ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফ্রাঙ্কেনস্টাইন দানবের রূপ ধারণ করেছে। এ সংগঠনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোথাও ছাত্র মারা পড়ছে, আবার কোথাও শিক্ষককে হতে হচ্ছে লাঞ্ছিত। সন্ত্রাসী তাণ্ডবের কারণে বন্ধ রাখতে হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। প্রতিদিন কোথাও না কোথায় ঘটছে আগ্রাসী ধ্বংসলীলা। এদের দমানোর সাধ্য যেন কারও নেই। ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডে সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপিরাও ক্ষুব্ধ, অতিষ্ঠ। এসব সন্ত্রাসীর লাগাম টেনে ধরতে সংসদের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা। কিন্তু কিছুতেই কোনো ফল হচ্ছে না। গতকালও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত হয়েছে ১০ শিক্ষার্থী। গ্রেফতার করা হয়েছে ৬ জনকে। ক্যাম্পাসে রক্তের হলি উত্সব বইয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি। পুরো ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে ফ্রি সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে লোমহর্ষক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে। এতে ১০ ছাত্রলীগ কর্মী গুরুতর আহত ও তিনটি দোকান ভাংচুর করা হয়। এর দুই দিন আগে ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো রাজধানী। মহিলা ইডেন কলেজের ছাত্রীরা আবাসিক হলে অনার্স থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সিট বরাদ্দের দাবিতে ওই দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কলেজ অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ অধ্যক্ষ রওশন আরাকে উদ্ধার করে। এতে ৭ ছাত্রী আহত হয়। ছাত্রীরা দাবি আদায়ে এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। একই রাতে তেজগাঁও পলিটেকনিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে দু’জন আহত হয় এবং ২৫টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়।
চবি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত ১০, গ্রেফতার ৬ : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি বেলাল উদ্দিন জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন চত্বর ও শাহজালাল হল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আহতরা হলেন জাহিদুল ইসলাম (পদার্থ বিদ্যা-দ্বিতীয় বর্ষ), হোসেন (সমাজতত্ত্ব-দ্বিতীয় বর্ষ), রবি (নৃজ্ঞান-তৃতীয় বর্ষ), রনি (গণিত-দ্বিতীয় বর্ষ) রুবেল দে, রাকিব, কাউসার, রুপু, বাপ্পী ও অভি। এদের মধ্যে জাহিদুল ও হোসেনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
আটককৃতরা হলেন ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাটচক্র সম্পাদক মুনছুর আলম, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জমির উদ্দীন, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু তোরাব পরশ, রুপক হাসান শাহরিয়ার, কামরুল হাসান রায়হান ও জাহেদুল ইসলাম। গ্রেফতারকৃত সবাই আ জ ম নাছির গ্রুপের বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহরগামী আড়াইটার ট্রেনে ছাত্রলীগের আ জ ম নাছির গ্রুপের শুভ ও মামুন গ্রুপের রাকিবের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এ ঘটনা জানা জানি হলে ক্যাম্পাসে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় নাছির গ্রুপের কর্মীরা শাহজালাল হলের ভেতরে এবং মামুন গ্রুপের কর্মীরা হলের বাইরে অবস্থান নিলে উভয় গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উভয় গ্রুপের ১০ কর্মী আহত হয়। পুলিশ দফায় দফায় চেষ্টা করে সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থ হলে একপর্যায়ে হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি এএসএম নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে শতাধিক পুলিশ শাহজালাল হলে অভিযান চালিয়ে নাছির গ্রুপের ৬ কর্মীকে আটক করে। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এ ঘটনার জন্য উভয়ে একে অন্যকে দায়ী করে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুই গ্রুপই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি এএফএম নিজাম উদ্দিন ৬ জনকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরপরও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
প্রক্টর মোহাম্মদ সিরাজ-উদ-দৌল্লাহ বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে চিন্তাও করিনি। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে ছাত্রলীগের মামুন গ্রুপ সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর টিপুসহ হামলাকারীদের গ্রেফতারের জন্য ৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। অন্যথায় ক্যাম্পাসে যেকোনো সময় রক্তের হলি বইয়ে দেন তিনি। এ জন্য প্রশাসন দায়ী থাকবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
ঢাবিতে সিগারেট ফাও খাওয়া নিয়ে লোমহর্ষক সংঘর্ষ, ধরপাকড় চলছেই : এর আগে গত শুক্রবার রাতে ফাও সিগারেট খাওয়া নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান ও মাস্টার দ্য সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এ সংঘর্ষে উভয় হলের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে তিনটি দোকান। জানা যায়, রাত সোয়া ১১টার দিকে সূর্যসেন হলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রলীগ কর্মী রাজিব, ফয়সাল এবং বিজয় জিয়াউর রহমান হল গেটের সামনের একটি দোকান থেকে সিগারেট নিতে আসে। সিগারেট বিক্রেতা হেলালকে এক প্যাকেট সিগারেট দিতে বলে। কিন্তু দোকানে সিগারেট নেই জানালে দোকানদারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ‘সিগারেট নেই কেন? এখানে দোকান করতে হলে সিগারেট দিতে হবে’ বলে দোকানিকে গালাগাল করতে থাকে। এ সময় পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতা হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান মানিক প্রতিবাদ করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে বেধে যায় সংঘর্ষের ঘটনা।
গোপন সূত্রে জানা যায়, জিয়া হলের ওই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাই এই দোকানের মালিক। সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা বিষয়টি না জেনে অন্যসব জায়গার মতো ফ্রি সিগারেট নিতে গেলে এই সংঘর্ষ বাঁধে। উভয় হলের সহস্রাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী চাইনিজ কুড়াল, বগি ও লাঠি নিয়ে বের হয়ে পড়ে। শুরু হয়, ইট ও ঢিল ছোড়াছুড়ি। এ সময় সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই এলাকার ৩টি দোকান ভাংচুর করে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ক্যাম্পাসে প্রতি মুহূর্তে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলছে ছাত্রলীগ। জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে জুনিয়র কর্মীদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পেয়ে কর্মীদের বেধড়ক বাঁশ পেটা করে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফরিন নুসরাত। তার অমানবিক লাঠি পেটায় ৭ জন ছাত্রী গুরুতর আহত হন। জানা যায়, গতকালও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে ছাত্রলীগ। কবি জসিমউদ্দীন হলের ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদীর নেত্বত্বে দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র রিয়াদকে ছাত্রদল কর্মী সন্দেহে পিটিয়ে ফেলে রাখা হয়। পরে সাধারণ ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এভাবে ছাত্রলীগ নেতাদের দৃষ্টিকটু হলেও যে কাউকে আহত ও নিহত হতে হয় এ ক্যাম্পাসে।
ছাত্রলীগের নিয়োগ-বাণিজ্যে অচল কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : এদিকে ছাত্রলীগের অবৈধ নিয়োগ-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১৭তম সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগ নিয়ে ছাত্রলীগ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। নিজেদের তালিকা মতো নিয়োগ না দেয়ায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ, ভিসি কার্যালয়ে ভাংচুরসহ প্রোভিসি ও প্রক্টরকে লাঞ্ছিত করে। তাদের হস্তক্ষেপে ক্যাম্পাসে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় এ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়। ছাত্রলীগের জ্বালাও-পোড়াও ও হামলায় এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। অঘোষিত ছুটি চলছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। দীর্ঘ ১৯ দিন ধরে এ অচলাবস্থা বিরাজ করলেও এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এতে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় অচল থাকায় বিপাকে পড়েছেন ১৪ হাজার শিক্ষার্থী। নষ্ট হচ্ছে তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়। আবাসিক হল থেকে এরই মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী চলে গেছেন। বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৯০টিরও বেশি ফাইনাল পরীক্ষা অঘোষিতভাবে স্থগিত হয়ে গেছে। ফলে দীর্ঘ সেশন জটের আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অচলাবস্থা নিরসনের দাবিতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন।
অস্থিতিশীল ইডেন কলেজ : অধ্যক্ষের অপসারণ ও উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নের দাবিতে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে রাজধানীর মহিলা ইডেন কলেজ। কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে আবাসিক হলে সিট বরাদ্দ ও একাডেমিক সুবিধা দানের অভিযোগসহ নানা দাবিতে অনড় ইডেনছাত্রীরা। এছাড়া অনার্স থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত একটানা আবাসিক হলের সিট বরাদ্দ ও শিক্ষকদের আচরণের পরিবর্তনের দাবিও জানাচ্ছেন তারা। এসব দাবিতে গত বুধবার সকাল থেকে রাত ২টা পর্যন্ত কলেজ অধ্যক্ষ রওশন আরাসহ বিভিন্ন অনুষদের প্রধান ও হল প্রধানদের অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে লালাবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে কয়েকশ’ পুলিশ নিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। এদিকে ছাত্রীদের আন্দোলন দমাতে কলেজ কর্মচারীদের দিয়ে হামলা করেছেন অধ্যক্ষ। এতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের মধ্যে ৭ জন গুরুতর আহত হন। এর পরের দিন ছাত্রীদের ওপর কর্মচারীদের হামলার বিচার ও অধ্যক্ষের অপসারণসহ কয়েক দফা দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ। দাবি আদায়ে অধ্যক্ষের কার্যালয় ঘেরাও, অবস্থান কর্মসূচি, অবরোধ ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায়ও হাজার হাজার ছাত্রী কলেজের এক নম্বর ও দুই নম্বর গেটের সামনের রাস্তা অবরোধ করে মানববন্ধন করেছেন। এ সময় নিউমার্কেট ও আজিমপুর সংযোগ সড়ক যানজটের কবলে পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের দাবি না মানলে আমরা আন্দোলন করতেই থাকব। আমাদের ওপর যেভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে অপসারণ বিষয়ে অধ্যক্ষ রওশন আরা বলেন, এটি সরকারের ব্যাপার। আমি এ বিষয়ে জানি না।
তেজগাঁও পলিটেকনিক শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের সংঘর্ষ, ২৫টি গাড়ি ভাংচুর : এদিকে নানা সমস্যায় অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পলিটেকনিক্যাল কলেজ। সমস্যায় ভারাক্রান্ত শিক্ষার্থীরা একাধিকবার প্রশাসনের কাছে সমাধান চেয়েও কোনো সমাধান না পেয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর গর্জে ওঠে। সংঘর্ষ বেঁধে যায় স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে। উভয়পক্ষের অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষে অন্তত ২৫টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। গুরুতর আহত হয় দুজন। জানা যায়, তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে দীর্ঘদিন থেকে গাড়ি রেখে আসছিলেন ওই এলাকার পরিবহন মালিকরা। কলেজের সামনে গাড়ি না রাখতে ছাত্ররা অনেক দিন আগে থেকে দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু এতে কোনো কাজ না হওয়ায় গত রাত ১১টার দিকে রাস্তায় নেমে আসে ছাত্ররা। তারা রাস্তায় অবরোধ করে কলেজের সামনে গাড়ি না রাখার প্রতিবাদ জানায়। এ সময় ছাত্ররা আকস্মিকভাবে কয়েকটি যানবাহনে ভাংচুর চালায়। একপর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকরা এগিয়ে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অলিগলিতে। সংঘর্ষ চলাকালে ২৫টি গাড়ি ভাংচুর ও কয়েকটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাপক লাঠিচার্জ এবং বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষক শিক্ষার্থী : ছাত্রলীগের এসব ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় দুই হলের আবাসিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতঙ্কে থাকতে দেখা যায়। সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষক ও চারুকলা অনুষদের এক অধ্যাপক জানান, ওইদিনের সংঘর্ষে বাসায় চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। দু’পক্ষের ইট ও পাথর রাস্তার সঙ্গে থাকা শিক্ষকদের বাসায় গিয়ে পড়ে। এভাবে ক্যাম্পাস চলতে পারে না। ছাত্রলীগের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার করে সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, যখন ক্যাম্পাসে থাকি তখন প্রাণ হাতে রেখে চলাফেরা করতে হয়। নির্ভয়ে পড়াশোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে করা খুবই দুরূহ। প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্কে থাকতে হয়।
সংগঠনের নেতাকর্মীদের এমন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ক্ষুদ্র স্বার্থকে কেন্দ্র করে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। যখন কোনো সমস্যা দেখা দেয় আমরা তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করেছি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে ফ্রি সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে লোমহর্ষক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে। এতে ১০ ছাত্রলীগ কর্মী গুরুতর আহত ও তিনটি দোকান ভাংচুর করা হয়। এর দুই দিন আগে ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো রাজধানী। মহিলা ইডেন কলেজের ছাত্রীরা আবাসিক হলে অনার্স থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সিট বরাদ্দের দাবিতে ওই দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কলেজ অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ অধ্যক্ষ রওশন আরাকে উদ্ধার করে। এতে ৭ ছাত্রী আহত হয়। ছাত্রীরা দাবি আদায়ে এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। একই রাতে তেজগাঁও পলিটেকনিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে দু’জন আহত হয় এবং ২৫টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়।
চবি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত ১০, গ্রেফতার ৬ : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি বেলাল উদ্দিন জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন চত্বর ও শাহজালাল হল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আহতরা হলেন জাহিদুল ইসলাম (পদার্থ বিদ্যা-দ্বিতীয় বর্ষ), হোসেন (সমাজতত্ত্ব-দ্বিতীয় বর্ষ), রবি (নৃজ্ঞান-তৃতীয় বর্ষ), রনি (গণিত-দ্বিতীয় বর্ষ) রুবেল দে, রাকিব, কাউসার, রুপু, বাপ্পী ও অভি। এদের মধ্যে জাহিদুল ও হোসেনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
আটককৃতরা হলেন ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাটচক্র সম্পাদক মুনছুর আলম, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জমির উদ্দীন, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু তোরাব পরশ, রুপক হাসান শাহরিয়ার, কামরুল হাসান রায়হান ও জাহেদুল ইসলাম। গ্রেফতারকৃত সবাই আ জ ম নাছির গ্রুপের বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহরগামী আড়াইটার ট্রেনে ছাত্রলীগের আ জ ম নাছির গ্রুপের শুভ ও মামুন গ্রুপের রাকিবের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এ ঘটনা জানা জানি হলে ক্যাম্পাসে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় নাছির গ্রুপের কর্মীরা শাহজালাল হলের ভেতরে এবং মামুন গ্রুপের কর্মীরা হলের বাইরে অবস্থান নিলে উভয় গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উভয় গ্রুপের ১০ কর্মী আহত হয়। পুলিশ দফায় দফায় চেষ্টা করে সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থ হলে একপর্যায়ে হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি এএসএম নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে শতাধিক পুলিশ শাহজালাল হলে অভিযান চালিয়ে নাছির গ্রুপের ৬ কর্মীকে আটক করে। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এ ঘটনার জন্য উভয়ে একে অন্যকে দায়ী করে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুই গ্রুপই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি এএফএম নিজাম উদ্দিন ৬ জনকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরপরও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
প্রক্টর মোহাম্মদ সিরাজ-উদ-দৌল্লাহ বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে চিন্তাও করিনি। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে ছাত্রলীগের মামুন গ্রুপ সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর টিপুসহ হামলাকারীদের গ্রেফতারের জন্য ৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। অন্যথায় ক্যাম্পাসে যেকোনো সময় রক্তের হলি বইয়ে দেন তিনি। এ জন্য প্রশাসন দায়ী থাকবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
ঢাবিতে সিগারেট ফাও খাওয়া নিয়ে লোমহর্ষক সংঘর্ষ, ধরপাকড় চলছেই : এর আগে গত শুক্রবার রাতে ফাও সিগারেট খাওয়া নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান ও মাস্টার দ্য সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এ সংঘর্ষে উভয় হলের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে তিনটি দোকান। জানা যায়, রাত সোয়া ১১টার দিকে সূর্যসেন হলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রলীগ কর্মী রাজিব, ফয়সাল এবং বিজয় জিয়াউর রহমান হল গেটের সামনের একটি দোকান থেকে সিগারেট নিতে আসে। সিগারেট বিক্রেতা হেলালকে এক প্যাকেট সিগারেট দিতে বলে। কিন্তু দোকানে সিগারেট নেই জানালে দোকানদারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ‘সিগারেট নেই কেন? এখানে দোকান করতে হলে সিগারেট দিতে হবে’ বলে দোকানিকে গালাগাল করতে থাকে। এ সময় পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতা হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান মানিক প্রতিবাদ করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে বেধে যায় সংঘর্ষের ঘটনা।
গোপন সূত্রে জানা যায়, জিয়া হলের ওই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাই এই দোকানের মালিক। সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা বিষয়টি না জেনে অন্যসব জায়গার মতো ফ্রি সিগারেট নিতে গেলে এই সংঘর্ষ বাঁধে। উভয় হলের সহস্রাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী চাইনিজ কুড়াল, বগি ও লাঠি নিয়ে বের হয়ে পড়ে। শুরু হয়, ইট ও ঢিল ছোড়াছুড়ি। এ সময় সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই এলাকার ৩টি দোকান ভাংচুর করে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ক্যাম্পাসে প্রতি মুহূর্তে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলছে ছাত্রলীগ। জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে জুনিয়র কর্মীদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পেয়ে কর্মীদের বেধড়ক বাঁশ পেটা করে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফরিন নুসরাত। তার অমানবিক লাঠি পেটায় ৭ জন ছাত্রী গুরুতর আহত হন। জানা যায়, গতকালও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে ছাত্রলীগ। কবি জসিমউদ্দীন হলের ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদীর নেত্বত্বে দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র রিয়াদকে ছাত্রদল কর্মী সন্দেহে পিটিয়ে ফেলে রাখা হয়। পরে সাধারণ ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এভাবে ছাত্রলীগ নেতাদের দৃষ্টিকটু হলেও যে কাউকে আহত ও নিহত হতে হয় এ ক্যাম্পাসে।
ছাত্রলীগের নিয়োগ-বাণিজ্যে অচল কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : এদিকে ছাত্রলীগের অবৈধ নিয়োগ-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১৭তম সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগ নিয়ে ছাত্রলীগ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। নিজেদের তালিকা মতো নিয়োগ না দেয়ায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ, ভিসি কার্যালয়ে ভাংচুরসহ প্রোভিসি ও প্রক্টরকে লাঞ্ছিত করে। তাদের হস্তক্ষেপে ক্যাম্পাসে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় এ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়। ছাত্রলীগের জ্বালাও-পোড়াও ও হামলায় এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। অঘোষিত ছুটি চলছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। দীর্ঘ ১৯ দিন ধরে এ অচলাবস্থা বিরাজ করলেও এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এতে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় অচল থাকায় বিপাকে পড়েছেন ১৪ হাজার শিক্ষার্থী। নষ্ট হচ্ছে তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়। আবাসিক হল থেকে এরই মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী চলে গেছেন। বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৯০টিরও বেশি ফাইনাল পরীক্ষা অঘোষিতভাবে স্থগিত হয়ে গেছে। ফলে দীর্ঘ সেশন জটের আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অচলাবস্থা নিরসনের দাবিতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন।
অস্থিতিশীল ইডেন কলেজ : অধ্যক্ষের অপসারণ ও উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নের দাবিতে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে রাজধানীর মহিলা ইডেন কলেজ। কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে আবাসিক হলে সিট বরাদ্দ ও একাডেমিক সুবিধা দানের অভিযোগসহ নানা দাবিতে অনড় ইডেনছাত্রীরা। এছাড়া অনার্স থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত একটানা আবাসিক হলের সিট বরাদ্দ ও শিক্ষকদের আচরণের পরিবর্তনের দাবিও জানাচ্ছেন তারা। এসব দাবিতে গত বুধবার সকাল থেকে রাত ২টা পর্যন্ত কলেজ অধ্যক্ষ রওশন আরাসহ বিভিন্ন অনুষদের প্রধান ও হল প্রধানদের অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে লালাবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে কয়েকশ’ পুলিশ নিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। এদিকে ছাত্রীদের আন্দোলন দমাতে কলেজ কর্মচারীদের দিয়ে হামলা করেছেন অধ্যক্ষ। এতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের মধ্যে ৭ জন গুরুতর আহত হন। এর পরের দিন ছাত্রীদের ওপর কর্মচারীদের হামলার বিচার ও অধ্যক্ষের অপসারণসহ কয়েক দফা দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ। দাবি আদায়ে অধ্যক্ষের কার্যালয় ঘেরাও, অবস্থান কর্মসূচি, অবরোধ ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায়ও হাজার হাজার ছাত্রী কলেজের এক নম্বর ও দুই নম্বর গেটের সামনের রাস্তা অবরোধ করে মানববন্ধন করেছেন। এ সময় নিউমার্কেট ও আজিমপুর সংযোগ সড়ক যানজটের কবলে পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের দাবি না মানলে আমরা আন্দোলন করতেই থাকব। আমাদের ওপর যেভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে অপসারণ বিষয়ে অধ্যক্ষ রওশন আরা বলেন, এটি সরকারের ব্যাপার। আমি এ বিষয়ে জানি না।
তেজগাঁও পলিটেকনিক শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের সংঘর্ষ, ২৫টি গাড়ি ভাংচুর : এদিকে নানা সমস্যায় অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পলিটেকনিক্যাল কলেজ। সমস্যায় ভারাক্রান্ত শিক্ষার্থীরা একাধিকবার প্রশাসনের কাছে সমাধান চেয়েও কোনো সমাধান না পেয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর গর্জে ওঠে। সংঘর্ষ বেঁধে যায় স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে। উভয়পক্ষের অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষে অন্তত ২৫টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। গুরুতর আহত হয় দুজন। জানা যায়, তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে দীর্ঘদিন থেকে গাড়ি রেখে আসছিলেন ওই এলাকার পরিবহন মালিকরা। কলেজের সামনে গাড়ি না রাখতে ছাত্ররা অনেক দিন আগে থেকে দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু এতে কোনো কাজ না হওয়ায় গত রাত ১১টার দিকে রাস্তায় নেমে আসে ছাত্ররা। তারা রাস্তায় অবরোধ করে কলেজের সামনে গাড়ি না রাখার প্রতিবাদ জানায়। এ সময় ছাত্ররা আকস্মিকভাবে কয়েকটি যানবাহনে ভাংচুর চালায়। একপর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকরা এগিয়ে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অলিগলিতে। সংঘর্ষ চলাকালে ২৫টি গাড়ি ভাংচুর ও কয়েকটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাপক লাঠিচার্জ এবং বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষক শিক্ষার্থী : ছাত্রলীগের এসব ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় দুই হলের আবাসিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতঙ্কে থাকতে দেখা যায়। সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষক ও চারুকলা অনুষদের এক অধ্যাপক জানান, ওইদিনের সংঘর্ষে বাসায় চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। দু’পক্ষের ইট ও পাথর রাস্তার সঙ্গে থাকা শিক্ষকদের বাসায় গিয়ে পড়ে। এভাবে ক্যাম্পাস চলতে পারে না। ছাত্রলীগের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার করে সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, যখন ক্যাম্পাসে থাকি তখন প্রাণ হাতে রেখে চলাফেরা করতে হয়। নির্ভয়ে পড়াশোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে করা খুবই দুরূহ। প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্কে থাকতে হয়।
সংগঠনের নেতাকর্মীদের এমন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ক্ষুদ্র স্বার্থকে কেন্দ্র করে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। যখন কোনো সমস্যা দেখা দেয় আমরা তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করেছি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন