সমুদ্র সীমা বিরোধের রায় প্রকাশিত হয়েছে। সরকার পক্ষ বলছে, ভারতের সাথে এই বিরোধে তারা সমুদ্র জয় করেছে। বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি বলছে যে, এই রায়ের মাধ্যমে দক্ষিণ তালপট্টি ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আরো বলা হচ্ছে যে, এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা হারিয়েছে সে এলাকায় অর্থাৎ সমুদ্রের তলদেশে রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদের বিপুল মজুদ। এই রায়ে কে হেরেছে আর কে জিতেছে, সে তর্কে আমি যাব না। কারণ বিষয়টি অত্যন্ত টেকনিকাল। বিষয়টি নিয়ে আমি গভীরভাবে স্টাডি করেছি। সেই স্টাডির আলোকে রায়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনাও করেছি। এবং নিজের মনে একটি ধারণাও সৃষ্টি হয়েছে। তবে যেহেতু আমি টেকনিক্যাল ব্যক্তি নই তাই ঐ রায়টি নিয়ে হার জিতের প্রশ্নে আমি যাব না। এছাড়া পত্র পত্রিকায় এ পর্যন্ত যে সব লেখালেখি বেরিয়েছে সেগুলোতে দেখলাম যে, ২/৪ জন টেকনোক্র্যাট ব্যক্তি এ বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন অথবা টকশোতে বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু কে হারল আর কে জিতল সে বিষয়ে সরাসরি বক্তব্য প্রদানের বিষয়টি তারা এড়িয়ে গেছেন। যারা এড়িয়ে গেছেন তারা সম্ভবত দেশের বড় দু’টি রাজনৈতিক দলের ও জোটের বিপরীতে অবস্থান দেখে কিছুই বলতে যাননি। এরা গাছেরটাও খান আবার তলারটাও কুড়ান। তাই এরা কাউকেই চটাতে চান না। আমি ভেবেছিলাম ড.কামাল হোসেন এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলবেন। কারণ তালপট্টি নিয়ে ভারতের সাথে বিরোধ শুরু হলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বিষয়টি নিয়ে নিগোশিয়েট করার জন্য ড. কামাল হোসেনের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন। যতদূর মনে পড়ে, ড. কামাল হোসেন ভারতের সাথে এই ব্যাপারে অন্তত ৫ টি বৈঠক করেন। ঐ সব বৈঠক বা নেগোশিয়েশনের ফলাফল হয় শূন্য। ফলাফল যাই হোক না কেন যেহেতু কামাল হোসেন বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন নাড়াচাড়া করেছেন তাই ধারণা করা যেতে পারে যে, এ ব্যাপারে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ। অন্তত সমুদ্র আইন সম্পর্কে তার যথেষ্ট পড়াশুনা রয়েছে। সেই কামাল হোসেন এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। কিন্তু আসল কথা কিছুই বলেন নি। তিনি বলেছেন যে, তিনি এ ব্যাপারে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, তারা যেসব ঢালাও মন্তব্য করেছেন তার আগে তাদের প্রয়োজন রায়টি খুব ভালো করে স্টাডি করা এবং বিশ্লেষণ করা। এটুকু বলে তিনি শেষ করেছেন।
আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া ছিল একদিকে উল্লাস এবং বিএনপির প্রতি আক্রমণে ভরা। উল্লাস এই জন্য যে তারা “সমুদ্র জয়” করেছেন। আর আক্রমণ এই জন্য যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া নাকি তালপট্টি ইস্যু নিয়ে নির্লিপ্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেউ কেউ এমন কথা বলেছেন যে, প্রেসিডেন্ট জিয়াই নাকি পরোক্ষভাবে তালপট্টি ভারতের হাতে তুলে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের তৃতীয় বক্তব্য হল এই যে, তালপট্টি নামক কোন দ্বীপের অস্তিত্ব কোন কালেই ছিল না এবং এখনও নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতদূরও বলেছেন যে, বিএনপির নেতারা সমুদ্রে যাক এবং কোথায় তালপট্টি সেটি খুঁজে বের করুক। আওয়ামী লীগের এই তিনটি বিষয়ই অত্যন্ত আপত্তিকর এবং সত্যের অপলাপ। বিষয়গুলো নিয়ে তাই বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।
প্রথম ইস্যুটি হল, সমুদ্র জয় সম্পর্কে। সমুদ্রকে কি কোনদিন জয় করা যায়? বঙ্গোপসাগর হল ভারত মহাসাগরের অংশ। ভারত মহাসাগর তো অনেক বড় ব্যাপার। বঙ্গোপসাগর হচ্ছে ২ দশমিক ২ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এক বিশাল এলাকা। সুতরাং সমুদ্র জয় তো দূরের কথা, উপসাগর জয় করাই কি চারটেখানি কথা? আমরা পেয়েছি ১৯ হাজার বর্গমাইল অথচ বঙ্গোপসাগরের আয়তন হল ২০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার। সুতরাং কথায় কথায় সমুদ্র জয়ের মত বাগাড়ম্বর করলে হাস্যাস্পদ হতে হয়।
দুই
আমি আগেই বলেছি যে, জয় পরাজয়ের প্রশ্ন এখানে তুলব না। বাংলাদেশের দাবি ছিল ২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। আমরা পেয়েছি ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকা (ভগ্নাংশ এখানে উল্লেখ করা হল না)। যে ৬ হাজার ১৩৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা আমরা হারিয়েছি, সেখানে রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিপুল রিজার্ভ। তালপট্টি দ্বীপ ওই ৬ হাজার ১৩৫ বর্গকিলোমিটারের অন্তর্ভুক্ত। তরে এর আশপাশে যে অঞ্চল বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত, সেখানেও প্রাকৃতিক গ্যাসের সম্ভাবনা রয়েছে। ১৯৬৫ সালে জাতিসংঘের একটি সংস্থা দক্ষিণ তালপট্টি এলাকায় বিপুল রিসোর্সের কথা উল্লেখ করেছিল। এদিকে ফার্স্ট পোস্ট নামে ভারতের একটি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, জাতিসংঘ সমুদ্রসীমা রায়ের মাধ্যমে হাড়িয়াভাঙ্গা নদী ও দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা লাভ করায় ভারত বিপুলভাবে লাভবান হয়েছে। রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, হাড়িয়াভাঙ্গা নদী যেখানে সাগরে মিশেছে, সেখান থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণের একটি খাঁড়িতে ভারত ২০০৬ সালে ১০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পেয়েছিল। হাড়িয়াভাঙ্গার মজুদ গ্যাসের পরিমাণ ভারতের কৃষ্ণ গোদাবারি অববাহিকার পুরো মজুদের প্রায় দ্বিগুণ।
ভারত বঙ্গোপসাগরে ১০০ টিসিএফ গ্যাস ও ২ বিলিয়ন ব্যারেল তেল আবিষ্কার করেছে। মিয়ানমার করেছে ৭.৭ টিসিএফ গ্যাস। ২০০৬ সালে ভারত সরকার তাদের ২৪টি গভীর সমুদ্র থেকে ব্লক টেন্ডার প্রদানের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। এর মধ্যে ব্লক ডি ২৩ (৮৭০৬ বর্গকিলোমিটার) ও ব্লক ডি ২২ (৭৭৯০ বর্গ কিলোমিটার) বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত ১৯৯১ সালের ২১টি ব্লকের অনেক অংশে জুড়ে রয়েছে। এখন নতুন রায়ের ফলে দেখতে হবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্লকগুলোর ক’টি এবার পুনর্বিন্যাস করতে হবে। মহীসোপান নিয়েও একটা বিভ্রান্তি আছে। এমনকি“ধূসর এলাকা নিয়েও আছে প্রশ্ন”।
মহীসোপানের বিষয়টিরও সমাধান হয়নি। এটা সমাধান করবে জাতিসংঘের অপর একটি সংস্থা। ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক অঞ্চল শেষ হওয়ার পরই শুরু হয় মহীসোপান। উপরের অংশ, অর্থাৎ জলরাশি দিয়ে মহীসোপানের বিচার করা হয় না। মহীসোপানের বিচার করা হয় পানির নীচের অংশ দিয়ে, যেখানে তেল, গ্যাসসহ প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। মহীসোপানের অর্থাৎ সাগরের নিচে আমাদের কর্মকা- চালাতে পারব। এই মহীসোপানের সীমানা নির্ধারণের জন্য আমাদের ন্যূনতম চার থেকে ছয় বছর অপেক্ষা করতে হবে। সাধারণত ৩৫০ থেকে ৪০০ নটিক্যাল মাইলকে মহীসোপানের সীমানা ধরা হয়। বাংলাদেশ ২০১১ সালে তার মহীসোপানের দাবি জাতিসংঘে জমা দেয়। মোট ৫২টি দেশের আবেদনপত্র জাতিসংঘ বিবেচনা করছে।
আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নাকি তালপট্টি ইস্যুটি সমাধানে শৈথিল্য প্রদর্শন করেছেন। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকৃত ঘটনা নি¤œরূপ:- ১৯৫৪ সালে প্রথম স্যাটেলাইট ছবিতে ধরা পড়ে যে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় দক্ষিণ তালপট্টি নামের একটি দ্বীপ ক্রমশই তার অস্তিত্ব প্রকট করে তুলছে। তখন থেকেই পাকিস্তান সরকার এই দ্বীপটিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরের বলে দাবি করে আসছিল। ভারতেও তখন এ নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্চ করেনি। এরপর ১৯৭১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে এ দ্বীপটির নাম ‘নিউ মুর’ করে এর মালিকানা দাবি করে বসে। ১৯৭৩ সালে শেখ মুজিবুর রহমান এই দ্বীপটির মালিকানা বাংলাদেশের বলে দাবি করেন এবং তা চূড়ান্ত করার জন্য তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনকে ভারতের সঙ্গে পাঁচ দফায় আলোচনার জন্য নিয়োজিত করেন। তর্ক-বিতর্কের শুরু হয় তখন থেকেই। ১৯৭৪ সালে আমেরিকার স্যাটেলাইটে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের অস্তিত্ব আরোও স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। তখন এর দৈর্ঘ্য ছিল ৩.৫ কিলোমিটার ও প্রস্থ ছিল ৩ কিলোমিটার।
১৯৮০ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, সীমান্ত নদী হাড়িয়াভাঙ্গায় নবোত্থিত দ্বীপ/ দ্বীপগুলো (নিউমুর/দক্ষিণ তালপট্টি/পূর্বাশা) নিয়েও উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। উভয়পক্ষ এই মর্মে একমত হন যে, অতিরিক্ত তথ্যাবলি সম্পর্কিত গবেষণাগুলো হাতে পাওয়ার পর তা দুই পক্ষের মধ্যে বিনিময় হবে এবং দ্বীপটির মালিকানা নিয়ে শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য যথাশীঘ্র আবারও বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৮০ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যসভায় ঘোষণা করেন যে, তালপট্টি দ্বীপ ভারতের। ১৯৮০ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শামসুল হক জাতীয় সংসদে জানান যে, দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ বাংলাদেশের। ১৯৮১ সালের ৯ মে নৌ-বাহিনীর একটি জাহাজ পাঠিয়ে ভারত সেখানে পতাকা উত্তোলন করে। বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান সরকার এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। ফলে কিছুকাল পরেই ভারত ঐ দ্বীপ অঞ্চল থেকে তার নৌ বাহিনীর জাহাজ ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
২০০৪ সালে ভারত বিশ্বব্যাপী প্রচার করতে শুরু করে যে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ বিলীন হয়ে গেছে, প্রকৃতপক্ষে এখনও স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যায় যে, দ্বীপটির অস্তিত্ব আছে এবং তা বাংলাদেশের অংশে।
তিন
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানই তালপট্টি দ্বীপ ভারতকে দিয়ে গেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ এই দু’বছরই তালপট্টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি নাড়াচাড়া হয়েছে। ওই সময়েই তালপট্টি নিয়ে ভারতের যুদ্ধজাহাজের বিপরীতে বাংলাদেশের গানবোট প্রতীকী অবস্থান গ্রহণ করেছিল। ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের বাংলাদেশ সফরকালে বিষয়টি আনুষ্ঠানিক আলোচনায় উত্থাপন করেন। ১৮ আগস্ট ১৯৮০ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নরসীমা রাও বাংলাদেশ সফরে এলে দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে আরও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির কথা বলা হয়। ১৯৮১ সালের ১৬ মে বাংলাদেশ সরকার তালপট্টি বিরোধ নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে এবং তা জাতীয় সংসদে পেশ করে। অতঃপর ঐ বছর ১১ সেপ্টেম্বর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এ বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরশাদের আমল থেকেই বিষয়টি ধীরে ধীরে হিমঘরে চলে যায়।
১৯৯৮ সালে ভারত তালপট্টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএসএফের একটি ক্যাম্প স্থাপন করলে বাংলাদেশ এর প্রতিবাদ জানায়। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তালপট্টির ওপর বাংলাদেশের অধিকারের বিষয়টি তুলে ধরে আলোচনার উদ্যোগ নেয়। উদ্যোগটি নিষ্ফল হয়। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার উপক্রম হলে সরকার তড়িঘড়ি আদালতের শরণাপন্ন হয়।
চার
তালপট্টির অস্বিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । ওপরের সুদীর্ঘ আলোচনায় দেখা গেল যে, তালপট্টির অস্তিত্ব অবশ্যই ছিল। এবং সেজন্য ২০০৩ সালেও সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ বলছে যে, ১৯৮০ সালেই নাকি দ্বীপটি তলিয়ে গেছে। তাহলে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে বাংলাদেশ ভারত তালপট্টি নিয়ে ঝগড়া করল কিভাবে ? তারা কি হাওয়া নিয়ে ঝগড়া করেছে ? সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল এই যে, ২০১০ সালে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের গবেষকরা জানালেন যে, দ্বীপটি তলিয়ে গেছে। ২০০৯ সালেও গুগল মানচিত্রে তালপট্টির ছবি দেখা যায়। যেখানে অর্ধনিমজ্জিত গাছপালা দৃশ্যমান হয়।
আজকের এই কলামটি ড. ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর একটি লেখার অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করে শেষ করছি। লেখাটি ছাপা হয়েছে ১৭ জুলাই দৈনিক “যুগান্তরে”। লেখাটির সাবহেডিং, “বাংলাদেশের মানচিত্রেই দক্ষিণ তালপট্টি ভারতে দেখানো হয়েছিল ? ” ঐ লেখায় বলা হয়েছে,“ ২০১১ সালের ১৮ মে ঢাকার দৈনিক “সান” পত্রিকায় ‘অষষ ঢ়ৎবারড়ঁং সধঢ়ং ভষধবিফ, এড়াঃ,ঃড় ৎবঢ়ৎরহঃ সধঢ় ঃড় রহপষঁফব ঞধষঢ়ধঃঃর’ শিরোনামে ফাহুদ খানের এক রিপোর্টে দেখা যায়, আন্তজার্তিক আদালতের মামলায় বাংলাদেশের নথিতে যে মানচিত্র পেশ করা হয় তাতে দক্ষিণ তালপট্টির অবস্থান ছিল ভারতের ভাগে। এ বিষয়টি ধরা পড়ার পর বাংলাদেশের কৌসুলিরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। তখন তড়িঘড়ি লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে ১৯৪৭ সালের র্যাডক্লিফ রোয়েদাদের মানচিত্র সংগ্রহ করা হয়। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, ভূমি জরিপ অধিদফতর ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ মানচিত্র মুদ্রণ বিভাগের মধ্যে তীব্র বাগবিতন্ডা হয়। একে অপরকে দোষারোপ করে দায় এড়াতে থাকেন। কিন্তু ততদিনে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। (এরপর মামলায় জিততে হলে স্বয়ং জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে নিমে আসতে হবে)। এমন একটি স্পর্শ কাতর মানচিত্র যারা এভাবে তৈরি করেছেন, তারা সবাই আমাদের জাতীয় স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছেন। বলা যায়, তালপট্টি বাংলাদেশের হাতছাড়া হওয়ার পেছনে তাদের অবহেলা ও অযোগ্যতা বড় ভূমিকা পালন করছে। তারা কি জেনে শুনেই কাজটি করেছেন ? নাকি কোন মহল তাদের দিয়ে এ কাজটি করিয়েছে? বিষয়টির ব্যাপক তদন্ত হওয়া আবশ্যক।
আসিফ আরসালান
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন