রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৪

ফিলিস্তিনীদের কান্নার আওয়াজ মুসলিম মিল্লাত কি শুনতে পায় না?


পবিত্র রমযান মাসে ইসরাইলী ইহুদিরা গণহত্যা চালিয়েছে মুসলিম মিল্লাতেরই অংশ ফিলিস্তিনীদের ওপর। গত কয়েকদিনের বর্বরোচিত, বিমান হামলায় নারী শিশুসহ চার শতাধিক প্রাণ শাহাদাতবরণ করেছেন। এই রমযান মাসে সারা বিশ্বের মুসলমানরা যখন রোজা রেখে আল্লাহ্র রহমত কামনা করে ঈদের প্রহর গুণতে থাকেন, ঠিক সে সময়ে ইসরাইলের বর্বর হামলায় নারী শিশুসহ চার শতাধিক ফিলিস্তিনীর প্রাণ চলে গেছে। গাজা শহরটি পরিণত হয়েছে এক ভুতুড়ে শহরে। এই নগ্ন হামলার প্রতিবাদ জানানোর মতো ভাষা জানা নেই। সারা বিশ্ব এ হামলার নিন্দা জানালেও তোয়াক্কা করছে না সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসরাইল। সব আন্তর্জাতিক চাপকে উপেক্ষা করে হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আমরা যখন আদরের ছোট্ট শিশুটির জন্য ঈদের জামা-কাপড় কেনাকাটায় ব্যস্ত, ঠিক সে সময়ে ফিলিস্তিনের মুসলমানরা পৃথিবীর সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার শিকার। ২০১২ সালের পর থেকে গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলী সামরিক বাহিনীর এটি হচ্ছে বড় অভিযান। ফিলিস্তিন ছিল ফিলিস্তিনীদেরই। বংশানুক্রমে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তারা বসবাস করে এসেছে নিজ জন্মভূমিতে। কিন্তু কেন তাদের জন্মভূমি হারাতে হলো, কেন তাদের নিজ ভূমিতে পরবাসী হয়ে পরগাছার মতো বসবাস করতে হয়েছিল। ফিলিস্তিনীদের ইতিহাস কারো অজানা নয়। অজানা নয় ইতিহাসের সেই চরম জুলুম, অমানবিক নিষ্ঠুররতা আর আন্তর্জাতিক দস্যুবৃত্তির কথা। ইসরাইলের নগ্ন হামলায় বারবার ফিলিস্তিনীদের পবিত্র ভূমি রক্তে রঞ্জিত হলেও ইসরাইল রাষ্ট্রের সন্ত্রাসীদের রক্তের নেশা একটুও কমেনি।
আমি প্রথমে ধিক্কার জানাচ্ছি পৃথিবীর মুসলিম শাসকদের, যারা ক্ষমতার সিঁড়িতে আরোহণ করতে পেরে মানবতাকে ভুলে যেতে বসেছে। অসহায় মুসলিম নারী-পুরুষ আর ফুলের মতো শিশুদের যারা হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলতে পারছে না মুসলিম নামধারী শাসকরা। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রজব তাইয়্যেব এরদোগান ইসরাইলকে হুঁশিয়ারি করে দিয়ে বলেছেন, যত দিন ইসরাইল গাজার ওপর হামলা বন্ধ না করবে, তত দিন তুরস্কের সাথে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না। আরেক দিক দিয়ে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশ। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ মুসলমান। এদেশের মানুষ পাক-ভারতের তুলনায় অধিক ধর্মানুরাগী। এদেশের মুসলিম জনগণের ভোটের মাধ্যমেই দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে থাকেন। গত ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মসনদ দখল করেছেন। সরকার এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করলেও মুসলিম জনগণ, জগদ্দল পাথরের ন্যায় নীরব ভূমিকা পালন করে এক-একটি দুর্বিষহ দিন পার করছেন। ফিলিস্তিনের নিরীহ ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগণের ওপর ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা এখন পর্যন্ত সরকার জানাতে পারেনি। সরকারের উচিত ছিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিবৃতি দেয়ার আগেই ইসরাইলকে হুঁশিয়ারি করে দেয়া। আর যদি একটি বোমা একটি গুলী গাজায় চালানো হয়, তা হলে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ তা মেনে নেবে না। কথায় বলে নকল করে যারা পাস করেন তাদের মনে চোর চোর ভাব যেমন থাকে সারাক্ষণ বাংলাদেশের সরকারের অবস্থাও তাই হয়েছে। যার দরুন ইসরাইলকে গণহত্যা বন্ধ করার সত্য কথাটাও তারা বলতে সাহস পাচ্ছে না।
মুসলিম মিল্লাতের সব মুসলিম ভাই ভাই। মুসলিম মিল্লাতের মুসলিম ভাইয়েরা কি আজ বধির হয়েছেন? তারা কি বেহুঁশ হয়ে পড়েছেন? মুসলিম ধর্ষিতা বোনের হাহাকার, লাঞ্ছিত মায়ের আর্তনাদ, নিপীড়িত শিশুর আহাজারি, মজলুম ভাইয়ের করুণ কান্নার আওয়াজ কি মুসলিম মিল্লাতের মুসলমানদের হৃদয়কে একটুও নাড়া দেয়নি। আমরা এত নিষ্ঠুর কেন হয়ে গেলাম। আমাদের মা, আমাদের বোনরা ইহুদির গুলীর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে; অথচ আমরা কাপুরুষের মতো হা করে তাকিয়ে আছি।
মুসিলম মিল্লাতের মুসলমানদের নিকট কয়েকটি প্রশ্ন রাখতে চাই? তোমাদের মা-বোনদের বেইজ্জতি ধর্ষণের কথা আর কত শুনবে? তোমাদের ভাইদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার আর কত চালাতে দেখবে? তোমাদের হৃদয় কি সেই ব্যথার উহ্ শব্দটিও বলতে পারে না? তোমরা না মহান জাতি বলে গর্ব কর? তবে সেই মায়া-মমতা আজ কোথায়? তোমরা না সেই জাতির সন্তান যারা মক্কা থেকে মুহাজির রূপে যখন মদীনায় গিয়েছিলেন, তখন তোমরা তাদের দ্বীনিভাই হিসেবে আশ্রয়, ঘরবাড়ি, ক্ষেত-বাগান সবই তো সমানভাবে ভাগ করে দিয়েছিলে, এমন কি যার দুজন স্ত্রী ছিল তার একজনকে তালাক দিয়ে স্ত্রীহীন মুহাজির ভাইয়ের কাছে বিয়ে দিতে চেয়েছিলে? তোমরা না সেই জাতের সন্তান যাদের কয়েকটি বোন ভারতের এক প্রান্তে সিন্ধুর কাছে নির্যাতিত হয়ে চিৎকার দিয়েছিলেন আর সেই চিৎকার শুনে তাদের উদ্ধার করার জন্য সুদূর আরব থেকে ছুটে এসেছিলেন মুসলিম ভাইয়েরা? তোমরা কি ভুলে গেছ হিন্দুরাজা গৌর গোবিন্দের সেই অত্যাচারের কথা? গৌর গোবিন্দের অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি দেয়ার প্রেক্ষিতে সুদূর ইয়ামেন থেকে ছুটে এসেছিলেন শাহ্জালাল? বাংলার এই জমিন থেকে ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রমুখরা তুরস্কের তৎকালীন সরকারের অত্যাচার-নিপীড়নের মূলোৎপাটন করতে যদি তুরস্কে ছুটে যেতে পারেন আজকে কেন পৃথিবীর মুসলিম মিল্লাতের যুবকরা অসহায় ফিলিস্তিনীদের রক্ষা করার জন্য সেখানে যেতে পারছে না।
ফিলিস্তিনিদের এই বিপদে ইসলামী উম্মার সব ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে যদি একটি আওয়াজ তুলতে পারে, যদি মুখ খোলে একটু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে পারে, তবে কার এমন বুকের পাটা আছে মুসলমানদের গায়ে হাত ওঠানোর সাহস করতে পারে। মহান আল্লাহ্ কি বলে দেননিÑ কাফির কখনও মুমিনের বন্ধু হতে পারে না। রাজাধিরাজ আরশের মালিক কি ঘোষণা করেননি যে, ইয়াহুদি আর মুশরিকরাই হচ্ছে তোমাদের চরম শত্রু। গোটা দুনিয়ার কাফির একজাত হতে পারলেও মুসলিম মিল্লাতের মুসলমানরা এক হতে পারে নাই বলে, অত্যাচার পোহাতে হচ্ছে প্রতিটি মুসিলম জনপদের মুসলমানদের। বাকস্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, শান্তি-প্রগতির গালভরা বুলি মানবতার জন্য দরদ শুধুই তাদের স্বজাতি, স্বধর্মের মানুষের জন্য, মুসলমানদের জন্য একটুও নয়। এই চরম বাস্তবতাটা বোঝার জন্য মহাপ-িত হওয়ার দরকার নেই। মুসলিম উম্মাহর ভয়াল দুঃসময়ে আফগানিস্তান, বসনিয়া, চেচনিয়ার মতো রক্ত কি ফিলিস্তিনে ঝরতেই থাকবে? ফিলিস্তিনে ইহুদিদের হাতে কি মুসলমানরা শহীদ হতেই থাকবে। মুসলমানদের রক্তের কি কোনো মূল্য নেই। জেগে ওঠ মুসলিম, জেগে ওঠ বীর মুসলমান, হুঙ্কার দিয়ে বলে দাও ফিলিস্তিনীদের ওপর হামলা বন্ধ করা না হলে মুসলিম মিল্লাতের মুসলমানরা ঘরে বসে থাকবে না। ইসরাইলের শত শত গুলীর চেয়ে বেশি শক্তিশালী অস্ত্র মুসলামনদের হাতে মহান আল্লাহ্ ১৪ শত বছর আগেই দিয়েছেন।
মোঃ তোফাজ্জল বিন আমীন 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads