শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

লাখপতি কাজের বুয়া

লাখপতি কাজের বুয়া


বাসায় কাজের বুয়া রাখবেন, সাবধান! এ কাজের বুয়া হতে পারে সঙ্ঘবদ্ধ দুর্বৃত্তদের সহযোগী। কেড়ে নিতে পারে আপনার সর্বস্ব। এমনই একটি চক্রকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত কাজের বুয়ারূপী শিউলীর নিজের বাসায়ই তিনজন বুয়া কাজ করে। কয়েক বছরের ব্যবধানে সে চুরি করেছে ৭০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ১০-১২ লাখ টাকা। গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করেছে, আরো কিছু চক্র রয়েছে যারা কাজের বুয়া নিয়োগ দেয়ার নাম করে সুরক্ষিত গৃহে ঢুকিয়ে দিচ্ছে তাদের সহযোগীদের। সময়-সুযোগ বুঝে বাসার লোকজনকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে তারা।
গত ১৭ আগস্ট গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে অভিযান চালিয়ে কাজের বুয়া শিউলী ওরফে হোসনা ওরফে ফারজানা ওরফে লাকীকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারের পর সে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেÑ রাজধানীর রূপনগর এলাকার এক বাসা থেকে ৪৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও দুই লাখ ২০ হাজার টাকা চুরি করে পালিয়ে যায়। শিউলী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, চোরাই মালামাল ও টাকা, অর্ধেক তার তালাকপ্রাপ্ত স্বামী তারিফ আলীকে ভাগ করে দেয় এবং ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার মিরপুর শাহ আলী থানাধীন মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেটে ৯৪ নম্বর দোকান আল হারুন জুয়েলার্সে প্রতি ভরি ১৫ হাজার টাকা হিসেবে বিক্রি করে। শিউলীর স্বীকারোক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তার তালাকপ্রাপ্ত স্বামী তারিফকে রূপনগর থেকে গত ১১ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে সেও বিষয়টি স্বীকার করে। শিউলীর দেয়া তথ্যানুযায়ী গত বৃহস্পতিবার শাহ আলীর আল হারুন জুয়েলার্সে অভিযান চালিয়ে দোকানের ম্যানেজার শাহীন ও কর্মচারী সুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা স্বর্ণ কেনার বিষয়টি স্বীকার করে। শিউলীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রমজান মাসের আগে মিরপুর, পল্লবী, রূপনগর কাফরুলের আরো একাধিক বাসা থেকে কাজের বুয়া সেজে সে স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে একই দোকানে বিক্রি করে। দোকানের আটককৃত ম্যানেজার ও কর্মচারী জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা দু’বারে মোট চোরাইকৃত ৪০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ক্রয় করেছিল এবং পরে দোকান মালিকের নির্দেশে ওই স্বর্ণালঙ্কার গলিয়ে নতুন গয়না বানিয়ে বিক্রির জন্য দোকানে প্রদর্শন করে রাখে। 
গ্রেফতারকৃত আসামি শিউলী কাজের বুয়ারূপে ঢাকা শহরের মিরপুর, পল্লবী, কাফরুল, রূপনগর, শাহ আলী থানাধীন বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ নেয়। কাজ নেয়ার পর মালিকসহ বাসার সব সদস্যের সাথে মার্জিত আচরণ, কাজের নিপুণতা ও চারিত্রিক বিশ্বস্ততার মাধ্যমে সবার মন জয় করে। বাসাবাড়িতে কাজে যোগ দেয়ার পর ওই বাসার ও আলমারির চাবি তার তালাকপ্রাপ্ত স্বামী তারিফের কাছে দিয়ে নকল চাবি বানায় এবং বাসার মালিক যখন বাসায় তালা মেরে বাইরে চলে যান, তখন শিউলী তার মোবাইল ফোন দিয়ে সাবেক স্বামী তারিফকে আসতে বলে। তখন তারিফ ও শিউলী মিলে বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়।
শিউলী গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে বাস করে এবং প্রতি মাসে দু-তিনবার এ ধরনের চুরির মিশন নিয়ে ঢাকায় আসে এবং কাজ শেষ করে আবার গোবিন্দগঞ্জে চলে যায়। শিউলী প্রথমে মা-বাবার পছন্দে বিয়ে করে স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় দ্বিতীয় স্বামী তারিফকে বিয়ে করে এবং তারিফের পরামর্শেই সে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয়। বিভিন্ন বাসা থেকে চোরাই মালামাল সে তারিফের সাথে ভাগাভাগি করে নেয়। একপর্যায়ে তারিফকে তালাক দিয়ে তৃতীয় স্বামী ড্রাইভার রুবেলকে বিয়ে করে গোবিন্দগঞ্জে বসবাস শুরু করে। কিন্তু বিয়ের পরও তালাককৃত স্বামী তারিফের সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রাখে এবং ঢাকায় এসে তারিফের সাথে যোগসাজশে চুরি করে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে শিউলী বিশাল বাড়ি ভাড়া করে দু’জন স্থায়ী কাজের বুয়া ও একজন ছুটা (অস্থায়ী) বুয়া দিয়ে সংসার চালায়। 
গ্রেফতারকৃত শিউলী জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানায়, সে ঢাকা শহরের ১৫-১৬টি বাড়িতে কাজের বুয়া হিসেবে স্বর্ণালঙ্কার ও অর্থ চুরি করেছে এবং এর আগে পল্লবী থানার একটি মামলায় ছয় মাস জেল খেটেছিল। এর আগে সে পল্লবী থানাধীন আওয়ামী লীগ নেত্রী রীনার বাসা থেকে ৫৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, কাজীপাড়ার ফয়সালদের বাসা থেকে ফয়সালের মাকে চায়ের সাথে কীটনাশক মিশিয়ে খাইয়ে অজ্ঞান করে ৫৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য ভিকটিমের বাসা থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৭০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ১০-১২ লাখ টাকা চুরি করে বলে জানায়।
চোরাই স্বর্ণালঙ্কার সে শাহ আলী থানার মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেটসহ মিরপুর এলাকার বিভিন্ন মার্কেটের জুয়েলারি দোকানে বিক্রি করে বলে জানায়। শিউলী অশিক্ষিত হওয়ায় দোকানদারেরা তাকে মাপে ও দামে ঠকিয়েছে বলেও সে জানায় এবং গ্রেফতারকৃত স্বর্ণের দোকানের ম্যানেজার ও কর্মচারীও এ কথা স্বীকার করেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads