নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে আবারও কথার মারপ্যাঁচ খাটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের বক্তৃতায় সংসদ ভেঙে দেয়ার ব্যাপারে নতুন ফর্মুলাও হাজির করেছেন তিনি। বলেছেন, নির্বাচন হবে সংসদ ভেঙে দেয়ার পর। পরিকল্পিত সে প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোন সময়ে তারা অর্থাত্ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ক্ষমতাসীনরা নির্বাচন করতে চান সে কথা তিনিই রাষ্ট্রপতিকে গিয়ে জানাবেন। রাষ্ট্রপতি তখন ঠিক করবেন কখন সংসদ ভেঙে দেবেন। বিদ্যমান মন্ত্রিসভাই বহাল থাকবে নাকি মন্ত্রিসভাকে ছোট করতে হবে তা রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করবেন। মন্ত্রী কতজন থাকবেন সেটাও রাষ্ট্রপতিই ঠিক করবেন। এরপর রাষ্ট্রপতি যেভাবে নির্দেশ দেবেন সেভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে নির্বাচন কমিশন। তারা যে ব্রিটেনের ‘ওয়েস্টমিনস্টার’ ধরনের গণতন্ত্র অনুসরণ করেন সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কথার পিঠে কথা উঠেছে বাস্তব কিছু বিশেষ কারণে। প্রথম কারণ হলো, কথার মারপ্যাঁচে প্রধানমন্ত্রী তার নিজের কথা থেকেই বহুদূর সরে গেছেন। বাস্তবে বিচ্যুত হয়েছেন। কারণ, মাত্র ক’দিন আগেই লন্ডনে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, নির্বাচনের সময় সরকারি ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ছোট আকারের একটি মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। তার কথায় পঞ্চাশ-পঞ্চাশ অংশীদারিত্বের ইঙ্গিতও ছিল। কিন্তু সংসদে দেয়া এবারের বক্তৃতায় লন্ডন ঘোষণার ধারে-কাছেও যাননি প্রধানমন্ত্রী। বরং পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনের সময়ও সরকার থাকবে তার নিজের নেতৃত্বেই। শুধু তা-ই নয়, নির্বাচন ঠিক কোন সময় অনুষ্ঠিত হবে রাষ্ট্রপতিকে সামনে রেখে সেটাও আসলে তিনিই ঠিক করে দেবেন। নির্বাচন কমিশনকেও প্রকারান্তরে তার নির্দেশেই ব্যবস্থা নিতে হবে। কথা ওঠার দ্বিতীয় কারণটিও গুরুতর। সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি সম্মান দেখানোর নামে সংক্ষিপ্ত আদেশের ‘আলোকে’ তাড়াহুড়ো করে সংবিধানে যে পঞ্চদশ সংশোধনী তারা এনেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ারও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। কারণ, পঞ্চদশ সংশোধনীসংবলিত সংবিধানে সংসদ ভেঙে দেয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। এতে বরং বিদ্যমান সংসদকে বহাল রেখেই পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রাখা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টিকোণ থেকে যেটা আসলে সম্ভব নয়।
সে কারণে শুধু নয়, দীর্ঘ ১৬ মাস পর ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ রায়ের ‘আলোকে’ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সংবিধানসম্মত বলার উপায় নেই। কেননা, পূর্ণাঙ্গ রায়ে নির্বাচনের অন্তত ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার এবং নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ছোট আকারের মন্ত্রিসভা গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি সত্যিই সম্মান দেখানোর সদিচ্ছা থাকলে প্রধানমন্ত্রীর তথা ক্ষমতাসীনদের উচিত ছিল এই রায়ের ‘আলোকে’ সংবিধানে আরও একটি সংশোধনী আনার জন্য দ্রুত তত্পর হয়ে ওঠা—যেমনটি তারা হয়েছিলেন সংক্ষিপ্ত আদেশের পর। মন্ত্রিসভার বিষয়টি রাষ্ট্রপতির হাতে ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রী প্রকৃতপক্ষে আদালতের প্রতি অসম্মানই দেখিয়েছেন। এর কারণ সম্পর্কে নিশ্চয়ই কথা বাড়ানোর দরকার পড়ে না। সেবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের ইচ্ছা পূরণ হয়েছিল বলেই রায়ের ‘আলোকে’ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা নৃত্য করে উঠেছিলেন। তারা এমনকি একই সংক্ষিপ্ত আদেশের অন্য একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশকে দিব্যি পাশ কাটিয়ে গিয়েছিলেন—যেখানে বলা হয়েছিল, দশম ও একাদশ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে হতে পারে। বোঝাই যাচ্ছে, সংসদ ভেঙে দেয়ার এবং ছোট আকারের মন্ত্রিসভা গঠনের নির্দেশনা থাকায় এবার ক্ষমতাসীনরা একশ’ভাগ খুশি হতে পারেননি।
সেটা তারা নাও হতে পারেন, অন্যদিকে আমরা কিন্তু মনে করি, সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া রায়ের প্রতি কথিত সম্মান দেখানো এবং রায়ের ‘আলোকে’ ব্যবস্থা নেয়া ক্ষমতাসীনদের জন্য কিছুটা হলেও শোভন হত। এজন্যই নতুন নতুন ফর্মুলা হাজির করার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর উচিত অবিলম্বে সংবিধানে আরও একটি সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেয়া। পূর্ণাঙ্গ রায়ের ভিত্তিতে অন্য যে কোনো নামে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাও ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা মনে করি, নির্বাচনের সময় যদি নির্দলীয় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কোনো সরকারের হাতে দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে নির্বাচন নিয়ে কোনো সমস্যাই থাকবে না। রাজনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার এবং অনিবার্য সংঘাতকে পাশ কাটানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর উচিত অবিলম্বে উদ্যোগ নেয়া। আমরা তো মনে করি, তেমন অবস্থায় বিরোধী দলের দাবি মেনে নেয়ার মধ্যে লজ্জার বা পরাজয়ের কোনো কারণ থাকবে না!
কথার পিঠে কথা উঠেছে বাস্তব কিছু বিশেষ কারণে। প্রথম কারণ হলো, কথার মারপ্যাঁচে প্রধানমন্ত্রী তার নিজের কথা থেকেই বহুদূর সরে গেছেন। বাস্তবে বিচ্যুত হয়েছেন। কারণ, মাত্র ক’দিন আগেই লন্ডনে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, নির্বাচনের সময় সরকারি ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ছোট আকারের একটি মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। তার কথায় পঞ্চাশ-পঞ্চাশ অংশীদারিত্বের ইঙ্গিতও ছিল। কিন্তু সংসদে দেয়া এবারের বক্তৃতায় লন্ডন ঘোষণার ধারে-কাছেও যাননি প্রধানমন্ত্রী। বরং পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনের সময়ও সরকার থাকবে তার নিজের নেতৃত্বেই। শুধু তা-ই নয়, নির্বাচন ঠিক কোন সময় অনুষ্ঠিত হবে রাষ্ট্রপতিকে সামনে রেখে সেটাও আসলে তিনিই ঠিক করে দেবেন। নির্বাচন কমিশনকেও প্রকারান্তরে তার নির্দেশেই ব্যবস্থা নিতে হবে। কথা ওঠার দ্বিতীয় কারণটিও গুরুতর। সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি সম্মান দেখানোর নামে সংক্ষিপ্ত আদেশের ‘আলোকে’ তাড়াহুড়ো করে সংবিধানে যে পঞ্চদশ সংশোধনী তারা এনেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ারও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। কারণ, পঞ্চদশ সংশোধনীসংবলিত সংবিধানে সংসদ ভেঙে দেয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। এতে বরং বিদ্যমান সংসদকে বহাল রেখেই পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রাখা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টিকোণ থেকে যেটা আসলে সম্ভব নয়।
সে কারণে শুধু নয়, দীর্ঘ ১৬ মাস পর ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ রায়ের ‘আলোকে’ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সংবিধানসম্মত বলার উপায় নেই। কেননা, পূর্ণাঙ্গ রায়ে নির্বাচনের অন্তত ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার এবং নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ছোট আকারের মন্ত্রিসভা গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি সত্যিই সম্মান দেখানোর সদিচ্ছা থাকলে প্রধানমন্ত্রীর তথা ক্ষমতাসীনদের উচিত ছিল এই রায়ের ‘আলোকে’ সংবিধানে আরও একটি সংশোধনী আনার জন্য দ্রুত তত্পর হয়ে ওঠা—যেমনটি তারা হয়েছিলেন সংক্ষিপ্ত আদেশের পর। মন্ত্রিসভার বিষয়টি রাষ্ট্রপতির হাতে ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রী প্রকৃতপক্ষে আদালতের প্রতি অসম্মানই দেখিয়েছেন। এর কারণ সম্পর্কে নিশ্চয়ই কথা বাড়ানোর দরকার পড়ে না। সেবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের ইচ্ছা পূরণ হয়েছিল বলেই রায়ের ‘আলোকে’ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা নৃত্য করে উঠেছিলেন। তারা এমনকি একই সংক্ষিপ্ত আদেশের অন্য একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশকে দিব্যি পাশ কাটিয়ে গিয়েছিলেন—যেখানে বলা হয়েছিল, দশম ও একাদশ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে হতে পারে। বোঝাই যাচ্ছে, সংসদ ভেঙে দেয়ার এবং ছোট আকারের মন্ত্রিসভা গঠনের নির্দেশনা থাকায় এবার ক্ষমতাসীনরা একশ’ভাগ খুশি হতে পারেননি।
সেটা তারা নাও হতে পারেন, অন্যদিকে আমরা কিন্তু মনে করি, সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া রায়ের প্রতি কথিত সম্মান দেখানো এবং রায়ের ‘আলোকে’ ব্যবস্থা নেয়া ক্ষমতাসীনদের জন্য কিছুটা হলেও শোভন হত। এজন্যই নতুন নতুন ফর্মুলা হাজির করার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর উচিত অবিলম্বে সংবিধানে আরও একটি সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেয়া। পূর্ণাঙ্গ রায়ের ভিত্তিতে অন্য যে কোনো নামে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাও ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা মনে করি, নির্বাচনের সময় যদি নির্দলীয় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কোনো সরকারের হাতে দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে নির্বাচন নিয়ে কোনো সমস্যাই থাকবে না। রাজনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার এবং অনিবার্য সংঘাতকে পাশ কাটানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর উচিত অবিলম্বে উদ্যোগ নেয়া। আমরা তো মনে করি, তেমন অবস্থায় বিরোধী দলের দাবি মেনে নেয়ার মধ্যে লজ্জার বা পরাজয়ের কোনো কারণ থাকবে না!
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন