স্বপ্নের ফাইনাল ইতিহাস গড়ার দিন |
বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ ২০১২ এবার বাংলাদেশের অসাধারণ ক্রীড়ানৈপুণ্যে চমকিত ক্রিকেটবিশ্ব। প্রথমে ভারত পরে শ্রীলঙ্কা- বাংলাদেশের দামাল ছেলেদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে স্তম্ভিত। কোন রুদ্ধশ্বাস জয় নয়, পরিষ্কার এবং সমান ৫ উইকেটের ব্যবধানে কুপোকাত দুই ক্রিকেট পরাশক্তি। বড় কোন আসরে দু’টি বড় দলকে হারানোর নজির আগেও ছিল বাংলাদেশের। ২০০৭ বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ হারায় ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তবে পরপর দু’ম্যাচে হারানোর নজির এবারই প্রথম। আর এ অসামান্য দুই জয়ে প্রথম বড় কোন প্রতিযোগিতার ফাইনালে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ দুর্বল কোন দল নয়, বিশ্বকাপের দু’বারের ফাইনালিস্ট পাকিস্তান, গেলবারও সেমিফাইনালে খেলেছে। আজ যে দল জিতবে আগামী দু’বছরের জন্য তারাই হবে এশিয়ার সেরা। ক্রিকেটে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। এশিয়া কাপের কোন আসরে এই প্রথম ভারত ও শ্রীলঙ্কার কোনটিই নেই। আগের ১০টি আসরের ফাইনালে ভারত না হয় শ্রীলঙ্কা ছিলই। ১৯৮৬ আর ২০০০ সালের আসর বাদে প্রতিবারই ফাইনাল খেলেছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। গতবছরই বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে এ দু’টি দল। ক্রিকেট র্যাঙ্কিংয়ের নবম স্থানে থাকা বাংলাদেশের কাছে হেরেই বিদায় নিতে হয়েছে বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলকে। ফাইনালের নতুন সমীকরণে নতুন রেকর্ড হবে যদি জিততে পারে বাংলাদেশ। এশিয়ার কাপের রোল অব অনারে বসবে বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশ যদি আজ জিততে পারে তবে একই টুর্নামেন্টে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারানোর কৃতিত্ব স্পর্শ করতে পারবে। একমাত্র অস্ট্রেলিয়াই ২০০৩ সালে বিশ্বকাপে এই তিনটি দলকে হারাতে সক্ষম হয়। ঐতিহাসিক মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে মার্চ অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ তার আগমনবার্তা জানায় এ মাসেই। ৪০ বছর পর আরেক মার্চে ক্রিকেটবিশ্বকে নতুন কোন বার্তা কি দিতে পারবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা? মাত্র এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী চিত্র। ২০১১ সালের মার্চে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে পড়েছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ৪ঠা মার্চ ২০১১ এই মিরপুর স্টেডিয়ামেই বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয়ে যায়। এরপর ১৯শে মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অলআউট মাত্র ৭৮ রানে। সাবেক অধিনায়কদের সম্পর্কে মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েছিলেন তখনকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আর এ মার্চে ক্রিকেট দলের পাশে গোটা দেশ- ক্রিকেট বুঝুক আর না বুঝুক জয় চাই সবারই। গেলবারের খলনায়ক সাকিবই এবার নায়ক। পরপর দু’ম্যাচে সেরা হয়ে এখন আসরসেরা হওয়ার লড়াইয়ে। মার্চ পাকিস্তানের জন্যও ঐতিহাসিক। না, বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার জন্য নয়। এই মার্চেই ক্রিকেট ইতিহাসে পাকিস্তানের চিরস্থায়ী আসন দখল। আজ থেকে ঠিক ২০ বছর আগে ১৯৯২ সালের ২৫শে মার্চ কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান জয় করে বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত ওই আসরের ফাইনালে তারা হারায় ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডকে। বাংলাদেশ পাকিস্তানের সুখস্মৃতির ধারকও। ২০০০ সালে বাংলাদেশের মাটিতেই পাকিস্তান এশিয়া কাপের প্রথম ও একমাত্র শিরোপা জয়ের স্বাদ পায়। পাকিস্তানের জন্য এশিয়া কাপের তৃতীয় ফাইনাল। ১৯৮৬ সালে প্রথম ফাইনালে হেরে যায় তারা। তাই পাকিস্তানও মরিয়া আজ জয় নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করতে। দুপুর ২টায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খেলাটি শুরু হবে। আশাবাদী দু’দলই আজ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তিনি গতকাল অনুশীলনের ফাঁকে বলেন, জয় অবশ্যই সম্ভব। যদি আমরা ভারত আর শ্রীলঙ্কাকে যেভাবে হারিয়েছি সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি। অন্যদিকে পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি না হলেও কথা বলেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ও সাবেক অধিনায়ক ইউনুস খান। এশিয়া কাপের ফাইনালে দলের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, আমরা জয় চাই। আর মনে করি সেটি ভাল প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করেই পাবো। বাংলাদেশ ভাল দল, তাদের সঙ্গে ম্যাচটি আশা করি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এশিয়া কাপে দু’দলের লড়াই এশিয়া কাপের ১০টি আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোন জয় নেই বাংলাদেশের। এর আগে ২০১০ সালে ডাম্বুলায় এশিয়া কাপে সর্বশেষ মুখোমুখি পাকিস্তান-বাংলাদেশ। এরপর গতবছর ডিসেম্বরে দেশের মাটিতে তিন ম্যাচ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। এর আগে দেশের মাটিতে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে দু’বার পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়। প্রথমবার ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে ১৭৩ রানে ও দ্বিতীয়বার ঢাকায় ২০০০ সালে ২৩৩ রানে হার মানে তারা। আর এবার ১১ই মার্চ বাংলাদেশ হারে ২১ রানে। কারা খেলবেন আজ বাংলাদেশ দলে আজ পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। পেসার নাজমুলই খেলবেন। নাজিমউদ্দিন পরপর দু’ম্যাচে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও ইমরুলকে নামানোর ঝুঁকি নেয়া হবে না। আর উইনিং কম্বিনেশন বলে কথা। তবে পরিবর্তন আসতে পারে পাকিস্তান দলে। ভারতের বিপক্ষে পাঁচ জনের পরিবর্তে ৬ বোলার নিয়ে খেলে তারা। উইকেটরক্ষক সরফরাজের বদলে পেসার ওয়াহাব রিয়াজকে নামায় তারা। যদিও তিনি সুবিধা করতে পারেননি। আজ আবার সরফরাজকে দেখা যেতে পারে। |
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন