বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৩

আওয়ামী শিবিরে শুধু হতাশা-অন্ধকার! 2


(গতকালকের পর) তিন : আওয়ামী সরকারের ইসলাম বিদ্বেষী সর্বগ্রাসী উপর্যুপরি প্রশ্রয় ও আশ্রয়ের কারণে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ইসলাম প্রিয় সর্বস্তরের জনগণ। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে সরকারী ইন্টেলিজেন্স সংস্থাগুলো গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করলেও মুসলমানদের আস্থা ও বিশ্বাসের সর্বোচ্চতম স্থান নিয়ে নাস্তিক কুলাঙ্গাররা কটূক্তি করলেও দীর্ঘ দিন আন্দোলনের পর আন্দোলন থামানোর পরিকল্পনার অংশ হিসাবে মাত্র ৪ জন নাস্তিক ব্লগারকে ধরে তাদেরকে জামাই আদরে রিমা- দেয়া হয়, বিনা কারণে পিজি হাসপাতালে চিকিৎসার নামে বেড বরাদ্দ দেয়া হয়, নাস্তিক ব্লগারদের নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রের লাইসেন্সও দেয়া হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে জামিনে মুক্ত নাস্তিক ব্লগারদেরকে সরকারী অর্থায়নে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। অথচ যে সকল আলেম কুরআনের কথা বলেছে নাস্তিকদের বিচার চেয়েছে তারা কারাগারের অন্ধকার প্রকেষ্ঠে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।  যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীর নামে রাজধানীর শাহবাগসহ সারাদেশে আলেম ওলামা দাড়ি-টুপি আল্লাহ ও রাসুল (সা.), ইসলাম, নামাজ ও কুরআনকে নিয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করা হয় তা সালমান রুশদী ও তসলিমা নাসরিনকেও হার মানায়। যারা বিশ্বের সকল ধর্মমতের কাছে ধিকৃত হয়েছে। নারী পুরুষের অবাধ অশ্লীল মেলামেশা, ইসলামী রাজনীতি বন্ধের হুমকিসহ ইসলামী রীতিনীতি ঘৃণিত ভাবে উপস্থাপন করে মুলত: ইসলামপ্রিয় জনগণের হৃদয়ে দারুণভাবে আঘাত করা হয়েছে, যার ভাষা প্রকাশ করার মত শব্দ আমার জানা নেই। সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নারীদের সম্পদ বন্টন নীতির সংস্কার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রীদের ইসলামী ড্রেস অসহ্য করা, যৌন কর্মীদের কর্মকা-কে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া, সমলিঙ্গের বিবাহের বৈধতা প্রদানের প্রস্তাবনা, স্যেকুলার শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে বাস্তবায়নের চেষ্টা, অঘোষিতভাবে ইসলামী রাজনীতি বন্ধ ও নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় হয়রানির বিরুদ্ধে ও নাস্তিকদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে দেশের অন্যতম আলেমে দ্বীন আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে সারাদেশে ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ১৩ দফা নিয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়। সরকারের কাছে দাবী পেশ করা হয়। এ আন্দোলনের জনসম্পৃক্ততা দিনের পর দিন বৃদ্ধি হতে থাকায় সরকারের চোখ কপালে ওঠে। প্রথম দিকে তারা ঢাকাতে যে জনসভা করেছিল সরকারের ইশারায় বামদলগুলো একদিন আগে থেকে হরতাল আহ্বান করে এবং সারাদেশের সকল রোডে সরকারিভাবে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এর পরও মাইলের পর মাইল হেঁটে পুলিশ, আওয়ামী যুবলীগ-ছাত্রলীগের সকল বাধা মাড়িয়ে নাস্তিকদের বিচার ও অনৈসলামিক কার্যক্রম বন্ধের দাবীতে শাপলা চত্বরে উপস্থিত হয় নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার  স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে দাবী আদায়ের প্রত্যয়ে। সমগ্র বিশ্ব স্তম্ভিত হল, নড়ে চড়ে বসল ;যাদেরকে জাতি অবমুল্যায়ন করত জাতীয় ভাবে তারা যে দেশের কল্যাণে কতবড় অপ্রতিরোধ্য শক্তি হতে পারে ঐ সমাবেশের মাধ্যমে প্রমাণিত করল। লক্ষ লক্ষ জনতা সরকারি আয়োজনে সকল বাধা বিপত্তির পরও উপস্থিতি ঢাকাবাসি ইতোপূর্বে অবলোকন করেনি। অনেকে একে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান বিরোধী জনতার স্বতঃস্ফুর্ত উপস্থিতির সাথে তুলনা করেছেন। তারা আমীরের নির্দেশে হাতে তসবিহ মুখে আল্লাহ আল্লাহ যিকির করতে করতে এসেছিলেন আবার আমীরের নির্দেশিত ১৩ দফা দাবী আদায়ের প্রত্যয় নিয়ে স্ব-স্ব এলাকায় ফিরে গেলেন। সরকারকে ৫ মে পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিলেন, সরকার গুটি কতেক ইসলাম বিদ্বেষীদের তৈলমর্দন  ও মিডিয়ার অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে আলেম ওলামাদের কোন দাবিকে কোন কেয়ার করলেন না, আলাপ আলোচনাও করলেন না। ৫ মে ১৩ দফা দাবীর সমর্থনে ঢাকার প্রবেশমুখে অবরোধ কর্মসুচী তারা শুরু করে। বিকালের দিকে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে সভা করার অনুমতি প্রার্থনা করে। পুলিশ প্রশাসন বায়তুল মোকাররমের পরিবর্তে শাপলা চত্বরে হেফাজতকে প্রোগ্রাম করার অনুমতি দিল। তবে বিষ্ময়ের বিষয় হলো একদিকে সরকারের অনুমতি প্রদান অন্যদিকে সকাল থেকে দফায় দফায় পুলিশ, আওয়ামী যুবলীগ-ছাত্রলীগের আক্রমণের দৃশ্য ছিল অমানবিক, হৃদয়বিদারক ও মানবতাবিরোধী। নিজের সতীর্থের লাশ পড়ে আছে, ইসলাম বিদ্বেষীদরে আক্রমণে ডজন ডজন নিথর প্রাণের সামনে নির্বাক অপলক দৃষ্টিতে হেফাজত কর্মীরা! আমীরের নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। আল্লামা শফী লালবাগ বড় মাদ্রাসা থেকে রাত ১১ টার দিকে সমাবেশের উদ্দেশ্যে রওনা হন, কিন্তুু পথে নিরাপত্তাজনিত কারণে এই বয়োবৃদ্ধ নেতা সমাবেশ স্থলে গিয়ে পৌঁছাতে পারলেন না। কারণ সে সময় সমাবেশের আশে পাশে যে পরিমাণ গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণ ও গোলা-গুলি চলছিল তাতে সকল মানুষের যাতায়াত কার্যত বন্ধ হওয়ার কথা। পুলিশের পক্ষ হতে বাইরে থেকে গোলযোগ মুহুর্তে মুহুর্তে বাড়তে থাকল। সরকারের পক্ষ থেকেও আল্লামা শফীকে সমাবেশ স্থলে আনার ব্যবস্থা করলো না। এরপরও আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের প্রেমে মশগুল ক্লান্ত মুসাফির আলেম-ওলামা যায়নামাজে বসে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নামাজ ও যিকিররত ছিলেন, এমনকি অনেকে ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন হঠাৎ রাতের অন্ধকারে মুল সমাবেশ স্থলে লাইট পোষ্ট বন্ধ করে লাইভ সম্প্রচারকারী টিভি চ্যানেল দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দিয়ে প্রায় ১ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার রাউন্ড গুলী খরচ করে রক্তাক্ত কারবালার দ্বিতীয় প্রান্তর করল তিন স্তরের সরকারের পেটুয়া শাবক বাহিনী। যারা দেশের জনগণের টাকায় নিজের ও নিজের পরিবারের পেটের আহার যোগায় ধিক তাদের! এক মুহুর্তের জন্য হৃদয় প্রকম্পিত হল না? কার বিরুদ্ধে এই গুলী? প্রশ্ন জাগলনা তাদের বিরুদ্ধে কেন এ সাঁড়াশী অভিযান? গোপালগঞ্জের ১৩ হাজার আর কিশোরগঞ্জের ৭ হাজার পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি তোমাদের ধিক্কারের ভাষা আমার নেই। দেশের মিডিয়াগুলো সরকারের রাতের নারকীয় তান্ডবের কথা রুটি রুজি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে সঠিক তথ্য প্রচার না হলেও সময়ের ব্যবধানে বিদেশী মিডিয়াগুলো আজ সত্য প্রকাশ করতে শুরু করেছে। এতগুলো মানুষের লাশ, রক্ত কোথায় হাওয়ায় মিলে গেল? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন কোন লোক হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ বলছে সাতজন লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। ইতোমধ্যে হেফাজত ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রকৃত হতাহতের ঘটনা প্রকাশ করতে শুরু করেছে। সে যাই হোক সত্যকে কখনো ধামাচাপা দিয়ে মিথ্যার আস্ফালন বেশিকাল চালানো যায় না। সেদিন কুরআনপ্রেমী মানুষগুলোর সতীর্থের লাশ, পঙ্গুত্ব ও মানুষরূপী সরকারি পেটুয়া দানবগুলোর আক্রমণ দেখে ছিল সমাবেশে আগত লাখ লাখ বনি আদম ,সে দিন প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞা করেছিল পরওয়ারদিগারের দিকে তাকিয়ে- “হে আল্লাহ আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের প্রতিশোধ নেয়া ছাড়া ঘরে ফিরে যাব না”।
৫ মে ঘটনার রোনাজারি গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে এত বেশী বাংলার কোটি কোটি মানুষকে ব্যথিত করেছে যা ইতোপূর্বে বাংলাদেশের মানুষকে কখনো করেনি। তাই এখন আওয়ামী ইসলাম বিদ্বেষী ফোবিয়ার বিরুদ্ধে গণরোষ গণপ্রতিরোধে পর্যুদস্ত প্রতিটি জনপদের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের কুলাঙ্গাররা। প্রতিশোধ স্পৃহায় ঝাড়–পেটা করে হিং¯্র মতাদর্শী দানবগুলোকে বাংলার শান্ত জনপদ থেকে চিরবিদায়ের অনুরণন চলছে চারদিকে।
চার.
৫মে হেফাজতে ইসলামীর সমাবেশ চলাকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রেসক্লাবে  সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন এপ্রিলে হেফাজত ঢাকায় এসে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিল ভবিষ্যতে তাদেরকে আর ঢাকায় আসতে দেয়া হবেনা। ক্ষমতায় থাকলে অনেকে অনেক কিছু বলেন,করেন। আওয়ামী লীগ একের পর এক অবিবেচক, অমানবিক রায় দিয়ে জনগণকে পুলিশ ও আওয়ামী বাহিনী দিয়ে জনগণের বুকে গুলী চালিয়েছিল এবং ৫ মে মধ্যরাতে ঘুমন্ত ইবাদতরত  ক্লান্ত মুসাফির আলেম-ওলামাদের উপর বর্বর হত্যাকান্ড ইতিহাসে বাংলাদেশে ২৫ মার্চের ন্যায় আরেকটি কালো অধ্যায় রচিত হলো। আওয়ামী লীগের জননন্দিত, বিশ্বনিন্দিত প্রয়াত রেলমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের অন্যতম খবরদারী মন্ত্রী, লুটেরা সুরঞ্জিত বাবু ও আলেম-ওলামাদের নসিহত দেয়া শুরু করার মত দুঃসাহস দেখালেন। সম্প্রতি ৪টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে একটি অনুষ্ঠানে চিরাচরিত ভাবে মুখ ভেংচিয়ে বললেন হেফাজত কর্মীরা সুবাহানাল্লাহ সুবাহানাল্লাহ বলতে বলতে  ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। কি কুৎসিত ধৃষ্টতা! বাকস্বাধীনতার নামে এমন উসকানিমুলক বক্তব্য মেনে  নেয়া যায় না। এম কে আনোয়ার ৫ মে কারা কুরআন পুড়িয়েছিল তার সত্যকথনে তাকে সাম্প্রদায়িক উস্কানির কথা বলে জেলে পুরেছিল। জননিন্দিত নপুংশক ডাকাত বাবু আছেন রাজার হালতে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা ঈমানিয়াতের দাবী থেকে অনেক দূরে সরে গেছি। এসব কুলাঙ্গারদেরকে জন সম্মুখে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মারতে পারলেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আত্মা প্রশান্তি লাভ করত। অবশ্য এসব বাবুরা যখন কথা বলে তখন তা হয় সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার! আর এসবের বিরুদ্ধে কথা বললে বলা হয় উগ্রপন্থী ,জঙ্গিপনা, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক উসকানি! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন ৫ মে হেফাজত কর্মীরা গায়ে রং মেখে শুয়েছিল, আবার দেখলাম ২৯ জুন ২০১৩ইং সংসদে বক্তব্য কালে বললেন হেফাজত মাসুম বাচ্চাদের নিয়ে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন, তাই সতর্কতার সাথে অপারেশন করে তাদেরকে যাওয়ার রাস্তা করে দিয়েছেন; এমনকি গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছেন! রাজিব নামক নাস্তিককে সংসদে আপনি জাতীয় বীর ঘোষণা করলেন আবার অন্যপক্ষে ১লক্ষ পঞ্চাশ হাজার বুলেট খরচ করলেন যারা মারা গেলেন, চিরতরে পঙ্গু হলেন ও চোখ হারালেন তাদের জন্য আপনার একবার শোক অথবা দুঃখ প্রকাশ করতে পারলেন না। আপনাকে ধিক্কার! আর বল্লেন সেখানে সময় টিভি ছিল। সময় টিভি কার টিভি এটি বাংলাদেশের মানুষ ভাল করে জানেন। আর তিনি নাকি ঘটনার লাইভ দেখেছেন, কি নির্লজ্জা!  তার নির্দেশে দেশের ইসলামপ্রিয় জনতার বুক বুলেটের আঘাতে তিন স্তরের বাহিনী বুক ঝাঁঝরা করে দিচ্ছেন, আর তিনি তা টিভিতে বসে বসে দেখছেন! তাহলে সে দিন অপারেশন কালে কেন দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দেয়া হল? এক দিকে সমাবেশে আগত এতিম মাসুমদের জন্য মায়া কান্না অন্য দিকে লাইট পোষ্ট বন্ধ করে দিয়ে চলে নারকীয় গণহত্যা! এসব ভনিতা ছাড়া কী হতে পারে? প্রধানমন্ত্রীর ফুফাতো ভাই সংসদে ২৮ জুন ২০১৩ বাজেট অধিবেশনে শেখ সেলিম বল্লেন-“কেউ যদি দেখাতে পারেন ৫ মে কেউ মারা গেছে শাপলার ঘটনায় তাহলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। পর দিন হেফাজত বিবৃতি দিয়ে বলেছিল- তাকে রাজনীতি ছেড়ে দিতে। যেখানে  ঘটনার কিছুদিন পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেসনোটে বলা যে ৭ জন মারা গেছে। দেশের অন্যতম মানবাধিকার সংগঠনের অধিকার ৬৪ জনের নাম ঠিকানাসহ প্রকাশ করেছেন। প্রতিনিয়ত সে ভয়াল ৫ মে’র স্বজন হারানোর তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করেছে নিখোঁজদের স্বজনেরা। ইতোমধ্যে এসব গণহত্যার দায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা হয়েছে। সুতরাং পালাবে কোথায়? এসব গণহত্যার বিচার বাংলার জমিনেই হবে ইনশা-আল্লাহ। আর শেখ সেলিমের মত লোক দেশে রাজনীতি করলেও কি হয় না করলেও কি হয়?
তাদের দাম্ভিকতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারকে কেউ ভাল ভাবে নিতে পারেনি। তাই ইতোমধ্যে ট্রাম কার্ড ১৮ দলকে দেখানো লাগবেনা, জনগণই নিজদের প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে স্থানীয় নির্বাচনে ইসলাম বিরোধী শক্তিকে লালকার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে আওয়ামী জোট প্রার্থীরা এমন গো-হারা হারবে অনেক গলাবাজ নেতার জামানত বাজেয়াপ্ত হয় কীনা তা দেখার পালা।
পাঁচ.
তবে কথায় বলে রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছু নেই বলে প্রবাদ বচন আছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমাদের প্রিয় মাতৃভুমির উপর অনেক হুতুমপেঁচার বদ নজর আছে। অতি সাবধানে আগামী জাতীয় নির্বাচনে  স্বদেশপন্থীদের বিজয় নিশ্চিত হওয়া না গেলে দেশের ভবিষ্যৎ রসাতলে যাবে। সেটি মাঠে ঘাটে কাজ করে এরকম রাখাল ও দিনমজুর কৃষককে জিজ্ঞাসা করলেও তার উদ্বেগের কথা বেরিয়ে আসবে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল আওয়ামী লীগের খুঁটির জোর হঠাৎ এত বেড়ে গেল কেন? ধিক এদের জন্য, বিশ্ববাসী যা দেখেছে তারা তাদের চোখের আবরণের কারণে লাশের সারি আর রক্তের বন্যা তাদের চোখে পড়ল না। কি মায়া কান্না বন ও পরিবেশ মন্ত্রী চৌধুরী হাসান মাহমুদের! তিনি বলছেন হরতাল ও অবরোধে সারাদেশে বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা প্রায় ১০ লক্ষ গাছ কর্তন করে ফেলেছেন। আমার মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে প্রশ্ন জনগণের পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায় তখন বাঁচার তাগিদে গাছ কর্তন করে পুলিশ লীগের অব্যাহত আক্রমণ থেকে বাঁচার নেহায়েত চেষ্টা করাও কি অপরাধ? আপনার কাছে মানুষের জীবনের চাইতে গাছের জীবনের মুল্য অনেক বেশি। ধিক একবারও তো আপনার বক্তব্যে বললেন না যে কি কারণে গাছগুলো কর্তন করা হয়েছিল। যাই হোক প্রধানমন্ত্রীকে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আদালত রং হেডেড বলেছিল। তিনি এখন আবোল তাবল বলছেন। ২০১৩ এর বাজেট অধিবেশনে সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশনে নিজ দল গো- হারার পর বললেন “আমাদের এত ভাল ভাল প্রার্থী দিলাম জিতলনা; দুর্নীতিবাজরাই জিতল!” কেন জনগণ ওনার দলকে ভোট দিলনা তা ওনার বোধগম্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপ জনগণের জন্য এত উন্নয়ন করলেন এরপরও জনগণ ভোট দিলেন না। উনি আফসোস করে বললেন এত বিদ্যুৎ উৎপাদন করলাম জনগণের জন্য; প্রয়োজনে বিদ্যুৎ বন্ধ করে রাখারও হুমকি জনগণকে দিতে দ্বিধা করলেন না। বুঝবেন, আপনাদেরকে জনগণ কেন  ভোট দিলনা কয়েক টা দিন, শুধু অপেক্ষার পালা।
আল্লামা শফী তার এক বক্তব্যে নারীকে তেতুলের সাথে তুলনা করেছেন। এতে নাকি তিনি নারী জাতির সম্মান হানি করেছেন। সংসদে এটি নিয়ে রসালো ভাবে আলাপও করলেন, অনেক এমপি- মন্ত্রীরা শফী সাহেবকে গ্রেফতারের জোর দাবি জানালেন। আবার শফী সাহেবকে লক্ষ্য করে প্রধানমন্ত্রী বললেন যে আপনি যখন বিরোধীদলীয় নেত্রীর সাথে বসেন তখন জ্বিভে পানি আসেনা? তার কাছে আমার সবিনয়ে প্রশ্ন জাবি ছাত্রলীগ নেতা মানিক যখন ১০০ জন নারীকে ধর্ষণ করে, ভিকারুন্নেসার ছাত্রীরা পরিমল বাবুর সংস্পর্শে সম্ভ্রম হারাতে হয়, কুষ্টিয়া জেলার আদর্শ স্কুলের আদর্শহীন শিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্না শতাধিক কোমলমতি স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ করে বাজারজাত করার পরও আইনের আওতায় আসেনা, তখনও কি নারীদের লাঞ্ছিত করা হয়না? কবি শামসুর রহমান, হুমায়ুন আজাদ, জাফর ইকবালসহ রামপন্থীরা যখন নারীদের সর্বাঙ্গ খুলে নিখুঁতভাবে প্রেম নিবেদনের কাব্য-উপন্যাস লিখেন সেগুলোকে আপনি মায়ের জাতির সম্মান রক্ষার কথা বলবেন? ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে পতিতাবৃত্তি করাতে বাধ্য করছে আপনি কি এটাকে ও মায়ের জাতির সম্মান রক্ষার কথা বলবেন? বলবেন না, কিছুই বলবেন না, কারণ আপনাদের মতে এসব নারীর সুখ, প্রেম নিবেদন; যত দোষ হুজুরের। রাসুল (স:) নৈতিকতার ১০টি শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন, হক কথা বল-যদিও বা তিক্ত। শফী সাহেব সে হক কথাই বলেছেন। নাস্তিক+আ’লীগ এসব অবাস্তব ইস্যুকে ইসু করে ভুল বুঝিয়ে নারী সমাজকে বিভ্রান্ত করতে চায়। আমার বিশ্বাস এসব কান কথায় কান না দিয়ে আল্লাহ রাসুলের পক্ষেই তারা অবস্থান নিয়ে এসব বহুরূপী শয়তানদের বিরুদ্ধে আগামী নির্বাচনে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিবেন।
 এতে থলের বিড়ালও বেরিয়ে গেছে। জয়ের বউ ইহুদী বলে কেউ কেউ দাবি করলে তিনি দরাজ কন্ঠে সংসদে বলেন আমার ছেলে জয়ের বউ ইহুদী নয় খৃষ্টান তারা আহলে কিতাব। অথচ ড. কামালের মেয়ে ব্যারিস্টার সাহারার স্বামী একজন ইহুদী এ ব্যাপারে কারো মাথা ব্যথা নেই। যাক ভালই হল জনগণের জানার আর বাকি রইল না ড. ওয়াজেদের অমতে রাজাকারের সন্তানের সাথে বিয়ে দিলেন পুতুলকে আর বাংলাদেশের মানুষের সেন্টিমেন্টে আঘাত দিয়ে মরহুম শেখ মুজিবের নাতি জয়কে খৃষ্টান কন্যা বিয়ে করালেন। চমৎকার! এভাবে যতই আওয়ামী লীগের গভীরে প্রবেশ করবেন ততই ভয়ঙ্কর দুর্গন্ধময় বিষয়গুলো বেরিয়ে আসবে। তাতে জনগণ বারবার আপনাদের কথিত সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় পুনরায় ব্যক্ত করবে কিনা আমার জানা নেই। তবে বোধ করি এ সরকারের ছত্রছায়ায় যে পরিমাণ বিরোধী দলমত ও সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হয়েছে তা ইতিহাসের এক জঘন্য কালো অধ্যায় রচনা করে নিয়েছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল নাটক মঞ্চায়ন করে দেশপ্রেমিক নেতৃত্বকে ধ্বংস করে দিয়ে একের পর এক যুদ্ধাপরাধের দায়ে যে অবিচারক রায় প্রদান করে চলছে এতে ইসলামপ্রিয় জনতার হৃদয়ে অবারিত রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে আল্লাহর দরবারে মজলুমের ফরিয়াদে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে এতে আওয়ামী লীগের শেষ পরিনতি কি হতে পারে তা তাদের নেতাদের এখনই ঠিক করে রাখা উচিৎ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জামায়াত-হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় দল ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের উপর বিরক্ত ও মাঠে নিষ্ক্রিয় । ৫ মে এর গণহত্যার পরিসংখ্যান চলছে, যতই আইন আদালত এর দোহাই দেয়া হোক না কেন এখন নিহত আহতদের আহাজারি যে পরিমাণ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এতে আওয়ামী শিবিরে যথেষ্ট হতাশা কাজ করছে, অনেকে গা ঢাকা দিচ্ছেন দেশ ছাড়ছেন এমনকি দলও ত্যাগ করছেন। তবে এটি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে ১৪ দলীয় মহাজোটের আমলে যারা বাংলার প্রতিটি প্রান্তর রক্তাক্ত করেছে সকল হোতাদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি দিতে হবে নচেৎ পরবর্তী সরকারও জনরোষে পড়বে তা নিশ্চিত বলার অপেক্ষা রাখে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads