শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৩

আইনের শৃঙ্খলা বেআইনি প্রবেশ


সময় এসেছে আইনিপ্রক্রিয়াকে ঢেলে সাজিয়ে যুগোপযোগী করার। আইনের বুলি আওড়ে আর আইনের লেবাস পরে যারা তলেতলে অপরাধ করে চলেছে, তাদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া খুবই কঠিন। প্রচলিত কয়েকটি পদ্ধতি ও রীতি বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থাকে ধোঁয়াটে করে তুলেছে। যে কাউকে যখন-তখন সন্দেহ করে গ্রেফতার, রিমান্ডে নেয়, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন-মৃত্যু, ক্রসফায়ার, অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া নিরাপত্তাবাহিনীকে পরাক্রমশালী করে তুলেছে। তাদের অনৈতিক ও অমানবিক কর্মকাণ্ড জনগণ মানতে বাধ্য এবং মনগড়া সুবিধাপ্রসূত তথ্য গুনতে বাধ্য। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলে নিজেকে চাঙ্গা করে তুলি; কিন্তু এতে সনাতন অনুপযোগী আইনি ধারা পরিবর্তন হয়নি, সুরক্ষিত মানবাধিকারসম্পন্ন সমৃদ্ধিশালী দেশগুলোর মতো নিয়ন্ত্রিত কার্যকর আইনি ধারা যুক্ত হয়নি। এরা হাতে প্রযুক্তি পেয়ে এর অপব্যবহার করছে। এর আগে আমরা ভিকারুননিসার পরিমলসহ কয়েকজন শিক্ষকের অনৈতিক আচরণের কথা জেনেছি; কিন্তু তাদের বিচার উল্লেখযোগ্য হারে হয়নি; তাহলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত না। আতঙ্কের বিষয়টি হচ্ছে মেয়েশিশু ও তরুণীদের চরিত্রের পবিত্রতা বজায়ে রেখে, পরিচ্ছন্ন শিক্ষাঙ্গনে অধ্যবসায় করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এক দিকে শিক্ষকদের অনৈতিক হাতছানি আর প্রযুক্তির বন্দিশালা, ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থীদের অপ্রত্যাশিত অবস্থায় অনিচ্ছায়ই যেতে বাধ্য করছে। কোনো ধর্মেই শরীর ও মনের যথেচ্ছ ব্যবহার সমর্থন করে না। শিক্ষক উপাধি ধারণ করে যে মান্নান শতাধিক তরুণী-কিশোরীর শ্লীলতাহানি করে তাদের ভবিষ্যৎ কলঙ্কময় করেছে, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত; যাতে দেশবাসী প্রশান্তি পায়। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তৃতার অংশবিশেষ মনে পড়ে যায়, তিনি সব সময় এটিই বোঝাতে চান যে, ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে নারী উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে, নারীরা প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সব অংশীদারিত্বের থেকে গুটিয়ে চার দেয়ালে বন্দী হয়ে থাকতে হবে। বাংলাদেশ প্রগতিশীল না হলেও পৃথিবীর গতি থেমে নেই। যেখানে মুসলিমপ্রধান দেশের নারীরা আজ শালীন পোশাক পরে প্লেন চালান, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেন, প্রশাসনিক সব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন; সেখানে আর কোনো অপশক্তিই নারীকল্যাণে বাদ সাধতে পারবে না। সে কারণেই এ হাস্যকর শিশুসুলভ উক্তিটি তিনি কেন করেন, বোধগম্য নয়। বাংলাদেশের নারীরা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সচেতন। এটি সময়ের দাবি বললেও চলে; কিন্তু বাংলাদেশের আইন যদি নারীদের প্রতি আরো সচেতন ও সংবেদনশীল হতো, তবে শিশু ও নারী নির্যাতনের মাত্রা অনেক কমে যেত। তবে ইসলামি অনুশাসন মেনে চলাদের বিরুদ্ধে যেভাবে কোমর বেঁধে সরকার লেগেছে, সাধারণ জনগণ তার যথাযর্থতা খুঁজে পান না। এরা বলছেন, হেফাজতের কর্মী-সমর্থক অপকর্মের সাথে জড়িত। এখন আবার ইসলামি পোশাকটিকেও বিতর্কিত করার জন্য মিল্কির হত্যাকারী তারেক পাজামা-পাঞ্জাবি পরে টুপি মাথায় দিয়ে প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ডটি চালিয়েছে। সিসি ক্যামেরার বদৌলতে মিল্কি হত্যার দায়ভার থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা রক্ষা পেয়েছেন। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। শেষ পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চের দাবি অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। আদালতের মাথায় বন্দুক রেখে গুলি করলে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা যায় ঠিকই; কিন্তু সাধারণ জনগণের মনে স্থান করা যায় না। বিগত হরতালে খলিলুর রহমান নামে একজন শিবির নেতাকে পুলিশ অত্যন্ত কাছে থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। রাস্তায় তার রক্তে ভেজা কোঁকড়ানো নিথর দেহটি মানুষের মানবীয় অনুভূতিকে জাগ্রত করেছে। অজানা-অচেনা ওই মানব সন্তানটির জন্য গড়িয়ে পড়েছে কয়েক ফোঁটা অশ্রু। এ দেশে মানুষের জীবনের দাম নেই তা আরেকবার প্রমাণ হয়েছে। ধিক সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে, যিনি মাটিতে পড়ে যাওয়া ছেলেটিকে অতি কাছ থেকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে। বিনা অপরাধে তাকে রক্তাক্ত করে মানবজীবনের সবচেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করল রোজার মধ্যে। সেই মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের ১৩, ১৪ তারিখে হরতাল দিয়ে প্রতিবাদ করা ছাড়া কোনো গতান্তর ছিল না। দেশের সরকারই সবচেয়ে বেশি অবিবেচক আর কূটকৌশলী। আগেই বলেছি, কৌশল করে সাময়িক জয়ের আনন্দ উপভোগ করা যায়; কিন্তু মানুষের অন্তরে শ্রদ্ধাশীল হয়ে দীর্ঘস্থায়ী হওয়া যায় না। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের জন্য এটিই দুর্ভাগ্যের বিষয়, ক্ষমতার স্বাদ একবার পেলে, সেটিকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চায় অনন্তকাল। অথচ ক্ষমতার পালাবদল গণতন্ত্রেরই অবকাঠামোকে সুদৃঢ় করে। রাজনৈতিক ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, এ বিষয় সর্বদা মাথায় রাখলে দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যকলাপ কমত। বাংলাদেশের পুলিশকে মানবীয় গুণাবলির প্রসারের জন্য নিবিড় প্রশিক্ষণ প্রয়োজন আছে। গত কয়েক বছর বাংলাদেশে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে; কিন্তু কমেছে শুধু মানুষের জীবনের মূল্য। শুরু করেছিলাম পুলিশের রিমান্ডের ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছু লিখতে। এখানে সাম্প্রতিক কয়েকটি বিষয়ই এসে গেছে। সন্দেহের বশে ধরে নিয়ে রিমান্ডের নির্যাতন এ দেশের মানবাধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বিশ্বের দরবারে। যদিও অধিকার’-এর সম্পাদককে রিমান্ডে নেয়ার সুযোগ আদালত তাদের দেয়নি। তবে একজন সোচ্চার মানবাধিকার কর্মীকে জেলহাজতে পাঠিয়ে সরকারের শেষ সময়ে পতনের গতিকে ত্বরান্বিত করেছে। যদিও ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল একটি রায় ঘোষিত হয় যে, কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতারের কারণ লিপিবদ্ধ করতে হবে। অবিলম্বে আটক ব্যক্তির আত্মীয় বা কাছের কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের বিষয়টি অবহিত করতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আইনজীবী বা পরিচিত কারো উপস্থিতিতে করতে হবে। অথচ হাইকোর্টের এ নির্দেশনা কোনো বাহিনীই মানছে না। নিজেদের সভ্য জাতি হিসেবে পরিচিত করতে চাইলে অসভ্য-বর্বর, অমানুষিক, অনৈতিক কার্যকলাপকে চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে হবে। হাইকোর্টের সব রায়ই মানব, তবে নিজেদের সুবিধামতো; তা তো হয় না। দেশের জনসংখ্যা যতই বাড়ক তাই বলে কোনো সরকারকে এমন ক্ষমতা দেয়া হয়নি যাতে তারা যত্রতত্র অসহায় মানুষের লাশ ফেলে রাখবে।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads