শহীদ জিয়া : একটি অবিনাশি নাম
ও বহু দলীয় গনতন্ত্রের প্রতিক!!!!!!
by Abdul Aziz
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং
মুক্তিযুদ্ধঃ
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পশ্চিম
পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যখন পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর বর্বরের
মতো ঘৃণ্য হামলা চালায়। সে রাতে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে পূর্ব
পাকিস্তানের জনপ্রিয় বাঙালি নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বন্দী হন। পূর্ব
পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ চলে যান আত্মগোপনে। জনগণ তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়
হয়ে পড়ে। এই সঙ্কটময় মুহূর্তে ১৯৭১ সালের ২৬শে (২৫ মার্চ দিবাগত রাত) মার্চ
পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বর আক্রমণের পর
জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে বিদ্রোহ করেন এবং ২৭
শে মার্চ (২৬ শে মার্চ দিবাগত রাত) তিনি প্রথমে নিজেকে বাংলাদেশের সরকার প্রধান
হিসাবে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। পরবতীর্তে স্থানীয় আওয়ামীলিগের নেতাদর চাপে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। আর এজন্য ২৬ শে মার্চ আমাদের
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস।
“ This is Shadhin
Bangla Betar Kendro. I, Major Ziaur Rahman, on behalf of Bangobondhu Sheikh
Mujibur Rahman, hereby declare that the independent People's Republic of
Bangladesh has been established. I have taken command as the temporary Head of
the Republic. I call upon all Bengalis to rise against the attack by the West
Pakistani Army. We shall fight to the last to free our Motherland. By the grace
of Allah, victory is ours.
তার ১ম ঘোষনাটির সবগুলো কপি রহস্যজনক
কারনে শেখ মুজিব সরকার নষ্ট করে ফেলেন। যার কারনে আমি বাধ্য হয়ে ২য় ঘোষনাটি লিখছি
। যা আজ লক্ষ লক্ষ কপি সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আছে।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবা:-
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী
জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব প্রদান করে তা জনপ্রিয় করে তোলেন। বাংলাদেশে বহু সংখ্যক
বিভিন্ন ধরনের মতের ও ধর্মের নানা জাতিগোষ্ঠী বাস করে। তাদের সংস্কৃতি ও
জীবনযাত্রার মাত্রা ও ধরন একে অপরের থেকে ভিন্ন। তাই জিয়া মনে করেন যে, ভাষা বা সংস্কৃতির ভিত্তিতে নয়, ভূখণ্ডের ভিত্তিতেই জাতীয়তাবাদকে
গ্রহণ করা উচিত। তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-সংস্কৃতি
নির্বিশেষে সকল নাগরিকের ঐক্য ও সংহতির ওপর গুরুত্ত্ব আরোপ করেন এবং এই ধারণা
জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার শক্তি হিসেবে বাংলাদেশে শক্তিশালী ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত
করার প্রয়াস চালান।
বহুদলীয় গণতন্ত্র:
নির্বাচন ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং
অবাধ রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান যত দ্রুত সম্ভব
রাজনীতির গণতন্ত্রায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি
বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের আমলে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের
কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এইভাবে, তিনি সংবাদপত্রের ওপর থেকে
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন, সংবাদপত্রের
মাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রবাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশে
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান করেন।
১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে প্রধান
করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠা করেন। ছয়টি রাজনৈতিক দলের
সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে তিনি ৭৬.৬৭% ভোট পেয়ে বিজয়ী হন
এবং রাষ্ট্রপতির পদে নিয়োজিত থাকেন।
১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে
একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে খেমকারান সেক্টরে তিনি অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন।
যুদ্ধে দুর্ধর্ষ সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য যেসব কোম্পানি সর্বাধিক বীরত্বসূচক
পুরষ্কার লাভ করে, জিয়াউর রহমানের কোম্পানি ছিল এদের
অন্যতম। এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য পাকিস্তান সরকার জিয়াউর রহমানকে হিলাল-ই-জুরাত
খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়াও জিয়াউর রহমানের ইউনিট এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য দুটি
সিতারা-ই-জুরাত এবং নয়টি তামঘা-ই-জুরাত মেডাল লাভ করে।
জিয়া প্রবর্তিত উন্নয়নের রাজনীতির
কতিপয় সাফল্য:
* সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে
রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান।
* জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বৃদ্ধি।
* বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা
ফিরিয়ে দেয়া।
* দেশে কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প উৎপাদনে
বিপ্লব।
* সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে
স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারী সহায়তার সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪০০ খাল খনন ও পুনর্খনন।
* গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে অতি
অল্প সময়ে ৪০ লক্ষ মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দান।
* গ্রামাঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায়
সহায়তা প্রদান ও গ্রামোন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য গ্রাম প্রতিরক্ষা
বাহিনী (ভিডিপি) গঠন।
* গ্রামাঞ্চলে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি বন্ধ করা।
* হাজার হাজার মাইল রাস্তা-ঘাট
নির্মাণ।
* ২৭৫০০ পল্লী চিকিৎসক নিয়োগ করে
গ্রামীণ জনগণের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধিকরণ।
* নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা স্থাপনের
ভেতর দিয়ে অর্থনৈতিক বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ।
* কলকারখানায় তিন শিফট চালু করে শিল্প
উৎপাদন বৃদ্ধি।
* কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশকে খাদ্য
রপ্তানীর পর্যায়ে উন্নীতকরণ।
* যুব উন্নয়ন মন্ত্রাণালয় ও মহিলা
বিষয়ক মন্ত্রণালয় সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুব ও নারী সমাজকে
সম্পৃক্তকরণ।
* ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রতিষ্টা করে সকল
মানুষের স্ব স্ব ধর্ম পালনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিকরণ।
* বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
সৃষ্টি করে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন।
* তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামের জনগণকে
স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করণ এবং সর্বনিম্ন
পর্যায় থেকে দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব সৃষ্টি করার লক্ষ্যে গ্রাম সরকার ব্যবস্থা
প্রবর্তন।
* জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে
নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আসনলাভ।
* তিন সদস্যবিশিষ্ট আল-কুদস কমিটিতে
বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি।
* দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে 'সার্ক' প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ।
* বেসরকারিখাত ও উদ্যোগকে উৎসাহিতকরণ।
* জনশক্তি রপ্তানি, তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, হস্তশিল্পসহ সকল অপ্রচলিত পণ্যোর
রপ্তানীর দ্বার উন্মোচন।
* শিল্পখাতে বেসরকারি বিনিয়োগের
পরিমাণ বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রের সম্প্রসারণ।
শাহাদাত বরনঃ
সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা
পুনরুদ্ধারে যথেষ্ট সফল হলেও জিয়াউর রহমানকে বেশ কয়েকটি সেনা-বিদ্রোহ ও সামরিক
অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মোকাবেলা করতে হয়। এসব বিদ্রোহ দমনে বাধ্য হয়ে তাঁকে কঠোর
ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। যদিও জিয়া অনেক জনপ্রিয় ছিলেন, জিয়ার পুনর্বাসনে কয়েকজন আওয়ামী
লীগের লোক তার প্রচুর বিরোধীতা করে। এসব বিক্ষোভের দূরকল্পনা থাকার পরেও জিয়া তার
দলের স্থানীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ঘঠিত কলহ থামানোর জন্য ১৯৮১ সালের ২৯শে মে
চট্টগ্রামে আসেন এবং সেখানে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে থাকেন। তারপর ৩০শে মে গভীর
রাতে সার্কিট হাউসে মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের নেতৃত্বে একদল বিপথগামী, বাংলাদেশ বিরোধী, বিদেশী শত্রুদের এজেন্ট সেনা সদস্যের
এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে ঘাতকের বুলেটের আঘাতে আমার অন্যতম প্রিয় ব্যাক্তিত্ব
ও আদর্শ শহীদ জিয়াইর রহমান শাহাদাৎ বরন করেন । জিয়াউর রহমানকে ঢাকার শেরে বাংলা
নগরে দাফন করা হয়।যা আজ জিয়া উদ্যান নামে পরিচিত। জেনারেল জিয়ার জানাজায়
বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ জনসমাগম ঘটে। দেশের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বেশী
মানুষের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত জানাজা। শহীদ জিয়ার কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই
৩০ মে, ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হন। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে
এক গোপন চক্রান্ত শহীদ জিয়ার আকস্মিক মৃত্যুর কারণ। দেশীয় মীর জাফরেরা বৈদেশিক
ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে জিয়াকে শহীদ করেছে বলেই আমার ধারনা। জিয়া হত্যার
আততায়ীরা এদেশের সর্বসাধারণের আত্মবিশ্বাসকে নিঃশেষ করতে এবং জাতীয় অর্থনীতির
সক্ষমতাকে ধ্বংস করতে এক প্রবল আঘাত হেনেছিল। এ সম্পর্কে কারো মনে কোনো সংশয় থাকার
কথা না। আপামর দেশবাসীর মনে জিয়ার স্মৃতি অক্ষয়। রাষ্ট্রের সম্ভ্রম রক্ষার অতন্দ্র
প্রহরী জিয়া শহীদ হয়ে আরও লাখ লাখ প্রহরীকে সজাগ করে গেছেন।দেশপ্রেমের অতন্দ্র
প্রহরী হয়ে তারা মোতায়েন রয়েছেন, থাকবেন।
এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের
প্রতিষ্ঠাতা হলেন শহীদ জিয়া। তবে সংসদীয় সার্বভৌমত্বের পুনরুদ্ধার করে
রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণ বহুলাংশে বজায় রেখেছেন। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রনায়ক
শেখ মুজিব বাংলাদেশকে ইসলামী দেশসমূহের সম্মেলন বা ও-আই-সি ভুক্ত করে গিয়েছিলেন।
জিয়াউর রহমান ওই নবগঠিত সংস্থায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের মুখ
উজ্জ্বল করেছেন। ইসলামী সভ্যতার জগতে বাংলাদেশকে সুপরিচিত করেছেন। আন্তর্জাতিক
সম্পর্কের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পরিধির বিরোধসংকুল সীমাবদ্ধতার বাইরে বন্ধুদেশের
নির্ভরযোগ্য সম্বন্ধ গড়ে তুলেছেন নানাভাবে। মহাচীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিস্তার
ঘটিয়ে রাষ্ট্রনিরাপত্তার মহাদেশীয় মাত্রাযোগ করেছেন। পাশ্চাত্য সহায়তার চাহিদা ও
নির্ভরতা হ্রাস করেছেন।কূটনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর শাসনকালে বাংলাদেশের আর একটি বড়
অর্জন এশিয়া থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী আসন লাভ (১৯৭৮)। জাপানের
সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এই আসন পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এতে
জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার
জন্য ইসলামী সম্মেলনের উদ্যোগে গঠিত আল-কুদস কমিটির সদস্য করা হয় বাংলাদেশের
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি বাগদাদ ও তেহরান সফর
করেছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ার তাঁর
উদ্যোগ পরবর্তী সময়ে সার্ক প্রতিষ্ঠায় রূপ নেয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বলতেন যে
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগ সাধনে সেতুর কাজ করবে। তাঁকে
স্বীকৃতি না দিলেও ইদানীং এ এলাকায় কানেক্টিভিটির কাজ চলছে।
বাকশাল আমলের ভীতিপ্রদ ও
অপরিনামদর্শী অর্থনীতিকে মুক্ত করে সুদৃড় ভিত্তির উপর দাঁড় করান। বাকশাল আমলের
বাধ্যতামূলক গ্রাম সমবায়ের জোয়াল তুলে নিয়ে জিয়াউর রহমান নব্য প্রযুক্তি তথা ইরি
প্রবর্তনসহ কৃষি সম্প্রসারণ ব্যবস্থাপনার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছিলেন। শুধু কৃষক
গৃহস্থকে নয়,
কৃষক গৃহবধূকেও কিছু পশুপক্ষী
পালন সহায়তা দিয়ে পারিবারিক আয়বৃদ্ধির উদ্যোগে শামিল করেছিলেন। পল্লী অর্থনীতির
বিকাশের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এভাবেই নিজস্ব পথ খুঁজে বের করেছে। জিয়ার আমলে যেমন
পল্লী অর্থনীতির একটা বুনিয়াদ ও নানামুখী গতিশীল উদ্যোগ গড়ে উঠছিল, তেমনি নগরে-বন্দরে সেবা অর্থনীতি ও
শিল্প উৎপাদন বিকাশেরও বুনিয়াদ তিনি তৈরি করেছিলেন বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া চালু
করে। এখন বেসরকারি উদ্যোগ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালকের আসনে। বলতে হয়, জিয়ার আমলেই জাতিরাষ্ট্র
আর্থ-সামাজিক পুনর্গঠনের প্রকৃত পথনির্দেশ খুঁজে পেয়েছে।
সরকারপ্রধান জিয়াউর রহমান দেশে
খাদ্যোত্পাদন দ্বিগুণ করা এবং সেজন্য স্বেচ্ছাশ্রমে খাল সংস্কার ও পুনঃখনন এবং
পাম্পের সাহায্যে নদী, বিল ও হাওর
থেকে সেচের পানি সংগ্রহ করার জন্য দেশজুড়ে কর্মসূচি নেন। পল্লীবাসীকে এই লক্ষ্য
অর্জনে উদ্বুদ্ধ করতে এবং গ্রামভিত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনের
ধারণা প্রচার করতে জিয়াউর রহমান গ্রামাঞ্চলে পদযাত্রা করেন কয়েকবার।
খাদ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি থানায় খাদ্যগুদাম নির্মাণের কাজ শুরু
হয় জিয়াউর রহমানের আমলে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই করার জন্য
পরিবার পরিকল্পনা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিও পল্লী অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে
যাওয়ার জোর উদ্যোগ নেয়া হয় তাঁর শাসনামলে। রক্ষণশীল সমাজে এ কাজটি করা কঠিন ছিল।
তিনি দুই বছরে দেশের সব মানুষের মধ্য থেকে নিরক্ষরতা দূর করার কর্মসূচিও নিয়েছিলেন, তবে তা সফল হয়নি। তাঁর আমলে শিক্ষা
বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য বিটিভিতে দ্বিতীয় টেরেস্ট্রিয়েল চ্যানেল চালু
হয়েছিল। এরশাদ আসলে সেটা বন্ধ করে দেয়া না হলে এর বিরাট সুফল পাওয়া যেত।
ভারত ফারাক্কা বাঁধ চালু করার পর
বাংলাদেশে পদ্মার পানি কমে যায়। লাগাতার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, জাতিসংঘে বিষয়টি তোলা ও দেশে মওলানা
ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা লংমার্চ করার পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার
পানি-বণ্টনের সাত বছর মেয়াদি প্রথম চুক্তিটি হয়।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলের আরেকটি
অবিস্মরণীয় ঘটনা যমুনা নদীর ওপর দিয়ে পূর্ব-পশ্চিম বিদ্যুতের সংযোগ লাইন স্থাপন।
সারা দেশে পরিচিত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড তাঁর আমলেই প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের
তৈরি পোশাকশিল্পের যাত্রাও তাঁর সময়। এই শিল্প প্রথম থেকেই ছিল বেসরকারি খাতে।
বেসরকারি খাতে শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য মূলধন সরবরাহ করতে ব্যাংক ঋণের ব্যবহার উদার
করা ও রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানা ধীরে ধীরে ব্যক্তিমালিকানায় ফেরত দেয়ার নীতিগত
সিদ্ধান্ত তাঁর সময় গৃহীত হয়। তবে তাঁর সরকারের নীতির সুবিধা নিয়ে যাঁরা ব্যাংক ঋণ
নিয়েছেন, তাঁদের কেউ কেউ পরে ঋণখেলাপি হিসেবে
পরিচিতি পান।
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস করে যে
একদলীয় শাসন কায়েম হয়েছিল ১৯৭৫-এর জানুয়ারিতে, তার বলে আইন করে বাংলাদেশের চারটি পত্রিকা ছাড়া আর সব পত্রিকা বন্ধ
করে দেয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমান সেই ডিক্লারেশন আইন বাতিল করেন এবং পুরনো
পত্রিকাগুলো আবার প্রকাশিত হতে থাকে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পত্রিকা প্রকাশে
উত্সাহ দেয়ার জন্য তিনি রাজশাহী থেকে দৈনিক বার্তা প্রকাশ করার ব্যবস্থা করেন।
এছাড়াও তার আমলেই প্রেস কাউন্সিল ও বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা
আজও প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করার দাবি জানিয়ে আসছি। জেনারেল জিয়াউর রহমান শিশু
একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার শিশু পার্কটিও তার আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন
বেসরকারি মালিকানায় ঢাকা, রাজধানীর
আশপাশে ও দেশের অন্যত্র শিশু-কিশোরদের জন্য বিনোদন পার্ক তৈরি হয়েছে অনেক। এগুলো
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যবসা হিসেবে, তাই
এগুলোতে প্রবেশ ফি অনেক চড়া। ঢাকার শিশু পার্ক এখন স্বল্পবিত্তের ঘরের ছেলেমেয়েদের
আনন্দ করার স্থান হয়ে গেছে।
জিয়া রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের
অতন্দ্র প্রহরীর শপথাবদ্ধ সেনাবাহিনীকেও দক্ষ ও প্রযুক্তিক্ষম করে গড়ে তোলার
কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। রক্ষীবাহিনী বাতিল করে উপযুক্ত সৈনিকদের সেনাবাহিনী ও
বাংলাদেশ রাইফেলসের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। আনসার ও গ্রামরক্ষা দল গঠন এবং তাদের
সুশিক্ষার ব্যবস্থা করে জাতিরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার বলিষ্ঠতর বর্মরচনা ও রণকৌশলগত
চিন্তার বুনিয়াদ তৈরি করেছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় সুশিক্ষিত এবং আন্তর্জাতিক
শান্তিরক্ষার অভিজ্ঞতাপুষ্ট সেনাবাহিনী জাতীয় জীবনে কঠিন ভূরাজনৈতিক বৈরী চাপের
মধ্যেও বিভিন্ন সংকটে রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও রাষ্ট্রমর্যাদা রক্ষায় যথার্থ ভূমিকা
রেখে চলেছে,
দুর্যোগে বিপন্ন জনগোষ্ঠীর
পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সুশৃক্সখল ও নীতিনিষ্ঠ কর্তব্যবুদ্ধি
শহীদ জিয়ার সেনানেতৃত্বের জাগরণী ভূমিকাকে অনুসরণ করে বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও
দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বব্যবস্থায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রেখে প্রবৃদ্ধির
আনুপাতিক প্রতিরক্ষায় সুদৃঢ় হবে, দেশবাসীর
সেটাই প্রত্যাশা।
জিয়াই স্বাধীনতাকে জাতির কাছে অর্থবহ
করে তুলেছেন। জাতিকে একটা শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে গেছেন। এ জাতির এ দেশের
সবচেয়ে কাছের মানুষ সহজ সরল সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত সেই জিয়া। বাংলাদেশের শত্রুরা এই
দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে জিয়াকে হত্যার মাধ্যমেই।কৃতজ্ঞতায়ঃ উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন