বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ঢাবির পর রাবিতেও ছাত্রলীগের সন্ত্রাস : গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় দেশব্যাপী ওঠা নিন্দার ঝড় উপেক্ষা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছে। ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ মিছিলে তারা অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। এতে গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন ছাত্রদলের রাবি শাখার আহ্বায়কসহ ১০ জন। মিডিয়ায় প্রকাশিত হামলার চিত্র থেকে বোঝা যায় অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ ক্যাডাররা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এভাবে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যদি সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে তবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সৃষ্ট বিপর্যয় আরও গভীর হয়ে উঠবে। এর ফলে রাজনীতিও যে অস্থির হয়ে উঠবে সেটা বুঝতে বেশি বুদ্ধির প্রয়োজন পড়ে না। কেন সরকারি ছাত্র সংগঠন এমন পথ ধরেছে সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়।
বুয়েটের দীর্ঘ অচলাবস্থা ও তার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যখন সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সচেষ্ট তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এই সন্ত্রাস বুয়েটেও ছড়িয়ে পড়তে পরে। সেখানকার সঙ্কটের বড় কারণ দলবাজ ভিসি তো রয়ে গেছেন! অন্যদিকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ইন্ধন পেলে সবকিছু তছনছ করে দিতে যথেষ্ট, সেটা দেখাই যাচ্ছে। প্রশাসন ও পুলিশকে তাদের সামনে অসহায় হয়ে থাকতে হচ্ছে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বহিরাগত’ ঠেকানোর ধুয়া তুলেছে আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে ‘অস্থিতিশীল’ করা ঠেকাতে একইভাবে ছাত্রদলকে পিটিয়েছে। তাদের নিজেদের ভূমিকা ও দলীয় কোন্দলের কথা না তুলেও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক এসব দায়িত্ব তাদের কে দিয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ভিসি এর জবাবে কী বলবেন? অবশ্য তারাও একই দল ও মতের অনুসারী। দলীয়করণের ত্রাস থেকে ক্যাম্পাসকে রক্ষা করতে তারা আদৌ সচেষ্ট হবেন এ বিশ্বাস রাখা কঠিন। এ অবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বুয়েটের মতো সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। এর মধ্যেই ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নি ডাক্তাররা লাগাতার ধর্মঘট শুরু করেছেন। এভাবে সর্বত্র ছাত্রলীগ প্রতিরোধ শুরু হলে শিক্ষাঙ্গনের পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে।
তবে বিষয়টিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যায় না। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরিতা ও আগামী নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করতে যখন আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার প্রয়োজন বড় হয়ে উঠেছে ঠিক তখন শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস সৃষ্টির পেছনে ভিন্ন কোনো কারণ আছে কি? তারা কি পরিস্থিতিকে অশান্ত করে অন্য কারও ফায়দা লোটার পথ করে দিতে চাইছে? নির্বাচন ম্যানেজ করে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছে কোথাও থেকে? সে জন্যই কি রাজনৈতিক আন্দোলনের সূতিকাগার শিক্ষাঙ্গনগুলোতে নৈরাজ্য সৃষ্টি ও আধিপত্য বজায় রাখতে উঠে-পড়ে লেগেছে? এসব প্রশ্ন ছাড়াও শিক্ষাঙ্গনের অস্থিরতা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার পরিণতি কী হতে পারে সেটাও উপেক্ষা করা যায় না।
আমরা অবিলম্বে শিক্ষাঙ্গনে অশান্তি সৃষ্টিকারী, সে যে দলেরই হোক, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানাই। এজন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিরপেক্ষ ও শিক্ষানুরাগী ভূমিকা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি ভিন্ন দল ও মতের সহাবস্থানও নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া গণতন্ত্র ফাঁকা বুলিতেই পর্যবসিত হবে। এ দেশের জনগণ শিক্ষাঙ্গনেই শুধু নয়, রাজনীতি ও সমাজেও গণতন্ত্রচর্চা বাধামুক্ত দেখতে চায়। এর অন্যথা কেউ-ই মেনে নেবে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads