ডেস্ক নিউজ,২৩ সেপ্টেম্বর: প্রায় চার বছর ধরে লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বেশ কিছু বিষয়ে তার দলের প্রতি ক্ষুব্ধ। কিছু কারণ তার মধ্যে অভিমানের জন্ম দিয়েছে। সৃষ্টি করেছে হতাশারও। তিনি তার স্বল্পসংখ্যক বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠজনদের কাছে তার ক্ষোভের ও অভিমানের কথা প্রকাশও করেছেন।
দেশের রাজনীতিতে তারেক রহমান অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়। সম্প্রতি লন্ডন থেকে ফিরে এসেছেন এমন একজন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে লন্ডন থেকে ফিরে তারেকের শুভাকাক্সক্ষী এসব তথ্য জানিয়েছেন। আমাদের অর্থনীতির পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা প্রকাশ করা হল
তারেক রহমান বাংলাদেশের ভোটার নন। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও দল এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগও নেয়নি। বিষয়টি তাকে প্রচণ্ড কষ্ট দেয়। তিনি এ ব্যাপারে বেশ অভিমানী। অথচ দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা তাকে তাদের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারী হিসেবে নিয়মিত প্রচার করে থাকে। বহুল আলোচিত সেনাশাসিত ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ওই সরকারের নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটার হতে অস্বীকার করেন। তারেক রহমানও তার মায়ের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ভোটার হননি। পরে খালেদা জিয়া ভোটার হয়েছেন, নির্বাচন করেছেন। অথচ আজ পর্যন্ত তারেকের ভোটার হওয়ার ব্যাপারে দলীয় ফোরামে কোনো কথা উত্থাপন হয়নি। নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগও। বর্তমান মহাজোট সরকারের মেয়াদের শেষ মুহূর্তে তিনি দেশে ফিরলে অথবা দল তাকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দিলে তিনি ভোটার না হওয়ার কারণে সেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে দলীয় কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় তার অভিমান দানা বাঁধছে। এছাড়া তার সঙ্গে তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানও ভোটার হননি। তারেক রহমানের আশঙ্কাÑ বর্তমান মহাজোট সরকার রাজনৈতিক কারণে আগামী নির্বাচন থেকে তার মাকে ও তাকে বাইরে রাখতে পারে। সরকারের শেষ সময়ে যেকোনো চলমান মামলায় দ্রুত সাজা দিয়ে দিতে পারে। তখন জিয়া পরিবার থেকে বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলের হাল ধরার জন্যও ডা. জুবাইদাকে প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। কিন্তু সে বিষয়েও দল কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
এছাড়া দেশ থেকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা লন্ডন থেকে ঘুরে এসে দেশে প্রচার করে থাকেন, ‘ভাইয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এলাম।’ এ বিষয়টি নিয়েও তিনি ক্ষুব্ধ। কারণ চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় এই প্রায় চার বছরে তিনি খুব কম সংখ্যক দলীয় নেতাকে সাক্ষাৎ দিয়েছেন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তিনি খুব কম লোকের সঙ্গেই দেখা দিয়েছেন। বলতে গেলে তিনি নিজের চিকিৎসা, আইন ও রাজনীতি বিষয়ে পড়াশোনা, স্ত্রীর উচ্চশিক্ষা, একমাত্র কন্যা জাইমা রহমানের পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত। এ কারণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মতো সিনিয়র নেতাও গত দুই বছরে তিনবার লন্ডন গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে মাত্র একবার সফল হয়েছেন। এসময়ের মধ্যে তিনি তার মায়ের নির্দেশে দুএকজন নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ দিয়েছেন।
উত্তরবঙ্গের একটি জেলার সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা দু’বার তার সাক্ষাৎ পেয়েছেন। তাকে ব্যক্তিগতভাবে তারেক রহমানও পছন্দ করেন। অথচ অনেক পাতি-নেতাও প্রচার করে করে বেড়ায় তার সঙ্গে সাক্ষাতের। এসবই করা হয় অসৎ উদ্দেশে। এ নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ। এছাড়া দেশে সম্প্রতি তাকে নিয়ে একটি গুজব ছড়ানো হয়, তিনি রাজনীতি থেকে একেবারে দূরে আছেন। এ গুজবটিতেও তিনি ক্ষুব্ধ। প্রকৃত অর্থে বিগত চার বছরের মধ্যে তিনি আগের চেয়ে বর্তমানে অনেক বেশি রাজনীতি সচেতন ও সজাগ। প্রতিনিয়ত দেশের রাজনীতি বিশেষ করে নিজ দলীয় রাজনীতি সম্পর্কে তিনি খোঁজ-খবর রাখেন। অবশ্য একটি বিষয়ে তিনি সচেতন, যাদের মাধ্যমে তিনি নিয়মিত রাজনীতি সম্পর্কে খোঁজ রাখেন, তারাও যেন তাকে ‘ব্ল্যাক মেইল’ না করতে পারে।
সূত্র জানায়, তারেক রহমানের মধ্যে বর্তমানে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে এবং হয়েছে তার মানসিকতারও পরিবর্তন। আগে যে কারও কথা তিনি বিশ্বাস করতেন। অথবা যে কেউ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য তাকে ভুল বোঝাতে পারত। এসব দুর্বলতার জন্য তাকে কঠিন মূল্যও দিতে হয়েছে। কিন্তু নানান তিক্ত অভিজ্ঞতায় এখন তিনি অনেকটা হিসেবি ও সাবধানী হয়ে উঠেছেন। যে কেউ ইচ্ছা করলেই এখন তাকে ভুল বোঝাতে পারে না। যার-তার কথাই এখন তিনি বিশ্বাস করেন না। কোনো সিদ্ধান্তও হুট করে দেন না। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অনেক হিসাব-নিকাশ করেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে তিনি তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানেরও সহযোগিতা নেন। অনেক সময় তার একমাত্র কন্যা জাইমাও বাবার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হলে আলোচনা করে সহযোগিতা করেন। এছাড়া তিনি এখন প্রচুর পড়াশোনা করেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রশ্নোত্তর পর্ব সরাসরি টেলিভিশনে দেখেন। কারণ তাদের ওই প্রোগ্রাম থেকে তিনি শিক্ষা নিচ্ছেন। শিক্ষা নিচ্ছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টারিয়ানদের ‘ম্যানার’, ‘পরমত সহিষ্ণুতা’, ‘অন্যের প্রতি সম্মানবোধ’ সর্বোপরি জবাবদিহিতার। তিনি ভবিষ্যতে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশেও ওই সংস্কৃতি চালু করতে চান। বলতে গেলে তিনি এখন পরিবর্তনের বর্ডার লাইনে রয়েছেন। এছাড়া তিনি পলিটিক্যাল সিকনেস ঘৃণা করেন।
সূত্র আরও জানায়, একটি বিষয়ে তারেক রহমান এখনও মানসিকভাবে প্রচণ্ড কষ্টে ভোগেন। তা হলোÑ যাদের তিনি বিশ্বাস করতেন, যাদের তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মর্যাদা দিয়েছিলেন, সেসব লোকের অনেকেই তার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। অনেকে বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে নিজের স্বার্থে দুই নম্বরি করেছেন। যেসব তথাকথিত বন্ধুরা তাকে নিজেদের স্বার্থে শুধু ব্যবহারই করেছে। স্বার্থ হাসিল করেছে। নিজের আখের গুছিয়েছে। এখন তিনি এসব বিষয় কঠিনভাবে উপলব্ধি করেন। তিনি তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ওইসব তথাকথিত বন্ধুদের কারণে তাদের ঐতিহ্যবাহী জিয়া পরিবারেরও ইমেজের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তার নিজের ইমেজেরও ক্ষতি হয়েছে। এসব বিষয় এখনও তাকে প্রচণ্ড কষ্ট দেয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি অনুতপ্তও। নিজের আত্মসমালোচনা করছেন। অন্যের সমালোচনা সহ্য করারও সংস্কৃতি আত্মস্থ করছেন। এজন্য তিনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করছেন। তিনি উপলব্ধি করছেন তার আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সম্পর্ক সম্পর্কে তার বিশাল জ্ঞান থাকতে হবে। এসব বিষয়েও তিনি প্রচুর পড়াশোনা করছেন। উপলব্ধি করছেন তিনি দলের নেতৃত্ব হাতে নিয়ে দলকে সাজাবেন আধুনিক ও পশ্চিমা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ধাঁচে। এছাড়া, অসংখ্য দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসী শুনতে চায় তারেক রহমানের বন্ধুদের তালিকায় রয়েছেন ভারতের কংগ্রেসের তরুণ নেতৃত্ব সোনিয়াপুত্র রাহুল গান্ধী, পাকিস্তানের বেনজির পুত্র বিলওয়াল ভুট্টো, এমনকি ভুটানের তরুণ রাজা জিগমে সিংগে খিসার মতো লোক। তাকে যারা বন্ধুত্বের সুযোগে কলুষিত করেছে সেই সব তথাকথিত বন্ধুদের আর লোকেরা দেখতে চায় না।
তিনি আরও উপলব্ধি করছেন তার কোনো দেশীয় ‘ইয়ার-বন্ধু’ থাকতে পারবে না। যেমনটি ছিল না তার বাবার। ১৯৮১ সালে দুঃখজনকভাবে তার মৃত্যু হলেও আজ পর্যন্ত দেশের কেউ নিজেকে জিয়াউর রহমানের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিতে পারেনি। তাছাড়া জিয়াউর রহমানের পিতার সম্পর্কীয় কোনো আত্মীয়ও বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন বা ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় নিজেকে জাহির করেনি। তারেক রহমান বর্তমানে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করছেন। তিনি ভবিষ্যতে দেশে মালয়েশিয়ার কিংবদন্তি নেতা মাহাথির মোহাম্মদের অনুসরণে ‘গ্যালারি পার্দানা’র মতো সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছেন। যেখানে থাকবে দেশের মহৎ সব রাজনীতিকদের সব ইতিহাসের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। যেন ভবিষ্যৎ প্রজš§ জাতির এই কীর্তিমানদের জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
এছাড়া, তারেক রহমান জোর করে বিএনপি নেতৃত্ব হাতে নেয়ায় বিশ্বাসী নন। তিনি দীর্ঘদিন দলের তৃণমূল সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। তার জেলা বগুড়ার বাগবাড়ী থানায় তিনি ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হন। বেশ কয়েক বছর দলের জন্য কাজ করে তিনি প্রথমে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও পরে বিগত জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের ভোটে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ভবিষ্যতে নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য তিনি এখন শিক্ষা গ্রহণ করছেন।
জানা গেছে, মাস দুএকক আগে তারেক রহামানের ব্রিটিশ ভিসা দুই বছর মেয়াদে বাড়ানো হয়েছে। তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান প্রিভেনটিভ কার্ডিওলজির ওপর উচ্চশিক্ষা (এমএস) নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত তার চারটি পার্ট শেষ হয়েছে। পরীক্ষার প্রতিটিতে তিনি ডিস্টিংশন পেয়েছেন। তার একমাত্র কন্যা জাইমা রহমানের পরীক্ষার ফলাফল অত্যন্ত ভালো। ৯টিতে আউট-স্ট্যান্ডিং রেজাল্ট করেছেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন থাকলেও তার ওজন না বেড়ে ক্রমাগত কমেই যাচ্ছিল। কিন্তু গত দুইমাস ধরে তার ওজন আবার বাড়তে শুরু করেছে। এটা তার শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো লক্ষণ। তার চিকিৎসকরাও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।সুত্র:আমাদের সময়।
দেশের রাজনীতিতে তারেক রহমান অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়। সম্প্রতি লন্ডন থেকে ফিরে এসেছেন এমন একজন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে লন্ডন থেকে ফিরে তারেকের শুভাকাক্সক্ষী এসব তথ্য জানিয়েছেন। আমাদের অর্থনীতির পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা প্রকাশ করা হল
তারেক রহমান বাংলাদেশের ভোটার নন। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও দল এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগও নেয়নি। বিষয়টি তাকে প্রচণ্ড কষ্ট দেয়। তিনি এ ব্যাপারে বেশ অভিমানী। অথচ দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা তাকে তাদের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারী হিসেবে নিয়মিত প্রচার করে থাকে। বহুল আলোচিত সেনাশাসিত ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ওই সরকারের নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটার হতে অস্বীকার করেন। তারেক রহমানও তার মায়ের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ভোটার হননি। পরে খালেদা জিয়া ভোটার হয়েছেন, নির্বাচন করেছেন। অথচ আজ পর্যন্ত তারেকের ভোটার হওয়ার ব্যাপারে দলীয় ফোরামে কোনো কথা উত্থাপন হয়নি। নেয়া হয়নি কোনো উদ্যোগও। বর্তমান মহাজোট সরকারের মেয়াদের শেষ মুহূর্তে তিনি দেশে ফিরলে অথবা দল তাকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দিলে তিনি ভোটার না হওয়ার কারণে সেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে দলীয় কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় তার অভিমান দানা বাঁধছে। এছাড়া তার সঙ্গে তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানও ভোটার হননি। তারেক রহমানের আশঙ্কাÑ বর্তমান মহাজোট সরকার রাজনৈতিক কারণে আগামী নির্বাচন থেকে তার মাকে ও তাকে বাইরে রাখতে পারে। সরকারের শেষ সময়ে যেকোনো চলমান মামলায় দ্রুত সাজা দিয়ে দিতে পারে। তখন জিয়া পরিবার থেকে বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলের হাল ধরার জন্যও ডা. জুবাইদাকে প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। কিন্তু সে বিষয়েও দল কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
এছাড়া দেশ থেকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা লন্ডন থেকে ঘুরে এসে দেশে প্রচার করে থাকেন, ‘ভাইয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এলাম।’ এ বিষয়টি নিয়েও তিনি ক্ষুব্ধ। কারণ চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় এই প্রায় চার বছরে তিনি খুব কম সংখ্যক দলীয় নেতাকে সাক্ষাৎ দিয়েছেন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তিনি খুব কম লোকের সঙ্গেই দেখা দিয়েছেন। বলতে গেলে তিনি নিজের চিকিৎসা, আইন ও রাজনীতি বিষয়ে পড়াশোনা, স্ত্রীর উচ্চশিক্ষা, একমাত্র কন্যা জাইমা রহমানের পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত। এ কারণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মতো সিনিয়র নেতাও গত দুই বছরে তিনবার লন্ডন গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে মাত্র একবার সফল হয়েছেন। এসময়ের মধ্যে তিনি তার মায়ের নির্দেশে দুএকজন নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ দিয়েছেন।
উত্তরবঙ্গের একটি জেলার সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা দু’বার তার সাক্ষাৎ পেয়েছেন। তাকে ব্যক্তিগতভাবে তারেক রহমানও পছন্দ করেন। অথচ অনেক পাতি-নেতাও প্রচার করে করে বেড়ায় তার সঙ্গে সাক্ষাতের। এসবই করা হয় অসৎ উদ্দেশে। এ নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ। এছাড়া দেশে সম্প্রতি তাকে নিয়ে একটি গুজব ছড়ানো হয়, তিনি রাজনীতি থেকে একেবারে দূরে আছেন। এ গুজবটিতেও তিনি ক্ষুব্ধ। প্রকৃত অর্থে বিগত চার বছরের মধ্যে তিনি আগের চেয়ে বর্তমানে অনেক বেশি রাজনীতি সচেতন ও সজাগ। প্রতিনিয়ত দেশের রাজনীতি বিশেষ করে নিজ দলীয় রাজনীতি সম্পর্কে তিনি খোঁজ-খবর রাখেন। অবশ্য একটি বিষয়ে তিনি সচেতন, যাদের মাধ্যমে তিনি নিয়মিত রাজনীতি সম্পর্কে খোঁজ রাখেন, তারাও যেন তাকে ‘ব্ল্যাক মেইল’ না করতে পারে।
সূত্র জানায়, তারেক রহমানের মধ্যে বর্তমানে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে এবং হয়েছে তার মানসিকতারও পরিবর্তন। আগে যে কারও কথা তিনি বিশ্বাস করতেন। অথবা যে কেউ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য তাকে ভুল বোঝাতে পারত। এসব দুর্বলতার জন্য তাকে কঠিন মূল্যও দিতে হয়েছে। কিন্তু নানান তিক্ত অভিজ্ঞতায় এখন তিনি অনেকটা হিসেবি ও সাবধানী হয়ে উঠেছেন। যে কেউ ইচ্ছা করলেই এখন তাকে ভুল বোঝাতে পারে না। যার-তার কথাই এখন তিনি বিশ্বাস করেন না। কোনো সিদ্ধান্তও হুট করে দেন না। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অনেক হিসাব-নিকাশ করেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে তিনি তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানেরও সহযোগিতা নেন। অনেক সময় তার একমাত্র কন্যা জাইমাও বাবার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হলে আলোচনা করে সহযোগিতা করেন। এছাড়া তিনি এখন প্রচুর পড়াশোনা করেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রশ্নোত্তর পর্ব সরাসরি টেলিভিশনে দেখেন। কারণ তাদের ওই প্রোগ্রাম থেকে তিনি শিক্ষা নিচ্ছেন। শিক্ষা নিচ্ছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টারিয়ানদের ‘ম্যানার’, ‘পরমত সহিষ্ণুতা’, ‘অন্যের প্রতি সম্মানবোধ’ সর্বোপরি জবাবদিহিতার। তিনি ভবিষ্যতে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশেও ওই সংস্কৃতি চালু করতে চান। বলতে গেলে তিনি এখন পরিবর্তনের বর্ডার লাইনে রয়েছেন। এছাড়া তিনি পলিটিক্যাল সিকনেস ঘৃণা করেন।
সূত্র আরও জানায়, একটি বিষয়ে তারেক রহমান এখনও মানসিকভাবে প্রচণ্ড কষ্টে ভোগেন। তা হলোÑ যাদের তিনি বিশ্বাস করতেন, যাদের তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মর্যাদা দিয়েছিলেন, সেসব লোকের অনেকেই তার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। অনেকে বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে নিজের স্বার্থে দুই নম্বরি করেছেন। যেসব তথাকথিত বন্ধুরা তাকে নিজেদের স্বার্থে শুধু ব্যবহারই করেছে। স্বার্থ হাসিল করেছে। নিজের আখের গুছিয়েছে। এখন তিনি এসব বিষয় কঠিনভাবে উপলব্ধি করেন। তিনি তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ওইসব তথাকথিত বন্ধুদের কারণে তাদের ঐতিহ্যবাহী জিয়া পরিবারেরও ইমেজের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তার নিজের ইমেজেরও ক্ষতি হয়েছে। এসব বিষয় এখনও তাকে প্রচণ্ড কষ্ট দেয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি অনুতপ্তও। নিজের আত্মসমালোচনা করছেন। অন্যের সমালোচনা সহ্য করারও সংস্কৃতি আত্মস্থ করছেন। এজন্য তিনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করছেন। তিনি উপলব্ধি করছেন তার আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সম্পর্ক সম্পর্কে তার বিশাল জ্ঞান থাকতে হবে। এসব বিষয়েও তিনি প্রচুর পড়াশোনা করছেন। উপলব্ধি করছেন তিনি দলের নেতৃত্ব হাতে নিয়ে দলকে সাজাবেন আধুনিক ও পশ্চিমা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ধাঁচে। এছাড়া, অসংখ্য দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসী শুনতে চায় তারেক রহমানের বন্ধুদের তালিকায় রয়েছেন ভারতের কংগ্রেসের তরুণ নেতৃত্ব সোনিয়াপুত্র রাহুল গান্ধী, পাকিস্তানের বেনজির পুত্র বিলওয়াল ভুট্টো, এমনকি ভুটানের তরুণ রাজা জিগমে সিংগে খিসার মতো লোক। তাকে যারা বন্ধুত্বের সুযোগে কলুষিত করেছে সেই সব তথাকথিত বন্ধুদের আর লোকেরা দেখতে চায় না।
তিনি আরও উপলব্ধি করছেন তার কোনো দেশীয় ‘ইয়ার-বন্ধু’ থাকতে পারবে না। যেমনটি ছিল না তার বাবার। ১৯৮১ সালে দুঃখজনকভাবে তার মৃত্যু হলেও আজ পর্যন্ত দেশের কেউ নিজেকে জিয়াউর রহমানের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিতে পারেনি। তাছাড়া জিয়াউর রহমানের পিতার সম্পর্কীয় কোনো আত্মীয়ও বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন বা ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় নিজেকে জাহির করেনি। তারেক রহমান বর্তমানে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করছেন। তিনি ভবিষ্যতে দেশে মালয়েশিয়ার কিংবদন্তি নেতা মাহাথির মোহাম্মদের অনুসরণে ‘গ্যালারি পার্দানা’র মতো সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছেন। যেখানে থাকবে দেশের মহৎ সব রাজনীতিকদের সব ইতিহাসের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। যেন ভবিষ্যৎ প্রজš§ জাতির এই কীর্তিমানদের জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
এছাড়া, তারেক রহমান জোর করে বিএনপি নেতৃত্ব হাতে নেয়ায় বিশ্বাসী নন। তিনি দীর্ঘদিন দলের তৃণমূল সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। তার জেলা বগুড়ার বাগবাড়ী থানায় তিনি ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হন। বেশ কয়েক বছর দলের জন্য কাজ করে তিনি প্রথমে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও পরে বিগত জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের ভোটে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ভবিষ্যতে নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য তিনি এখন শিক্ষা গ্রহণ করছেন।
জানা গেছে, মাস দুএকক আগে তারেক রহামানের ব্রিটিশ ভিসা দুই বছর মেয়াদে বাড়ানো হয়েছে। তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান প্রিভেনটিভ কার্ডিওলজির ওপর উচ্চশিক্ষা (এমএস) নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত তার চারটি পার্ট শেষ হয়েছে। পরীক্ষার প্রতিটিতে তিনি ডিস্টিংশন পেয়েছেন। তার একমাত্র কন্যা জাইমা রহমানের পরীক্ষার ফলাফল অত্যন্ত ভালো। ৯টিতে আউট-স্ট্যান্ডিং রেজাল্ট করেছেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন থাকলেও তার ওজন না বেড়ে ক্রমাগত কমেই যাচ্ছিল। কিন্তু গত দুইমাস ধরে তার ওজন আবার বাড়তে শুরু করেছে। এটা তার শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো লক্ষণ। তার চিকিৎসকরাও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।সুত্র:আমাদের সময়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন