শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৩

সুশাসনের নাম ক্ষমতার দাপট!

মিনা ফারাহ
দীর্ঘ সময় পেরিয়ে সুশাসনের একটি অর্থবহ নাম পেলাম গণভবনে গুডটাইম . আফ্রিকান ওয়ার লর্ডরা প্রকাশ্যে দুঃশাসন চালায়। মতা মানুষকে দানব করে। কখনো কখনো মতাই বৃহত্তর স্বার্থে আশীর্বাদ। আমার প্রশ্ন, দুঃশাসন আর মতার মধ্যে পার্থক্য কী? ওবামা, ক্যামেরন ও মনমোহনকে একসাথে করলে যে মতা নেই, আমাদের সরকার প্রধানের মতা তারচেয়ে বেশি। ওবামা কেন, ৪৩ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টও যদি এক হয়ে নির্বাচনের সাথে কোনো শর্ত জুড়ে দেন, তার পরও নির্বাচন হতে বাধ্য। আর এই সত্যকে মিথ্যা প্রমাণ করার মতো মতাধর আমাদের প্রধানমন্ত্রী। বিগত সাড়ে চার বছরে প্রমাণ করলেন বিপজ্জনক রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যাবে না। একনায়কত্ববাদ, কর্তৃত্ববাদ, পরিবারতন্ত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে গুলি। একটির বিপরীতে শত শত হাওয়া ভবন গড়ে উঠলেও টুঁ-শব্দের অধিকার নেই। বুকের ওপর দিয়ে ভারতের স্টিমরোলার চলে যাচ্ছে, থামানোর মতো একজনও নেই। অনেক নিয়েও দাসত্ব ছাড়া ৪২ বছরে বিনিময়ে কতটুকু দিলো ভারত? তার পরও সরকার দারুণ খুশি! দীপু মনির বাঁশিতে মশগুল দরবার হল। অথচ তুচ্ছ কারণে পিণ্ডির বিরুদ্ধে ৬ দফা, ১১ দফা, হরতাল, গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। ৭ মার্চের ১৯ মিনিটের ভাষণে পিণ্ডির বিরুদ্ধে যা প্রযোজ্য নয় সেগুলোও বলা হলো। এখন আমরা শোষকের পে জয়গান করি। শোষকের বিরুদ্ধে এখন আর ৬৯-এর মতো রুখে দাঁড়িয়ে বলি না। বলুন! মতায় আসামাত্রই কেন বিডিআর হত্যাকাণ্ড হলো? লেজ গুটিয়ে ফেলেছে চার খলিফারউত্তরসূরিরা। বরং তারাই সবচেয়ে বড় শোষক-সেবক সেজে উপহার দিয়ে চলেছে আদমজীর ২২ পরিবারের বদলে ৬৩ হাজার গুণ্ডা, বদমাশ, গডফাদার, শোষক শিল্পপরিবার। আইয়ুব খানের বেসিক ডেমোক্র্যাসিরবদলে টোটালিটারিয়ান ডেমোক্র্যাসি। গেল সাড়ে চার বছরে শত শত হাওয়া ভবনের গর্ভে বিলীন হয়েছে অতীতের একটি হাওয়া ভবন। সেই হাওয়া ভবনের নাম পর্যন্ত ভুলিয়ে দিয়েছে নতুন হাওয়া ভবনগুলো। সাড়ে চার বছরে লাখ লাখ কালো বিড়ালের অত্যাচারে অতীতের দুঃশাসনকেও মনে হচ্ছে সুশাসন। ২৮ অক্টোবরের মানুষ মারা জনতার মঞ্চ’-এর খুনিদের পুরস্কার, বড় বড় মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর এত মতা যে তার ইশারায় স্পিকার মাইক বন্ধ করেন, মাইক খোলেন। তার সামনে প্রত্যেক সংসদ সদস্য-মন্ত্রীই পোষা ময়নার মতো শেখানো বুলি ছাড়া যেন কিছুই আওড়ান না। আমেরিকায় যেমন হাইব্রিড ছাড়া এখন আর কোনো খাদ্য নেই, এই সরকারেরও হাইব্রিড ছাড়া যেন মন্ত্রী নেই। একেকটা হাইব্রিড টমেটোর সাইজ মিষ্টিকুমড়ার মতো। বাংলাদেশে কেউ কি এত বড় সরপুঁটি বাপের জনমে দেখেছেন? পুঁজিবাদী পৃথিবীতে সব কিছুরই ডিএনএ পরিবর্তন করে বানানো হচ্ছে হাইব্রিড। পরম মতাধর আমাদের প্রধানমন্ত্রীও গণভবনের নিজস্ব গবেষণাগারে ওয়েস্টমিনস্টার গণতন্ত্রের ডিএনএ পাল্টে দিয়ে বানালেন হাইব্রিড গণতন্ত্র। প্রতিবাদ করেছি? আমাদের সরকার প্রধান এতই মতাধর যে, শেয়ার মার্কেটে একবারের বদলে দুইবার ডাকাতি, ব্যাংকে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার দেউলিয়া বাণিজ্য, হলমার্ক, বিচার বিভাগে খোলামেলা হস্তপে, সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনায় শত শত মানুষ মরলেও হাইব্রিড চালাকি করে কত দ্রুত ভুলিয়ে দিচ্ছেন ব্যর্থতার পর ব্যর্থতা! অর্থহীন বক্তব্যকে খাওয়াচ্ছেন মুখরোচক চানাচুরের মতো। উঠতি গডফাদারদের আদর্শ, ক্ষমতার একান্ত অনুগত পার্টি নেতা শামীম ওসমান, মিল্কি, তারেক...। কিভাবে সম্ভব? কারণ তিনি ওবামার চেয়ে মতাধর। পুতিনের চেয়েও। সুরঞ্জিতের কালো বিড়াল কেলেঙ্কারির পরও তাকে দফতর থেকে দফতরবিহীন করার মতো ড্যামকেয়ার। পৃথিবীতে এমন কোনো শক্তিই নেই যে তাকে প্রতিহত করার মতো শক্তিমান। এই যে শত শত হাওয়া ভবনের হাত দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে, কেউ কি প্রশ্ন করেছি বের করুন আপনাদের তারেক-কোকো! ফিরিয়ে আনুন তাদেরও লুটপাট করা টাকা! জিয়া মাজারের সাঁকো উৎপাটন, ভিটা থেকে উৎখাত, প্রথম টার্মে গণভবন লিখিয়ে নেয়ার মতো নোংরা রেকর্ডও তো আওয়ামী লীগ সরকারেরই। পোস্ট-ডক্টরেট হলে ভালো, না হলে ডক্টরেট, অন্তত কম্পিউটার মাস্টার্স হলেও সই। কিন্তু কম্পিউটারে সামান্য বিএস ডিগ্রি দিয়ে কিভাবে একটি দেশের চেহারা পাল্টে ফেলার মতো বিশেষজ্ঞহওয়া যায়, মাথায় কুলোয় না। হয়তো কম্পিউটারে ডিসকোয়ালিফাই বলেই গণস্বাস্থ্যে শর্ট কোর্স করে মাস্টার্স। আমার প্রশ্ন, এত সাধারণ ডিগ্রি নিয়ে এত বড় দাবি কি সত্যিই কেউ করতে পারে? পারে যখন তিনি হন প্রভাবশালী সন্তান। তার কথায় বিশ্বব্যাংককেও ফেরত যেতে হলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনতে হলো, আবার বিদায়ও করতে হলো। ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত হলো, কিন্তু অঙ্গুলি হেলনে দরবেশদের বিচার নাকচ। লিমনের পা কেড়ে নিয়ে তাকেই হামলা-মামলায় দুই বছর ব্যস্ত রাখা আবার ৫-০ গোলে হেরে মামলা তুলে নেয়ারও অলৌকিক মতা। এতটাই পুলিশি স্টেট যে, পঙ্গু পা ফিরিয়ে চাওয়ার অধিকারটুকু পর্যন্ত লিমনের নেই। স্কাইপ কেলেঙ্কারির কিছু হলো? বদর যুদ্ধের যুক্তি দেখিয়ে নিজে রোজার মাসে হরতাল দিয়েও বিরোধী দলের বিরুদ্ধে হরতালের অভিযোগ আনার ধৃষ্টতা একমাত্র তার। উন্নতির প্রোপাগান্ডা দিয়ে গুম-খুন ধামাপাচা দেয়ার যোগ্যতা একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রনায়কই দেখাতে পারেননি। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে উপদেষ্টার সরাসরি সম্পৃক্ততা অথচ বিনা দোষে যখন জেল খাটেন মির্জা ফখরুল, তখন মনে হয় বঙ্গবীরের কথাই ঠিক, ‘আগে জানলে মুক্তিযুদ্ধ করতাম না।বিশ্বব্যাংক যাকে দুর্নীতিবাজ বলে, প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এক নম্বর দেশপ্রেমিক। ওবামাও যা পারেন না, পৃথিবীর সবচেয়ে মতাধর ব্যক্তি না হলে এমন দাবি কেউই করতে পারেন না। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বিল্ডিং তদারকি সম্পর্কে সিএনএন যখন জানতে চাইল, আমানপোরকে বানালেন মিথ্যাবাদী। আমিনুল ইসলাম প্রশ্নে হিলারিকেও বললেন মিথ্যাবাদী। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে একমাত্র তিনিই নির্ভুল। কেউ নোবেল না পেলে সেই দায় কেন হবে ইউনুসের? নোবেল বেদনায় ইউনুসকে বানালেন চোর, রক্তচোষা, ঘুষখোর। কে উলঙ্গ হয়নি এ ধরনের কথায়? তার পরও বিশ্ব সমালোচকের কতটুকু সমালোচনা করেছি যখন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির পরিবারে হাইব্রিড জীবনযাপন আর বিয়ের ধুম? কেউই তাদের দেশপ্রেমের আয়নাগুলো অন্তত একটিবার মিলিয়ে দেখার সাহস করলেন না। নিজেদের প্রায় আট হাজার মামলা তুলে নিয়ে বিরোধী দলকে বানালেন পাইকারি আসামি। বিচারবিভাগ তার হাইব্রিড মন্ত্রণালয়। একমাত্র তিনিই বারবার এক-এগারো আনার মতো অসীম মতাধর। অভিযোগগুলো মোটেও ফেলনা নয়। যেমন তারেকের হাওয়া ভবন ছাড়া নিজেদেরগুলো দেখতেই দিচ্ছেন না। কী করতে পেরেছি যখন বৌদ্ধবিহারের মতো ঘটনাও উড়িয়ে দিলো? দাম্ভিক, খেয়ালি, প্রতিহিংসাপরায়ণ উপাধিদাতারা কি রাষ্ট্রধর্মের নামে ধর্মনিরপেতার বিপজ্জনক খেলার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন? ১৫তম সংশোধনীর মতো টোটালিটারিয়ান মতার বিরুদ্ধে কি প্রতিবাদ করেছি? অথচ ৭ মার্চের ১৯ মিনিটের ভাষণে লগি-বৈঠা নিয়ে রেসকোর্সের মাঠে প্রায় লাখ লাখ বীর বাঙালির সে কী উত্তেজনা! আজ মরা তিস্তা প্রশ্নে ৭ মার্চের উত্তেজনা উধাও। নদীগুলো শুকিয়ে মারলেও কংগ্রেসের আশ্বস্ত করা বুলিকেই দীপু মনির মাভৈ, মাভৈ। সুতরাং প্রশ্ন করতেই হবে, ৭ মার্চের ভাষণ কি সঠিক এবং সময়োপযোগী ছিল? ’৭১-এর রণকৌশল কি হিতে বিপরীত হয়েছে? এসব প্রশ্নের কারণ, ৪২ বছর পরও বলতে পারছি না আমরা স্বাধীন নাকি পরাধীন। ৪৭ বাদীরা লাহোর প্রস্তাবের আদর্শ ফিরিয়ে আনতে আবারো বিপজ্জনক অবস্থানে। দৃশ্যত দেশ আজ ইসরাইল-প্যালেস্টাইন, তার পরও আমরা উটপাখি। অবশ্যই সরকার প্রধান ওবামার চেয়ে মতাধর, কারণ ওবামা না চাইলেও মার্কিন নির্বাচন হতে বাধ্য। ডেভিড ক্যামেরনের সেই মতাই নেই যে তিনি ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতি থেকে বেছে বেছে ঠিক করবেন কোনটা রাখবেন, কোনটা বাতিল। মনমোহন সিংয়ের টারবাইনের তলে এত চুল নেই যে, ভারতবাসীকে বলবেন, সংবিধান সংশোধন করে আজন্ম মতায় থাকার আইন পাস করেছে কংগ্রেস। কিন্তু এই বাংলাতেই, একই পরিবারেই, দু-দুবার চতুর্থ ও ১৫তম সংশোধনীর মতো আজন্ম মতার ঐতিহাসিক ঘটনা। আর বীর বাঙালিরা কিনা মুখে তালা মারা সুবোধ বালক! রাস্তায় পোস্টার, ব্যানারের পরিমাণ, অডিটোরিয়ামের গায়ে সিল দেখে মনে হওয়াই স্বাভাবিক, এ দেশের মালিক এক বিশেষ পরিবার, তারা যা করছেন প্রজারা তা মানতে বাধ্য। অবাধ্যদের জন্য নাৎসি রিমান্ড। গো ধরেছেন ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতির নির্বাচন, ভেবে দেখুন আমরা কত বড় বেয়াক্কল! এই জাতি ভুগবে না তো কে ভুগবে? অসুস্থ রাজনীতির চর্চায় এই যে মেধাশূন্য হচ্ছে জাতি, কিছু কি বলতে পেরেছি? কী প্রতিবাদ করেছি যখন শিাঙ্গনগুলোতে চালানো হচ্ছে দুর্বৃত্তদের বংশ বিস্তার কার্যক্রম অর্থাৎ লেখাপড়ার বদলে ছাত্ররাজনীতি। এরাই ৬৫ সাল থেকে শিাঙ্গনগুলোকে ধ্বংসের কাজে লিপ্ত। শিাঙ্গন আর গণভবনকে এক করে ফেলার দৃষ্টান্ত এই দলেরই। জিপিএ ৫-এর মতো দায়িত্বহীন রাজনীতির বিরুদ্ধে কতটুকু সোচ্চার? বিএনপি অফিস খালি করে সব কটাকে জেলে ঢোকাল আর বীর বাঙালি এক আবুল হোসেন, যার কারণে জিডিপি থেকে ঝরে যাচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। যেখানে প্রয়োজন হাজার হাজার মাইল সেখানে ১০ ভাগ রাস্তাও নেই। উন্নয়নের বেশির ভাগ শ্রমিকের ভাগ্যোন্নয়ন নিয়ে যে অপপ্রচার তার প্রতিবাদ করেছি? এখন পর্যন্ত মাথা পিছু আয় তলাবিহীন ঝুড়িতে। পাকিস্তানে মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। সেনেগালের অর্থনৈতিক সূচক আমাদের চেয়ে উঁচুতে। পদ্মা সেতু না হওয়ার জন্য এককভাবে দায়ী সরকার, তারপরও পদত্যাগ চাওয়ার সাহস দেখিয়েছি? জোট ভাঙা, জোট গড়ার অশ্লীলতা যেকোনো অশ্লীলতাকে ছাড়িয়ে গেছে। তাই ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানকে বড়ই অপ্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে। লেজ কাটা গেছে আমাদের, তা না হলে ইউনূসের মতো লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়েও কত নিরাপদ তিনি। এরপর যখন মতায় যাবেন ইউনূসের গন্তব্য রিমান্ড থেকে যাবজ্জীবন হলেও অবাক হব না। কিছুই করতে পারবেন না ইউনূস। ইউনূসের লেজে শত শত পদক ঢুকিয়েও কী করতে পারল কংগ্রেস কিংবা হোয়াইট হাউজ? দোর্দণ্ড প্রতাপে এগিয়ে চলেছে গ্রামীণ ব্যাংক কমিশনের ধ্বংসযজ্ঞ। চূড়ান্ত রিপোর্ট, গ্রামীণ ব্যাংককে ১৯ টুকরা করা হোক। অথচ অন্য কোনো সময় হলে আমেরিকা যেকোনো ধরনের অ্যাকশনে যেত। পুলিশ ফিরিয়ে দেয়ার হুমকি দিত জাতিসঙ্ঘ। সাহায্য স্থগিতের ঘোষণা দিত যুক্তরাজ্য (ইরান-সিরিয়ার বেলায় যা হচ্ছে)। এখন না হওয়ার কারণ পৃথিবীর সবাই তাকে ভয় করে। মন্দকাজের জন্যও বিদেশীদের প্রশংসা সার্টিফিকেট। দেখুন না! প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নতুন নতুন ঘটনা, পরমুহূর্তেই ধোয়া তুলসীপাতা। কী করে সম্ভব? রানা প্লাজার পর কদিন লেগেছে রেশমা নাটক দিয়ে হেফাজত ভুলিয়ে দিতে? তার পরও গণতন্ত্রের মৎস্যকন্যা! অথচ এই মাপের একটি দুর্ঘটনায় ইমপিচের উদ্যোগ নেয়া হলো কিনটনের বিরুদ্ধে, পদত্যাগে বাধ্য হলেন নিক্সন। অবশ্যই আমাদের প্রধানমন্ত্রী ওবামার চেয়ে মতাধর, একটি মাত্র হাওয়া ভবনের জন্য হাড্ডি চুরমার করছে তারেকের। তাহলে গেল সাড়ে চার বছরের কর্মকাণ্ডে কয় হাজার হাড্ডি চুরমার হওয়া উচিত ছিল? বরং সমালোচনা হবে পদ্মা সেতু, হলমার্ক, শেয়ারবাজার, ডেসটিনি...। হলো না। ভাবখানা এমন, ইউ ফুল! ডু আই কেয়ার, ড্যামকেয়ার! টকশোর সমালোচকদের শুধু জিহ্বা কাটা বাকি। অথচ দুবার শেয়ার মার্কেটে ধস নামানো দরবেশের বদলে গ্রেফতার হলেন সমালোচক রনি। সাগর-রুনির লাশ কবর থেকে তুলে নির্মম কাটাকুটি করেও খুনিরা নিরাপদে, আর আন্দোলনকারী ইকবাল সোবহান চৌধুরী নাকি তথ্য উপদেষ্টা! ইয়া মাবুদ! এই মতা ওবামা কিংবা পুতিনেরও নেই। যার হাতে গরিব দেশের প্রায় ১৭ ভাগ টাকা, সেই দরবেশও উপদেষ্টা! অনুদানের আড়ালে চাঁদা কালেকশনের বিশেষ ট্রাস্টের কোটি কোটি টাকার অনুসন্ধানী রিপোর্টটি আজ পর্যন্ত করল না মিডিয়াগুলো। কিন্তু পাকিস্তানিরা কী দেয়নি, কী নিয়ে গেল, এখন পর্যন্ত হাঙ্গামা অব্যাহত। এই সুশীলসমাজ, এই শক্তিশালী মিডিয়া যদি ৭১ পূর্ববর্তী আচরণ করত, খড়কুটোর মতো ভেসে যেত জুলুমবাজদের ঘাঁটি; কারণ যুগে যুগে জুলুমবাজদের চেয়ে যুক্তিবাদিরাই শক্তিশালী। বড়ই মতাবান তিনি, ব্যবসায়ীরা চাঁদার নামে অনুদান দেয়; বিনিময়ে সব নীতিনির্ধারণে প্রভাব খাটায়। হাইকোর্টের নির্দেশের পরও অবৈধ বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙ্গতে দিলো না সরকার। ক্রমাগত গুম হচ্ছে সমালোচনার সূত্রগুলো। বিদেশী পত্রিকার রিপোর্ট, ‘সংসদের ৬০ শতাংশই ব্যবসায়ী, যাদের ৩১ ভাগই গার্মেন্ট মালিক, অধিকাংশের হাতেই মিডিয়া, সরকারকে চাঁদা দিয়ে প্রভাবিত করে, যা পশ্চিমে কখনোই সম্ভব নয়।সবচেয়ে মতাবান না হলে বিশ্বমিডিয়ায় প্রতিদিনই এত নেতিবাচক খবর সত্ত্বেও রক্তকরবীর রাজার মতো এত বিজয়ের হাসি? অথচ মাত্র ১৫ মিনিটের টেপ মুছে ফেলার অপরাধে পদত্যাগ করতে হয়েছিল নিক্সনকে। হামেশাই ভারতের মন্ত্রীদের পদত্যাগের ইতিহাস। এনরন’-এর ৬০ বিলিয়ন ডলার মেরে দেয়ার জন্য শত শত মার্কিন দরবেশ জেলে। ব্যক্তিগত ফোন করে রাষ্ট্রের অর্থ ব্যবহারের অপরাধে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন মার্কিন সিনেটর। এ কোন রাহুর কবলে পড়ল বাংলাদেশ? ড. হুমায়ুন আজাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়Ñ ‘এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম।আসল কথা, তার কোনো মতাই নেই। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার দুর্বলতা পুঁজি করেছে ফিরিঙ্গিরা। দেশটি যত অস্থির হবে, ভোগবাদীদের ঘাঁটি তত শক্ত হবে। হামিদ কারজাই যতটুকু প্রতিবাদ করেন, সেটুকুরও মতা নেই। নির্বাচন এলেই মেডিসিন নিয়ে ফিরিঙ্গিরা হাজির। শ্রমিক নেবে না, পোশাক নেবে না, চাইলে অর্থনীতির চাকা থামিয়ে দেবে। যে নারীর অর্থনৈতিক সমতা নেই সে নারী চিরদিন স্বামীর হাতে লাঞ্ছিত হবে, এটাই নিয়ম। যারা ঘূর্ণিঝড়ে অন্তত এক লাখ মানুষ না মরলে বাংলাদেশের নাম নিত না, সেই বিশ্ব মিডিয়ায় এখন প্রতিদিনই গার্মেন্টের নেতিবাচক খবর। কারণ হলো, ঢাকায় বসে বাংলাদেশ চালাচ্ছেন রাষ্ট্রদূতদের গ্যাং। রাষ্ট্রদূতপাড়ায় গড়ে উঠেছে গভীর ষড়যন্ত্রের টুইসডে কাব। সেখানে গোপন প্রহরে খাতা-কলমে নির্ধারণ হয় তেল-গ্যাস, মানবসহ সব ধরনের সম্পদের ভবিষ্যৎ। পলিসি-পাচার এবং ভাগবাটোয়ারা। হতেই পারে। কারণ পুঁজিবাদীরা এর চেয়ে দুর্বল সরকার এবং গরিব জনগণ বিশ্বের আর কোথায় পাবে? মানুষের ভারে জর্জরিত অভাগা দেশটির অত তেল-গ্যাস আর সস্তা জনসম্পদই হয়েছে কাল। পুড়িয়ে মারলেও জবাবদিহিতা নেই। অথচ পশ্চিমের একজন শ্রমিক মরলে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার তিপূরণ। এমনকি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত জনগণের পে দাঁড়ায়। দেশ চালাচ্ছেন হানা-মজিনা এবং শিব শংকরেরা। ভাগে ভারত পেয়েছে স্থলবন্দর। চীন-আমেরিকার ভাগে সমুদ্র ও নদীবন্দর। ইউরোপিয়ানেরা পেয়েছে সবচেয়ে সস্তায় লাখ লাখ পোশাকশ্রমিক, যাদেরকে ওরা ল্যাবরেটরির গিনিপিগের বেশি মনে করে না। এই খাতে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে আয় করছে হাজার হাজার বিলিয়ন। কনকো ফিলিপস-শেভরনের জন্য বঙ্গোপসাগরের ভাণ্ডার। কয়লাভাণ্ডারের মালিকানা যৌথভাবে ভারত-চীনের হাতে। বিনিময়ে কী পেলাম? কেরালার সস্তা পেঁয়াজ আর গুজরাটের মোটাতাজা গরু? ইউরোপ-আমেরিকার দোকানগুলোতে যখন যাই, চোখে পানি আসে যখন দেখি বাংলার কোনো হতভাগী নাসিমার ৩০ পয়সার শ্রমের বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ ডলারে প্যান্ট। ডলার আনার কৃতিত্ব কি আদৌ সরকারের? প্রাইভেট সেক্টরের মাধ্যমে এই অসাধ্য সাধন করেন প্রবাসী শ্রমিকেরা, ৪২ বছর পরও যাদের অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ সরকারগুলো, কতটুকু অনাস্থা জানিয়েছি? এদের অযোগ্যতার কারণে মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার ছুঁতে পারছে না। মধ্যপ্রাচ্য নেয় শুধু মানবসম্পদ, বিনিময়ে প্রবাসীরা ঝরায় ঘাম, আনে বৈদেশিক মুদ্রা। সেই মুদ্রায় সপরিবারে গণভবনে গুডটাইম। সেই ঘামের বিনিময়ে ইউরোপ-আরব আয় করে হাজার হাজার বিলিয়ন ডলার। টাকা রাখার জায়গা নেই বলে আরব রাজপুত্ররা স্বর্ণ দিয়ে জাম্বোজেট বানায় (সত্যি কথা)। হতভাগা শ্রমিকেরা ফেরত আসে দড়ি বাঁধা দুটি বস্তা আর দুই গ্যালন জমজমের পানি নিয়ে। উন্নতির কথাই যদি বলি, ৪২ বছর পরও শ্রমিক আর পোশাক ছাড়া রফতানির কী আছে? এখনো গ্রামগঞ্জে শিঙ্গা ফুঁকিয়ে চিকিৎসা হয়। নদীতে সব হারিয়ে সেই পানিতেই নৌকায় বাস করে লাখো মানুষ। পণ্যের বাজার তুলে দিয়েছি ফিরিঙ্গিদের হাতে। সফল কমিউনিটি কিনিকের নামে শ্রেষ্ঠ ধোঁকাবাজি। বাঁধ দিতে দিতে নদীগুলোকে শুকিয়ে মরতে দিয়েছি। এমনকি রাতের গভীরে বনের গাছ আর ইলিশগুলো মেরে নিয়ে যাচ্ছে ভারত। আমাদের একটুখানি রাস্তা তছনছ করে প্রায় বিনা পয়সায় হাজার হাজার টন মালামাল যাচ্ছে সাত বোনের রাজ্যগুলোতে। উপদেষ্টা যখন চিৎকার করেন, ভাড়া চাওয়ার নাম অসভ্যতা, তখন সত্যিই হয়ে যাই উটপাখি। সাড়ে চার বছরে ঢাকা-দিল্লির যত রঙ্গ, পেলাম অসংখ্য ফেলানীর লাশ। নতজানু হতে হতে শেষ দাগ পর্যন্ত ছুঁয়েছে পররাষ্ট্রনীতি। প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই টুইসডে কাবেরওজন বাড়ে। ৬০ ভাগ গ্যাস নেবে কনকো ফিলিপস, বাকি ৪০ ভাগেরও মুনাফার অর্ধেক চাই। বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনা, কিন্তু কী তিপূরণ দিলো আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন? ঢাকায় বসে সব দেখছেন হানা-মজিনারা। রানা প্লাজার গোরস্থানে কি একটি মরা ফুল দিলো রাষ্ট্রদূতদের গং? বরং ৩০ জুলাই গার্ডিয়ানের গরম খবর রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর গার্মেন্ট ব্যবসায় বেড়েছে ১৭ শতাংশ। টুইসডে কাবের বাইরে কোনো প্রতিবাদ মিছিল দেখেছেন? সম্পদ লুটে নিতে শকুনের মতো হামলে পড়েছে ইউরোপীয় ও আমেরিকানেরা। গার্মেন্ট সেক্টরকে মধ্যপ্রাচ্যের তেলের মতো খাবলে ধরেছে। কেন ধরবে না। পুঁজিবাদীদের চোখে সব কিছুই ডলার। ১৫ শকেন, ১৫ লাখ লোক মরলেও কিচ্ছু আসে-যায় না, পুঁজিবাদের ধর্মই তাই। দরদি মজিনা বাংলাদেশকে গার্মেন্ট সেক্টরের বাঘ বানাতে উদগ্রীব। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি। বুঝতে হবে মধ্যপ্রাচ্যকে লণ্ডভণ্ড করার একটাই কারণ, তেল। আর আমাদেরকে বাঘ বানানোর কারণ, মাত্র ১৪ পয়সায় শ্রমিক, আমেরিকাতে যার ন্যূনতম মূল্য ঘণ্টায় সাড়ে সাত ডলার। এই অমৃত বিশ্বের কোথাও নেই। বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড শুষে খাচ্ছে পুঁজিবাদী কাবের সদস্য সামিট গ্রপ আর শেভরন (বিবিয়ানা ফিল্ডের গোপন তথ্য প্রচারের কিছু আগে খুন হলেন সাগর-রুনি)। বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস উত্তোলনের জন্য মার্কিন কোম্পানিগুলো সমুদ্র বিজয়ের আগেই হোমওয়ার্ক শেষ করেছিল। সুতরাং এক-এগারো এবং টুইসডে কাবের সদস্যরা বাংলাদেশকে নিয়ে এই মাপের আচরণের কারণ দুর্বল, অযোগ্য, অপদার্থ সরকার। প্রতিটি ঘটনা ঘটা মানেই পুঁজিবাদীদের জন্য অপার সম্ভাবনা। রানা প্লাজা নিয়ে জিএসপি খেলা বোঝার মতো মেধা না থাকলেও সরকার তা স্বীকার করে না। মজিনার অতি উৎসাহে ভিরমি খাই, হচ্ছেটা কী? ভারতের আগ্রাসনে চমকে যাই, ’৭১-এর অর্জন কি ুদ্র দানবের থাবামুক্ত হয়ে বড় দানব? আগে জানতাম, আমেরিকায় পড়ালেখা করলে উন্নত হওয়া যায়, কিন্তু সজীবের মঙ্গা রাজনীতিতে হাইব্রিড গণতন্ত্রের অস্তিত্বে হতাশ। পীরগঞ্জের মঙ্গা রাজনীতি আবারো প্রমাণ করল শুধু আওয়ামী লীগই নয়, ১৬ কোটি মানুষও রাজনৈতিক মঙ্গাকবলিত। পরিবারতন্ত্রের নতুন লগ্নে সুশীলসমাজের উটপাখি আচরণ হতাশাজনক। আর কত মৃত্যু হলে খড়গ বন্ধ হবে? সুতরাং আগামীতে যদি সরকার বদল হয়, নাৎসিদের মাপে বিচার করতে হবে ক্ষমতাসীন দলটিকে; কারণ নাৎসি মানেই শুধু যুদ্ধাপরাধ নয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যতবারই এরা মতায় এসেছে ততবারই দলটি দেশ ও মানুষের অপূরণীয় তি করেছে। দুইবার এরা চতুর্থ এবং ১৫তম সংশোধনীর মতো দুঃসাহস প্রয়োগ করেছে। এ দেশের অন্ধ মানুষ, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য হয়তো এ দলের নেতৃত্বের বিচার কখনোই হবে না; কিন্তু হেফাজতের ঘটনায় অপরাধ প্রমাণ হয়েছে। অধিকার বলছে ৬১ হেফাজত, ১ জুলাই বিশ্ব মানবাধিকার কমিশন বলল ৫ মাসে ১৫০টি বিচারবহির্ভূত খুন। জাতিসঙ্ঘের চ্যাপ্টারে উল্লেখ, কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর এক বা একাধিক মানুষ খুনের নাম মানবতাবিরোধী অপরাধ। সুতরাং একমাত্র অধিকারেরতথ্য দিয়েই সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিপ্রয়োগ করে উল্টো বর্তমান সরকারকেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব। 


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads