অলিউল্লাহ নোমান
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিরোধীদলীয় নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান। চিকিত্সার জন্য একরকম নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে লন্ডনে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। এখনও অসুস্থ। গত জুলাই মাসে লন্ডনে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তাকে অনেকটা রোগাই দেখা গেছে। পা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন।
লন্ডনে দীর্ঘ চিকিত্সার পরও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি। ১/১১-এর সরকারের সময় গ্রেফতারের পর তারেক রহমানের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। ১/১১-এর তার মেরুদেণ্ডের হাড়ে সমস্যা দেখা দেয়। সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত ১/১১-এর সরকারের রোষানলে পড়েন তারেক রহমান ও তার ছোট ভাই আরাফত রহমান। বেগম খালেদা জিয়াকেও এক বছর কারান্তরালে থাকতে হয়েছে তখন।
তখনই জনমনে প্রশ্ন উঠেছিল, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের ওপর এই নির্যাতন কেন? কেন এত রোষানলে পড়তে হলো শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরিদের। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কঠিন সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। অস্ত্রহাতে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরবর্তিকালে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আরেক দুঃসময়ে সিপাহি-জনতার সম্মিলিত বিপ্লবের মাধ্যমে তাকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। একটি ভঙ্গুর বাংলাদেশ তার দৃঢ় নেতৃত্বে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যায়। জিয়াউর রহমানের দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী, দূরদর্শী নেতৃত্বে উন্নয়ন ও আধুনিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলাদেশের মানুষ। অতি অল্প সময়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করে। এই সাফল্যে বাংলাদেশকে যারা স্বনির্ভর দেখতে চায় না, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক সেটা সহ্য করতে পারে না, তারা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। অনেক সামরিক অভ্যুত্থানের মোকাবিলা করতে হয়েছে তখন জিয়াউর রহমানকে। একপর্যায়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রন্ত সফল হয়। চট্টগ্রামে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে প্রাণ হারান তিনি। তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান দুই ভাই তখন ছোট শিশু। বাবার সান্নিধ্যে বেশি দূর বেড়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। অতি অল্প বয়সে বাবাকে হারান তারা। জিয়াউর রহমানের অল্প সময়ের সুশাসন দেশের মানুষ এখনও মনে রেখেছে। এখনও দেশপ্রেমিকদের আদর্শ হলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
স্বাধীন সার্বভৌম ও স্বনির্ভর বাংলাদেশকে যারা সহ্য করতে পারে না, তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পরও। এই ষড়যন্ত্রকারীদের ভয় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবার ও তার রেখে যাওয়া আদর্শ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। তাই শহীদ জিয়ার পরিবার, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও বিএনপির বিরুদ্ধেও নানা কৌশলে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে বাংলাদেশবিরোধীরা।
দেশের মানুষের তাগিদে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। হাল ধরেন জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়বাদাবী দলের। জিয়াউর রহমানের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, প্রশ্নাতীত সততা ও দেশপ্রেমের আদর্শকে ধারণ করেই তিনি বিনএপিকে এগিয়ে নিয়ে যান। তার নেতৃত্বে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে দু’বার বিপুলভাবে বিজয়লাভ করে। বাবার আদর্শ, মায়ের পরিশ্রম ও জনপ্রিয়তাকে সামনে রেখে তারেক রহমানও যোগ দেন সরাসরি রাজনীতিতে। ২০০২ সালের গোড়ার দিকে দায়িত্ব পান দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের। শুধু তাই নয়, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি নির্বাচনী পরিকল্পনা ও নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন নেপথ্যে থেকে। তার সূক্ষ্ম পরিকল্পনা নির্বাচনে বিজয়ের জন্য দলকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যায়। নেপথ্যে থেকে ২০০১ সালের পুরো নির্বাচনটি তিনি পরিচালনা করেছিলেন। এতে দেশের মানুষ তারেক রহমানকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে থাকে। ষড়যন্ত্রকারীরা আবারও নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে। যে করেই হোক তারেক রহমানকে বিতর্কিত করতে হবে। ধ্বংস করে দিতে হবে আগামী দিনের নেতৃত্বকে। দেশের মানুষের সামনে তার ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে। এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে নানা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা। বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগও টার্গেট করে তারেক রহমানকে। সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বনানীর কার্যালয় হাওয়া ভবনকে বিতর্কিত করাই ছিল তাদের একমাত্র মিশন। এই কার্যালয়ে বসেই তারেক রহমান নির্বাচন পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। এখানেই তিনি নিয়মিত বসতেন। এজন্য তত্কালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের যত অভিযোগ ছিল বনানীর হাওয়া ভবনকে ঘিরে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে, গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়লে তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা অভিযোগ করতেন হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। তার অভিযোগ ছিল একটাই—হাওয়া ভবনে বসে তারেক রহমান দুর্নীতি করছেন। তারেক রহমানের দুর্নীতির কারণেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। বাড়ছে বিদ্যুত্-গ্যাসের দাম। সিএনজিচালিত স্কুটারের ভাড়া বৃদ্ধির জন্যও দায়ী করা হতো হাওয়া ভবনকে। এই অপপ্রচারের খেসারতই হয়তো তারেক রহমানকে এখনও দিতে হচ্ছে।
তারেক রহমান ও হাওয়া ভবনকে ঘিরে অভিযোগ জনগণকে বিশ্বাস করাতে পেরেছিল তত্কালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। শুধু জনগণ নয়, সামরিক-বেসামরিক সরকারি চাকরিজীবীরাও তখন বিরোধী দলের অভিযোগকে আমলে নিয়েছিলেন। অনেক সামরিক কর্তার মুখে তখন শোনা গেছে, কারও সম্পদ পাহারা দেয়ার দায়িত্ব তাদের নয়। বেসামরিক আমলাদের অনেকেও ছিলেন নাখোশ। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অনেক মন্ত্রীর মুখেও তখন শোনা গেছে তারেক রহমান-বিরোধী নানা কথা। কিছু ভুলের কারণেই হয়তোবা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রচারিত অভিযোগগুলো ডালপালা বিস্তার লাভ করেছিল। চারদলীয় জোটের মন্ত্রী-এমিদের কেউ কেউ যে তখন বৈধ-অবৈধ টাকাপয়সা কামাইয়ে লিপ্ত হননি, এ কথাও হলফ করে বলা যাবে না। মন্ত্রী-এমপিদের টাকা কামাইয়ের দায়ও তারেক রহমানকেই বহন করতে হচ্ছে। কারণ আমাদের দেশীয় প্রবাদে রয়েছে, যত দোষ সব হলো নন্দ ঘোষের। এখনও তারেক রহমানের নামে বিভিন্ন জন নানাভাবে প্রভাববিস্তারের অপচেষ্টায় লিপ্ত।
দু-একটি পত্রিকাও তারেক রহমানের বিরোধিতায় মিশন নিয়ে কাজ করেছে। তাদেরও মিশন ছিল আওয়ামী প্রচারণায় হাওয়া দেয়া, তারেক রহমানকে বিতর্কিত করা। এই পত্রিকাগুলো কখনোই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে কাজ করে না। ভারতের মধ্যে বাংলাদেশকে বিলীন করে দিতে পারলে দু-একটি পত্রিকা যেন খুশি হয়। তারাই তারেক রহমান-বিরোধী প্রচারণায় হাওয়া দিতে আদা-জল খেয়ে নেমেছিল। সুযোগ পেলেই এখনও অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তখন তার একটাও কি এতদিনে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে?
তারেক রহমানের সন্তান যদি এখন তার কাছে প্রশ্ন রাখে—বলে, বাবা তুমি কী করেছিলে? তোমার বিরুদ্ধে এত প্রচার শোনা গেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে এত টাকা কামাইয়ের গল্প শোনা গেছে, সেই টাকা কোথায়! তখন তিনি সন্তানকে কী জবাব দেবেন? ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেয়ার পর মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন, মাসুদ উদ্দিন ও হাসান মশহুদ চৌধুরীদের মুখেও শোনা গেছে অনেক গল্প। অপপ্রচারের পাশাপাশি তারাই তারেক রহমানকে শারীরিকভাবে অনেকটা পঙ্গু করে দিয়েছিলেন। দেশে-বিদেশে তারেক রহমানের সম্পদের খোঁজে চিরুনি অভিযান চালিয়েছেন হয়েছে। তার সম্পদের খোঁজে নেমেছিল সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে গঠিত তথা কথিত টাস্কফোর্স। তাদের কাছে প্রশ্ন রেখে জানতে চাই—কোথায় তারেক রহমানের সম্পদ। দেশ ও জাতি জানতে চায়, আপনারা তারেক রহমানের কী ধরনের সম্পদের সন্ধান পেয়েছেন। দয়া করে আমাদের একটু জানান। নতুবা বলেন তার বিরুদ্ধে এত অপপ্রচারে কেন লিপ্ত হয়েছিলেন। মানবাধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করে তার মেরুদণ্ডের হাড় কেন ভাঙা হলো সেটা আমরা জানতে চাই।
১/১১-এর সরকারের ধারবাহিকতায় বর্তমান আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। তারাও আগের ধারাবাহিকতায় তারেক রহমান-বিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রাখে। তবে প্রমাণ করার মতো তারেক রহমানের কোনো সম্পদ বাংলাদেশের কোনো আদালতের সামনে উপস্থাপন করা এখনও সম্ভব হয়নি। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের পর থেকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যারা এত অপপ্রচার চালিয়েছিল, তারাই এখন ক্ষমতায়। তাদের নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের সব গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে সব মেশিনারি। এসব সংস্থা ও মেশিনারি কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছরেও দুটি সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রচারিত কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি কেন সেই প্রশ্ন আমাদের।
তিনি হাওয়া ভবনকে বাংলাদেশের উন্নয়নের গবেষণাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। হাওয়া ভবনে পুরো বাংলাদেশের কোন এলকার কী অবস্থা, সেই চিত্র তৈরি করা হয়েছিল। কোন উপজেলায় কত কিলোমিটার পাকা রাস্তা রয়েছে, মাটির রাস্তা কত কিলোমিটার, কোন রাস্তার মেরামত প্রয়োজন, নতুন করে কোথায় কত কিলোমিটার রাস্তার প্রয়োজন, কোন উপজেলায় কতটা সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কতটা সরকারি-বেসরকারি হাইস্কুল, কলেজ ও মাদরাসা রয়েছে সেই চিত্র ছিল। দেশের পুরো চিত্র ছিল কম্পিউটার সফটওয়্যারে। আরও ছিল পুরো দেশের ভোটারের হাল হকিকত। দারিদ্র্যসীমার নিচে কোথায় কত মানুষ রয়েছে, কোন এলকায় গরিব মানুষের আয়ের উত্স কী, সেটাও ছিল হাওয়া ভবনের মনিটরিংয়ের আওতায়। দেশের রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার উন্নয়ন, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন কীভাবে করা যায়, সেটা নিয়ে ছিল গবেষণা।
এই ভবনে যারা স্টাফ হিসেবে কাজ করতেন তারা কেউ দলের কোনো পর্যায়ের নেতৃত্বে ছিলেন না। হাওয়া ভবনের স্টাফ হিসেবে নেয়ার পর দলের কোনো দায়িত্বে থাকলে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। হাওয়া ভবনে কাজ করার কারণে দলে অযাচিত প্রভাব বিস্তার করতে পারেন—এজন্য দলীয় পদ থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, হাওয়া ভবনে বসে কে কোথায় টেলিফোনে কী কথা বলছেন, সেটা রেকর্ড করার ব্যবস্থাও করেছিলেন তারেক রহমান। হাওয়া ভবনের টেলিফোনের কথোপকথন নিয়মিত মনিটরিং করা হতো। কেউ হাওয়া ভবনে বসে টেলিফোন ব্যবহার করে অন্যায় প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে কিছু করছেন কিনা সেই খোঁজ-খবর রাখার জন্যই মূলত তারেক রহমান এই মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। টেলিফোন মনিটরিংয়ে অন্যায় ধরা পড়ার কারণে ৪ জনকে হাওয়া ভবনের চাকরি থেকে অব্যাহতিও দেয়া হয়েছিল।
হাওয়া ভবনে মোট ১৮ স্টাফ ছিলেন। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকার থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত একজন স্টাফের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির কোনো মামলা করা সম্ভব হয়নি। আমাদের জানামতে, প্রত্যেকের নাড়ি-নক্ষত্র খুঁজে দেখেছে ১/১১-এর সরকার। কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ করার মতো কোনোকিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেই হাওয়া ভবনের কোনো স্টাফের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব হয়নি। যেই হাওয়া ভবনকে ঘিরে দুর্নীতি-মহাচুরির গল্প বলা হতো, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা হতো তাদের কাছে সবিনয়ে প্রশ্ন রেখে জানতে চাই, আপনারা এখন কী বলবেন? তার পরও কি বলবেন তারেক রহমান চুরি করেছে, দুর্নীতি করেছে?
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষের নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে, স্বনির্ভর শক্তিশালী বাংলাদেশে বিশ্বাস করে এমন নেতৃত্বকে পঙ্গু করে দিতেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালানো হয়েছিল!
লন্ডনে দীর্ঘ চিকিত্সার পরও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি। ১/১১-এর সরকারের সময় গ্রেফতারের পর তারেক রহমানের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। ১/১১-এর তার মেরুদেণ্ডের হাড়ে সমস্যা দেখা দেয়। সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত ১/১১-এর সরকারের রোষানলে পড়েন তারেক রহমান ও তার ছোট ভাই আরাফত রহমান। বেগম খালেদা জিয়াকেও এক বছর কারান্তরালে থাকতে হয়েছে তখন।
তখনই জনমনে প্রশ্ন উঠেছিল, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের ওপর এই নির্যাতন কেন? কেন এত রোষানলে পড়তে হলো শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরিদের। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কঠিন সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। অস্ত্রহাতে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরবর্তিকালে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আরেক দুঃসময়ে সিপাহি-জনতার সম্মিলিত বিপ্লবের মাধ্যমে তাকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। একটি ভঙ্গুর বাংলাদেশ তার দৃঢ় নেতৃত্বে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যায়। জিয়াউর রহমানের দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী, দূরদর্শী নেতৃত্বে উন্নয়ন ও আধুনিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলাদেশের মানুষ। অতি অল্প সময়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করে। এই সাফল্যে বাংলাদেশকে যারা স্বনির্ভর দেখতে চায় না, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক সেটা সহ্য করতে পারে না, তারা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। অনেক সামরিক অভ্যুত্থানের মোকাবিলা করতে হয়েছে তখন জিয়াউর রহমানকে। একপর্যায়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রন্ত সফল হয়। চট্টগ্রামে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে প্রাণ হারান তিনি। তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান দুই ভাই তখন ছোট শিশু। বাবার সান্নিধ্যে বেশি দূর বেড়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। অতি অল্প বয়সে বাবাকে হারান তারা। জিয়াউর রহমানের অল্প সময়ের সুশাসন দেশের মানুষ এখনও মনে রেখেছে। এখনও দেশপ্রেমিকদের আদর্শ হলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
স্বাধীন সার্বভৌম ও স্বনির্ভর বাংলাদেশকে যারা সহ্য করতে পারে না, তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পরও। এই ষড়যন্ত্রকারীদের ভয় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবার ও তার রেখে যাওয়া আদর্শ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। তাই শহীদ জিয়ার পরিবার, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও বিএনপির বিরুদ্ধেও নানা কৌশলে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে বাংলাদেশবিরোধীরা।
দেশের মানুষের তাগিদে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। হাল ধরেন জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়বাদাবী দলের। জিয়াউর রহমানের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, প্রশ্নাতীত সততা ও দেশপ্রেমের আদর্শকে ধারণ করেই তিনি বিনএপিকে এগিয়ে নিয়ে যান। তার নেতৃত্বে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে দু’বার বিপুলভাবে বিজয়লাভ করে। বাবার আদর্শ, মায়ের পরিশ্রম ও জনপ্রিয়তাকে সামনে রেখে তারেক রহমানও যোগ দেন সরাসরি রাজনীতিতে। ২০০২ সালের গোড়ার দিকে দায়িত্ব পান দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের। শুধু তাই নয়, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি নির্বাচনী পরিকল্পনা ও নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন নেপথ্যে থেকে। তার সূক্ষ্ম পরিকল্পনা নির্বাচনে বিজয়ের জন্য দলকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যায়। নেপথ্যে থেকে ২০০১ সালের পুরো নির্বাচনটি তিনি পরিচালনা করেছিলেন। এতে দেশের মানুষ তারেক রহমানকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে থাকে। ষড়যন্ত্রকারীরা আবারও নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে। যে করেই হোক তারেক রহমানকে বিতর্কিত করতে হবে। ধ্বংস করে দিতে হবে আগামী দিনের নেতৃত্বকে। দেশের মানুষের সামনে তার ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে। এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে নানা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা। বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগও টার্গেট করে তারেক রহমানকে। সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বনানীর কার্যালয় হাওয়া ভবনকে বিতর্কিত করাই ছিল তাদের একমাত্র মিশন। এই কার্যালয়ে বসেই তারেক রহমান নির্বাচন পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। এখানেই তিনি নিয়মিত বসতেন। এজন্য তত্কালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের যত অভিযোগ ছিল বনানীর হাওয়া ভবনকে ঘিরে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে, গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়লে তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা অভিযোগ করতেন হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। তার অভিযোগ ছিল একটাই—হাওয়া ভবনে বসে তারেক রহমান দুর্নীতি করছেন। তারেক রহমানের দুর্নীতির কারণেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। বাড়ছে বিদ্যুত্-গ্যাসের দাম। সিএনজিচালিত স্কুটারের ভাড়া বৃদ্ধির জন্যও দায়ী করা হতো হাওয়া ভবনকে। এই অপপ্রচারের খেসারতই হয়তো তারেক রহমানকে এখনও দিতে হচ্ছে।
তারেক রহমান ও হাওয়া ভবনকে ঘিরে অভিযোগ জনগণকে বিশ্বাস করাতে পেরেছিল তত্কালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। শুধু জনগণ নয়, সামরিক-বেসামরিক সরকারি চাকরিজীবীরাও তখন বিরোধী দলের অভিযোগকে আমলে নিয়েছিলেন। অনেক সামরিক কর্তার মুখে তখন শোনা গেছে, কারও সম্পদ পাহারা দেয়ার দায়িত্ব তাদের নয়। বেসামরিক আমলাদের অনেকেও ছিলেন নাখোশ। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অনেক মন্ত্রীর মুখেও তখন শোনা গেছে তারেক রহমান-বিরোধী নানা কথা। কিছু ভুলের কারণেই হয়তোবা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রচারিত অভিযোগগুলো ডালপালা বিস্তার লাভ করেছিল। চারদলীয় জোটের মন্ত্রী-এমিদের কেউ কেউ যে তখন বৈধ-অবৈধ টাকাপয়সা কামাইয়ে লিপ্ত হননি, এ কথাও হলফ করে বলা যাবে না। মন্ত্রী-এমপিদের টাকা কামাইয়ের দায়ও তারেক রহমানকেই বহন করতে হচ্ছে। কারণ আমাদের দেশীয় প্রবাদে রয়েছে, যত দোষ সব হলো নন্দ ঘোষের। এখনও তারেক রহমানের নামে বিভিন্ন জন নানাভাবে প্রভাববিস্তারের অপচেষ্টায় লিপ্ত।
দু-একটি পত্রিকাও তারেক রহমানের বিরোধিতায় মিশন নিয়ে কাজ করেছে। তাদেরও মিশন ছিল আওয়ামী প্রচারণায় হাওয়া দেয়া, তারেক রহমানকে বিতর্কিত করা। এই পত্রিকাগুলো কখনোই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে কাজ করে না। ভারতের মধ্যে বাংলাদেশকে বিলীন করে দিতে পারলে দু-একটি পত্রিকা যেন খুশি হয়। তারাই তারেক রহমান-বিরোধী প্রচারণায় হাওয়া দিতে আদা-জল খেয়ে নেমেছিল। সুযোগ পেলেই এখনও অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তখন তার একটাও কি এতদিনে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে?
তারেক রহমানের সন্তান যদি এখন তার কাছে প্রশ্ন রাখে—বলে, বাবা তুমি কী করেছিলে? তোমার বিরুদ্ধে এত প্রচার শোনা গেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে এত টাকা কামাইয়ের গল্প শোনা গেছে, সেই টাকা কোথায়! তখন তিনি সন্তানকে কী জবাব দেবেন? ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেয়ার পর মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন, মাসুদ উদ্দিন ও হাসান মশহুদ চৌধুরীদের মুখেও শোনা গেছে অনেক গল্প। অপপ্রচারের পাশাপাশি তারাই তারেক রহমানকে শারীরিকভাবে অনেকটা পঙ্গু করে দিয়েছিলেন। দেশে-বিদেশে তারেক রহমানের সম্পদের খোঁজে চিরুনি অভিযান চালিয়েছেন হয়েছে। তার সম্পদের খোঁজে নেমেছিল সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে গঠিত তথা কথিত টাস্কফোর্স। তাদের কাছে প্রশ্ন রেখে জানতে চাই—কোথায় তারেক রহমানের সম্পদ। দেশ ও জাতি জানতে চায়, আপনারা তারেক রহমানের কী ধরনের সম্পদের সন্ধান পেয়েছেন। দয়া করে আমাদের একটু জানান। নতুবা বলেন তার বিরুদ্ধে এত অপপ্রচারে কেন লিপ্ত হয়েছিলেন। মানবাধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করে তার মেরুদণ্ডের হাড় কেন ভাঙা হলো সেটা আমরা জানতে চাই।
১/১১-এর সরকারের ধারবাহিকতায় বর্তমান আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। তারাও আগের ধারাবাহিকতায় তারেক রহমান-বিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রাখে। তবে প্রমাণ করার মতো তারেক রহমানের কোনো সম্পদ বাংলাদেশের কোনো আদালতের সামনে উপস্থাপন করা এখনও সম্ভব হয়নি। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের পর থেকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যারা এত অপপ্রচার চালিয়েছিল, তারাই এখন ক্ষমতায়। তাদের নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের সব গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে সব মেশিনারি। এসব সংস্থা ও মেশিনারি কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছরেও দুটি সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রচারিত কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি কেন সেই প্রশ্ন আমাদের।
তিনি হাওয়া ভবনকে বাংলাদেশের উন্নয়নের গবেষণাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। হাওয়া ভবনে পুরো বাংলাদেশের কোন এলকার কী অবস্থা, সেই চিত্র তৈরি করা হয়েছিল। কোন উপজেলায় কত কিলোমিটার পাকা রাস্তা রয়েছে, মাটির রাস্তা কত কিলোমিটার, কোন রাস্তার মেরামত প্রয়োজন, নতুন করে কোথায় কত কিলোমিটার রাস্তার প্রয়োজন, কোন উপজেলায় কতটা সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কতটা সরকারি-বেসরকারি হাইস্কুল, কলেজ ও মাদরাসা রয়েছে সেই চিত্র ছিল। দেশের পুরো চিত্র ছিল কম্পিউটার সফটওয়্যারে। আরও ছিল পুরো দেশের ভোটারের হাল হকিকত। দারিদ্র্যসীমার নিচে কোথায় কত মানুষ রয়েছে, কোন এলকায় গরিব মানুষের আয়ের উত্স কী, সেটাও ছিল হাওয়া ভবনের মনিটরিংয়ের আওতায়। দেশের রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার উন্নয়ন, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন কীভাবে করা যায়, সেটা নিয়ে ছিল গবেষণা।
এই ভবনে যারা স্টাফ হিসেবে কাজ করতেন তারা কেউ দলের কোনো পর্যায়ের নেতৃত্বে ছিলেন না। হাওয়া ভবনের স্টাফ হিসেবে নেয়ার পর দলের কোনো দায়িত্বে থাকলে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। হাওয়া ভবনে কাজ করার কারণে দলে অযাচিত প্রভাব বিস্তার করতে পারেন—এজন্য দলীয় পদ থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, হাওয়া ভবনে বসে কে কোথায় টেলিফোনে কী কথা বলছেন, সেটা রেকর্ড করার ব্যবস্থাও করেছিলেন তারেক রহমান। হাওয়া ভবনের টেলিফোনের কথোপকথন নিয়মিত মনিটরিং করা হতো। কেউ হাওয়া ভবনে বসে টেলিফোন ব্যবহার করে অন্যায় প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে কিছু করছেন কিনা সেই খোঁজ-খবর রাখার জন্যই মূলত তারেক রহমান এই মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। টেলিফোন মনিটরিংয়ে অন্যায় ধরা পড়ার কারণে ৪ জনকে হাওয়া ভবনের চাকরি থেকে অব্যাহতিও দেয়া হয়েছিল।
হাওয়া ভবনে মোট ১৮ স্টাফ ছিলেন। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকার থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত একজন স্টাফের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির কোনো মামলা করা সম্ভব হয়নি। আমাদের জানামতে, প্রত্যেকের নাড়ি-নক্ষত্র খুঁজে দেখেছে ১/১১-এর সরকার। কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ করার মতো কোনোকিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেই হাওয়া ভবনের কোনো স্টাফের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব হয়নি। যেই হাওয়া ভবনকে ঘিরে দুর্নীতি-মহাচুরির গল্প বলা হতো, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা হতো তাদের কাছে সবিনয়ে প্রশ্ন রেখে জানতে চাই, আপনারা এখন কী বলবেন? তার পরও কি বলবেন তারেক রহমান চুরি করেছে, দুর্নীতি করেছে?
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষের নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে, স্বনির্ভর শক্তিশালী বাংলাদেশে বিশ্বাস করে এমন নেতৃত্বকে পঙ্গু করে দিতেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালানো হয়েছিল!
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন