ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৪ জুলাই পর্যন্ত ৭৩০ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ২৫ ভাগই শিশু। ইসরাইল গাজায় হামলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে এবং দেশটির এমন কর্মকা- যুদ্ধাপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার নাভি পিল্লাই। এদিকে ৪৭ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ইসরাইলের ‘যুদ্ধাপরাধ’ তদন্ত বিষয়ক একটি খসড়া প্রস্তাবের ওপর গত বুধবার ভোট হয়। এতে ২৯টি দেশ ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি খতিয়ে দেখার লক্ষ্যে আনীত প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। ১৭টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে, যাদের অধিকাংশই ইউরোপীয় রাষ্ট্র। লক্ষণীয় বিষয় হলো, একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দেয়।
প্রতিদিনই গাজায় শিশু ও নারীসহ ফিলিস্তিনী নাগরিকরা নিহত হচ্ছেন, আর বর্তমান সভ্যতার ধারক-বাহকরা কাগুজে ভোটাভুটিতে মগ্ন রয়েছেন। এভাবে দিন গড়াচ্ছে আর নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। এমন ভোটাভুটিতেও যে চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা পাশ্চাত্যের জন্য খুবই লজ্জাকর। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ইসরাইলের ‘যুদ্ধাপরাধ’ তদন্ত বিষয়ক একটি খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে অধিকাংশ দেশ ভোট দিলেও ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো ভোটদানে বিরত থাকে এবং একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। এমন চিত্র থেকে সহজেই উপলব্ধি করা যায়, কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল গাজায় বর্বর হামলা অব্যাহত রাখার সাহস পাচ্ছে। প্রসঙ্গ চলে আসে ইরাক ও আফগানিস্তানে আমেরিকা ও তার মিত্রদের হামলার কথা। যে সব মিথ্যা ও অযৌক্তিক অজুহাতে মুসলিম দেশ দু’টিতে হামলা চালানো হয়েছে, তার চাইতেও অনেক বেশি যৌক্তিক কারণ কি সৃষ্টি হয়নি ইসরাইলে হামলা চালানোর মতো? তারপরও ইসরাইলকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না, বরং প্রশ্রয়ের ধারাই রয়েছে অব্যাহত।
ইসরাইল যে শুধু মানবাধিকারই লঙ্ঘন করছে না বরং যুদ্ধাপরাধও করছে তা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ব্রিটেনের একটি সংবাদপত্রও জানিয়েছে, ইসরাইলের ‘ফ্লিচেট সেল’ শরীরে চার সেন্টিমিটার লম্বা একটি ধাতব যৌগ ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা সহ্য করতে পারছে না শিশুরা। আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করেই ‘ফ্লিচেট সেল’ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে খোদ ইসরাইলের মানবাধিকার কমিশন। এদিকে ইসরাইলের ‘বিশেষ অস্ত্রের’ কথা উল্লেখ করেছেন গাজার আলশিফা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞরাও। চিকিৎসক নাবিল হাল আদাল বলেন, ‘যারা বোমার আঘাত নিয়ে ভর্তি হচ্ছে, তারা কেউ কথা বলতে পারছে না। শুধু বলছে, মনে হচ্ছে হাজারটা সূচ শরীরে বিঁধে রয়েছে।’ ওষুধ এবং অস্ত্রোপচারেও শিশুদের সে যন্ত্রণা কমছে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, যুদ্ধে ক্ষতি শুধু এক পক্ষেরই হয় না। তবে যুদ্ধবাজ ইসরাইলের ক্ষতির কথা আমরা কমই জানি। ইসরাইলী সৈন্যদের মধ্যে অনেকেই নানা অজুহাতে গাজা যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে না। অনেকেই ট্যাংকে চড়ে গাজায় যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বিশেষ করে গাজায় স্থল অভিযানের সময় হামাসের হামলায় অনেক সৈন্য হতাহতের ঘটনায় যুদ্ধের পরিণতি নিয়ে হতাশাগ্রস্ত ১৫ জন সৈন্য আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে। এমন খবর দিয়েছে ইসরাইলের সরকারি চ্যানেল-টু টেলিভিশন। চ্যানেলটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, অনেক ইসরাইলী সেনা যুদ্ধ এড়ানোর জন্য নিজেদের আহত দেখাতে নিজের পায়ে নিজেরাই গুলী চালিয়েছে। এসব ঘটনায় যুদ্ধবাজ ইসরাইলী নেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। গাজায় ইসরাইলী হামলা শুরু হবার পর থেকে অন্তত ৬০ ইসরাইলী সেনা নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে। ফিলিস্তিনী ¯œাইপারদের গুলীতে নিহত হয়েছে অন্তত ১১ ইসরাইলী সৈন্য। ফিলিস্তিনী যোদ্ধারা ধ্বংস করেছে ৩৬টি ইসরাইলী সাঁজোয়া যান। এছাড়া তারা একটি ইসরাইলী ড্রোন বিমান ঘায়েল করেছে এবং এফ-১৬ জঙ্গি বিমানেও আঘাত হেনেছে হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র। পরে ওই জঙ্গি বিমানটি ইসরাইলের একটি বিমান ঘাঁটিতে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। যুদ্ধ আসলে ক্ষতিই ডেকে আনে। তবে যুদ্ধবাজদের প্রকৃত সত্য উপলব্ধিতে বিলম্ব ঘটে। যুদ্ধবাজ ইসরাইল হয়তো আরো ক্ষতির অপেক্ষায় আছে। যারা মজলুম তারা যে চিরকালই মার খেয়ে যাবে এমন কোনো কথা নেই। সার্বভৌম ক্ষমতা তো মহান আল্লাহর হাতে। তিনি বাড়াবাড়ি পছন্দ করেন না। অতীতে বাড়াবাড়ির পথে ধ্বংস হয়ে গেছে অনেক স¤্রাট ও সা¤্রাজ্য। ইসরাইল এবং তার প্রশ্রয় দাতারা বিষয়টি উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন