শনিবার, ৫ জুলাই, ২০১৪

জনপ্রতিনিধির ভূমিকা প্রসঙ্গ


জনপ্রতিনিধিরাতো জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করার কথা। জনগণের বোধ-বিশ্বাস ও আশা-আকাক্সক্ষার অনুকূলে না চললে কেউ নিজেকে জনপ্রতিনিধি ভাবেন কেমন করে? আজকাল কোনো কোনো জনপ্রতিনিধির কর্মকা- লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করার বিষয়টি এখন তাদের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। অর্থ উপার্জন ও পেশী শক্তি গঠনই এখন তাদের কাছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমন চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে ময়মনসিংহের গৌরিপুর উপজেলায়। সেখান থেকে ফিরে প্রথম আলোর প্রতিবেদক লিখেছেন, টাকা নেয়া হচ্ছে জুয়ার আসর থেকে। টাকা নেয়া হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও এমপির বিশেষ বরাদ্দের উন্নয়ন প্রকল্প থেকেও। তিন বছর ধরে চলছে এ অবস্থা। গৌরিপুরে জুয়া-হাউজি এখন ছড়িয়ে পড়েছে মেলা থেকে বাড়িতে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবর রহমান ফকির এসব জুয়ার আসর থেকে প্রতিদিন পঞ্চাশ হাজার টাকা করে নেন বলে অভিযোগ আছে। তবে এ টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য। উল্লেখ্য যে, নিজের বিরোধিতাকারীদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া, মামলা দিয়ে হয়রানিসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এমপি মজিবর রহমানের অনুসারীরা এক শিক্ষককে দিগম্বর করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। গৌরিপুরে গেলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও একাধিক জনপ্রতিনিধি প্রথম আলোকে জানান, গত মার্চ মাসের প্রথমদিকে পৌরসভার ভেতরে পুরাতন গো-হাটায় কৃষি মেলা করা হয়। এতে বসানো হয় জুয়ার আসর। অভিযোগ উঠেছে, ১২ দিন চলা ওই জুয়ার আসর থেকে প্রতিদিন পঞ্চাশ হাজার টাকা করে নিয়েছেন এমপি মহোদয়। গৌরিপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে তিনি ওই অর্থ নেন। জানতে চাইলে মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোর কাছে ওই টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেন। পৌর এলাকায় জুয়ার আসর বসানোর অনুমতি দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, রাজনৈতিক চাপে মৌখিক অনুমতি দিতে হয়েছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সনাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল আহমেদের বাড়িতে তিন বছর ধরে জুয়ার আসর বসছে। সেখান থেকেও প্রতিরাতে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে এমপি মহোদয়কে দেয়া হতো। ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বুলবুল আহাম্মদ বলেন, ‘দুলাল আহমেদের বাড়িতে প্রতিরাতে ওয়ান-টেন খেলা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন মাইক্রোবাসে করে ওই বাড়িতে এসে জুয়া খেলে।
এরকম আরো কয়েকটি জুয়ার আসরের কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। যেমন এমপি মহোদয়ের অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রমিজউদ্দিন স্বপনের বাড়িতেও জুয়ার আসর বসে। সম্প্রতি এর বিরুদ্ধে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খসরুজ্জামানসহ উপজেলার নাগরিক কমিটির নেতারা ইউএনও কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। তারা পুলিশ সুপারকেও বিষয়টি মুঠোফোনে জানান। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এর পরপরই জেলা কমিটির অনুমোদন ছাড়াই গত ৫ জুন শফিকুল ইসলামকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, জুয়ার আসর বন্ধে উদ্যোগ নেয়ার কারণেই তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
আমরা জানি, জুয়া একটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক অপরাধ। জুয়ার কারণে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে যায়, ভেঙ্গে যায় তাদের পরিবার। জুয়াকে কেন্দ্র করে হানাহানি, মারামারি, সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি প্রশ্রয় পায়। সরকার ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের তো শক্ত হাতে জুয়ার দৌরাত্ম্যকে দমন করার কথা। কিন্তু তেমন চিত্র আমরা লক্ষ্য করিনি। বরং আমরা দেখেছি সরকার দলীয় স্থানীয় এমপি মহোদয়ের জুয়াকে প্রশ্রয় দিয়ে অবৈধ অর্থ উপার্জনের কর্মকা-। আর এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ হারাতে হয়েছে শফিকুল ইসলামকে। এটি দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির একটি বড় উদাহরণ। এখন সরকারকে ভেবে দেখতে হবে জুয়া তথা দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতিকে তারা প্রশ্রয় দেবেন, নাকি অবৈধ ও অন্যায় কর্মকা- বন্ধ করতে আইনের শাসনকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করবেন। এখন তো জুয়ার মতো নিন্দনীয় আসর থেকে অর্থ উপার্জন করতে এমপিদের রুচিতে বাধছে না। কিন্তু এ ধরনের এমপিদের দলের প্রতিনিধি বা নেতা হিসেবে মেনে নিতে সরকারি দল আওয়ামী লীগের রুচিতে বাধে কিনা সেটাও দেখার মতো বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads