রাষ্ট্রের ভিত্তিও জনগণ; জনগণ যাকে খুশি ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। তাদের রায় নিয়ে আগেভাগেই মন্তব্য করা সমীচীন নয়। যারা রাজনীতি করেন বা করার ইচ্ছা রাখেনÑ এই নির্মোহ সত্যটি তাদের স্মরণে থাকা অনস্বীকার্য। প্রধানমন্ত্রী কথায় কথায় যে অসাংবিধানিক সরকারের হুমকি দেন বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় তার সম্ভাবনা কতটুকু? এক- এগারোর নায়কদের বর্তমান অবস্থা সবার জানা। এক-এগারোর প্রধান নায়ক মইন উদ্দিন আমেরিকায় এক ধরনের নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। ব্রিগেডিয়ার বারী আমেরিকার খাদ্যের দোকানে চাকরি করছেন এবং অন্যতম নায়ক মাসুদউদ্দীন বর্তমান সরকারের দয়াদােিণ্য অস্ট্রেলিয়ায় জীবনযাপন করছেন। তাদের এই দুরবস্থা দেখে মনে তো হয় না কোনো অসাংবাধিনিক শক্তি রাজনীতিতে হস্তপে করবে। তবে অনিবার্য বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ বর্তমানে ইতিহাসের সবচেয়ে সঙ্কটময় সময় অতিক্রম করছে। শুধু মতার লড়াই নয়, এই সঙ্কটের তাৎপর্য আরো গভীরে প্রথিত। বাংলাদেশ একটি উদার গণতান্ত্রিক মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিকÑ এটি যারা চায় না, তারা বাংলাদেশকে নিয়ে বিপজ্জনক খেলা খেলছে। এ খেলার শেষ কোথায়, তা কেউ জানে না; কোথাও কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হচ্ছে না। বাংলাদেশকে কুগিত করা এবং বাংলাদেশে বিদেশী শক্তির কর্তৃত্ব কায়েম করাই এ খেলার ল্য-উদ্দেশ্য হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন। বর্তমানে দেশে যে সঙ্কট চলছে তা গত তিন বছর আগেও বাংলাদেশে ছিল না। সমস্যাগুলো কৌশলে সৃষ্টি করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের মধ্য দিয়ে মূলত সঙ্কটের আবির্ভাব। সরকার একতরফা আদালতের ওপর দায় চাপিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে। উচ্চ আদালত বাংলাদেশে বর্তমানে যে অবস্থা তাতে আরো দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মত দিয়েছেন। কিন্তু সরকার আদালতের মতকে কোনো গুরুত্ব দেয়নি; আর তাতেই সঙ্কটের সূত্রপাত, এই সঙ্কট এখন প্রান্তসীমায় এসে পৌঁছেছে। তাতে দেশ এক অস্থির, অশান্ত ও বেদনাবহ সময় অতিত্রম করছে। মানুষ এ থেকে পরিত্রাণ পায়। সঙ্কট উত্তরণের প্রধান উপায় হলো সঙ্কটের অস্তিত্ব স্বীকার করা, সামনের নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি একটা ভয়াবহ সঙ্কটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। এই সঙ্কট সঙ্ঘাতে রূপ নিচ্ছে। ঘটছে অনাকাক্সিত ঘটনা। ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনাই সমাধানের েেত্র বুদ্ধিবৃত্তিকতার ছাপ পরিলতি হচ্ছে না। প্রত্যেকটি ঘটনাতেই অযাচিতভাবে শক্তি প্রয়োগ করার প্রবণতা ল করা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করানো হচ্ছে; যা কোনোভাবেই কাক্সিত ও কাম্য নয়। অপরিণামদর্শী রাজনীতির কারণে জাতি আজ সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত। এই বিভক্তি ধীরে ধীরে চূড়ান্তপর্যায়ের দিকে যাচ্ছে, সূত্রপাত হচ্ছে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের; ঘরে ঘরে ভাইয়ে ভাইয়ে সৃষ্টি হচ্ছে বিরোধ, একে অপরের বাড়িঘর ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। ধ্বংস করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। বর্তমান সরকারের সামনে দুটি অপশন আছে। প্রথমটি হলো, জনদাবি মেনে নিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। অন্যটি পঞ্চদশ সংশোধনীর সুযোগ নিয়ে নির্বাচন ছাড়াই মতার মসনদ দখল করে রাখা। দ্বিতীয় পথটি অনুসরণ করলে দেশ অনিবার্য বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। সেই সাথে মতাসীন দলকেও কঠিন মাশুল দিতে হতে পারে। এ ব্যাপারে ইতিহাস থেকে শিা নিলে দেশ ও মতাসীন দল অনিবার্য তির হাত থেকে বেঁচে যাবেÑ এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ইতিহাসের শিা হলো এই যে, ইতিহাস থেকে কেউ শিা নেয় না। 


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads