সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৩

কিল অ্যান্ড রুল!


একসময় সাম্রাজ্যবাদীদের নীতি ছিল ডিভাইড অ্যান্ড রুলঅর্থাৎ বিভাজন সৃষ্টি করে শাসন কর। যুগে যুগে সাম্রাজ্যবাদীরা এই নীতিকে ধারণ করে বিভিন্ন জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে তাদেরকে শাসন করেছে। তাদের সর্বস্ব লুটেপুটে খেয়েছে। এই নীতি এখনো বলবৎ আছে। বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক দলের অনৈক্য, ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিভাজন ও বর্ণবৈষ্যম্যের পেছনে সাম্রাজ্যবাদীরা লেগে থাকে সব সময়। সর্বদাই এরা ফুয়েল দিয়ে বিভিন্ন দেশের জাতিগত ঐক্যে ফাটল ধরানোর কাজে ব্যস্ত থাকে। মানুষকে শতধা বিভক্ত করার পর শুরু হয় সাম্রাজ্যবাদীদের আসল খেলা। এরা এদের স্বার্থ উদ্ধারে নেমে পড়ে। এরপর বিভক্ত জনগণকে শাসন ও শোষণ করে তাদের মতো করে। ডিভাইড অ্যান্ড রুলনীতির সাথে এখন আরেকটি নীতিও যুক্ত হয়েছে। সেটি হচ্ছে,‘কিল অ্যান্ড রুলতথা হত্যা করে শাসন কর। সাম্রাজ্যবাদীরা গোটা বিশ্বে এখন এই নীতিই হরদম অনুসরণ করছে। কোনো ধরনের নৈতিকতা, মানবতাবোধ ও মানবাধিকারকে এরা তোয়াক্কা করছে না। দুঃখের বিষয়, যারা মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বিশ্ব গড়ার কথা মুখে লাউড স্পিকার লাগিয়ে সব সময় বলেন এরাই আবার বিরোধী মতকে দমন করার জন্য হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠেন অবলীলায়! মিসরের ঘটনাই ধরা যাক। মিসরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে গত ৩ জুলাই দেশটির সেনাবাহিনী অবৈধভাবে মতা দখল করে নেয়। জেনারেল আবদুল ফাতাহ আল সিসির নেতৃত্বে মিসরে ইতোমধ্যে কয়েক দফা গণহত্যা চালানো হয়েছে। ব্রাদারহুডের নেতৃত্বে দেশটির বেশির ভাগ জনগণ রাস্তায় বিােভে ফেটে পড়লে এরা দফায় দফায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয় সেখানে। ইতোমধ্যে পাঁচ হাজারের অধিক মুরসি সমর্থক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অগণিত মানুষ আহত হয়েছেন। গত ১৪ আগস্ট মিসরের সামরিক বাহিনী রাজপথে অবস্থানরত শান্তিপূর্ণ জনগণের ওপর যে পৈশাচিকভাবে ক্র্যাকডাউন চালায় তা এক কথায় জঘন্য। নারী ও শিশুরাও বাদ যায়নি তাদের আক্রমণ থেকে। আল্লাহর ঘর মসজিদকেও তারা পরোয়া করেনি। রাবা আল আদাবিয়া মসজিদ জ্বালিয়ে দিয়েছে যৌথ বাহিনী। রাস্তায় মুরসি সমর্থকদের লাশ আগুনে পুড়তে দেখা গেছে। কায়রোর আরেক মসজিদ থেকে ২৫০ জনের আগুনে পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্পেনের খ্রিষ্টানেরা যেভাবে পয়লা এপ্রিল মুসলমানদের মসজিদে জড়ো করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল ঠিক সেভাবেই মিসরীয় যৌথবাহিনী গণতন্ত্র ও শান্তির পরে নারী-পুরুষদের মসজিদে আটক করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে! এর চেয়ে জঘন্য দৃশ্য আর কী হতে পারে? ব্রাদারহুডের নেতা বেলতাগির ১৭ বছরের কিশোরী কন্যাও যুক্ত হয়েছে লাশের মিছিলে। মুরসির সমর্থকেরা এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে গত শুক্রবার জুমা নামাজ বাদ বিােভ মিছিলের আয়োজন করলে সেখানেও যৌথবাহিনী হামলা চালিয়ে শত শত প্রতিবাদী জনতাকে হত্যা করে। সভ্যতার চারণভূমি মিসর এখন ভাসছে রক্তের বন্যায়। মিসরের যৌথবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ল মুরসি সমর্থকদের ওপর। আর তাতে সায় দিলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা আমেরিকা। আমেরিকার তো ইসরাইলকে রা করতে হবে। এ কারণে যেভাবে হোক মিসরকে কব্জায় রাখতে হবে। মুরসির সরকার দিয়ে হয়তো সেই স্বার্থ হাসিল হবে না। তাই মুরসির সরকারকে উৎখাতে তারা অর্থশক্তি ব্যয় করতে পারে। আমেরিকার এই ভূমিকা আশ্চর্যের কিছু নয়। কিন্তু সৌদি আরব যে অবস্থান নিয়েছে তাকে আমরা কী বলব? সামরিক ক্যু হওয়ার সাথে সাথে সৌদি সরকার মিসরের অবৈধ সেনা সরকারকে স্বাগত জানিয়ে কোটি কোটি ডলার অনুদানের ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে। মিসরের ইখওয়ানি ভাইদের ওরা সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়ে সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় সেনা সরকারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আরব রাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানান। সত্যিই ধিক্কার জানানোর ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি আমরা। হাজার হাজার নিরস্ত্র জনতাকে পাখির মতো গুলি করে যারা মারছে তারা সন্ত্রাসী নয়; আর যারা নিরীহ কায়দায় বুলেট-বোমার আঘাতে মারা যাচ্ছেন তারা হয়ে গেলেন সন্ত্রাসী! সত্যিই অবাক হতে হয়। এভাবেই চলছে গোটা বিশ্ব। সারা দুনিয়া এখন নরকে পরিণত হয়েছে। যেখানেই সত্যের পরে মানুষ সেখানেই চলছে নির্মম গণহত্যা। সত্যের পে কাউকে দাঁড়াতে দেয়া হবে না। যুগ যুগ ধরে আরব বিশ্বের লেবাসধারী শাসকেরা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে টিকেছিল। সাদ্দাম হোসেন লাখ লাখ গণতন্ত্রকামী জনতাকে হত্যা করেছিলেন। কর্নেল গাদ্দাফিও শাসন করেছিলেন বন্দুকের নল দিয়ে। হোসনি মোবারক, বেন আলিরাও ওই একই পথে শোষণ করেছেন জনসাধারণকে। কত মায়ের বুক তারা খালি করেছেন তার কোনো ইয়ত্তা নেই। অবশেষে এলো আরব বসন্ত। আরব বসন্ত তছনছ করে দিলো জালেমশাহিদের গদিগুলোকে। যুগ যুগ ধরে জালেম শাসকদের ধারাবাহিক অত্যাচারে এত দিন যারা অতিষ্ঠ ছিল তারা জেগে ওঠে হটিয়ে দিলো ওদের। গণজোয়ারে ভেসে গেলেন আরবের জালেম শাসকেরা। যাদের পতন হয়নি তাদেরও ভয় ঢুকে গেল অন্তরে। কখন না আবার মিসর, তিউনিসিয়ার বাতাস গায়ে লাগে। শুরু হলো ষড়যন্ত্র। নিজেদের গদি টিকিয়ে রাখতে মুসলমানদের চিরশত্রইহুদিদের সাথে হাত মিলাতেও ওরা ক্ণ্ঠুাবোধ করল না। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকারকে হটাতে ওরা তাই বেছে নিলো গণহত্যার পথ। কিল অ্যান্ড রুলএটাই এখন জালেম শাসকদের নীতি। ইরাক, আফগানিস্তান, মিয়ানমারের আরাকান, ফিলিস্তিন, কাশ্মির, সিরিয়া এই নীতিতেই ছারখার হয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও এই নীতির বাইরে নেই। এ কথা এখন নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, বিশ্বব্যাপী ইসলামপন্থীরাই এখন প্রধান টার্গেট। যারাই ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কথা বলবেন তাদেরকে যেকোনো ছুতা-নাতায় খতম করা হবে। ইসলামপন্থীদের হত্যা করলে মানবাধিকার ুণœ হয় না। বরং তাদের খতম করতে পারলে অসাম্প্রদায়িকতা, সেকুলারিজম প্রতিষ্ঠা পায়। ইসলামপন্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিলেও কোনো আপত্তি নেই। কেননা ওরা যে ইসলামপন্থী, ওদের যে গণতান্ত্রিক অধিকার থাকতে নেই! পশ্চিমাদের বিশ্বস্ততা অর্জনের পথও এই একটি। আর তা হচ্ছে, ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের যত পার খতম কর!


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads