শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিক্রির হিড়িক : জাতির ভবিষ্যত্ ঝরঝরে করে যাচ্ছে সরকার



মেয়াদের শেষ বছরে এসে মাথা একেবারে গরম হয়ে গেছে ক্ষমতাসীনদের। খাই মেটানোর এবং উদরপূর্তি করার জন্য কীভাবে আর কী করবেন তা নিয়ে মাথাও ঠিক রাখতে পারছেন না তারা। এজন্যই নজর পড়েছে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির দিকে। এই সম্পত্তি বিক্রির ধুম পড়ে গেছে তাদের মধ্যে। দৈনিক আমার দেশ-এর এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, রাজধানী থেকে মফস্বল পর্যন্ত যেখানে যত রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি আছে তার প্রায় সবই বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। পানির দামে না হলেও বিক্রি করা হচ্ছে বাজার দরের চেয়ে অনেক কম মূল্যে। রাজধানীর হাটখোলা রোডে প্রতি কাঠা জমির দাম যেখানে অন্তত চার কোটি টাকা, সেখানে ১১৬ কাঠা বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ৮৫ কোটি টাকায়। এটা বিটিএমসির জমি। চট্টগ্রামের ভালিকা উলেন মিলসের ২৩৬ কাঠা জমি বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ২১ কোটি ৬৬ লাখ টাকায়। অথচ সেখানে প্রতি কাঠার দাম অন্তত ১ কোটি টাকা। তাছাড়া মিলটির বর্তমান মালিক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকেও বিক্রির ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। বিক্রি করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। কোনো জমি বিক্রির ক্ষেত্রেই প্রকাশ্যে নিলাম ডাকা বা আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। গ্রাহক আগেই ঠিক করা হচ্ছে গোপনীয়তার সঙ্গে। গ্রাহকরাও আবার সাধারণ মানুষ নয়। প্রতিটি সম্পত্তি বেছে বেছে আওয়ামী লীগের লোকজনের হাতেই তুলে দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া এক মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি দিব্যি বিক্রি করে দিচ্ছে অন্য কোনো মন্ত্রণালয়। অর্থাত্ সম্পূর্ণ বিষয়টিই চলছে বেআইনি পন্থায়। আইনের ধারই ধারা হচ্ছে না। তথ্যাভিজ্ঞদের উদ্ধৃত করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। সবই চলে যাবে সরকারদলীয় লোকজনদের পেটের ভেতরে। মেয়াদের বাকি সময়ের মধ্যে তারা সেগুলো হজমও করে ফেলবেন।
খাই খাই করা শুধু নয়, খেয়ে হজম করে ফেলাটাও আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য অনেক পুরনো বিষয় বলেই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিক্রি সংক্রান্ত খবরে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। শেয়ারবাজারের লুণ্ঠন থেকে পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক দুর্নীতি পর্যন্ত কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েও ক্ষমতাসীনদের ‘ফুলের মতো পবিত্র চরিত্র’ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে। তাদের ‘খাই’ মেটাতে গিয়ে দেশের ব্যাংকগুলোও এরই মধ্যে ফতুর হইহই করছে। এসবের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ‘নগদ নারায়ণ’ পাওয়া যাবে এমন কোনো একটি খাত বা উপখাতকেই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে না। প্রতিটির ওপরই ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছেন ক্ষমতাসীনরা। এর ফলে ক্ষতি যা কিছু হওয়ার সবই হচ্ছে রাষ্ট্রের এবং সবকিছুর জন্যই শেষ পর্যন্ত ঘানি টানতে হচ্ছে জনগণকে। বলাবাহুল্য, জনগণকে এই ঘানি টানতে হবে দীর্ঘদিন ধরে। উদাহরণ দেয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির কথাই ধরা যাক না কেন। এসব সম্পত্তি তথা জমির ওপর ভবিষ্যতে নানা ধরনের শিল্প-কারখানা নির্মাণ করা যেত। বিশ্বের সব দেশই ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করে এবং সে উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে সাধারণত হাত দেয় না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার এমনভাবেই পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে, যাতে পুরো জাতির ভবিষ্যত্ই একেবারে ঝরঝরে হয়ে যায়। বিক্রির দামের বিষয়টিও লক্ষ্য করা দরকার। ২৩৬ কোটি টাকার সম্পত্তি তারা ‘মাত্তরই’ ২১ কোটি টাকায় দলীয় লোকজনের হাতে তুলে দিচ্ছেন। এর ফলে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নষ্ট তো হচ্ছেই, রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ক্ষতিও হচ্ছে বিপুল পরিমাণে। অথচ বাজার দরে বিক্রি করে সে টাকাটা যদি ব্যাংকে রাখা হতো তাহলে অন্তত সরকারের প্রাত্যহিক খরচ মেটানোর জন্য এদিক-সেদিকে হাত বাড়াতে ও লুটপাট করতে হতো না। দেশের ব্যাংকগুলোও সরকারের ‘খাই’ মেটানোর দায় থেকে বেঁচে যেত। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার বলে কথা! তাছাড়া এমনও মনে করাটা আবার ঠিক নয় যে, দলীয় লোকজনের জন্য ক্ষমতাসীনদের দরদ একেবারে উথলে উঠেছে। প্রকৃত সত্য হলো, বিক্রির সময় কমিশন খাওয়া হচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণে। অস্বাভাবিক নয় যে, যারা কিনছেন তাদের কাছ থেকে বাজার দরের কাছাকাছি পরিমাণেই টাকা আদায় করা হচ্ছে। এই টাকা চলে যাচ্ছে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ দায়িত্বপ্রাপ্তদের হাতে। ভাগ যাচ্ছে সর্বোচ্চ পর্যায়েও। সেসব হাত ঘুরে টাকার একটি অংশ আবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী তহবিলে জমা পড়ছে। সহজ কথায় বলা যায়, ক্ষমতাসীনরা শুধু এখনই পেট ভরাচ্ছেন না, ভবিষ্যতে আরও বেশি লুটপাট করারও আয়োজন সেরে রাখছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এভাবে চলতে থাকলে দেশ ও জাতির ভবিষ্যত্ আসলেও অন্ধকার হয়ে যাবে। সুতরাং প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি প্রতিহত করার পন্থাও খুঁজে দেখা দরকার।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads