ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর
নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্ক আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আরো একবার হোঁচট খাইয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও
সংযমী হতে পারলেন না। ভারত ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানের চেয়েও দলীয় সম্পর্কোন্নয়নের
বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। এটাও আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্কটকে বাড়িয়েছে। শাড়ি-কূটনীতি
দেশের জন্য ভালো না হলেও সম্প্রীতির বিবেচনায় মূল্যহীন নয়। ভারতপ্রীতি কিংবা ভীতি কোনোটাই
আমাদের সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় নয়। আমাদের প্রয়োজনের তাগিদটা আসে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান
ও পারস্পরিক স্বার্থের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে। সেটা এবার প্রাধান্য পায়নি। কারণ, আমাদের ক্ষমতার রাজনীতি কূটনৈতিক শিষ্টাচারকেও হার মানিয়েছে।
আমাদের
ভুলে যাওয়া উচিত নয়, বাঙালির নিজস্ব কিছু লোকজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রয়েছে।
পাল শাসনামলে পরধর্ম ও মত সহিষ্ণুতার একটা ঐতিহ্য গড়ে ওঠে। সেন আমলে সেটা ছাপিয়ে ধর্ম-বর্ণ
ও গোত্র-প্রথার বিভাজনটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সুলতানি আমলে আবার ধর্মীয় সহিষ্ণুতা
ও মানবিক মূল্যবোধের একটা আবহ সৃষ্টি হয়। শ্রীচৈতন্য, হাছন রাজা এবং ফকির মজনু শাহসহ ভাববাদী একটি ধারায়ও মানবতাবাদের জয়গান পাওয়া
যায়। সুফি-সাধক এবং পীর-আওলিয়াদের মাধ্যমে মানবতাবাদ, নৈতিক মূল্যবোধ, পরমত ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার অসাধারণ বিকাশ ঘটে। সব
মিলিয়ে বাংলায় ধর্মাশ্রয়ী মূল্যবোধ, সংস্কৃতি এবং মানবিক মর্যাদার
স্ফুরণ ঘটতে থাকে। এখন রাজনীতির কারণে দীর্ঘ দিনের লালিত মূল্যবোধসম্পন্ন সংস্কৃতি
পাল্টে যাচ্ছে। কেউ কেউ যেন ঠাণ্ডা মাথায় আমাদের পুরো সংস্কৃতি পাল্টে দিচ্ছে। অনেকেই
এর জন্য একচ্ছত্র ক্ষমতার রাজনীতিকে দায়ী করছেন। বেশির ভাগ মানুষ ধারণা করেন, কুক্ষিগত ক্ষমতাচর্চার উদর থেকে এসব জন্ম নিচ্ছে। রাজনীতিবিদেরা একনায়ক ও মোহান্ধ
সেজে যাওয়ার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীনপর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
ব্রিটিশ
পর্বে তো বটেই, পাকিস্তান পর্বেও আমাদের নিজস্ব রাজনীতি ও ক্ষমতাচর্চার শুরুটা
সুখকর হয়নি। এটা হতে পারেনি অতিমাত্রায় প্রভাবক শাসকদের কারণে। যাদের চোখের দিকে তাকিয়ে
কথা বলার মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ আশপাশে কম ছিলেন। যাও বা দু-চারজন ছিলেন, তারা এসব ব্যক্তিত্বের সামনে মাথা তুলতে চাননি। টানা ১০ বছর আইয়ুব খান সামরিক
কায়দায় একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখে পাকিস্তান শাসন করলেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের
পদ-পদবির সাথে আইয়ুব খান একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে আইয়ুবের পতন
হয়েছে। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জনগণ শাসক ও অভিভাবকের মর্যাদায় পেলেন বঙ্গবন্ধুকে।
এই ব্যক্তিত্বের সামনে অন্যরা মাথা তোলার সাহস হারালেন। সেই ধারাবাহিকতায় টানা প্রায়
১০ বছর চিহ্নিত স্বৈরশাসক এরশাদ দেশ শাসন করলেন। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের পতন
হলে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা সামনে এলেন। একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি থেকে
প্রধান দু’টি দল ও তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার মুক্ত হতে পারল না। স্পষ্টত
আমাদের শাসকেরা মেজাজ-মর্জিতে প্রেসিডেন্সিয়াল ধ্যানধারণাই বেশি পোষণ করেন। মনমানসিকতায়
তারা একচ্ছত্র ক্ষমতাচর্চার পক্ষে, অথচ মনভোলানো ভাষায় বলতে ও ক্ষমতাচর্চা
করতে চান সংসদীয় গণতন্ত্র। তাই ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্র জন্ম নিয়েছে।
নিয়মতান্ত্রিক
ও প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির ভারসাম্য এভাবেই নষ্ট হওয়ার পর রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টে
গেছে। আক্ষরিক স্বৈরতন্ত্রের ছায়া ঐতিহ্য এসে স্থান করে নিয়েছে। এ যেন রাজতন্ত্রের
নতুন অবয়ব। একক কর্তৃত্বে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালিত হওয়ার কারণে গণতন্ত্রের মূল বক্তব্যেরই
শুধু অপমৃত্যু ঘটেছে এমন নয়, অসংখ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় জনজীবনকে বিপর্যস্ত
করে দিচ্ছে। গণতন্ত্র, সংবিধান, আইন-আদালত, বিচার-আচার সব কিছু একজনের মর্জির কাছে জিম্মি হয়ে গেছে।
কয়েকটি
সাধারণ উপমা দেয়া যেতে পারে। নিষ্পত্তিমূলক তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুটি আওয়ামী লীগের সিনিয়র
সব নেতার অভিমত উপেক্ষা করেই হুট করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপড়ে ফেললেন।
এর মাধ্যমে জাতিকে ফেলে দিলেন অনাকাক্সিত ও অনিশ্চয়তার সঙ্কটে। অথচ আমাদের গণতন্ত্র
প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জন করে বিকশিত হওয়ার একটা রাস্তা দেখিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা।
এটা উপড়ে ফেলে গণতন্ত্রের কবর খোঁড়া হলো। সেই গণতন্ত্রের কবরের ওপরই জোরজবরদস্তি করে
আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও পরামর্শ উপেক্ষা করে জনগণের ওপর চেপে বসল ৫ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ
সরকার। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা উপড়ে ফেলার জন্যই সংবিধান সংশোধিত হলো। জনগণ বুঝে ওঠার
আগেই একনায়কসুলভ চিন্তায় সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেল। যার জের জনগণ এখনো টানতে বাধ্য হচ্ছে।
এই গ্লানি এবং মৃত গণতন্ত্রের কফিন কত দিন বহন করতে হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেন
না।
কে না
জানে, নেত্রী না চাইলে কিচ্ছু হয় না বলেই এমপি মুরাদ জং রানা প্লাজা
বিতর্কে জড়িয়েও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। নেত্রী চান না বলেই হাজারী, বদি, শামীম ওসমান ও ইলিয়াস মোল্লারা ধৃষ্টতা প্রদর্শন করতে পারেন। শামীম
ওসমান প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাকেও দেখিয়ে দেয়ার হুমকি দিতে পারেন। সাংবাদিক সমাজকে
কুকুরের সাথে তুলনা করে পার পেয়ে যেতে পারেন। একটা দলের নেতৃত্বের বাড়াবাড়ির সীমা কতটা
গণবিরোধী হতে পারে ওসমান পরিবার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী ও সৈয়দ আশরাফের
ধনুকভাঙা পণ দিয়েই বিচার করা সম্ভব।
পদ্মা
সেতু কেলেঙ্কারি বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে চোর সাজিয়েছে। অপমানিত করেছে। অথচ নেত্রী
চাননি বলেই পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির স্বচ্ছ তদন্ত হয়নি। অভিযুক্তরা ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে
থাকতে পারেন। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির জন্য সংশ্লিষ্টদের কোনো ধরনের আইনি মোকাবেলায়
যেতে হচ্ছে না। কারা দায়ী তাও চিহ্নিত হচ্ছে না। রেলের কালো বিড়াল ধরা পড়ল। হাতেনাতে
ধরা হলো বস্তাভর্তি টাকা। নেত্রী চাননি বলে কিছু হয়নি। উল্টো নেত্রী চেয়েছেন বলেই বাবুকে
দফতরবিহীন মন্ত্রী করে দিলেন। নেত্রী ডোন্ট কেয়ার বলেও আদালত অবমাননায় পড়েন না। কারণ, তাকে কাঠগড়ায় এনে আদালতের ভাবমর্যাদা রক্ষা করতে পারেন এমন কোনো ‘শির দেগা নেহি দেগা আমামা’ বলার মতো মানুষ হয়তো ওই পাড়ায় নেই।
বান কি
মুন ও জন কেরির প্রতি কটাক্ষ করার জন্য নেত্রীর স্থানে অন্য কেউ থাকলে তাকে রাজনীতি
ও কূটনীতির কাছে জবাবদিহি করতে হতো। কূটনৈতিকভাবে অদূরদর্শী ও শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য
দেয়ার দায় সরকার ও রাষ্ট্র ক্ষমা করত না। প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করার
মতো কিংবা তাকে গঠনমূলক সমালোচনা করার এখতিয়ারও কেউ রাখেন না। গণতন্ত্রে এ অবস্থা একেবারেই
অনাকাক্সিত এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশের
রাষ্ট্রপতি যা না ব্যক্তি তার চেয়ে বেশি এর প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা। বাস্তবে তা নেই।
এ কারণেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে গিয়ে বাংলাদেশকে নয়, আওয়ামী লীগকে প্রতিনিধিত্ব করলেন। কারণ নেত্রী এমনটি চেয়েছেন। সীতার কুণ্ডলির
মতো নেত্রীর চিহ্নিত করে দেয়া গণ্ডির বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা আছে, কিন্তু সেই ক্ষমতা ব্যবহারের শক্তি তার নেই।
তা ছাড়া
চাটুকার, চাটার দল পরিবেষ্টিত একজন রাজা বা রানী কোনোকালেই জনগণের কথা ভাবেননি।
রাষ্ট্র মানেই রাজা, সরকার মানেই তিনি। তার কথাই শেষ কথা। বর্তমানে বাংলাদেশে
প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দুদক, নির্বাচন কমিশন, আইন-আদালত সবাই ভাবেন নেত্রী
কী চান। তারা ভাবেন না আইন কী চায়। দেশ-জাতি কী চায়। তাদের কাছে নেত্রীর প্রত্যাশা
মানে তার কর্তব্য। নেত্রী ব্যাখ্যা দিলে সংবিধানের ব্যাখ্যা পাল্টে যায়। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের
মুণ্ডুপাত হলেও তারা কার্যকর প্রতিক্রিয়াহীন। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত মত ও নজির কোনো
কাজে আসে না। নেত্রী চান কিংবা নেত্রীকে খুশি করার প্রতিযোগিতার জন্যই শত শত স্থাপনার
নাম বঙ্গবন্ধু পরিবারের জন্য বরাদ্দ হতে হবে। যোগাযোগমন্ত্রীর সুর ভিন্ন হলেও একটা
বড় সেতু বঙ্গবন্ধুর নামে হলে আরেকটি বড় সেতু একই পরিবারের অপর সদস্যের নামে হবে না
কেন। কারণ, কিং অর কুইন ক্যান ডু নো রং। অর্থাৎ রাজা বা রানী কোনো ভুল করতে
পারেন না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীরও কোনো ভুল নেই। কারণ, তিনি ভুল করতেই পারেন না। তার প্রতি শর্তহীন আনুগত্য রাজকর্মের অংশ।
এ জন্যই
লেখাটা শুরু করেছিলাম রাজনীতির সংস্কৃতি পাল্টে যাওয়ার কথা বলে। একই ধারণা মাথায় রেখে
অন্য একটা লেখা খাড়া করতে হচ্ছে। সেটা হবে কিছুটা নীতিগত। একই সাথে প্রেক্ষাপট-ভাবনাও
রয়েছে। এই অবস্থা থেকে জাতিকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ ঘটাতে যাওয়া অসম্ভব না হলেও
কঠিন। তবে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রজ্ঞা দিয়ে উতরে দিতে পারেন বুদ্ধিজীবীরা। অথচ আমাদের বুদ্ধিজীবীদের
একটি অংশ সব সময় ক্ষমতার ভরকেন্দ্রকে আশ্রয় করে দাঁড়ান। কারণ তাদের শির অবনত, মেরুদণ্ড ভঙ্গুর। তারা বক্তব্যে স্তাবক কিংবা ভাঁড়ের মতো। অপর অংশটি সুবিধাবাদ
আশ্রয়ী। এরা প্রগতিশীলতার ভড়ং করেন। ুদ্র একটি অংশ জাতির বিবেকের কণ্ঠস্বর হওয়ার মতো
অবস্থানে রয়েছেন। তারা কথা বললে আদালত অবমাননা হয়। কোনো কোনো আইনের মানুষ তাদের ডেকে
নিয়ে দুটো কথা শুনিয়ে দিয়ে সুখ পান। তা ছাড়া আজকাল মিডিয়ায় তারা উপেক্ষিতও।
যেমন ধরুন
ডক্টর ইউনূসকে নেত্রীর অপছন্দ, তাই পরজীবী বুদ্ধিজীবীরাও তার বিরুদ্ধে খই ফুটাতে
লাগলেন। অথচ পুরো জগৎ এসব বশংবদ অনুগত ও নীতিভ্রষ্ট সুশীলদের দৃষ্টিতে পড়ে না। হিলারি
কিনটন শুধু এ কারণেই প্রতিপক্ষ হলেন। এটা ঠিক, একনায়ক নেতানেত্রী বা স্বৈরতান্ত্রিক
রাজা-বাদশাহ জন্ম নেন না, তারা গড়ে ওঠেন। কাউকে কাউকে বানানো হয়। কখনো কখনো
তারা কারো পক্ষে ব্যবহৃত হন। তাদেরও প্রভু থাকেন।
অন্য একটি
লেখায় বর্তমান সরকারের স্বরূপ বোঝাতে কিছু প্রসঙ্গ টেনেছি। অংশবিশেষ এখানেও টানছি।
একনায়ক চেনার কিছু সাধারণ লক্ষণ চিহ্নিত করা যায়; যেমন তারা যে পথ দিয়ে ক্ষমতায় আরোহণ করেন, প্রথমেই সেটা পাল্টে নেন। সোজা
কথায় নামার মইটা সরিয়ে দেন। আশপাশের যোগ্য নেতৃত্ব হটিয়ে দেন কিংবা খামোশ করে রাখেন।
মোসাহেব ও চাটুকারদের চার পাশে ঠাঁই করে দেন। অযোগ্য লোকদের দিয়ে নীতিনির্ধারণের ফোরাম
সাজান। কিছু মৌলিক কাজ ও ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো নিজের
কাছে রাখেন, নয়তো অযোগ্য লোক দিয়ে তার ওপর নির্ভরশীল করে রাখেন। যেকোনো ব্যাপারে
পরামর্শ গ্রহণের চেয়ে নিজের ব্যাখ্যা, বক্তব্য ও নীতিনির্ধারণে তার
ইচ্ছাই শেষ কথা বলে মনে করেন। একজন সফল ও প্রকৃত রাষ্ট্রনায়ক বা নেতা তার একজন যোগ্য
উত্তরাধিকার সৃষ্টি করে যেতে চান। স্বৈরাচার ও একনায়ক সেকেন্ড ম্যান রাখাই পছন্দ করেন
না। পরিবারতন্ত্র, গোষ্ঠীবাদ তাদের বেশি আশ্বস্ত করে। এরা অন্তরের ভীতি চেপে রেখে
সাহসের কথা বলতে গিয়ে প্রায় ভারসাম্যহীন বক্তব্য দিয়ে বসেন। জনগণ ও চার পাশের কাউকে
বিশ্বাস করেন না, এমনকি নিজেকেও নিজে বিশ্বাস করেন কি না মাঝে মধ্যে পরখ করে দেখার
জন্য আত্মঘাতী কাজ করে বসেন। এরা রাষ্ট্্র ও সরকারকে আলাদা রাখেন না, ভাবেনও না। তাই তারা রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করেন দলীয় ক্ষমতা ব্যবহারের স্বার্থে।
তারা যুক্তি খণ্ডন করেন না, তথ্যের জবাব তথ্য দিয়ে দেন না, ভিন্ন ইস্যু কিংবা আক্রমণাত্মক ধরনের বক্তব্য দিয়ে তারা প্রায়ই সাফাই গান।
হন জেদি, বাকপটু, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এরা হন প্রতিহিংসাপরায়ণ। এরা
যা না ধার্মিক তার চেয়ে বেশি ধর্মপরায়ণতার কথা প্রচার করেন। তাদের কাছে ম্যাকিয়াভেলি
বড় ধরনের আদর্শ। ম্যাকিয়াভেলি শাসকদের পরামর্শ দিয়েছেন, ধর্ম মানো আর নাই মানোÑ মানার ভান করো। শাসক হতে হলে নেকড়ের মতো হিংস্র, শিয়ালের মতো কপট ও চতুর না হলে চলবে না। এরা একটি বা দু’টি স্থানে শর্তহীন আনুগত্য প্রদর্শন করেন। নিজের দল ও গোষ্ঠীস্বার্থে জাতির
স্বার্থ বিসর্জন দেন সেটা হয় ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার শর্তে। এক ধরনের চিন্তা
ও মনোবৈকল্য তাদেরকে সব সময় তাড়া করে। সেটা আবার তাদের মানসিক রোগে পরিণত হয়। পুরো
জগৎ ও প্রতিপক্ষকে এরা দেখেন শত্রুর দৃষ্টিতে। তাই মাঝে মধ্যে নিজের ছায়ার বিরুদ্ধেও
যুদ্ধ শুরু করেন। তাদের ক্ষমতার স্বার্থে প্রতিপক্ষকে কখনো তারা সহ্য করতে চান না।
এরা কাজের চেয়ে প্রচারণাকে বেশি গুরুত্ব দেন। একধরনের চোখ ধাঁধানো ও মনোলোভা কিন্তু
উৎপাদনমুখী নয় এমন উন্নয়নে তারা সুখ পান। সেটা প্রচার করে স্বস্তি বোধ করেন।
তারা প্রায়ই মিথ্যা বলেন। প্রতিশ্রুতিগুলো ভঙ্গ করেন। শপথের দাবি ও আমানতগুলো নিজের
অধিকার ভেবে তসরুফ করেন।
আমাদের
রাজনীতির বর্তমান সঙ্কটগুলো সামনে রেখে এসব বিষয়-আশয় নিয়ে সবার ভাবা উচিত। আমরা মুক্তিযুদ্ধের
পথ ধরে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের রেখা ধরে পথ চলছি। এর বাধা ও সঙ্কটের
ধরন চিহ্নিত করা সময়ের দাবি। এ দাবি সামনে রেখে এই পোস্টমর্টেম বা সুরতহাল রিপোর্ট
তৈরির প্রচেষ্টা।
মাসুদ মজুমদার
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন