মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৩

আওয়ামী শিবিরে শুধু হতাশা-অন্ধকার!


এক. যে কোন স্বাধীন রাষ্ট্রে নাগরিকের কিছু সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার থাকে। যাকে আগলে ধরে তার জীবন-মান উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। তবে রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকার ও চেষ্টার ফলে শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানে সার্বিক ভাবে নাগরিকরা বিভিন্ন ভাবে নিজদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে থাকে।  সমাজ-রাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তির যোগ্যতা অনুযায়ী মর্যাদার শিখরে পদায়ন হয়। এতে ধনী-দরিদ্র, যোগ্য-অযোগ্য বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সমাজে সৃষ্টি হয়। তবে মানুষ হিসেবে ন্যাচারালি সাদা-কালোকে, ধনী-দরিদ্রকে, শিক্ষিত-অশিক্ষিতকে অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। যদিও বা পুঁজিবাদের বিশ্বায়নে সমাজে এসব সমস্যা দিন দিন আরো প্রকট হয়ে চলছে। রাষ্ট্রঘোষিত সাংবিধানিক অধিকার বাক স্বাধীনতা, নিরাপত্তা, ন্যায়বিচারের অধিকার, শিক্ষা-দীক্ষা ও কর্মসংস্থানের অধিকার নিশ্চিত করার শব্দাবলি আজ শুধুমাত্র গণতন্ত্রের সংজ্ঞার ফ্রেমে কারারুদ্ধ। সবলরা দুর্বলের ওপর কষাঘাত অব্যাহত রেখেছে আদিকাল থেকে; এর শেষ বোধ হয় কাগজে-কলমে-ইতিহাসে লেখা হলেও এ অসমতন্ত্রই পরিবার-রাষ্ট্র-সমাজকে বিষিয়ে তুলেছে যুগে যুগে। প্রত্যেক নাগরিক দেশমাতৃকার মর্যাদা রক্ষার জন্য যতবেশি না চেষ্টা চালায় তার চাইতে শতগুণ বেশি  সমাজের এক অংশ রাষ্ট্রের মদদে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত, আরেক অংশ দেশের নাগরিক হয়েও নিজেরা বিরোধী শিবিরের সমর্থক হওয়ায়  চিন্তায় মগ্ন থাকে  এই বুঝি আমার  আত্মসম্মানে  আঘাত আসবে, গ্রেফতার হব, খুন হব, গুম হব ও রিমান্ডে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে পঙ্গু হব!  অকথ্য আতঙ্ক-অনিশ্চয়তা।  জনগণ  স্বাধীন দেশের  বন্দী নাগরিক, সবদিকে যেন কবরের আবহ, লাশ-খুন ও গুমের মিছিল। সত্য কথনে অপারগ, মিথ্যাই যেন সত্য, সত্য প্রকাশ করলে হরদম দম বন্ধের আইন পাস করা হচ্ছে। নাম মাত্র মিডিয়ার বাক স্বাধীনতা, কখন আবার মিডিয়া হাউজ বন্ধ হয়ে যাবে তার কোন ইয়ত্তা নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ,মন্দা ভাব আরো কত কি? কেউ টু শব্দ করার সাহস পাচ্ছেনা। সবদিকে নিস্তব্ধতা, নীরবতা; এসব কিসের আলামত ! সময় যেন বড় নিষ্ঠুর, অসময়, নীরব, স্থির, নিস্তব্ধ! এমন ভয়ানক অবস্থার অবসান আদৌ সম্ভব?
স্বাধীনতার একক দাবিদার আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ পরবর্তী হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে চিরতরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নিমিত্তে ভবিষ্যতের সমস্ত কাঁটা খতম করে দেয়ার জন্য বিশেষ করে দেশের সবচেয়ে পুরনো ইসলামপ্রিয় তৌহিদী জনতার সংগঠনকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করে চলছে। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ও দল নিষিদ্ধের সকল তৎপরতা চলছে হিটলারী কায়দায়। গত  ৫ মে’ ২০১৩ পশ্চিমা ও পার্শ্ববর্তী দেশের সাহস ও মনোবলপোক্ত হয়ে আলেমদের গণহত্যা করে শেষ রক্ষা পেতে চেয়েছিল। নিজেরা জঙ্গিপনার চরমে সমাসীন হয়ে দেশে বিদেশে আলেম-ওলামাদের জঙ্গি রূপে আখ্যা দিয়ে মূলত দেশে-বিদেশে ইসলামের সুমহান আদর্শকে বিকৃত করা বৈ কি বলা চলে? স্বাধীনতার চেতনার ধুয়া তুলে দেশের আপামর জনসাধারণকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। ইসলামী আন্দোলনের আপোষহীন জনশক্তির শাহাদাত, ত্যাগ-কুরবানী ও রক্ত সাগরের বিনিময়ে ইতোমধ্যে যারা তেলের সাগরে আত্মতৃপ্তিতে ভাসছিলেন তারা সম্প্রতি স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে গো-হারার পর পুনরায় নয়া ষড়যন্ত্রের নীলনকশা এঁটে ২০২১ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রাণান্তকর তদবির দেশে-বিদেশে চালাচ্ছেন! প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষমতার এ মেয়াদে ইতোমধ্যে ৬০০ দিন বিদেশ সফরে ব্যস্ত ছিলেন। দেশের জন্য মিয়ানমারের সাথে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র সীমার দেনা-পাওনার দেন-দরবারে সীমানা লাভের যে সাফল্য অর্জন তা নিয়েও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেছেন এবং আমাদের প্রাপ্য সীমানা আমরা আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছি বলেও তারা মতামত ব্যক্ত করেছেন। এরপরও যদি  এটা আমাদের সাফল্য মনে করি তাহলে ৬০০ দিন বিদেশ সফরের মানে কি? বিদেশ সফর করতেই পারেন, তাতে কারো আপত্তি নেই; আপত্তি হলো সেখানে যে আপনারা অন্য দেশের তরে ডজন ডজন চুক্তি করে নিজের সব বিলিয়ে দিবেন আর নিজের দেশের জন্য কি করলেন নিশ্চয় ক্ষমতা শেষ হবার আগে হলেও জাতির কাছে প্রকাশ করবেন এটি আমাদের প্রত্যাশা। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা এ কারণে বললাম গরীবের বৌ সবার ভাবী।আমরা উন্নয়নশীল দেশ, সা¤্রাজ্যবাদীরা আমাদের শুধু শোষণ করতে চায়।  যে যাই বলি আমাদের ভাগ্যের চাকা ঘোরে দিল্লী, মধ্যপ্রাচ্য, লন্ডন ও ওয়াশিংটনের দেন দরবারে। ক’দিন আগে জি,এস,পি সুবিধা বাতিল হয়ে গেল। দোষ চাপল বিরোধী দলের নেত্রী ও নোবেল বিজয়ী ড.ইউনূসের প্রতি। ক্ষমতায় তো আপনারাই আছেন, মিডিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কূটনীতিতে সফল বলে গদ গদ করে বক্তব্য রাখেন, তাহলে জি, এস,পি সুবিধা  বাতিল হয়ে গেল কেন?  খয়ের খা দেশ গুলো থেকে আমরা কি পেলাম?  অন্তত তাও কি তিনি বলবেন? সমালোচনা করলে বলা হয় জামায়াত-হেফাজত-বিএনপি অপ-প্রচার চালাচ্ছে। কয়েকদিন আগে সজিব ওয়াজেদ জয় তার খৃষ্টান বৌ কে নিয়ে যুবলীগের ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে বধূসহ মুনাজাত করছেন! ইফতারের পূর্বে বক্তব্যে বললেন আমার কাছে খবর আছে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় যাবে। সম্ভবত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেশ-বিদেশে জোর লবিং এর  কারণে, কোনো দেশের বিশেষ সহযোগিতায় ক্ষমতায় পুনরায় গদিনসীন হবেন, জনগণের রায়কে উপেক্ষা করে ২০২১ ভিশন বাস্তবায়নের খবর নিশ্চিত হয়েছেন, তাই দিগি¦দিক হারা নেতা-কর্মীদের মনোবল পোক্ত করার লক্ষ্যেই গোপন খবর সরল মনে ফাঁস করে দিয়েছেন?
৩১জুলাই ২০১৩। রাতে আওয়ামী যুবলীগের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক  রিয়াজ উদ্দিন খান মিল্কিকে ফিল্মি স্টাইলে গুলী করে হত্যা করে যুবলীগেরই একই শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সিদ্দিকী তারেক। ভাগ্যিস পুরো দৃশ্যটাই রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ডের (ঘটনাস্থল) সিসি ক্যামেরায় পাঞ্জাবী ও টুপি পরা ভন্ড মুসল্লি জাহিদ সিদ্দিকী তারেক নিজহাতে গুলী করে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ধরা পড়ে। নচেৎ পরদিন থেকে জামায়াত বা বিএনপি কে দায়ী করে দেশব্যাপী তোলপাড় করে উঠত কিলিং মিশনে এবার বি,এন,পি অথবা জামায়াত। এ ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নিজের দলীয় নেতা-কর্মীদেরও নির্দয়ভাবে ঠান্ডা মাথায় খুন করতে পারে। থলের বিড়াল বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ধৃত খুনি তারেককে কর্তা ব্যক্তিদের ইশারায় কথিত র‌্যাবের বন্দুক যু্েদ্ধ নিহত হওয়ার নাটক সাজানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
   ক্ষমতালোভী ডাকাতরা নিজেরা অপরাধ করে গভীর দরাজকণ্ঠে অপরের কাঁধে দোষ চাপিয়ে দেয় এটাই কালে-ভদ্রে ডিজিটাল দেশপ্রেমীদের কাজ! তবে আমার বিশ্বাস শহরে-বন্দরে, গ্রামে-মহল্লায়, পরিবার-পরিজনের হৃদয়ে যে দ্রোহ দাবানল দাউ-দাউ করে জ্বলছে কোন কূটকৌশল নাস্তিক প্রশ্রয়দাতা আওয়ামীদের রক্ষা করতে পারবে না। সরকারের কর্মকান্ডে  গ্রাম-গঞ্জে আ’লীগ নেতা-কর্মীরা নিজদের দলীয় কর্মী পরিচয় দিতেও ভয়-লজ্জা পাচ্ছে, দলের নাটের গুরুরা এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে এমন কি অনেকে দল বদল করতে শুরু করেছে। জনগণ রায় দেয়ার সুযোগ পেলে প্রতিশোধের মাত্রাতিরিক্ততা পৃথিবীর সকল ইতিহাসকে ম্লান করে নতুন রেকর্ড গড়বে অথবা সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন না করে ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিং নামক টাল বাহানা  করলে জনগণের পদপৃষ্ঠে আওয়ামী লীগের দেশের রাজনীতিতে সাঙ্গলীলা ঘটবে।
দুই.
১৪ দলীয় মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন পত্রিকায় খবব প্রকাশিত হয় যে- ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন মানে এ সরকার পরবর্তীতেও ক্ষমতার মসনদে সমাসীন থাকার জন্য কিছু  আগ্রাসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে ক্ষমতায় আসার মরণপণ চেষ্টা চালাবে, তার মধ্যে উল্লেখিত যে ক’টি বিষয় ছিল তা হলো - (১) জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে যুদ্ধাপরাধ অভিযোগের দায়ে নেতৃত্বশূন্য করা ও দলকে স্থায়ীভাবে দুর্বল করা (২)   আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার  ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বতিল করা (৩) বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরোধী মতের ছাত্রদের তৎপরতা দমনে ছাত্রসংগঠনগুলোর অফিস, আবাসিক হল, মেস ইত্যাদিতে ব্যাপকভিত্তিক অভিযান চালিয়ে নাশকতার অভিযোগ তুলে অস্ত্র মামলা, হত্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে ভয়ভীতি ছড়িয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমানোর সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখা। (৪) বিরোধী শিবিরে দলীয় কোন্দল অথবা জোটগত কোন্দল অব্যাহত রাখতে পারলেই ২০২১ পর্যন্ত কথিত ডিজিটাল উন্নয়নের তোড়ে দেশ ভেসে যাবে এবং সর্বশেষ (৫) জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি বিএনপিকেও দুর্বল করে আন্দোলন স্তিমিত করা। উল্লেখিত এজেন্ডাগুলো বিরোধী শিবির যথাযথ ভাবে গুরুত্ব না দিলে ও এসব বিষয়ে আওয়ামী সরকার যথেষ্ট হেকমত করে সফলতায় অনেকটা ফুর ফুরে মেজাজে ছিল। তবে এসব বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বর্তমানে নানা প্রকার ডিজিটাল বেকায়দায় পড়ে সরকারের প্রাণ ওষ্ঠাগত, মান-প্রাণ আসে যায়, বিরোধী দলের চাইতে সরকারি দল অনেক বেশি বেকায়দায়। দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝেও ব্যাপক হতাশা ও দলীয় নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা  দেখা দিয়েছে। মিরপুরের কসাই কাদেরের যুদ্ধাপরাধের দায়ভার জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে নির্লজ্জভাবে দায়ী করে যাবজ্জীবন কারাদ- ঘোষণা দেয়া হয়। পিরোজপুরের পারেরহাটের যুদ্ধাপরাধী দেলু রাজাকারের অপরাধের দায়ভার আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাস্সিরে কুরআন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ওপর চাপিয়ে দিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়, জামায়াতের এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সম্পাদক কামারুজ্জামানের ওপর ময়মনসিংহ অঞ্চলের যুদ্ধাপরাধের সমস্ত দায়ভার চাপিয়ে দিয়ে তারও মৃত্যুদ- ঘোষণা করে, সাবেক জামায়াত আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৯০ বছরের সাজার রায় ঘোষণা করা হয়, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেয়। এ রায়ে সংগঠনকে ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশান বলা হয়েছে, এ সংগঠনের কোন ব্যক্তি রাষ্ট্র বা কোন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারবেনা; ইতোমধ্যে সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ হতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ভোটাধিকার প্রয়োগ বাতিল ও নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
কামারুজ্জামান সে সময় মাত্র এইচ.এস.সির ছাত্র ছিলেন, তাকে যে সকল অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে সেগুলোকে পাগলের প্রলাপ আর ভাল মানুষকে ভাল করার নাম করে পাগলা গারদে জোর করে ট্রিটমেন্ট দেয়ার মতো বেতমিজের কাজ ছাড়া আর কিসের সাথে তুলনা করা চলে? বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীকে স্বাধীনতার সময় এতবেশি শক্তিশালী দল হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে যে, সব অপরাধ তারাই করেছে, তাদের কথায় পাকিস্তানী সরকার আর হানাদার বাহিনী উঠ-বস করত! অথচ জামায়াতে ইসলামী সে সময় পূর্ব বাংলার একটি দুর্বল নগণ্য সংগঠন ছিল। আর যদি অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এত অপরাধ করেই ছিলেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোন থানায় একটি জিডি পর্যন্তও হয়নি কেন? এখনও জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে এ  কোর্টে বিচার করছে, দেশকে ইসলামী নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এসব বিচারিক কর্মকা- দেখে শয়তানও  ফোঁকলা দাঁত বের করে হাসে। আর বলে মহাজোটের শয়তানির তীব্রতা এত বেড়েছে যে আমার খাওন শেষ। ছোট বেলায় একটি গল্প শুনেছিলাম- “একবার এক খেলার মাঠে শয়তান ঘোড়ার বেশে মাঠে চরতে আসল, তখন গ্রামের দুষ্ট ছেলেরা ঘোড়ার পিঠে চেপে বসল আর বাকি যারা চড়তে পারল না তারা ঘোড়ার গুহ্যদ্বার দিয়ে বড় একটা বাঁশ প্রবেশ করিয়ে দিয়ে চড়তে শুরু করল। তখন বেচারা শয়তানের বুঝতে বাকি রইল না, আমি কি শয়তান আমার চেয়েও কঠিন শয়তান আমার সাগরেদরা মনুষ্য শয়তান পায়দা করতে সক্ষম হয়েছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ রাজাকারকে মুক্তিবাহিনী হত্যা করেছিল। আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিছু রাজাকারকে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তাহলে কি আজকে নির্দ্বিধায় বলতে হবে যে, চল্লিশ বছর পর এ মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে তার ¯েœহধন্য কন্যা যেভাবে কলকাঠি নেড়ে দেশ জুড়ে বিশৃঙ্খলা করছেন তার জন্য মরহুমকে কবর থেকে উত্তোলন করে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত নয় কি? যারা শেখ মুজিরের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাবে বলে চিৎকার করেছিলেন, তারা আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অকথা-কুকথা আর তৈল মর্দন করে শেষ পর্যন্ত তার কপালে কি জুটাবে আল্লাহই জানেন। সে কারণেই এসকল অসংগতি আর অন্যায় অবিচার গুলোকে বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় মানুষ সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেনি। অপরাধীর বিচার হবে কে না চায়? কিন্তু বিচারের নামে অবিচারকে কেউ মেনে নিতে পারেনা। সুযোগ বুঝে ফুঁসে উঠে, প্রতিবাদ করে, রুখে দাঁড়ায় এবং অত্যাচারীর মসনদ খানখান করে ফেলে যেমন চলছে মিসরে, লিবিয়ায়, সংগ্রাম চলছে সিরিয়াসহ অনেক মুক্তিকামী দেশের স্বাধীনচেতা মানুষেরা। আব্দুল কাদের মোল্লা, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী , কামারুজ্জামান, অধ্যাপক গোলাম আযম ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহীদ এর রায় ঘোষণার পর দেশব্যাপী যে গণবিস্ফোরণ ঘটেছে পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল। নেতৃত্বের জীবন শঙ্কার ঘোষণায় অবিবেচক সরকারের ১৪৪ ধারা, বেপরোয়া বুলেট, সাউন্ডগ্রেনেড বোমা কিছুই জানবাজ নেতা-কর্মী ও ইসলামপ্রিয় জনতাকে নিবৃত করতে পারেনি। অকাতরে জীবন দিয়েছে ২৫০ শতাধিক তাজাপ্রাণ। চোখ হারিয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েছেন অগণিত বনি আদম, হাত-পা হারিয়ে জীবনের তরে পঙ্গুত্বকে আলিঙ্গন করে  কালের সাক্ষী হয়ে আবার আওয়ামী হায়েনাদের ক্ষমতার যাওয়ার পথকে চিরতরে রুদ্ধ করে দিয়েছে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কত নিরীহ জনতা তার খবর রাখার সময় কি সরকারের আছে? মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম অবারিত চেতনা কি এসব বীভৎসতার নাম! এটি কি ফিলিস্তিন আর ইসরাইলের অবিরত সংঘাত? কার সাথে? ইহুদী বনাম মুসলিম? ২০১৩ সালের বাজেট অধিবেশনের  ১৮ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে কথা বলতে গিয়ে ১৮ দলীয় জোটকে লক্ষ্য করে বলেছেন মঈন-ফখরুদ্দীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিন মাসে নির্বাচন দেয়ার কথা থাকলেও তা দুই বছরেও দিতে পারেনি”। অথচ বলার কথা তিন বছরেও দিতে পারেননি। (কেউ চাইলে প্রধানমন্ত্রীর সেই দিনের বক্তব্য শুনে দেখতে পারেন)। আমরা এমন এক কপাল পোড়া জাতি অকপটে অনেক রেগে যাই আবার জীবন-সম্পদ-রুজি রোজগারের ভয়ে  সত্য প্রকাশে শংকিত হয়ে যাই। যার কারণে মিডিয়া হাউজগুলো তাদের মিডিয়াগুলোতে রুটি -রোজগারের প্রয়োজনে সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে মিথ্যাকে বারবার প্রচার করে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে যথেষ্ট পারঙ্গমতা প্রদর্শন করছেন। কারণ তারাও জানে দেশে আইন-আদালত, আচার-বিচার সব খোলস পড়ে আছে। এখানে নেই আত্মা আর বিবেকের অস্তিত্ব। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া বেশ কয়েকটা মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সরকারের দলন ভীতি আরো অনেক বেশি বেড়ে গেছে। হিটলারের তথ্যমন্ত্রী গোয়েবলস বলেছিল- “ একটি মিথ্যা কথাকে বারবার প্রচার করলে সত্যে পরিণত হয় এবং লোকেরা তা বিশ্বাস করে”। হিটলার তার আত্মজীবনীতে বলেছিলেন যে - প্রতিপক্ষকে আক্রমণের জন্য ওরা গাম্ভীর্যপূর্ণ স্বর ব্যবহার করে, কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে ওদের সম্পূর্ণ নীরবতায় আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি যে ওরা কত ধূর্ত এবং কি পরিমাণে ঘৃণ্যভাবে পিষ্ট করে ঠকিয়ে চলছে। (বিল্লাহ হোসেন অনূদিত ৪৫ নং পৃষ্ঠা)।
দেশের ইতিহাসে যেভাবে দিনের পর দিন বিকৃতি ঘটছে তাতে জাতি শংকিত। আগামী প্রজন্ম ইতিহাস থেকে কি শিখবে? আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যতটুকু জানি বুঝি আমাদের স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক বা ইতিহাসবেত্তা উপলব্ধি করতে পারে যে অল্প কটা দিন, বছর তারিখ এর মধ্যে যে ইতিহাস সেটি মোটেও ইতিহাস নয়। কখন যুদ্ধ হয়েছে, কোন সেনাপতি কখন সলিল সমাধি ঘটেছে অথবা কখন কার মাথায় রাজসিংহাসন মুকুট পরেছে এসব খবরাখবর জাতির ইতিহাসে কতটুকু মূল্য আছে? তাই এক দ্বিগি¦জয়ী বলেছিলেন- “ইতিহাসের অর্থ হল কোন বিশেষ ঘটনা কেন এবং কিভাবে একটা জাতির জীবন মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল সেটাকেই জানা। আর ইতিহাস পড়া উচিত- বিশেষ দরকারী জিনিসটাকে মনে রাখা; অদরকারী বিষয়টাকে ভুলে যাওয়া”। ইতিহাসের সূত্র ধরে বলতে বাধ্য হলাম- আমাদের দেশের কর্তা ব্যক্তিরা ইতিহাস থেকে যা মনে রাখা প্রয়োজন তা মনে না রেখে যা ভুলে যাওয়ার তা ক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থে যথেষ্ট মাথায় রাখেন। কর্তা প্রধানের পার্শ্ববর্তী দায়িত্বশীলদের বারংবার তৈলমর্দনে প্রধান কর্তা অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে প্রয়োজন বেশি মনে করেন তখনই আমও হারাতে হয় ছালাও হারাতে হয়। আজ পৃথিবীর বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে খোলাফায়ে রাশেদার যুগের কথা স্বরণ করতেই হবে, প্রজাদের প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য যারা নিজেরাই ছদ্মবেশে জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়েছিলেন। বাহ বাহ শুনার পরিবর্তে যথার্থ সমালোচককে পুরস্কৃত ও উৎসাহিত করেছিলেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads