বৃটেন প্রবাসী বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান মুজিব ও তার ড্রাইভার রেজাউল হক সোহেল নিখোঁজ হবার দুমাস ৭ দিন গড়িয়ে গেল। তাদের এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ। আমরা জানি না, পুলিশ নিখোঁজের সন্ধান দিতে পারবে কি না। এ পর্যন্ত পুলিশ মুজিবুর রহমান ও তার ড্রাইভারকে খুঁজতে যত অভিযান পরিচালনা করেছে তার সবই ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি তার গাড়িটির সন্ধানও মেলেনি। উল্লেখ্য, গত ৪ মে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট ফেরার পথে গাড়ি ও চালকসহ নিখোঁজ হন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির এ সদস্য। ঘটনার পর থেকে ১৬ মে পর্যন্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। এ অভিযানে ৬ জনকে আটক করে আদালতে হাজির করা হয়। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে অপহরণের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শুধু মুজিবুর রহমান মুজিব ও তার ড্রাইভার নন, এর আগে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী তার ড্রাইভারসহ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন। তাদেরও খোঁজ দিতে পারেনি পুলিশ। ইলিয়াস আলীর উদ্ধারের ব্যাপারে অনেক নাটকীয়তার অবতারণা করা হয়। নিখোঁজের স্ত্রী-সন্তানদের সান্ত¦না ও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং। কিন্তু লাভ হয়নি। পাওয়া যায়নি ইলিয়াস আলীকে। তার আগে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপির এক ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম। তাকেও উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। কেউ কোনওভাবে মারা গেলে মৃতদেহটি পাওয়া গেলেও বেঁচে থাকা আপনজনদের কিছুটা সান্ত¦নার ব্যাপার থাকে। অন্তত অনিশ্চয়তা আর থাকে না স্বজনদের মধ্যে। কিন্তু কেউ নিখোঁজ হলে তার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যেমন দুর্বিষহ দুঃখ-বেদনা থাকে, তেমনই থাকে কষ্টকর অসহনীয় অনিশ্চয়তাও। মুজিবুর রহমান মুজিব, ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের আত্মীয়-স্বজনদের যেমন দুর্বিষহ দুঃখ-কষ্ট কুরে কুরে খাচ্ছে, তেমনই অনিশ্চয়তার অন্ধকার তাদের নিমজ্জিত করে রেখেছে। কী হলো তাদের? কোথায় নিয়ে কারা তাদের গুম করে ফেললো? আমাদের পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগসহ অন্য সংশ্লিষ্টরা কি এতটাই অযোগ্য ও অকর্মন্য যে, মুজিবুর রহমান মুজিব, ইলিয়াস আলী কিংবা চৌধুরী আলমের মতো লোককে ধরে নিয়ে গুম করে দিল আর তাদের ট্রেসও পেলো না আমাদের পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দার মতো চৌকস সংস্থার সদস্যরা? তবে আসল রহস্য কী?
আমরা মনে করি, আমাদের পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ, র্যাব প্রভৃতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায় অনেক যোগ্য, দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি রয়েছেন, যারা ইচ্ছে করলে এসব নিখোঁজ-গুমের ক্লু অবশ্যই বের করতে পারেন। সাগর-রুনি হত্যাকা-সহ আরও অনেক নিখোঁজ ও গুমের ঘটনা ঘটেছে। কোনওটারই সুরাহা হচ্ছে না। মূলত রাজনীতি-সংশ্লিষ্টতা থাকায় গভীর অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে এসব মর্মান্তিক ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের কার্যক্রম। এর অবসান হওয়া দরকার। জলজ্যান্ত মানুষগুলো নিখোঁজ হয়ে যাবেন, প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনরা দায়িত্ব নেবেন না, তা মেনে নেয়া যায় না।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন