বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে
রাজনীতিতে যে ধরনের ভাষা ও অঙ্গভঙ্গি চালু হয়েছে তা নিয়ে আগামী দিনের গবেষকেরা কিভাবে
বিচার-বিশ্লেষণ করবেন তা এখন থেকেই কিছুটা আন্দাজ করা যায়। তবে রাজা বাদশাহ ও শাসকদের
জীবিতকালে যে ইতিহাস বা সাহিত্য রচিত হয় তার ৮০-৯০ ভাগই তোষামোদি। যেমন ধরুন, রামায়ণ মহাভারতের কাহিনী। তখনকার দিনে কবি সাহিত্যিকেরা সাধারণ মানুষের কথা
তেমন বলতেন না। রাজা বাদশাহ বা শাসকদের কাহিনীই ছিল দেশের কাহিনী। রাম একজন বিদেশী
রাজা। তিনি ভূমিপুত্র বা স্বদেশী রাজাকে পরাজিত করে এ দেশ দখল করেছেন। কবিরা রামকে
দেবতা বানিয়ে মহাকাব্য রচনা করেছেন। রাবণ বা মহিষাশূরকে বানিয়েছেন রাস বা গণশত্রু।
তাই বিজয়ী দুর্গাকে বানানো হয়েছে দেবী। মহিষাশূরের স্থান হয়েছে দেবীর পদতলে।
বাংলাদেশের
চলমান সময়ে শক্তিধর নেতাদের জীবনী বা তাদের কর্ম নিয়ে লিখতে গেলে তোষামোদি করা ছাড়া
কোনো উপায় নেই। কিছু মানুষ আছে জন্মগতভাবেই তোষামোদি করে ভাগ্যের পরিবর্তন করে। রামায়ণ
মহাভারতও তেমনি দু’টি মহাকাব্য, যা এখন ব্রাহ্মণদের কল্যাণে ধর্মগ্রন্থের
রূপ ও মর্যাদা লাভ করেছে। তাই বলা হয় সমকাল নিয়ে কখনও ইতিহাস রচনা করা যায় না। তোষামোদেরা
যেসব ইতিহাস রচনা করেন তা হয়তো আগামী দিনে কেউ এগিয়ে এসে বলবে ইতিহাসকে পুনর্মূল্যায়ন
বা পুনর্নির্মাণ করতে হবে। ইতিহাসকে শোধরানোও যেতে পারে।
অখণ্ড
ভারতের ইতিহাসে দুই মহানায়ক হচ্ছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও বাহাদুর শাহ জাফর। ষড়যন্ত্রের
পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজকে হারিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অখণ্ড বাংলাদেশ দখল করে শুধু
তাদের ব্যবসায়ী স্বার্থ রা করার জন্য। শুল্কমুক্ত অবাধ ব্যবসায় করার জন্যই কোম্পানি
নবাবের কিছু পারিষদ, বড় ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারকে হাত করে নবাবকে যুদ্ধে
পরাজিত করে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন। শুরু হলো ভারতের পরাজয়ের দিন। ১৮৫৮ সালে তারা দিল্লি
দখল করে। এই এক শ’বছর ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে দেশের স্বাধীনতা রার জন্য দেশপ্রেমিক
মুসলমানেরা। হিন্দুরা রাজা মহারাজা ও প্রভাবশালীরা মনে করতেন বিদেশী মুসলমানদের সরিয়ে
বিদেশী খ্রিষ্টানরা মতা দখল করেছে। এতে হিন্দুদের কিছুই করার নেই। হিন্দুদের এই মনোভাবের
জন্য ইংরেজরা ১৯০ বছর ভারতকে শোষণ করেছে। এ দেশ থেকে বিদায় নেয়ার সময় হিন্দু নেতাদের
সহযোগিতায় ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করে যায়। কিন্তু অখণ্ড ভারতকে খণ্ডিত করার দায়টা চাপিয়ে
দেয় মুসলমানদের ওপর।
হিন্দু
ও ইংরেজ ঐতিহাসিকেরা দলিল দস্তাবেজ দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়েছে মুসলমানদের কারণে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে তৃতীয়
খণ্ড বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মোগলরা দিল্লির মসনদে বসার পর ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করে
এক ভারতে পরিণত করে। এর আগে ভারত ছিল বহু রাজ্যে বিভক্ত একটি দেশ। ইংরেজরা দখল করার
সময়েও ভারত আবার বহু রাজ্যে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের বহু ঐতিহাসিক ও বুদ্ধিজীবীও
মনে করেন ভারত বিভক্তির জন্য মুসলমানেরাই দায়ী। এসব বুদ্ধিজীবী ও ঐতিহাসিকের অনেকেই
মনে করেন পাকিস্তান সৃষ্টি ভুল ছিল, যা দিল্লিও মনে করে। তাই দিল্লি
’৪৭ সালেই পরিকল্পনা গ্রহণ করে পাকিস্তান ধ্বংস করার জন্য। দিল্লির
এই পরিকল্পনার প্রাথমিক বাস্তবায়ন হয় ১৯৭১ সালে। একমাত্র ভবিষ্যৎই বলতে পারবে ভারত
আগামী দিনে আর কত ভাগ হবে। এখন ভারতের বহু রাজ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছে। সম্প্রতি পিস
টিভিতে বিচারপতি হোসবেত সুরেশ বলেছেন, দিল্লির ভুল নীতিই বিভিন্ন জাতির
মুক্তি আন্দোলনকে জোরদার করেছে। তিনি বলেছেন, মানবাধিকার ও মুক্তি আন্দোলনকে
সন্ত্রাসী আন্দোলন আখ্যা দিয়ে কঠোরভাবে দমনের নামে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করছে ভারত
সরকার।
আমার বদ
অভ্যাস হলো কোনো বিষয়ে লিখতে বা বলতে গেলে পেছনের কথা বেশি বলি। আমার মনে হয় পেছনের
কথা বললে বিষয়টা বুঝতে পাঠকের সুবিধা হয়। আজকের বিষয়টা হলো জিন্দাবাদ আর জয়বাংলা স্লোগান
নিয়ে। আমরা জয়বাংলা স্লোগানটা প্রথম শুনি ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় স্লোগান হিসেবে।
ছাত্রলীগের কোনো একটি অংশ এই স্লোগানটি চালু করেছিল। বলা হয় এই স্লোগানটি এসেছে দিল্লি
থেকে। ৭ মার্চের ভাষণের শেষে বঙ্গবন্ধু জয়বাংলা, জয়পাকিস্তান বলেছিলেন। এখন আওয়ামী
লীগ জয়পাকিস্তান মুছে দিয়েছে। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের নেতারা জিয়ো সিন্ধ স্লোগান
দিয়েছিলেন। ১৯৩৭-৩৮ সালের দিকে হিন্দু নেতারা জয়হিন্দ স্লোগান দিলে মুসলমানেরা সে স্লোগান
গ্রহণ করেনি। বরং নতুন স্লোগান ‘জয়হিন্দ, লুঙ্গি খুলে ধুতি পিন্দ’ দিয়েছিল। এখানে লুঙ্গি ছিল বাংলার সাধারণ মুসলমানের পোশাকের প্রতীক। বিষয়টা
কিন্তু অখণ্ড ভারতের ছিল না। ভারতের সর্বত্র সবাই ধুতি পরে না। নেহেরুজী কখনোই ধুতি
পরেননি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদি সাহেবও নিয়মিত ধুতি পরেন না। ধুতি কখনোই ভারতের
জাতীয় পোশাক ছিল না। পশ্চিম বাংলায়ও এখন সবাই ধুতি পরে না।
সজীব ওয়াজেদ
জয় সাহেবের নামের ওয়াজেদ শব্দটি তার পিতার নামের একটি শব্দ। এটা বাংলা শব্দ নয়। সত্যি
কথা হলো মুসলমানদের নামের মূল সূত্র হলো আল কুরআন। প্রত্যেকটা নামের একটা অর্থ আছে।
নামের বাংলা আরবি নিয়ে সংসদে একবার কথা উঠেছিল। তখন মালেক উকিল সাহেব ছিলেন স্পিকার।
যত দূর মনে পড়ে একজন সংসদ সদস্য বলেছিলেন বাংলা করলে মালেক সাহেবের নাম হবে ‘ভগবান দাস উকিল’। এখানেও উকিল শব্দটা বাংলা নয়। বাংলা ভাষায় এখন
তেমন বাংলা শব্দ নেই। সবই বিদেশী শব্দ যা কালক্রমে বাংলা হয়ে গেছে। গ্রামে গঞ্জে, শহরে বন্দরে, শিতি অশিতি সবাই বিদেশী শব্দগুলো ব্যবহার করেন।
কেউ কখনো প্রশ্ন করেননি কোনটা বাংলা আর কোনটা বাংলা নয়। জয় সাহেব ভুলে গেছেন যে, আওয়ামী লীগ শব্দ দুটো বাংলা নয়। তার মায়ের নামের একটি শব্দও বাংলা নয়। তিনি
হয়তো ভুলে গেছেন আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে মুসলিম শব্দ নিয়ে। জন্মলগ্নে আওয়ামী লীগের
আদর্শ উদ্দেশ্য কী ছিল তা তিনি চট করে বলতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের সেদিনের ইতিহাসটাও
বদলে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের হাবভাব দেখলে মনে হয় বঙ্গবন্ধুই আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা।
’৭১ সালেই এই দলের জন্ম হয়েছে।
১৫৬২ সাল
থেকে ১৯৪৭ সাল নাগাদ ভারতের মুসলিম ফ্রিডম ফাইটারদের নিয়ে একটি বই লিখেছেন জি আল্লানা।
তাতে মোজাদ্দেদ আলফেসানিসহ ২১ জন বিখ্যাত মানুষের জীবনী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এরা সবাই
ছিলেন সর্বভারতীয় মুসলমান নেতা। বাংলার মুসলমান নেতাদের তালিকায় রয়েছেন, নবাব সলিমুল্লাসহ ২০ জন নেতা। এরা সবাই ছিলেন আমাদের ঐতিহ্য। সবাই ভারতের স্বাধীনতার
জন্যই লড়াই করেছেন। সেখানে কোথাও বঙ্গবন্ধুর নাম নেই। ’৪৭ সালে তিনি ছিলেন ছাত্র। এমনকি ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি প্রথম কাতারে ছিলেন
না। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকালে তিনি ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক। পূর্ব পাকিস্তান
বা পূর্ব বাংলার রাজীতিতে তার উত্থান শুরু হয়েছে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষণার মাধ্যমে।
ছয় দফা ছিল মূলত এক ধরনের কনফেডারেশনের প্রস্তাব। পাকিস্তানের সামরিক শাসকেরা বিষয়টা
অনুধাবন করতে না পেরে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিল। ফলে পাকিস্তান
ভেঙে গেল, ভারতের স্বপ্ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে আর স্বাধীন বাংলাদেশের
জন্ম হয়েছে। অর্থনৈতিক ও অন্যান্য খাতে বৈষম্য অব্যাহত থাকলে পাকিস্তান টিকবে না এ
কথা পাকিস্তানের জাতীয় সংসদেও আলোচিত হয়েছে। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ
পড়লেও আপনারা জানতে পারবেন তিনি পূর্ব পাকিস্তানের অধিকারের জন্য খুবই কঠোর ভাষায় বক্তব্য
রেখেছিলেন। অনেক সময় ছাত্র ও উগ্রবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি জয়বাংলা
স্লোগান দিয়েছেন। ২৫ মার্চের পরেও পাকিস্তানের কারাগারে থেকে তিনি অখণ্ড পাকিস্তানকে
রা করতে চেয়েছিলেন।
আজ জয়
সাহেব ইতিহাস ভালো করে না জেনেই বলে ফেলেছেন জয়বাংলা যারা বলে না তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস
করে না। জিন্দাবাদ শব্দটা নাকি পাকিস্তানি শব্দ। ভারতের মানুষও জিন্দাবাদ বলে। জয় সাহেবের
কথা শুনে সব কিছু বাংলা করতে গেলে বাংলা ভাষা আর থাকবে না। বাংলা একটি জীবন্ত বহমান
ভাষা। তাই প্রতিনিয়তই এই ভাষা বিকশিত হচ্ছে। সুপ্রাচীনকালে ভারতের রাষ্ট্র ও ধর্মীয়
ভাষা ছিল সংস্কৃতি। বিজেপির অতি ভক্ত কিছু মানুষ সংস্কৃতিকে জীবিত করার জন্য চেষ্টা
শুরু করেছে। কিন্তু তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না। জনগণ গ্রহণ করছে না। একইভাবে এক সময়ের বিখ্যাত
ভাষা হিব্রু বা অ্যাসিরীয় ভাষা এখন মৃত। ইসরাইল সে ভাষাকে জীবন দানের চেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছে। এমনকি উর্দুর কাঁধে চড়ে হিন্দিকে সর্বভারতীয় ভাষা হিসেবে জীবন দানের চেষ্টা
চলছে। কিন্তু হিন্দির নিজস্ব কোনো লিপি বা স্ক্রিপট না থাকায় দেবনাগরি লিপি দিয়ে কাজ
করার চেষ্টা চালাচ্ছে ভারতের ব্রাহ্মণ এলিটরা। কিন্তু তারা উর্দু নির্ভরতা ত্যাগ করতে
পারেননি। কথা ছিল ভারতের লিংগুয়া ফ্রাংকা হবে উর্দু। কিন্তু প্যাটেল বললেন উর্দু করা
যাবে না। কারণ উর্দু ভাষার লিপি হচ্ছে আরবি লিপির মতো ও নির্ভরশীল। বাংলাদেশেও আমরা
পাকিস্তানকে ঘৃণা করতে গিয়ে আরবি ফারসি ও উর্দু ভাষা ত্যাগ করতে চলেছি।
পোশাক, খাদ্য, বাসস্থান, সাহিত্য, সঙ্গীত, আদব হচ্ছে একটা জাতির ঐতিহ্য ও ইতিহাসের উপাদান। বাঙালি হিন্দুরা কচ্ছপ বা
কাঁকড়া খান, কিন্তু বাঙালি মুসলমানেরা খায় না। আমরা গরুর গোশত খাই হিন্দুরা
খায় না। জিন্নাহ সাহেবের কাছে বিবিসি জানতে চেয়েছিল হিন্দু আর মুসলমানের ভেতর ফারাক
কোথায়? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, হিন্দুরা গরু পূজা করে, আর মুসলমানেরা খায়। হিন্দুরা মূর্তি পূজা করে আর মুসলমানেরা মূর্তি পূজার বিরোধিতা
করে। বাঙালি হিন্দু মেয়েরা বিয়ে হয়ে গেলে সিঁথিতে সিঁদুর দেয়, মুসলমান মেয়েরা দেয় না। আবার মুসলমান নারীরা ঘোমটা দেয়। বাঙালি মুসলমান ও হিন্দুর
ভাষা এক হলেও সংস্কৃতি এক নয়। এমনকি ভারতের সব হিন্দুর ভাষা, সংস্কৃতি ও আচার অনুষ্ঠান এক নয়। একইভাবে পৃথিবীর সব মুসলমানের ভাষা, সভ্যতা, সংস্কৃতি, পোশাক,খাদ্য এক নয়।
সজীব ওয়াজেদ
সাহেবের জয়বাংলা স্লোগানটি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের স্লোগান নয়, সে কথা আগেই বলেছি। বিশেষ করে বর্তমান সরকার ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মাত্র পাঁচ
ভাগ ভোট পেয়ে জোর করে দেশ চালাচ্ছে। সেই সরকারের একজন মুখপাত্র জয় সাহেব যদি বলেন জয়বাংলা
বাংলাদেশের মানুষের একটি ঐক্যবদ্ধ স্লোগান তা কেউ মানবে না। জয় বাবু বা সাহেব এখন একজন
আমেরিকান সাহেব। তিনি মাঝে মাঝে নানার দেশে এসে জাতির উদ্দেশে এমন বয়ান দিলে কে মানবে? তার নানাজী তো সারা জীবনই জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়েছেন। যখন বাংলাদেশের ১০০ ভাগ
মুসলমান আল্লাহু আকবর বলেন তখন জয় সাহেবেরা বলেন আল্লাহ সর্বশক্তিমান। আল্লাহু আকবর
বিশ্ব মুসলমানের জিকির। প্রতি দমে বা শ্বাসে আল্লাহু আকবর বলতে হয়। প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী
আজানের সময় কয়েক শ’ কোটি বার মসজিদের মিনারে আজানের মাধ্যমে আল্লাহু
আকবর শোনা যায়। কোনো মুসলমানই অনুবাদ করে আল্লাহু আকবর বলে না। একইভাবে জয় সাহেবেরা
আল্লাহকে সার্বভৌম বলে স্বীকার করেন না। তারা বলেন মানুষ বা জনগণ সার্বভৌম। বাংলাদেশের
সংবিধান আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে না। কেউ যদি আল্লাহর সার্বভৌম বলে তাহলে তাকে
রাষ্ট্রদ্রোহী বলা হবে।
আওয়ামী
লীগ রাষ্ট্র আর ধর্মকে আলাদা করে দেখে। তারা বলেন রাষ্ট্র সেকুলার (ধর্মহীন বা ধর্মমুক্ত)
থাকবে। আওয়ামী লীগের স্লোগান হচ্ছে রাষ্ট্র সবার, ধর্ম যার যার। স্লোগানটা খুবই
আকর্যণীয়। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। মাত্র ১০ ভাগ লোকের কথা শোনার জন্য ৯০
ভাগ মুসলমানকে রাষ্ট্রীয় েেত্র বা বিষয়ে ধর্মহীন থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ হচ্ছে একটি
মাইনরিটি চিন্তাধারার রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ মনে করে রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে মুসলমান
বা ইসলামের কিছুই করার নেই। ইসলাম থাকবে মসজিদে, ঘরে, মাদরাসা মক্তবে। সংসদে বা সরকারি অফিসে ইসলাম প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ ধর্ম
ব্যক্তিগত ব্যাপার।
চলমান
বাংলাদেশে এখন আপনি বাইবেল, গীতা, তৌরাত, জবুর নিয়ে ঘরোয়া আলোচনা বা বৈঠক করতে পারবেন। কিন্তু কুরআন বা ইসলাম নিয়ে কোনো
ধরনের আলোচনা করতে পারবেন না। করলে, আপনাকে জেহাদি বলে আদালতে চালান
দেবে। আওয়ামী লীগ কখনোই বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষের চিন্তাচেতনার প্রতিনিধিত্ব করে না।
এই দলটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা ধরনের অন্যায্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী
বিতর্ক সৃষ্টি করে রেখেছে। আমরা বাংলাদেশী কী বাঙালি তা আজো ঠিক হয়নি। আমরা কী ভাষাভিত্তিক
রাষ্ট্র না জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র তারও কোনো সুরাহা হয়নি। যেমন আমরা মুসলমান বলেই অখণ্ড
ভারত থেকে আলাদা হয়েছি। একইভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছি।
একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছি। বাংলা বলে এখন কোনো রাষ্ট্র বা দেশ নেই। আমাদের দেশের
নাম বাংলাদেশ। পৃথিবীর সব বাঙালির স্বাধীন দেশ বা রাষ্ট্র নেই। বাংলাদেশ নামে স্বাধীন
সার্বভৌম ভৌগোলিক এলাকায় যারা বাস করেন তারাই একটি রাষ্ট্র গঠন করে নিজেদের আলাদা জাতিসত্তা
গঠন করেছেন। তাই আমাদের পরিচয় হচ্ছে বাংলাদেশী। এই ভৌগোলিক এলাকার বাইরে কোনো বাংলাদেশী
নেই। ভারতীয় পশ্চিম বাংলা রাজ্য বা প্রদেশের হিন্দুরা ভারতীয় হিন্দু, বাংলাদেশী হিন্দু নয়। ভাষা এক হলেও জাতি এক নয়। তাই বলছি, জয়বাংলা স্লোগানটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী একটি স্লোগান।
তবে এটা আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনৈতিক স্লোগান হতে পারে। তাহলেও জয় সাহেব বা বাবুকে ব্যাখ্যা
করতে হবে কেন তিনি এই স্লোগানকে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগানে পরিণত করতে চান।
এরশাদ মজুমদার
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন