বড় হওয়ার দু’টি উপায় আছে। প্রথম, নিজ যোগ্যতা ও নিষ্ঠায় অন্যকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া; দ্বিতীয়, অন্যকে ছোট করে নিজের বড়ত্ব জাহির করা। ভারতীয় মিডিয়া সেদেশের অদৃশ্য নীতিনির্ধারকদের অঙুলি হেলনে এই দ্বিতীয় পথ ধরেছে বলে মনে হয়। ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া সম্প্রতি সে দেশের অতি গোপনীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদন ‘ফাঁস’ করে জানিয়েছে যে, বাংলাদেশে তাদের ‘বন্ধু’ সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। এতে ভারতীয় নেতাদের উদ্বেগ বাড়ছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের সাড়ে তিন বছরের ‘অর্জন’ নস্যাত্ হয়ে যেতে পারে। পত্রিকাটি বর্তমান সরকারের আমলে তাদের কী কী ‘লাভ’ হয়েছে তার ফিরিস্তি দিয়ে বিএনপিকে ঠেকানোর জন্য কী করতে হবে তার একটা রূপরেখাও দিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে এটা ছিল সূচনামাত্র। দিল্লির ইংরেজি দৈনিক দি পাইওনিয়ার, বহুল পঠিত সাপ্তাহিক আউট লুক এবং আরও কয়েকটি পত্রিকা ও সাময়িকী একই সুরে পোঁ ধরেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া দাবি করেছে যে, তাদের প্রতিবেদনের ওপর চার শতাধিক পাঠক মন্তব্য পাঠিয়েছে। এসব মন্তব্যের সারকথা হচ্ছে বাংলাদেশীরা বেইমান, বাংলাদেশে জঙ্গি আর পাকিস্তানের আইএসআই আবার মাথাচাড়া দিতে যাচ্ছে, বাংলাদেশ দখল করে নিলেই ল্যাঠা চুকে যায় ইত্যাদি।
পাঠকের মন্তব্য নাম দিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য পরিবেশন যে হলুদ সাংবাদিকতার নামান্তর একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এ ধরনের হলুদ সাংবাদিকতার পেছনে রাষ্ট্রযন্ত্রের মদত দেয়ার আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠলে তখন ব্যাপারটাকে গুরুতর হিসেবে গণ্য করতে হয়। নানামুখী অভ্যন্তরীণ সঙ্কটে ভারত আজ জর্জরিত। ক্ষমতাসীন ইউপিএ সরকার অস্তিত্ব রক্ষার সঙ্কটে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। কয়লা ব্লক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার দায়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের পদত্যাগ দাবিতে ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ সপ্তাহখানেক ধরে অচল হয়ে আছে। এ অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য দিল্লির গদিনসিনদের নাটকীয় কোনো ইস্যু দরকার। এই দায় থেকে বাংলাদেশবিরোধী হিস্টিরিয়া সৃষ্টির চেষ্টা যে হচ্ছে না, তা কে বলতে পারে! ভারতে দেড় বছর বাদে সাধারণ নির্বাচন। বিজেপি সে নির্বাচনে জেতার জন্য মরিয়া। এ ক্ষেত্রে বিজেপি’র তুরুপের তাস হচ্ছে ‘হিন্দুত্ব বিপন্ন’ স্লোগানকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা। তাই ভারতীয় মুসলমান এবং মুসলিমপ্রধান দুই প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে বিজেপি ভারতীয় হিন্দুদের সুড়সুড়ি দিতে চাইছে। এতে যে তারা কামিয়াব হয়নি তা বলা যাবে না। নইলে ল্যাঠা চুকিয়ে ফেলতে বাংলাদেশ দখল করার প্রস্তাব সাধারণ পাঠকের কাছ থেকে আসবে কেন এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো দায়িত্বশীল পত্রিকা তা ছাপাবে কেন!
ভারতে যে অশান্তির আগুন জ্বলছে, তা নেভানোর দায় ভারতীয়দের। কিন্তু সে আগুন যদি বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়া হয় তবে আমরা নির্লিপ্ত থাকতে পারি না। এর মধ্যেই কিন্তু আগুনের হল্কা অনুভূত হচ্ছে।
ভারতে যে অশান্তির আগুন জ্বলছে, তা নেভানোর দায় ভারতীয়দের। কিন্তু সে আগুন যদি বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়া হয় তবে আমরা নির্লিপ্ত থাকতে পারি না। এর মধ্যেই কিন্তু আগুনের হল্কা অনুভূত হচ্ছে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন