শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩

ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিই জাতীয় ঐক্যের পথে প্রধান বাধা


যখনই জাতীয় ঐক্যের কথা ভাবি তখনই মনে পড়ে বিশ্বের প্রথম গণমানুষের রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হজরত মুহাম্মদ সা: ও কালো আফ্রিকার নির্যাতিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার কথা। এমন একটি ব্যক্তিত্ব সমকালীন বিশ্বে জন্ম নেন। জাতীয় ঐক্যের এমন উদাহরণ সমকালে কোথাও নেই। সাদাদের কারাগারে ২৬ বছর বন্দী থেকে মুক্তি লাভের পর প্রথমে বলেছিলেন, সাদা ও কালোরা দণি আফ্রিকারই সন্তান। আজ থেকে কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই এক মায়ের সন্তান। যারা তার ওপর অত্যাচার করেছে তাদের নিয়েই সরকার গঠন করলেন। অপর দিকে দেড় হাজার বছর আগে এ বিশ্বজগতে প্রথম গণমানুষের রাষ্ট্র ও সরকার গঠন করেছিলেন নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের নেতা ও রাসূল সা: মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ। তিনিও উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন কালো-ধলো, ধনী-গরিব, আরব-আজমি, আশরাফ-আতরাফ, কৌলিন্য সব কিছুই রহিত করা হলো। সবাই এক আদমের সন্তান। একই রক্ত বইছে বনি আদমের শরীরে। সত্য একটাই মানুষ জগতে কোনো শক্তির কাছে মাথা নোয়াবে না। মানুষের একমাত্র মালিক তার স্রষ্টা। হে মানবজাতির জন্য মনোনীত একমাত্র নবী ও রাসূল সা: আপনার জন্য কোটি কোটি সালাম ও দরুদ। হজরত বেলালের বংশধর হাবশি নেতা ম্যান্ডেলা তোমাকেও হাজার সালাম। খোদার কাছে আকুল আবেদন, আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশের জন্য এমন একজন নেতা ও পিতা পাঠিয়ে দাও যে নেতা ও পিতা এ দেশটাকে সোনার দেশে পরিণত করবে। আমাদের দেশটি হচ্ছে বিপুল সম্ভাবনার দেশ। এখানকার মানুষগুলোও খুবই ভালো। বেশ কয়েক বছর আগে সিঙ্গাপুরের একটি সংস্থা জরিপ চালিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের মানুষ সুখী। সাধারণ মানুষের তেমন কোনো বড় চাহিদা নেই। এরা কাজ চায়, আর দুই বেলা খেতে চায়। দেশের মানুষগুলো ভালো করে জানে না রাষ্ট্র কী জিনিস এবং মানুষ বা নাগরিক হিসেবে তাদের কী অধিকার। ভোট এলে দল বেঁধে ভোট দিতে যায় এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি বা মাস্তানদের চাপে পড়ে। আর অবুঝ নিরর উম্মি মানুষগুলোই নাকি দেশের মালিক। এত বড় প্রতারণা একমাত্র তথাকথিত গণতন্ত্রেই সম্ভব। ’৪৭ সাল থেকে হিসাব করলে ৬৫ বছর পার হতে চলল এ দেশের মানুষ তাদের মৌলিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। কারণ এরা জানে না তাদের অধিকার কী। অনেকেই দুই চার পাঁচ শ’ হাজার টাকায় ভোট বিক্রি করে দেয়। ওরা বলে আমরা গরিব নিরর মানুষ, নির্বাচনের পরে তো আর মতাবান, শক্তিবান নেতাদের পাবো না। তাই নগদ যা পাই সেটাই ভালো। যারা ভোট কিনে বা ভোট চুরি বা জালিয়াতি করে সংসদ সদস্য হন তারাই জনগণের কল্যাণের জন্য আইন বানান। দেশের সার্বভৌম মতার মালিক এই জনগণকেই সুযোগ পেলে সবাই পাছায় লাথি মারে। সম্প্রতি টিভিতে এক আলোচনায় সরকারদলীয় এমপি মইনউদ্দিন খান বাদল বলেছেন, ঠিক করার সময় এসে গেছে রাষ্ট্র কিভাবে চলবে। এই চলাটা ঠিক হতে পারে নির্বাচন বা সঙ্ঘাতের মাধ্যমে। তিনি জাসদ নেতা। যখন ডানপন্থী মৌলবাদী বলে কথিত বা পরিচিত দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল তখন নবগঠিত জাসদ বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে। এখন জাসদ বহু গ্রুপ বা দলে বিভক্ত। হাসানুল হক ইনু মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি এবং তার সতীর্থরা এক সময় গণবাহিনী গঠন করে সেনাবাহিনীতে সৈনিকদের মাঝে নিজেদের আদর্শ বিতরণ করেছিলেন। এখন তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে এসেছেন। সে সময়ে রী বাহিনীর হাতে বহু জাসদ কর্মী নিহত হয়েছেন। ইনু ও তার সতীর্থরাও ভারতীয় দূতাবাস আক্রমণ করেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করতে গিয়ে তাদের অনেক কর্মী নিহত হয়েছেন। সে সময়ে যারা বঙ্গবন্ধুর সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন, তারা প্রায় সবাই অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিতে এখন আওয়ামী লীগের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন নাকি তাদের সবার রাজনীতি ও আদর্শ এক হয়ে গেছে। বরিশালের মহিউদ্দিন আওয়ামী লীগে যোগদান করেও সারা জীবন ন্যাপের মহিউদ্দিন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আরো অতীতে তিনি মুসলিম লীগ ছিলেন। বঙ্গবন্ধু, শাহ আজিজ, আতাউর রহমানও মুসলিম লীগার ছিলেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছেন, হিন্দুদের লাঠিপেটা করেছেন। এরা সবাই তখন মুসলিম জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করতেন। পরে বাঙালি জাতীয়তাবাদে দীা নিয়েছেন। মইন উদ্দিন খান বাদলসহ বেশির ভাগ গণতন্ত্রমনা সেকুলার (ধর্মহীন) মানুষগুলো চান দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মানে মুসলমান নিজেদের ধর্মীয় অধিকার ত্যাগ করে ১০ ভাগ সংখ্যালঘুর সমান হয়ে যাক। এমনকি দামি দামি সম্পাদক, সাহিত্যিক, শিক, কবি, বুদ্ধিজীবীরাও চান বাংলাদেশ একটি ধর্মমুক্ত রাষ্ট্রে পরিণত হোক। আমি এর আগে বহুবার লিখেছি, বর্তমান আওয়ামী লীগের কাঁধে সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো তথকথিত বামেরা চেপে বসেছে। এরা ’৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত বলেছিলেন বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাবেন। তারাই জনগণের দেয়া বঙ্গবন্ধু টাইটেলটি ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এরা বঙ্গবন্ধুর মাথায় একদলীয় শাসনব্যবস্থার ভূত ঢুকিয়েছিলেন। বাদল, মেনন আর ইনু-এরা এখন শেখ হাসিনার কাঁধে উঠে বসেছেন। আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার রাজনীতিকে শেষ না করে কাঁধ থেকে নামবেন না। আর এই তথাকথিত বামদের উৎসাহ জোগাচ্ছে ভারত ও আমেরিকা। আমেরিকার কথা বললাম এ কারণে যে, বামেরা ইসলামের বিরোধিতা করে। আমেরিকাও এখন ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই আমেরিকাই এক সময় বিশ্বব্যাপী বামদের শেষ করার জন্য ইসলামিস্টদের ব্যবহার করেছে। আজ আবার দিক পরিবর্তন করে ইসলামের বিরুদ্ধে বামদের ব্যবহার করছে। ভারতের কাছে আদর্শ কোনো বিষয় নয়। ভারত চায় বাংলাদেশে এমন একটি সরকার মতায় থাকুক যা দিল্লির অনুগত থাকবে এবং ইসলামকে রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে বিদায় করে দেবে। আওয়ামী লীগ ও তার বন্ধুরা চায় ধর্মমুক্ত শিা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা। তারা জানেন, ধর্মের গুরুত্ব্ বাড়লে আওয়ামী লীগ বা ভারতপন্থী বা সেকুলাররা (ধর্মহীনেরা) কখনোই মতায় আসতে পারবে না। এই তো ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন বিএনপি-জামায়াত, হেফাজত থেকে হুঁশিয়ার থাকার জন্য। এসব সংগঠন নাকি জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে। এসব কথা বলে তিনি ভারত, আমেরিকা ও তার দোসরদের সন্তুষ্ট করতে চান। বাদল সাহেবেরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ মতায় থাকলে বা নির্বাচিত হলে বাংলাদেশ একটি ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ ও ওই ঘরানার সবাই মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে ধর্মকে ষোলআনা বাদ দিয়ে যেটুকু থাকে সেটুকু। আর এ চেতনাই হচ্ছে আমাদের দেশ, সমাজ, রাজনীতি, শিা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে ইসলাম বা মুসলমান মুক্ত করা। ধর্মে বিশ্বাস না করা বা ধর্মহীন (সেকুলার) থাকা যেকোনো নাগরিকের ব্যক্তিগত অধিকার। আমাদের সংবিধান বলেনি যে, কেউ ধর্মে বিশ্বাস না করলে নাগরিক হতে পারবে না বা ভোট দিতে পারবে না। এমনকি ধর্ম না জানলে বা বিশ্বাস না করলে সচিব, বিচারপতি, সেনাপতি, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হতে কোনো বাধা নেই। আমাদের দেশের বড় বড় নামী-দামি নাগরিকদের অনেকেই ধর্মচর্চা করেন না। রাষ্ট্রীয় ইসলাম করা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। সেটা এখনো বহাল আছে রাজনৈতিক কারণে। অপর দিকে সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকতে পারবে না। আল্লাহ পাকের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করা হয় না। এসব হচ্ছে গোঁজামিল বা রাজনৈতিক শয়তানি। অবাক ও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, যারা ধর্ম মানেন না বা ধর্মচর্চা করেন না তারা সে কথা রাজনীতির কারণেই বলতে চান না। কারণ ভোটারদের ৯০ শতাংশই মুসলমান এবং ধর্মচর্চা করেন। এক সময় একশ্রেণীর মুসলিম লীগার ছিলেন, যারা জনসভার সময় বলতেন, ‘মিটিংকা কাপড়া লে আও’। আর এখন একশ্রেণীর নেতা আছেন যারা নামাজের সময় হলে বলেন, আজান দেন, নামাজের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু নিজেরা অনেক সময় নামাজ পড়তেন না। আমাদের রাজনীতিতে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা এক ধরনের মোনাফেকি বহুকাল ধরে চলে আসছে। অপর দিকে যারা ধর্মহীন তারাও সময় সুযোগে কুরআন কিতাব, হাদিস ফিকাহ নিয়ে কথা বলেন। মানে অপব্যাখ্যা করেন। নামী-দামি বহু মুসলমান আছেন যারা সব যুগেই কুরআন ও ইসলামকে নিজেদের সুবিধামতো ব্যাখ্যা করেছেন। আওয়ামী লীগে বহু ধার্মিক মানুষ আছেন, যারা নিয়মিত ধর্মচর্চা করেন। তারা কিন্তু দলের ভেতর মাইনরিটি। দলের একমাত্র নীতিনির্ধারক হলেন শেখ হাসিনা। তিনি নাকি ব্যক্তিগত জীবনে খুবই ধার্মিক এবং নিয়মিত ধর্মচর্চা করেন। মাঝে মাঝে পোশাকে আশাকেও জানান দেন যে, তিনি ধার্মিক। তার দলের লোকেরাও মাঝে মাঝে জানান দেন যে, তারা নিয়মিত ধর্মচর্চা করেন। কিন্তু তারা সবাই ধর্মকে ব্যক্তিগত গোপনীয় বিষয় মনে করেন। ভারত, আমেরিকা ও তার বন্ধুরাও মনে করেন ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়। ঘরে বসে এর চর্চা করতে হবে। এমনকি মসজিদ-মাদরাসা, মক্তবেরও প্রয়োজন নেই। তাই আজান দেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ ধর্ম দেখানোর বিষয় নয়। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম খা আলমগীর বলেছেন, ধর্ম নিয়ে ব্যবসায় করতে দেয়া হবে না এবং প্রতিহত করা হবে। ম খা সাহেব একজন সাবেক আমলা। জিয়ার আমলে তার বিশ্বাসভাজন হয়ে ভাগ্যের চাকার গতি বাড়িয়েছেন। তারপর জাতীয়তাবাদী সরকারের পতনের জন্য জনতার মঞ্চ করে শেখ হাসিনার মতায় আসার পথ সুগম করেন। সাথে সাথে নিজেও মতার অন্দর মহলে প্রবেশ করেন। ভদ্রলোক ধর্ম ব্যবসায় বলতে কী বোঝান তা দেশবাসী ভালো করে জানেন না। ম খা আলমগীর ধর্মের বিরোধিতা করলে সেটা ধর্ম ব্যবসায় হয় না, শুধু ধর্মের পে বললেই ব্যবসায় হয়ে যায়। আসলে সব দলই প্রত্য বা পরোভাবে রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করে। রাজনীতির ময়দানে ধর্মের বিরোধিতাও ধর্ম ব্যবসায়। মিসরে সেনাবাহিনীর মতা দখল নিয়ে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান ক’দিন আগে মিসর পরিস্থিতি নিয়ে নিজের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, মিসরের সেনাবাহিনী খুবই আধুনিক ও সেকুলার (ধর্মহীন)। ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী। এদের যুদ্ধাস্ত্রও খুবই আধুনিক। তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে উৎখাত করাকে সমর্থন করেছেন। নির্বাচিত হলেও মুরসি নাকি অতিমাত্রায় ইসলামিস্ট হয়ে গিয়েছিলেন। পরোভাবে তিনি ব্রাদারহুড নিষিদ্ধকরণকেও সমর্থন করেন। আমাদের দেশের আমলাদের মনোভাব বোঝার জন্যই মাহবুব হাসানের কথা উল্লেখ করলাম। আমাদের রাজনীতি ও প্রশাসনে এমন বহু মানুষ আছেন, যারা মুসলমানও থাকবেন, আবার ইসলামেরও বিরোধিতা করবেন। দেশের বড় বড় সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে হেরেও শেখ হাসিনার হুঁশ হয়নি। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার কারণগুলো জেনেও শেখ হাসিনা দল এবং নিজেকে শোধরানোর কোনো উদ্যোগ নেন। তিনি ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে একটি ধর্মহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। সারা পৃথিবীতে এখন মতাবানেরা মুসলমান দেশগুলোর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ। মুসলমানেরা নাকি জঙ্গি, সন্ত্রাসী, অগণতান্ত্রিক। বড় দুঃখ ও বেদনার বিষয় হলো বহু মুসলমান নেতা ও শাসক পশ্চিমাদের সাথে হাত মিলিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এদের মধ্যে সৌদি আরবের বাদশাহ এক নম্বর। তিনি গণতন্ত্র বা ইসলাম কোনোটাতেই বিশ্বাস করেন না। ক’দিন আগে জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক বলেছেন, যারা মাথায় ঘোমটা দেন তারা বাঙালি নন। আমি ধরে নিয়েছি তিনি আবেগের কারণে ওরকম একটি কথা বলেছেন। আইয়ুব খানও বলেছিলেন, বাঙালি মেয়েরা পেটিকোট বা ছায়া সেমিজ পরে না। এমনকি তারা কাঁচুলি বা ববন্ধনী পরেন না। জেনারেল আইয়ুবের কথাটি আংশিক সত্য ছিল। বাংলাদেশের গরিব কিষানীরা ছায়া বা সেমিজ পরতেন না। মিতা হক বা তার মতো আরো যারা আছেন তারা হয়তো জানেন না ঘোমটা হিন্দু মুসলমান বাঙালি নারীদের সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য। বিবাহিত হিন্দু নারীরা সিঁথিতে সিঁদুর দেয়। সিঁথি দেখে বোঝা যায় তিনি বিবাহিত নারী। এ ছিল এক যুগের কথা। এখন বাঙালি/বাংলাদেশী/ভারতীয় ও পাকিস্তানি নারীরা সালোয়ার কামিজ ওড়না পরেন। বেশ কিছু কম বয়সী বা তরুণীরা জিন্সের প্যান্ট, টি-শার্ট পরে। এর সংখ্যা খুবই কম। তথাকথিত কিছু সাংস্কৃতিক কর্মী বা নেতা মাঝে মধ্যে এসব আজেবাজে কথা বলে থাকেন। এখন জাতির সম্মুখে একটি মাত্র প্রশ্ন। আর তা হলো বাংলাদেশে ৯০ ভাগ মুসলমানের জীবনে ইসলাম থাকবে কি থাকবে না। আওয়ামী লীগ মনে করে বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি ধর্মমুক্ত রাষ্ট্রে পরিণত করা। আর তাদের এই বিশ্বাসই নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর প্রগতিশীলতা। তাদের স্লোগান হলো ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। এর মানে ধর্ম ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ব্যাপার। তাহলে আওয়ামী লীগ বা ওই ঘরানার লোকেরা কিভাবে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবেন। আওয়ামী লীগ রাজনীতির কারণে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধিতা করছে। অপর দিকে বিএনপিসহ জাতীয়তাবাদী ইসলামি দলগুলো চায় বাংলাদেশ একটি আধুনিক উদার মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত হোক। মইনউদ্দিন খান সাহেব তার আলোচনায় ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বিএনপি এবং তার সহযোগী দলগুলো মতায় থাকলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। ধর্ম বা ইসলামই নাকি আমাদের জাতীয় ঐক্যের পথে প্রধানতম বাধা। ইসলাম নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। যারা একটু চিন্তা করেন তাদের বুঝতে একেবারেই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তাহলো বাংলাদেশকে ধর্মহীন তথাকথিত নামধারী মুসলমানদের দেশে পরিণত করা। যারা মুসলমান থাকবে কিন্তু ইসলামচর্চাকে জীবন থেকে বিদায় দেবে। তাদের রাজনীতির প্রধানতম ল্য হচ্ছে কালক্রমে ইসলামকে রাষ্ট্র, সমাজ ও জীবন থেকে বিতাড়িত করা। বাদল সাহেবেরা তাদের ল্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও ব্যবহার করতে পারেন, যেমন মিসরের সেকুলারিস্টরা (ধর্মহীনরা) আমেরিকা, ইসরাইল ও পশ্চিমা শক্তির তাঁবেদার সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে এবং সে দেশের ধর্মপ্রিয় মানুষের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads