শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

গোলাম আযমের পা ধরে সালাম করা দোষের কিছু নয়: কাদের সিদ্দিকী



ঢাকা, ৩১ মার্চ: শুধু বেডরুম নয়, সরকারকে বাথরুমও পাহারা দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে করে এ কথা বলেন।
 
শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজামীর রাজনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা নিজামীকে মেনে নিয়েই তার পাশে বসেছিলেন। সুতরাং এটা এখন বলা দোষের কিছু নয়। অন্যদিকে গোলাম আযম পিতার বয়সী লোক। সুতরাং তার পা ধরে সালাম করলে তাও দোষের কিছু নয়।”

শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘স্বাধীনতার ৪০বছর: সংকটে বাংলাদেশ’ শীর্ষক উন্মুক্ত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সেভ দ্য নেশন নামের একটি সংগঠন এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, “বর্তমান সরকার কেয়ারটেকারকে জন্ম দিয়েছিল এরাই আবার তা হত্যা করলো। রাজনৈতিক দলের অধীনে নির্বাচনকে কেউই বিশ্বাস করবে না। বিএনপি একতরফা ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করে রক্ষা পায়নি। কয়েকদিনের মাথায় তারা বঙ্গভবনে গিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। আওয়ামী লীগও যদি এ কাজ করে তবে বঙ্গভবন নয়, তাদের রাস্তাতেই পদত্যাগ করতে হবে।”

এ সময় তিনি সামরিক স্বৈরাচারের চেয়ে গণতান্ত্রিক স্বৈরাচার বেশি কঠিন বলেও মন্তব্য করেন।

স্বাধীনতার ৪০ বছরে বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা জানানো প্রসঙ্গে বলেন, “সম্মাননাকে ডালে-চালে খিচুরি বানিয়ে ফেলা হয়েছে। যাকে সম্মান দেয়ার কথা তাকে জানানো হয়নি। আবার যে সম্মান পাবার যোগ্য নয় এমন অনেককেই সম্মাননা জানানো হয়েছে।”

এতে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, সংগঠনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট নজির আহমদ হুসাইন, প্রধান নির্বাহী আমিরুল মোমেনীন মানিক বক্তব্য দেন।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

এ বাগানে ফুল ফোটে না কেন?



॥ মোহাম্মদ আসাফ্ উদ্দৌলাহ্ ॥

‘The Weak have one weapon : the errors of those who think they are strong.’
উক্তিটি শাশ্বত সত্যের উদ্ভাস বহন করে। যারা নিজেদের শক্তিশালী মনে করে, তাদের ভুলগুলোই দুর্বলের ক্ষমতায় রূপান্তর আনে। আর এই অস্ত্রটি তারা পাবেই, যেহেতু ক্ষমতাধরেরা ভুলের পাহাড় রচনায় ক্লান্তিহীন। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভুল সিদ্ধান্ত, প্রতিহিংসা আর নিজেরা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ও অসতর্ক বেপরোয়া অতিকথনের মধ্য দিয়ে এখন এত ফ্রন্ট খুলেছে যে, এসব থেকে পরিত্রাণ পাওয়া প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে ফেললেন : আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের ধরা হবে। পুলিশপ্রধান বললেন, একটুখানি ধৈর্য ধরতে। আর দু-এক দিনের মধ্যেই সব জানতে পারবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবার মুখ খুললেন, সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং মনিটর করবেন। এবার প্রধানমন্ত্রী মুখ খুললেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বেডরুম পাহারা দেয়া সম্ভব নয়। তারপরই বললেন, ঘটনার সব আলামত নষ্ট হয়ে গেছে।’ তারপর সাজানো হবে নাটক। মেঘের দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী। ঝড়ের দায়িত্ব নেবে কে?

বিরোধীদলীয় নেতা তার চট্টগ্রামের মহাসমাবেশ থেকেই ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকা মহাসমাবেশের। তারপর শুরু হলো এক অঘোষিত যুদ্ধ। সমাবেশের জন্য জায়গা দেয়া যাবে না, মাইক দেয়া যাবে না, টিভিতে সরাসরি সমপ্রচার করা যাবে না, সমাবেশে জনসাধারণ যাতে যোগদান করতে না পারে, সেজন্য পথে যত বাধা সৃষ্টি করা সম্ভব তার সবই করেছে সরকারি দল। বাস, ট্রেন, নৌকা, মাইক্রোবাস, স্কুটার, লঞ্চ, জাহাজ সবই থামিয়ে রাখা হলো। উদ্দেশ্য- জনসাধারণ যেন ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দিতে না পারে। কিন' বাস্তবে ১২ মার্চ রূপান্তরিত হলো সরকারি নির্দেশে আয়োজিত এক অভূতপূর্ব হরতালে। তার পরপরই আওয়ামী লীগ আয়োজন করল প্রতিসমাবেশ। এ দিকে বহু দিন পরে বিএনপি সংসদমুখী হলো। বেগম জিয়া তার বক্তৃতায় ১৯৭২ সাল থেকে আওয়ামী লীগের অযোগ্য দেশ পরিচালনার দীর্ঘ তালিকা সংসদে তুলে ধরেন। এরপর শেখ হাসিনা আরেক হাত নিলেন বিএনপিকে। বিরোধী দলের মূল প্রস্তাব ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃপ্রবর্তন। ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী সে সম্পর্কে একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না। সুতরাং মৌলিক প্রশ্নে দু’দলের পরস্পর বিপরীতমুখী অবস'ান রয়ে গেল আগের মতোই অনিবার্য সঙ্ঘাতের দিকে। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তন করা না হলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে এক ভয়াবহ সংঘর্ষের নাম। সে ক্ষেত্রে নিকট বা দূরবর্তী এক বা একাধিক পরাশক্তির প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ অপ্রতিহত হয়ে উঠবে। আওয়ামী লীগ হয়তো ভাবছে, এরশাদের জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলরূপে প্রস'ত করবে। আমার যত দূর জানা আছে, তাতে বলা যায়, আওয়ামী লীগের সংসদে বিরোধী দলের প্রধান হতে এরশাদ রাজি হবেন না। তখন কী হবে- যখন এরশাদ বলবেন যে, তিনিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস'া পুনর্বহাল না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল অংশগ্রহণ করবে না। তখন আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে হবে একা। তারা নিজেরাই এই নতুন বাকশাল মার্কা নির্বাচন করবে না। কেননা, কোনো জাতীয় নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হলে তার পরোক্ষ প্রভাব পড়ে বিশ্বময়। সে জন্য যেকোনো দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও সঠিক হলো কি না তা নিয়ে উৎকণ্ঠা সারা পৃথিবীর।

এখানে ব্যক্তিগত দর্প যে দেখাতে যাবে, রাজনীতির কাছে সে ততই অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়বে। জননীতির শিকড় হলো জনসেবা। জনজীবন থেকে দুর্ভোগ দূর করাই এর কাজ। আলোচনাহীন একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এক ধরনের দর্পিত আচরণ, যা গণতন্ত্রকে পরিহাস করে। বিভিন্ন মত তো থাকবেই। তার মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য মত পেতে হলে চাই অবন্ধুর লক্ষ্য, অন্যের মতের প্রতি শুধু সহিষ্ণুতা নয়- শ্রদ্ধাবোধ থাকা, আত্মম্ভরিতা ও অহঙ্কারের পরিবর্তে বিনয় ও আদর্শনিষ্ঠা। ইতিহাসের বিখ্যাত মদিনা সনদ ঘোষণা স্বাক্ষরকালে কেবল শান্তির স্বার্থে রাসূলুল্লাহ সা: তাঁর উপাধি মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বারবার মুখে ইসলাম শান্তির ধর্ম বলা, কিন' প্রকৃত কাজে তার স্বাক্ষর না রাখা শুধু নিজের সাথে নয়, আল্লাহ তায়ালার সাথেও প্রতারণা করা। কোটি কোটি লোক কি ভোট দিয়েছে তাদের জন্য অশান্তি ও উৎকণ্ঠা বাড়াতে? বর্তমানে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তাদের যদি প্রশ্ন করা হয় একটি সামান্যতম ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত দিতে- যেখানে তাদের সিদ্ধান্তের ফলে গণমানুষের একটি হয়রানি দূর হয়েছে, তাদের নিরুত্তর থাকাটাই শোভনীয় হবে।

পুলিশবাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে লাগামহীন ব্যবহার করা, হাজার হাজার বিরোধীদলীয় মানুষকে জেলে পুরে ফেলা, নিজেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার মুখোমুখি হওয়ার সৎসাহস না থাকা ও বিরোধীদলীয় সমর্থকদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা রুজু করা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয়করণ করা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মৌখিক সংগ্রামের কথা বলা, আগামী নির্বাচনের জন্য কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আদায় ও মাস্তান বাহিনীকে সুগঠিত করা- এসবই তো আবার ক্ষমতায় যাওয়ার রণপ্রস'তি? আমরা বুঝি, লোকে বোঝে- বোঝে না শুধু তারা- যারা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়। ক্ষমতার মসনদ শেষ বিশ্রামের ক্ষুদ্র পরিসরে ঢোকে না। তবু মানুষ পৃথিবীর এই দুই দিনের মোহে এতই মগ্ন যে, আল্লাহ তায়ালার ভয়ও তাদের অন্তর থেকে নির্বাসিত হয়ে যায়।

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের যে করুণ ও অসুস' চিত্র, তা দেখে মনে হয়, একদিন এর আমূল পরিবর্তন হবে। এই গণতন্ত্রই যদি জাতির অন্তিম গন্তব্য হয়, তাহলে তা হবে আল্লাহর ক্ষমাহীন অভিশাপ। একে পরিশোধিত করতে হবে, এর গভীর সংস্কার করতে হবে, একে আমাদের জন্য প্রযোজ্য করে নির্মাণ করতে হবে এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে ইনসাফ হবে সর্বোচ্চ প্রেরণা। যেখানে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা থাকবে না কারো কাছে, যেখানে দুর্ভোগের অভিযোগ নিয়ে সরকারি দফতরের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না, যেখানে যেকোনো অজুহাতে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে না কোনো নাগরিককে আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশ ব্যতীত, যেখানে রাষ্ট্রের সেবা কিনতে হয় অনেক দামে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবার তার সিলেট সফরকালে ঘোষণা করলেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হলে টিপাইমুখ বাঁধ দিতে দেয়া হবে না। আর অন্য দিকে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার দিল্লিতে বললেন, টিপাইমুখ বাঁধ দিলে বাংলাদেশের ক্ষতি তো হবেই না, উপকার হবে অনেক। ঠিক এক বছর আগে ঢাকায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারও বলেছিলেন একই কথা। এ দেশে বেশ কৌতুক চলছে। আমাদের মন্ত্রীরা, সচিবরা ও অন্য আধিকারিকরা যখন বিবৃতি দেন, তখন আগে থেকে বলে না দিলে বোঝা যায় না, এরা কার হয়ে কথা বলছেন- ভারতের নাকি আমাদের? প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিপক্ষে বিবৃতি দেয়ার অপরাধে দিল্লিতে নিযুক্ত আমাদের(?) হাইকমিশনারকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত। শেয়ারবাজারের ট্র্যাজেডি নিয়ে কেউ আর কথা বলছেন না। ত্রিশ লাখ মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা বাষ্পের মতো উড়ে গেল। লাখ লাখ মানুষ রাতারাতি হারাল তাদের সর্বস্ব। প্রতারিত হওয়ার অপমান সহ্য করতে না পেরে দু’জন আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। কিন' সেই মর্মান্তিক দুঃসংবাদও ধূসর হয়ে গেছে আমাদের স্মৃতি থেকে। অন্য দিকে ঘাতকরা (যারা সংখ্যায় ছয়-সাতজনের বেশি নয়) উল্লাস করছেন, কেননা তারা ক্ষমতার এত কাছাকাছি যে, তাদের স্পর্শ করা এ সরকারের সময়কালে সম্ভব নয়। তবে আশার কথা এই যে, সময় স্তব্ধ হয়ে থাকে না। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির নায়কেরা শাস্তি পাবেই একদিন। সব কিছুর জন্যই আল্লাহ নির্ধারিত করে রেখেছেন সময়। কিন' সরকার তাদের বিচারের মুখোমুখি করছে না কেন? কেন তাদের নাম উচ্চারণ পর্যন্ত করতে পারেন না অর্থমন্ত্রী? তাদের আধা ডজনের কাছে সরকার কেন এত ঋণী? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে একদিন। আসলে আমাদের বিধিলিপিই হয়তো এমন। সমস্ত অন্যায় হতে থাকবে, আর তা নিয়ে কথা বললেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে রাষ্ট্র।
সমপ্রতি কলেজের একজন মৌলবাদী সংখ্যালঘু প্রভাষক হজরত মুহাম্মদ সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। ক্রোধের চেয়ে দুঃখ পেলাম বেশি। একজন শ্রেষ্ঠ মহামানবকে নিয়ে কটূক্তি করে তিনি ধিক্কার ছাড়া কী পেলেন? বিশ্বের ১৬০ কোটি মুসলিম ধর্মাবলম্বীর কাছে রাসূল সা:-এর চেয়ে মর্যাদাবান আর কেউ নেই এবং হবেন না। তা ছাড়া বিশ্বের যত ধর্মের অনুসারী আছেন, তাদের সবার কাছে সম্মানের অধিকারী যিনি, তার সম্পর্কে মন্তব্য করার দুঃসাহস কারোই থাকার কথা নয়। আশা করি, তিনি এই ধৃষ্টতার জন্য রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবেন। তিনি অবশ্যই এই প্রাণীকে ক্ষমা করে দেবেন। ক্ষমা করাই তাঁর দীক্ষা।

জাহাজ ডুবে কয়েক শ’ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। নৌপরিবহনমন্ত্রী সেজন্য সামান্যতম দুঃখিত হওয়ার সৌজন্যও প্রকাশ করেননি। সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা নিহত হওয়ার বিষয়টি তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে ও থাকবে। এর মধ্যে হঠাৎ করেই প্রজাতন্ত্রের পদের তালিকায় যুক্ত হলো এক নতুন পদ। সিনিয়র সেক্রেটারি। সামরিক ব্যবস'াপনায় যেমন চিফ অব স্টাফের ওপরে আর কোনো পদ নেই, ঠিক তেমনি অসামরিক ব্যবস'াপনায় সচিবের ঊর্ধ্বে কোনো পদ থাকার কথা নয়। ক্যাবিনেট সচিব সমানদের মধ্যে প্রথম মাত্র। কোনো পরিচিত দেশে সিনিয়র সেক্রেটারি নামে কোনো পদ আছে বলে অন্তত আমার জানা নেই।

এমনি করে আলোচনা-পর্যালোচনা ছাড়াই হুটহাট করে নেয়া হচ্ছে সব সরকারি সিদ্ধান্ত। কোথায় যেন একটা তাড়া। কলকাতার এক অখ্যাত কবির কবিতার চারটি চরণ খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল ১৯৪৬-৪৭ সালের দিকে।
‘ব্যরবাদিয়ে গুলিস্তানকে লিয়ে
এক উল্লুহি কাফি থা;
আগ্যর হ্যর শাখ পে এক উল্লু ব্যয়ঠা হো
- তো আঞ্জামে গুলিস্তাঁ ক্যায়া হোগা।’
সেদিনের চালচিত্র নিয়ে এত দিন আগের এক কবিতা আজ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে এক নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী। তবে এত উল্লু পয়দা হলো কেমন করে, সে প্রশ্ন রইল কবির কাছে।
লেখক : সাবেক সচিব

শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

প্রহসন বন্ধ করুন : সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পল্টনে ফাঁসি দিয়ে দিন : ফারহাত কাদের



বিচারের নামে প্রহসন না করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপিকে পল্টন ময়দানে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিয়ে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় কমাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী।

তিনি বলেন, ফাঁসি দিন, তবু এই প্রহসন বন্ধ করুন। এই প্রহসনের কারণে দেশের জনগণের অর্থ অপচয় হচ্ছে। তদন্ত কমকর্তাদের কাছে দেয়া বিভিন্ন জনের জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ফারহাত কাদের চৌধুরী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে দেয়া বিভিন্ন জনের জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে নিয়ে পৃথিবীতে এক নতুন নজির স্থাপন করছে এই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ ধরনের বিচার প্রহসন ছাড়া কিছু নয়।
তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, বিচারের নামে এমন প্রহসন করে দেশের কোটি কোটি টাকা খরচ করার দরকার কী? সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে যেহেতু আপনারা ফাঁসি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাহলে আর আদালতে বিচারের নামে সময় ও অর্থ নষ্ট করার দরকার কী? এর চেয়ে পল্টন ময়দানে নিয়ে ফাঁসি দিলেই তো সব শেষ। ফারহাত কাদের চৌধুরী বলেন, আমি মনে করি সরকার যেভাবে বিচার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে তাকে ফাঁসিই দেয়া হবে। তাহলে এত কিছুর দরকার কী?
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আমার দেশকে দেয়া সাক্ষাত্কারে আন্দালিব রহমান : আইএসআই’র অর্থ দেয়া নিয়ে মিথ্যাচার করায় আওয়ামী লীগের ক্ষমা চাওয়া উচিত



সাক্ষাত্কার নিয়েছেন, বাছির জামাল
একানব্বই সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই (ইন্টারসার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স) অর্থ দিয়েছে—আওয়ামী লীগের এমন অভিযোগকে হাস্যকর বলে বর্ণনা করলেন চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এমপি। গতকাল আমার দেশ-এর সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে এজন্য আওয়ামী লীগের ক্ষমা চাওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে বরং আওয়ামী লীগের ক্ষুণ্ন হওয়া ভাবমর্যাদা কিছুটা বাড়বে।
দুবাইভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক খালিজ টাইমস’র একটি রিপোর্টকে কেন্দ্র করে গত প্রায় এক মাস ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়াকে আইএসআই’র অর্থ দেয়া নিয়ে হৈচৈ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের
প্রায় সব নেতাই ওই রিপোর্ট উল্লেখ করে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন। খালিজ টাইমস’র রিপোর্টটি প্রথম আলোতে প্রকাশ হওয়ার পরই ব্যাপক হৈচৈ শুরু হয়। প্রথম আলো’র নয়াদিল্লি প্রতিনিধি দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী খালিজ টাইমসে রিপোর্টটি পাঠান। পরবর্তী সময়ে ডেইলি মেইল’র অন লাইন সংস্করণ ও ইন্ডিয়া টুডেতেও একই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। কিন্তু যার স্বীকারোক্তি উল্লেখ করে এই রিপোর্ট লেখা হয়, সেই আইএসআই’র সাবেক প্রধান লে. জেনারেল (অব.) আসাদ দুররানী বিবিসিকে বলেন, তিনি এমন কথা বলেননি। পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তা কেবল তার দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে। পাকিস্তানের বাইরে কোনো দল বা দেশ নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিতে এমন ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, আইএসআই’র অর্থ দেয়া নিয়ে বাংলাদেশে যে হৈচৈ হচ্ছে, এর কোনো ভিত্তি নেই।
এ প্রসঙ্গে আন্দালিব রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের মতো একটি পুরনো রাজনৈতিক দল কোনো প্রমাণ ছাড়া বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অর্থ নেয়ার অভিযোগ আনাটা আসলেই বেমানান। বিএনপি জনগণের দল। এই দলটি সবচেয়ে বেশিদিন এ দেশের ক্ষমতায় ছিল। সুতরাং এই দলের ভালো-মন্দের সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি জড়িত। কিন্তু বিএনপির বিরুদ্ধে একটি অলীক অভিযোগ এনে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করল আওয়ামী লীগ। এজন্যই তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমাদের রাজনীতিতে ক্ষমা চাওয়ার সংস্কৃতি শুরু হওয়া উচিত।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হচ্ছে : নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হবে, সেই সরকারের বৈধতা এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। নির্বাচন যদি অবাধ ও নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের কোনো বৈধতা থাকে না। একই কারণে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয় না। এজন্যই বাংলাদেশে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে গণতন্ত্রের ওই দুটি শর্তই লঙ্ঘিত হয়। অতীতে এর নজির রয়েছে ভুরি ভুরি।
এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার আন্দালিব ১২ মার্চে চারদলীয় জোটের মহাসমাবেশে সরকারের বাধা দেয়া, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে ২৬ মার্চ সাভারের স্মৃতিসৌধে যেতে বাধা দেয়া এবং হোটেল রূপসী বাংলায় খালেদা জিয়ার একটি অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এই কয়েকটি অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আচরণ দেখেই বলে দেয়া যায় জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী দলকে সহ্য করবে না সরকার। আওয়ামী লীগ নিজের স্বার্থের জন্য যে
কী ভয়াবহ হয়ে ওঠতে পারে, তা প্রমাণের জন্য উপর্যুক্ত কয়েকটি ঘটনাই যথেষ্ট। তাছাড়া
আমাদের দেশে দুটি বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে আস্থার সঙ্কট প্রকট। এজন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমে আরও খারাপ হচ্ছে। এর মাধ্যমে তোফায়েল সাহেবরা (তোফায়েল আহমদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য) দেশে একটি সঙ্কট সৃষ্টি করে আসলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ বলতে চায় যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সহিংসতাকে উত্সাহিত করে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। সেই সময় আওয়ামী লীগের কারণেই সহিংসতা হয়েছিল। লগি-বৈঠা দিয়ে আওয়ামী লীগই মানুষকে মেরে লাশের ওপর নৃত্য করেছিল। তখন কোনো দোষ-ত্রুটি হলে তা ব্যক্তির জন্য হয়েছে। এজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির ওপর দোষ চাপানো ঠিক হবে না।
নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ কয়েকটি উপনির্বাচনে বিরোধী দলের
প্রার্থী জয়লাভ করায় এটাই প্রমাণ হয় যে, দলীয় সরকারের অধীনেও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব—
এমন দাবির জবাবে তিনি বলেন, কয়েকটি স্থানীয়
ও উচ্চ নির্বাচনের ফল দেখে বলে দেয়া যায় না
যে, দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। এই কয়েকটি নির্বাচনে যে ফল হয়েছে, তা আওয়ামী লীগের খোলস মাত্র। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার স্বরূপে আবির্ভূত হবে। উপরে যে কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা দিলাম, তাতেও আওয়ামী লীগের স্বমূর্তিটা আমরা কিঞ্চিত ধরতে পেরেছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের মনোভাব বুঝে গেছে। তারা জানে যে, আগামী নির্বাচনে তাদের জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই। সেজন্যই সংবিধান সংশোধন করে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল ছাড়া বিএনপি ও বিরোধী জোট নির্বাচনে যাবে না। আমাদের ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। দেশে আবার সরকারের বৈধতার সঙ্কট সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। বাংলাদেশে বর্তমানে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে না। তা না হলে জনগণের ক্ষমতায়ন হবে না। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে জনগণের আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল করতে বাধ্য হবে।
আন্দালিব রহমান বিগত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে বলেন, মহাজোট সরকারের সাড়ে তিন বছর চলে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে তারা জনগণকে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার একটিও বাস্তবায়ন করা হয়নি। এজন্য জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে জাতিকে বিভক্ত করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সরকার।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

শাসন যখন নিপীড়নের হাতিয়ার



ড. মা হ্ বু ব উ ল্লা হ্
আজকের বাংলাদেশের শ্বাসরুদ্ধকর দুঃসহ পরিস্থিতিতে টমাস পেইনের একটি কথা আমাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারে। টমাস পেইন তার The Crisis গ্রন্থের একটি নিবন্ধে বলেছিলেন, “These are the times that try men’s souls : The summer soldier and the sunshine patriot will, in this crisis, shrink from the service of his country; but he that stands it now, deserves the love and thanks of man and woman. Tyranny, like hell, is not easily conquered; yet we have this consolation with us, that the harder the conflict, the more glorious the triumph. What we obtain too cheap, we esteem too lightly.”
টমাস পেইনের এই উদ্ধৃতিটি ভাবানুবাদ করলে দাঁড়ায়—‘এখনকার সময়টি হচ্ছে এমন এক সময় যখন মানুষের আত্মার পরীক্ষা : এই সঙ্কটে গ্রীষ্মের সৈনিকরা এবং রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনের দেশপ্রেমিকরা তাদের দেশের সেবা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। কিন্তু যে মানুষটি এখন এর মোকাবিলা করছে, সে নারী ও পুরুষের ভালোবাসা ও সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। নরকের মতোই অত্যাচারকে সহজে জয় করা যায় না। তবুও আমাদের এই সান্ত্বনা যে, সংঘাত যতই কঠিনতর হোক বিজয় ততোধিক গৌরবময়। যা কিছু আমরা সহজে অর্জন করি তার মর্যাদা আমরা অতি সামান্যই দিই।’ পেইন গ্রীষ্মের সৈনিক এবং রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনের দেশপ্রেমিকদের সম্পর্কে বলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মতো দেশে শীতের সময় যখন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে আসে, তখন প্রকৃতিকে খুব বৈরী মনে হয়। কিন্তু গ্রীষ্ম কিংবা রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনগুলোকে আরামদায়ক মনে হয়। যে সৈনিক শুধু গ্রীষ্মের সময় যুদ্ধ করতে অভ্যস্ত কিন্তু শীতের প্রচণ্ডতা উপেক্ষা করে লড়াই চালিয়ে যেতে কুণ্ঠা বোধ করে, সেই সৈনিক যথার্থ লড়াকু সৈনিক নয়। তেমনি দেশের সুদিনে দেশপ্রেমিক হওয়া যত সহজ, শত্রুকবলিত দেশে দেশপ্রেমিক হওয়া তত সহজ নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, ঘোর দুঃসময়ে যারা দেশের জন্য মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, প্রবল প্রতিকূলতাকে জয় করতে দৃঢ়চিত্ত হয়—তারাই সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। নরকাগ্নিকে তুচ্ছ জ্ঞান করার মতো অত্যাচার ও নিপীড়নের মুখোমুখি দাঁড়ানোও দুঃসাহসিক কাজ। যে রাজ্য অত্যাচারী রাজার শাসনাধীন, যে দেশ ফ্যাসিবাদী শাসকের হাতে নিষ্পেষিত হয়; সে দেশকে একমাত্র নরকের সঙ্গেই তুলনা করা যায়। মহত্ কিছু অর্জন করতে হলে সুকঠিন প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করতে হয়। যা কিছু আমরা সহজে অর্জন করি, আমাদের কাছে তার মূল্য ততই কম। দেশে দেশে এমন এক সময় আসে, যখন অত্যাচারীর অত্যাচার ও নিপীড়ন সব মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এমন নজির পৃথিবীতে আমরা অনেক দেখেছি। হিটলার, মুসোলিনি কিংবা ফ্রাঙ্কো ও সালাজারের শাসন তাদের দেশবাসীকে চরম শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় ফেলেছিল। চিলিতে পিনোশের শাসনও ছিল অসহনীয় অত্যাচার ও নিপীড়নের ভারে জর্জরিত। রাত যত গভীর হয়, ঊষার আলো ততই নিকটবর্তী হয়। সুতরাং দুঃসময়ে ধৈর্যহারা হওয়ার কোনো কারণ নেই। রাতের অন্ধকারের মতোই দিনের আলো নিশ্চিত এক সত্য। তবে একথাও সত্য যে, মানবসভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে রাতের কালো এবং দিনের আলো অদ্ভুত এক পরম্পরায় চলে এসেছে। তাই মানবজাতিকে বারবার লড়াই করতে হয়, নির্যাতন-নিপীড়ন সইতে হয়; শুধু শিশুর মুখে এক টুকরো হাসির জন্য। এমন দিন কি কখনও আসবে যে দিন পৃথিবীর সব কিছু অমলিন হাসিতে পৃথিবীটাকে আলোকিত করে তুলবে? তেমন অনন্ত ও নিরবচ্ছিন্ন শান্তি হয়তো পৃথিবীতে কখনও আসবে না। এর জন্য আমি সংশয়বাদিতার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারি। কিন্তু এটাই বোধ হয় প্রাকৃতিক নিয়ম। তা না হলে মানবপ্রগতি স্তব্ধ হয়ে যেত।
টমাস পেইনের উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করেছিলাম। তার জন্ম হয়েছিল ইংল্যান্ডের থেটফোর্ডে ১৭৩৭ সালে। তার বাবা জাহাজের মাস্তুল বাঁধার রজ্জু পাকানোর কাজ করতেন। স্কুলে সামান্যই লেখাপড়া করতে পেরেছিলেন তিনি। জীবন ধারণের জন্য বেশকিছু চাকরিও করেছেন। সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের চাকরি করাকালীন আবগারি শুল্ক আদায়কারীদের বেতন বৃদ্ধির জন্য বিক্ষোভ করতে গিয়ে তিনি চাকরি হারান। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের অনুরোধে ১৭৭৪ সালে তিনি আমেরিকায় হিজরত করেন। ১৭৭৬ সাল থেকে তিনি অসবত্রপধহ ঈত্রংরং সিরিজের ১৩টি প্রচারপত্র রচনা করতে শুরু করেন। তার সবচেয়ে প্রভাবশালী রচনাটি হলো ঈড়সসড়হ ঝবহংব. ঈড়সসড়হ ঝবহংব রচনা করে পেইন একজন প্রকৃত বিপ্লবী চিন্তাবিদের মর্যাদা অর্জন করেন। তাকে আমেরিকান বিপ্লবের সবচেয়ে সাহসী রাজনৈতিক তাত্ত্বিক বলা হয়। ১৭৮৭ সালে পেইন ইউরোপে প্রত্যাবর্তন করে বিপ্লবী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ইংল্যান্ডে তার লেখা বইগুলো প্রকাশ্যে ফাঁসি কার্যকরকারীদের দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। পেইন ফ্রান্সে পালিয়ে যান। সেখানে ফরাসি সংবিধানের খসড়া রচনায় অংশগ্রহণ করেন এবং রাজার মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করেন। সেখানে এক বছর কারাযন্ত্রণা ভোগ করেন এবং অল্পের জন্য মৃত্যুদণ্ড থেকে বেঁচে যান। ১৮০২ সালে তিনি আমেরিকায় ফিরে আসেন এবং নিউইয়র্ক রাজ্যে বসবাস শুরু করেন। তার জীবনের শেষ দিনগুলো ছিল দারিদ্র্য ও ব্যাধিতে জর্জরিত। চরমপন্থার জন্য তিনি নিন্দিতও হয়েছিলেন। টমাস পেইন ১৮০৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। আজীবন সংগ্রামী এই মানুষটি বুদ্ধিবৃত্তি এবং রাজনৈতিক লড়াই ও সংগ্রামে অবদানের জন্য প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি শুধু অনলবর্ষী কলমে লিখে যাননি, তিনি ১৭৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন সৈনিক হিসেবেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি রাইফেল ও কলম দিয়ে সমানতালে যুদ্ধ করেছেন। ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত বিরল।
বাংলাদেশে এখন বড় দুঃসময়। সাংবাদিক নির্মল সেন ’৭২-৭৫ পর্বে স্বভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চেয়ে তার বিখ্যাত কলামটি লিখেছিলেন। তা আজও নানাভাবে উচ্চারিত হয়। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ অনেকের ভাগ্যেই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি জোটেনি। ১৯৭১-এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল গণতন্ত্র ও সুষম অর্থনৈতিক বণ্টনের স্বপ্ন নিয়ে। সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে। একটি সভ্য দেশে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার অনেক কিছুই থাকতে পারে। তবে ন্যূনতম চাহিদাটি হলো জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা। রাষ্ট্র সব ক্ষেত্রে সবার জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে, এমনটি ভাবা অলীক কল্পনা হবে। কিন্তু মানুষ যা চায় তা হলো, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্রের নিখাদ আন্তরিকতা। রাষ্ট্রের আচার-আচরণে বেশিরভাগ মানুষ যদি ভাবতে শুরু করে এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের কোথাও শৈথিল্য আছে, তাহলে বুঝতে হবে আমরা বড় রকমের বিপদের মধ্যে আছি। পেটে ভাত না জুটলেও যদি মন খুলে বলতে পারি আমি অভুক্ত, তাহলেও ক্ষুধার কষ্ট কিছু ভোলা যায়। স্বাধীন দেশে ৪১ বছর পর এই কষ্ট ভুলে থাকার মতো একটি পরিবেশ চাই। এ কেমন স্বাধীন দেশ! যে দেশের স্বাধীনতা দিবসে জনপ্রিয় বিরোধীদলীয় নেতাকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বাধার সম্মুখীন হতে হয়? তার যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে নামগোত্রহীন বিপুল জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতার আনন্দ ভোগ করার স্বাধীনতা কতটুকু আছে সে প্রশ্ন তোলা অবান্তর হবে না। একইভাবে ‘গণতন্ত্রে’র এই দেশে পুস্তক প্রকাশনার মতো নির্দোষ অনুষ্ঠানও বাতিল হয়ে যায়। অজুহাত নিরাপত্তার, অজুহাত গোয়েন্দা তথ্যের। দুর্ভেধ্য নিরাপত্তা ব্যূহ এবং সর্বাধিক সাবধানতাও অনেক সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। তাই যদি হতো তাহলে জন এফ কেনেডি, আব্রাহাম লিঙ্কনসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪ জন প্রেসিডেন্ট নিহত হতেন না। প্রয়াত জননেতা আতাউর রহমান খান তার ওজারতির দুই বছর গ্রন্থে বিভ্রান্তিকর গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কে হাস্যরসাত্মক ভাষায় বর্ণনা করেছেন। তাই গোয়েন্দা তথ্যকে রাজনৈতিক আচরণাদির সঙ্গে মিলিয়ে বিবেচনা করতে হবে। এগুলোকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করার যৌক্তিকতা নেই। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সবচাইতে মূল্যবান সম্পদটি হলো পারস্পরিক আস্থা। এই আস্থা দলের সঙ্গে দলের, এক মতের সঙ্গে অন্য মতের, এক ব্যক্তির সঙ্গে অন্য ব্যক্তির। আস্থার ঘাটতি যখন ঘটে তখন ছায়াকেও শত্রু মনে হয়। বাংলাদেশের সঙ্কটের একটি প্রধান উত্স হলো আস্থাহীনতা। সবাই যখন নির্বিবাদে মত প্রকাশ করতে পারবে, নির্দ্বিধায় চলাফেরা করতে পারবে এবং প্রত্যেকে অপরের মতটিকে শ্রদ্ধা করবে—কেবল তখনই এই আস্থার সঙ্কট কেটে যাবে। মত প্রকাশের টুঁটি চেপে ধরা কখনোই মঙ্গল বয়ে আনতে পারবে না। অবসান ঘটাতে হবে নিপীড়ন, নির্যাতন ও ভীতি উদ্রেককারী শাসনপদ্ধতির।
লেখক : অর্থনীতিবিদ
mahbub.ullah@yahoo.com
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ছাত্রলীগ নেতার রাজকীয় বিয়ে



মানব জমিন, শনিবার, ৩১ মার্চ ২০১২
স্টাফ রিপোর্টার, ফরিদপুর থেকে: ১৫ হাজার লোকের ভুরিভোজ। বাহারি আয়োজন। বাবুর্চি আনা হয়েছে ঢাকা থেকে। ২শ’ খাশি। ৭ হাজার মুরগি। মেনুতে আছে বাশমতি চালের কাচ্চি বিরিয়ানি। মুরগির রোস্ট। টিকিয়া। ইলিশ, রুই আর চিংড়ি। সবশেষে জর্দা ও দই। খাদেমদারিতে ৩শ’ স্বেচ্ছাসেবকের ছুটোছুটি। শাহজাদার বেশে বর এসেছে হেলিকপ্টারে। একটি নয়, কপ্টার ছিল দু’টি। কন্যা চড়েছে প্রাডোতে। বরকে বরণ করতে সাজসজ্জা শহরজুড়ে। ২০টি তোরণ। অর্ধটন তাজা ফুল। বর-কনের ছবি সংবলিত বিশেষ টি-শার্ট বিলি করা হয়েছে সবার মাঝে। কনের জন্য অর্ধকোটি টাকার গহনা। রাজকীয় বিয়ের এ অনুষ্ঠান হলো গতকাল ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কদমতলী গ্রামে। বর ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংসদ উপনেতার সাবেক এপিএস জামাল হোসেন মিয়া। কনে রাজধানী শহরের কল্যাণপুর এলাকার এক ব্যবসায়ীর কন্যা। ছাত্রলীগ নেতার ওই রাজকীয় বিয়ে নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে ফরিদপুরে। ফরিদপুরে নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামে নিজ বাড়িতে গতকাল শুক্রবার দু’টি হেলিকপ্টার নিয়ে রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠান করলেন জামাল হোসেন মিয়া।
দুপুর ১টায় রাজকীয় সাজে সজ্জিত হয়ে নববধূকে নিয়ে ঢাকা থেকে নিজ বাড়ীর পাশে কদমতলী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসেন বর ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক। হেলিকপ্টার থেকে নেমে ফুলে ফুলে সাজানো প্রাডো ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িতে নববধূকে নিয়ে উপস্থিত হাজার হাজার উৎসুক মানুষকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি। এ সময় গ্রামবাসী ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে নব দম্পতিকে স্বাগত জানান। নবদম্পতির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন খ্যাতিমান চিত্রনায়ক রিয়াজ, সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জুয়েল, সংসদ উপনেতার বর্তমান এপিএসসহ নগরকান্দা উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানবৃন্দ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। ফরিদপুরের ইতিহাসে হেলিকপ্টার নিয়ে প্রথম রাজকীয় এ বিয়ে নিয়ে চলছে সর্বত্র আলোচনা। বিয়েতে নববধূকে শতাধিক ভরি স্বর্ণসহ নানা ধরনের অলঙ্কার ও পোশাকে সাজানো হয়।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

‘টিপাইমুখ নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে মিথ্যাচার করছে’



স্টাফ রিপোর্টার: টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ করেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য অতিশয় হুমকি এ বাঁধ নির্মাণ নিয়ে সরকার লুকোচুরি করছে। কারণ, এ বাঁধ নির্মাণে সরকার কদিকে ভারতকে মৌন সম্মতি দিচ্ছে, অন্যদিকে বলছে টিপাইমুখ বাঁধে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হলে বাধা দেয়া হবে, যা স্ববিরোধী এবং জনগণের সঙ্গে মিথ্যাচার। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও জাতীয় নদী  রক্ষা আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে টিপাইমুখ ড্যাম বিষয়ে যৌথ সমীক্ষা কমিটিতে পানি, নদী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে এক নাগরিক সমাবেশ তিনি এসব কথা বলেন। সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আবদুল মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, স্থপতি ইকবাল হাবিব, আলমগীর কবির, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাপা’র নির্বাহী সদস্য ড. মাহবুব হোসেন প্রমুখ। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা টিপাইমুখ বাঁধের পক্ষে না বিপক্ষে জনগণের সামনে তা স্পষ্ট করুন।’ তিনি বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের যৌথ সমীক্ষা দলের পক্ষ থেকে যে কয়েকজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তারা শুরু থেকেই টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের পক্ষেই সাফাই গেয়ে আসছেন। নিরপেক্ষ প্রতিনিধি দল ছাড়া টিপাইমুখের সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে না দাবি করে তিনি বলেন, ‘যৌথ সমীক্ষা কমিটিতে পানি, নদী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সিলেট জনসভায় বলেছেন, টিপাইমুখ ড্যাম নির্মাণে দেশের ক্ষতি হলে বাংলাদেশ মানবে না। অথচ ভারতীয় পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশের মৌন সম্মতির বিষয়টি প্রকাশ পেলেও সরকার কোন প্রতিবাদ করেনি। এ প্রেক্ষাপটে সমীক্ষা প্রক্রিয়াটি তৃতীয় দেশের কোন নিরপেক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে করানোর দাবি জানান তিনি। অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারাও এ বাঁধের বিষয়ে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন। তারা বলেন, টিপাইমুখ ড্যাম নিয়ে সরকার আগে থেকেই অবহেলা করেছে। যেমন একান্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে টিপাইমুখ বাঁধের যৌথ প্রতিনিধি দল গঠনের মধ্য দিয়ে সরকার এই ‘সিরিয়াস’ বিষয়টিতে তাদের নির্মোহ পরিবেশ, দেশ ও জনগণের স্বার্থপন্থি অবস্থানকে প্রথমেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তারা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে জনগণ এখন হতাশ হয়ে পড়েছে। সরকারের ওপর মানুষ আস্থা হারাচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে মানুষের আস্থার দিকটি বিবেচনা নিয়ে অনভিজ্ঞ সদস্যদের বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি শক্তিশালী বাংলাদেশী টিম যৌথ সমীক্ষা দলে নিশ্চিত করতে হবে।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ফেসবুকে কটূক্তি : কুবি ছাত্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা



চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ফেসবুকে কটূক্তির ঘটনায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরিফুজ্জামানের বিরুদ্ধে গতকাল রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র আরিফুজ্জামান ২ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কটূক্তি এবং জাতি আরও একটি ১৫ আগস্ট চায়। এ মর্মে বিভ্রান্তিকর তথ্য ফেসবুকে ছাড়ে। এতে ওইদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে আরিফুজ্জামানকে গ্রেফতার ও তার বিরুদ্ধে বিচার দাবি করেন। এ সময় পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। গতকাল কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে আরিফুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে একটি মামলা করে। মামলা নং ৫৯, ধারা ১২৪ (ক)। আরিফুজ্জামান কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার নাথের পেটুয়া ইউনিয়নের ডকমুড়ি গ্রামের আবদুল মমিনের ছেলে। তার রোল ৪২।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

টাইমস অব আসামের প্রতিবেদন : বিদ্যুত্ সঙ্কটের কারণে গণঅভ্যুত্থান হতে পারে বাংলাদেশে



বার্তা২৪ডেস্ক
বাংলাদেশে কমপক্ষে দুটি গোয়েন্দা সংস্থা দেশটির ক্ষমতাসীন দলকে গণঅভ্যুত্থানের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। শুধু বিদ্যুত্ সঙ্কটের কারণেই ঘটতে পারে এ গণঅভ্যুত্থান। ভারতের আসামের দৈনিক টাইমস অব আসাম-এ গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
‘বাংলাদেশ রুলিং পার্টি ফেইলস ইন রিসলভিং ইলেকট্রিসিটি ক্রাইসিস’ শিরোনামে শুক্রবার প্রকাশিত সংবাদটিতে বলা হয়, বিদ্যুত্ সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশের জনজীবন বিপর্যস্ত প্রায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এ সঙ্কট শুধু জনগণের জীবন বিপর্যস্ত করছে না, দেশটির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডও ভেঙে দিচ্ছে। বিদ্যুত্ সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একটি বা অনেকগুলো গণঅভ্যুত্থানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি। চলমান বিদ্যুত্ সঙ্কট থেকে উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না।’
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘বিদ্যুত্ সঙ্কটকে ইস্যু করে দেশটির বিরোধী দল সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করতে পারে এবং নিঃসন্দেহে এতে বিপুল জনসমর্থন পাবে। বিরোধী দলকে সেই জনগোষ্ঠী সমর্থন করবে, যারা ইতোমধ্যে সরকারের আচরণ নিয়ে হতাশ ও বিরক্ত।’
ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘বিদ্যুত্ সঙ্কটের করুণ দশা দেখে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই -ইলাহী চৌধুরী ইতোমধ্যে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন। কোনো গণমাধ্যমের মুখোমুখিও হচ্ছেন না তিনি। নিজের ক্রমাগত ব্যর্থতা অনুধাবন করে বেশ মুষড়ে পড়েছেন তিনি। দেশের রাজনীতিতে এ ঘটনা বিশেষ প্রভাব ফেলবে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এদিকে ক্ষমতাসীন দলকে কোণঠাসা করতে বিরোধী দল বিএনপি বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েই চলেছে। অন্য বিরোধী দলগুলো দেশব্যাপী সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন।’
টাইমস অব আসাম লিখেছে, ‘বিদ্যুত্ সমস্যা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ব্যর্থতা ও জনগণের অর্থ লুট করে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের নাম করে যে ছলনা করে যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে জনগণকে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল চলমান নানা সঙ্কট ও অসুবিধা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করতে পারে দেশটির ভুক্তভোগী জনগণকে দিয়ে। সেক্ষেত্রে বিএনপি অর্থায়নও করতে পারে এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্দোলনের জন্য এর চেয়ে উত্তম পন্থা বিরোধী দলের কাছে নেই। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্ষমতাসীন দলকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারবে বিএনপি।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে এখন প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা বিদ্যুত্ থাকে না। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও শোচনীয়। সেখানে বেশিরভাগ সময়, অর্থাত্ ১৮-২০ ঘণ্টা বিদ্যুত্ থাকে না। যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২০১২ সাল নাগাদ বিদ্যুত্ সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু বিদ্যুত্ সরবরাহের অবস্থা খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে।’
পত্রিকাটি লিখেছে, ‘ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের উত্পাদন শিল্পে আঘাত হেনেছে বিদ্যুত্ সঙ্কট। এবং সবক্ষেত্রে জেনারেটর ও আইপিএসের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। ড্রাইসেলের মাধ্যমে জেনারেটর চলে, এটি শুধু শব্দই উত্পাদন করে না— ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণও করে, যা মানবদেহের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর।’
টাইমস অব আসাম লিখেছে, ‘বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে কয়েক ডজন বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যারা কি-না এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। অথচ ২০১১ সালের আগস্ট মাসে নেয়া এই পরিকল্পনাগুলোও ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহলেও এই পন্থা বেশ সমালোচিত হয়েছে। অনেকেই বলেছেন, এটাকে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের অর্থ আয়ের উপায় বলা যেতে পারে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে দেশটির সরকার ক্র্যাশ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। লক্ষ্য ছিল একটি— বিদ্যুত্ উত্পাদনকারী প্লান্ট স্থাপন করা। প্রতি বছর যেটি ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ ঘাটতি পূরণ করবে। শুধু তা-ই নয়, ৩৩টি বিদ্যুত্ প্লান্ট স্থাপনের জন্যও বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সে চুক্তির আওতায় বেসরকারি কোম্পানিগুলোর উত্পাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুত্ সরকার নয় দশমিক ৭৫ টাকা থেকে ২২ টাকা হারে কিনে নেবে।’
টাইমস অব আসাম লিখেছে, বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে, চলমান বিদ্যুত্ সমস্যার সমাধানের জন্যই এসব পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এসব প্রজেক্টের কারণে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। এসব প্রজেক্টের কারণে মেঘনা ঘাট থেকে ১০০ মেগাওয়াট, খুলনা থেকে ১১৫ মেগাওয়াট, ঘোড়াশাল থেকে ৭৮ দশমিক ৫ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জে (গ্যাসচালিত) ৮০ মেগাওয়াট, কেরানীগঞ্জ থেকে ১০০ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ ৫৩ মেগাওয়াট, নোয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট, আমনুরা ৫০ মেগাওয়াট, জুলধা ১০০ মেগাওয়াট, সিদ্ধিরগঞ্জ ১০০ ও কাটাখালী ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করতে পারছে। বিদ্যুত্ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্রজেক্টের মাধ্যমে বিদ্যুত্ উত্পাদনের গতি ত্বরান্বিত হয়েছে। এটি দেশের সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কিন্তু এ ধরনের তড়িত্ বিদ্যুত্ উত্পাদনের বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না দেশটির বিশেষজ্ঞরা। বেশিরভাগ প্রকল্পেই পুরনো সেকেন্ড হ্যান্ড যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়ার বদলে সমস্যাই বেশি হবে। তারা যুক্তি দেখান যে, এসব প্রকল্প স্থাপন না করে সরকার বরং পুরনো প্রকল্পগুলোর অবস্থার উন্নয়ন করতে পারে। কিছু কাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে বদলে যেতে পারে চিত্রটি।’
টাইমস অব আসাম লিখেছে, ‘প্রতি মাসে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের নামে সরকারি কোষাগার থেকে লুট করে নেয়া হচ্ছে কয়েকশ’ মিলিয়ন ডলার। লুট করা অর্থের ঘাটতি পূরণ করতে সরকার বার বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। বলা যায়, বিদ্যুত্ সঙ্কট সমাধানের নামে জনগণের অর্থ কেড়ে নিচ্ছে সরকার। শুধু অবাধে অর্থ লুটে নেয়াই নয়, দেশের বাইরেও পাচার হয়ে যাচ্ছে এসব অবৈধ অর্থ।’
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

যুদ্ধ করে খালেদাকে দেশ থেকে তাড়াব : হানিফ : খালেদা জিয়ার অপকর্মের বিচার হবে : কামরুল




জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হুশিয়ার করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘আপনি দেশ ও জাতির অনেক ক্ষতি করেছেন, আর ক্ষতি করবেন না। যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করুন। নয়তো যুদ্ধ করে আপনাকে দেশের বাইরে পাঠাতে বাধ্য হব। ৩০ বছর লড়াই করেছি। প্রয়োজনে আরও
৩০ বছর লড়াই করব।’
গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদ মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ আয়োজিত ‘স্বাধীনতা : বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ আয়োজিত অপর এক অনুষ্ঠানে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম খালেদা জিয়াকে ছাড় না দিয়ে ‘অপকর্মের দায়ে’ বিচারের মুখোমুখি করার হুমকি দিয়েছেন। একই সময় প্রেস ক্লাবের সামনে দেশনেত্রী পরিষদের চলা মানববন্ধন কামরুল ইসলামের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া আওয়ামী লীগ কর্মীরা হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দেয়। এ অনুষ্ঠানে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক প্রধান অতিথি ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শাহ-ই-আলম। সেমিনারে দেয়া বক্তৃতায় আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে রাষ্ট্রের ফরজ কাজ হলো যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যকর করা। এটাকে নফল বলার সুযোগ নেই। যে কোনো ধর্মাবলম্বী কেউ মারা গেলে মৃত ব্যক্তির পক্ষ হয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়। বান্দার হক আল্লাহ ক্ষমা করে না। যুদ্ধাপরাধীরা অগণিত মানুষের হক নষ্ট করেছে।’ যারা আজ যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজ বাধাগ্রস্ত করতে চায় তারা ধর্মীয় অনুশাসনও মানে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেমিনারে মাহবুব উল আলম হানিফ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘আমি আপনাকে অনেক শ্রদ্ধা করি। আপনি অনেক শিক্ষিত। কিন্তু যখন পদের জন্য মিথ্যা কথা বলেন তখন আপনার শিক্ষার প্রতি আমার লজ্জা হয়।’ ‘তারেককে মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ’—মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আপনারা বলছেন তারেককে আমরা মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছি। তার কোনো মামলা আমরা প্রমাণ করতে পারিনি। এর চেয়ে মিথ্যা আর কী হতে পারে?’
হানিফ খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি কথায় কথায় বলেন ক্ষমতায় গেলে সরকারকে ল্যাংড়া-লুলা করবেন। কিন্তু আপনি পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার সময় দেশকে লুলা করেছিলেন, নেতাকর্মীদের সার্টিফিকেট ছাড়াই চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের মাধ্যমে পুরো দেশকে ল্যাংড়া-লুলা করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার জানতে ইচ্ছা হয় কেন এ প্রতিহিংসা। জাতির ওপর আর কিভাবে প্রতিশোধ নেবেন আপনি। তাহলে কি আমরা ধরবো পাকিস্তানের টাকা নিয়ে নির্বাচন করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করছেন। যাদের কাছ থেকে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি তাদের টাকা দিয়ে নির্বাচন করছেন এরচেয়ে বড় লজ্জার কি হতে পারে।’
বিরোধী দল অসত্য কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘তারা বলে আমরা নাকি তাদের নির্যাতন করছি। কিন্তু তাদের পাঁচ বছরের কথা আলোচনা করলে জনগণের জীবন শিউরে ওঠে। হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা, নারীদের নির্যাতন এবং পাঁচ লাখ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুরো দেশকে কারাগারে রূপান্তর করা হয়। একদিকে জঙ্গিদের উত্থান অন্যদিকে নির্যাতন চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা হয়।’
১০ ট্রাক অস্ত্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের সময় এই বিশাল অস্ত্র ধরার কথা জনগণ জানে। কিন্তু আরও শত শত ট্রাক অস্ত্র পাচার করেছে। জঙ্গিদের অস্ত্র দিয়েছে। দেশকে লুটপাট করেছে।’
জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে বাধা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা আপনি, এর আগে দু’বার ক্ষমতায় ছিলেন। রাষ্ট্রের আচার জানার কথা। কিন্তু আপনি রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদনের ২০ মিনিট আগেই রওনা দেন। এটা কী ধরনের আচরণ। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আপনাকে তো বাধা দেবেই। আপনি সেদিন আগেভাগে গিয়েছিলেন শহীদদের অবমাননা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। সেদিন স্মৃতিসৌধে আপনার ছেলেদের হাতে ফুল থাকার কথা ছিল। কিন্তু তাদের হাতে ছিল লাঠিসোটা।’
হানিফ বলেন, ‘আর মিথ্যাচার করবেন না। বহু মিথ্যাচার করেছেন। ১২ মার্চ মহাসমাবেশ করে ঢাকাকে তাহরির স্কয়ার বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ আপনাদের সে চেষ্টা সফল হতে দেয়নি।’
আন্দোলন সংগ্রাম করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানো যাবে না বলে বিরোধী দলকে হুশিয়ার করে দেন তিনি।
সেমিনারে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘একাত্তরের ঘাতকদের প্রতিষ্ঠিত দলই যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজ বাধাগ্রস্ত করছে। বেগম জিয়া যা করছেন, যথার্থই করছেন। সাম্প্রদায়িক দল থেকে যে দলের সৃষ্টি, সেই দলের নেতার কাছে এর চেয়ে আর কী আশা করা যায়।’
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বিরোধী দলের মানববন্ধনে আওয়ামী সমর্থকদের হামলা : পঙ্গু গণতন্ত্রকে হত্যায় সচেষ্ট আ.লীগ : ফারুক




সরকার সমর্থিত বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের হামলা ও ভাংচুরে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করতে পারেনি বিএনপি সমর্থিত দেশনেত্রী পরিষদ নামে একটি সংগঠন। পুলিশের সামনেই প্রজন্ম লীগের উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা মাইক ও রিকশা ভাংচুর করে দেশনেত্রী পরিষদের কর্মীদের তাড়িয়ে দেয়। হামলায় দেশনেত্রী পরিষদের কর্মী শহিদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন ও বৃদ্ধ এক রিকশাচালক আহত হন।
দেশনেত্রী পরিষদের মানববন্ধনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক প্রধান অতিথি ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করার কথা ছিল। তারা প্রেস ক্লাব থেকে মানববন্ধনে যোগ দিতে আসার আগেই সরকার সমর্থকদের হামলায় মানববন্ধন পণ্ড হয়ে যায়। পরে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের মানববন্ধনে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও এমপি গোলাম মাওলা রনি বক্তৃতা করেন।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযোগ গঠনের প্রতিবাদে দেশনেত্রী পরিষদ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের মানববন্ধনে দাবি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।
এদিকে মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনাকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দৃষ্টান্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে গণতন্ত্র পঙ্গু করে ফেলেছে। এখন গণতন্ত্র হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেশনেত্রী পরিষদের নেতাকর্মীরা প্রেস ক্লাবের গেট সংলগ্ন সড়কের পূর্বদিকে ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ায়। আর পশ্চিম দিকে দাঁড়ায় বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ ও সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা। পৌনে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের একটি মিছিল এসেই দেশনেত্রী পরিষদের মানববন্ধনের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। তখন ওই মানববন্ধনে মাইকে বক্তৃতা করছিলেন তাঁতী দলের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু। দুই মানববন্ধনের মধ্যে পুলিশ অবস্থান নিলে পেছনের সারিতে দাঁড়িয়েই মিন্টু বক্তৃতা চালিয়ে যান। ‘৭২ থেকে ‘৭৫ আওয়ামী
লীগের দুঃশাসন এবং বর্তমান সরকারের শেয়ারবাজার লুটপাট ও মামলা-হামলা পরিস্থিতি নিয়ে বক্তৃতা চালিয়ে যান তিনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু লীগের উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা। ‘রাজাকার’ ও ‘জঙ্গি’ গালি দিয়ে দেশনেত্রী পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলে পড়ে তারা। দেশনেত্রী পরিষদ কর্মীদের ধাক্কা, মারধর করে মাইক ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। রিকশায় লাগানো ভাড়া করা মাইক দুটি ভাংচুরের পাশাপাশি বৃদ্ধ রিকশাচালকের ওপরও চড়াও হয় তারা। তাদের হামলায় দেশনেত্রী পরিষদের দুই কর্মী ও রিকশাচালক আহত হন।
হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও কিছু পুলিশ সদস্য দেশনেত্রী পরিষদের কর্মীদের সরিয়ে দেয়। দেশনেত্রী পরিষদের কিছু কর্মী হামলার শুরুতেই প্রেস ক্লাবের ভেতরে আশ্রয় নেন। পরে অন্যরাও ভেতরে চলে যান। এরপর মানববন্ধনের প্রধান অতিথি বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক ও বিএনপির স্বনির্ভর সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রেস ক্লাবের গেটে আসেন। সরকার সমর্থকদের হামলার নিন্দা জানিয়ে তারা প্রেস ক্লাব ত্যাগ করেন।
মানববন্ধন পণ্ড হওয়ার পর দেশনেত্রী পরিষদের সভাপতি শহীদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় অভিযোগ গঠনের প্রতিবাদে আমাদের এ মানববন্ধন ছিল পূর্বঘোষিত। সকাল সাড়ে ১০টায় আমরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করতে জমায়েত হই। পরে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের নেতাকর্মীরা হঠাত্ আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাদের ব্যানার কেড়ে নিয়ে যান। মাইক কেড়ে নিয়ে ভাংচুর করে। তাদের মারধরে আমাদের ১০/১২ জন কর্মী আহত হন।
তবে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের উপদেষ্টা গোলাম মাওলা রনি এমপি বলেন, ‘কোনো মারামারি বা হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি। এটা দেশনেত্রী পরিষদের নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’ ঘটনাস্থলে শাহবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোজাফফরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কি করবো। হঠাত্ প্রজন্ম লীগের কর্মীরা এসে দেশনেত্রী পরিষদের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাইক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ওই মুহূর্তে আমাদের করার কিছুই ছিল না।’
গণতন্ত্র হত্যায় সচেষ্ট আ.লীগ—ফারুক : বিকালে ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনে জিয়া নাগরিক সংসদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র পঙ্গু করেছে। এখন পঙ্গু গণতন্ত্রকে হত্যায় সচেষ্ট দলটি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দেশনেত্রী পরিষদের মানববন্ধনে হামলার ঘটনাকে তিনি পূর্বপরিকল্পিত গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেন।
বিকালের আলোচনা সভাটিও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় চার্জ গঠনের প্রতিবাদে আয়োজন করা হয়।
জিয়া নাগরিক সংসদের সভাপতি মাইনুদ্দিন মজুমদারের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন বিএনপির স্বনির্ভর সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর আমির হামিদুর রহমান আযাদ, বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, জাসাসের যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ।


বৃহস্পতিবার, ২৯ মার্চ, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

কৃতজ্ঞতা নিতে এসে কী দেখে গেলেন বিদেশীরা



॥ সিরাজুর রহমান ॥

মাঝে মধ্যে সন্দেহ হয়, শেখ হাসিনা কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী। উপমাটা সবচেয়ে ভালো হয় ব্রিটিশ আমলের, বিশেষ করে গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকের শেষার্ধ থেকে সাতচলিস্নশ পর্যনৱ সময়ের শ্বেতাঙ্গ লাট সাহেবদের সাথে। যেকোনো মূল্যে ঔপনিবেশিক শাসন বজায় রাখতে হবে; কোনো প্রতিবাদ বা সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে না, পুসৱক প্রকাশ কিংবা মতামত ব্যক্ত করাও অবৈধ হবে। প্রয়োজনবোধে পুলিশ, ভাড়াটে গুণ্ডা বাহিনী এবং সামরিক-বেসামরিক গোয়েন্দা বাহিনীকেও লেলিয়ে দেয়া হবে সমালোচক ও রাজনৈতিক বিরোধী নেতাদের বিরম্নদ্ধে।

শেখ হাসিনা বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের ৰতি করবে না বলে ভারত আশ্বাস দিয়েছে, ৰতি যদি হয়ই তখন দেখা যাবে। বাংলাদেশের মানুষ বিগত ৫০ বছর ধরে দেখছে অভিন্ন নদীগুলোতে বাঁধ তৈরি করে ভারত বাংলাদেশকে শুকিয়ে মারার সব চেষ্টা করেছে। তারা দেখছে শুকনো মওসুমে পদ্মা শুকিয়ে যাচ্ছে, নদীর তলায় পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বর্ষা এলে নদীর পাড় ভেঙে হাজার হাজার একর জমি তলিয়ে যায় প্রতি বছর। বন্যা দূর থেকে আরো দূরে ছড়িয়ে পড়ছে, নদীমোহনা শুকিয়ে যাচ্ছে বলে বন্যার পানি নেমে যেতে বেশি দেরি হচ্ছে। বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল মরম্নভূমি হওয়ার অবস'ায় আছে এখন।

হাসিনার বাবা ফারাক্কা বাঁধ চালু করার অনুমতি দিয়েছিলেন পরীৰামূলকভাবে, মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য। সে দুই সপ্তাহ আর শেষ হলো না। হাসিনা নিজে পানিবণ্টন চুক্তি করেছিলেন। সে চুক্তিকে কানাকড়ি মূল্য দেয়নি অন্যপৰ, এক বছরও চুক্তি অনুযায়ী পানি পায়নি বাংলাদেশ । গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে তিসৱা নদীও শুকিয়ে মারছে ভারত। প্রধানমন্ত্রীর ভারতীয় মুরব্বিরা বলেছিলেন মনমোহন সিং গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় তিসৱার পানিবণ্টন চুক্তি করবেন। সে চুক্তি না করেই তিনি দেশে ফিরে গেলেন। তারপর থেকে প্রায়ই বলা হচ্ছে- সে চুক্তি এই আসে, এই হবে। এ দিকে বাংলাদেশের কত বড় ৰতি হচ্ছে, সে হিসাব কে রাখে?

কী প্রতিকার করেছেন বা করতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী? তিন বছর ধরে ভারত হাইকোর্ট দেখাচ্ছে টিপাইমুখের ব্যাপারে। এ দিকে সুরমা, কুশিয়ারা ও মেঘনার ওপর যারা নির্ভরশীল তারা বিভীষিকা দেখছেন চোখের সামনে। উত্তর-পূর্ব ভারতের ৫২ নদীর মধ্যে সংযোগ খাল তৈরি করে মধ্য ভারতের ঊষর মরম্নতে ফসল ফলাবে ভারত আর বাংলাদেশের পূর্বাংশও পশ্চিমাংশের মতো মরম্নভূমি হয়ে যাবে, পদ্মার ইলিশের মতো মেঘনার ইলিশও বিদায় নেবে। দুই তিন বছরের মধ্যেই টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ শেষ হয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষের ভয়ভীতি সত্য প্রমাণিত হলে কী করবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী? বিগত নির্বাচনে ‘বসৱা বসৱা টাকা আর পরামর্শ’ তিনি পেয়েছিলেন ভারতের কাছ থেকে। টিপাইমুখ বাঁধ তৈরি শেষ হওয়া পর্যনৱ হাসিনা আর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না, অনৱত বাংলাদেশের মানুষ তাকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য ভোট দেবে না। কিন' ধরে নেয়া যায়, দেশের বাইরে তার স'ানাভাব বা অর্থাভাব হবে না।

টিপাইমুখ বাঁধের ব্যাপারে আরো একবার প্রমাণিত হলো দেশের মানুষের, এমনকি বরেণ্য বিশেষজ্ঞদের মতামতকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আমল দেন না। অন্য দিকে তার অসীম বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা বিদেশীদের ওপর। স্বাধীনতা দিবসে তিনি বিদেশীদের সম্মাননা দেন, এবারেও দিয়েছেন অনেককে। সেটা ভালো কথা। গুণীজনকে শ্রদ্ধা জানানো, যারা উপকার করেছেন তাদের কৃতজ্ঞতা জানানো মহৎ গুণ। কিন' কৃতজ্ঞতা, দয়া-দাৰিণ্য সব কিছুরই সূচনা হওয়া উচিত তৃণমূল সৱরে। ইংরেজিতে বলে, ‘চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম’ অর্থাৎ দাৰিণ্য শুরম্ন হবে ঘর থেকে। এর ব্যতিক্রম হলে বাংলা প্রবাদ অনুযায়ী ‘গাঁয়ের যোগী ভিখ পায় না’।

ঘরের মানুষের কৃতজ্ঞতা কোথায়?
বহু বিদেশী নানাভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দিয়েছেন, সাহায্যও করেছেন কেউ কেউ। সেটা সম্ভব হয়েছে এ কারণে, আমরা যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপৰে বিশ্বজনমত গঠনের জন্য সংগ্রাম করেছি তাদের প্রচেষ্টা অভাবনীয় রকম সফল হয়েছিল বলেই। বাংলাদেশের অজস্র মানুষ নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তাদের সম্মানিত করার আগে বিদেশীদের সম্মান প্রদর্শনের আকুলতাকে বিদেশীরাও কপটতা বলে চিনতে পারে। সাইমন ড্রিং স্বাধীনতা দিবসে ঢাকাতেই বলেছেন, ‘বাঙালিরাও (বাংলাদেশীরা) সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য।’

শেখ হাসিনার সব কাজই পরিচালিত হয় দলীয় বিবেচনা দিয়ে। দুইবার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে অনেক বাংলাদেশীকেও তিনি পুরস্কৃত করেছেন। দেখা গেছে মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ দেয়া হয়েছে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নয়- শেখ হাসিনার ক্যাডারের কলেবর বাড়ানোর প্রয়োজনে। এমন এমন ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়েছে, যারা মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন স্বাধীনতার পরে। যেসব প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা অসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন অথবা অপরিসীম সাফল্য অর্জন করেছেন, শেখ হাসিনার বিবেচনায় তারা পুরস্কৃত হওয়ার যোগ্য নন।

বিদেশীদের মধ্যে ভারতীয়রা অবশ্য মনে করেন, যেহেতু তারা মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাহায্য করেছেন সেহেতু সব সম্মান, এমনকি নতুন স্বাধীন গোটা দেশটাই তাদের প্রাপ্য। অন্যদের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যা করছেন সেটা অশোভন, বিব্রতকর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কে দিয়েছিলেন বহু বিদেশী সেটা জানেন। শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মেজর জিয়াউর রহমানের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা ফরাসি রেডিও ও টেলিভিশনের কল্যাণে অনেকেই শুনেছেন। মেজর জিয়া পরবর্তীকালে জেনারেল ও রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা, সমাজে শানিৱ ও সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং বাংলাদেশের মানুষকে উন্নয়নের কাজে নিয়োজিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট জিয়ার প্রচেষ্টা গোটা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছিল। শহীদ জিয়া, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিজয়ী তিনবারের প্রধানমন্ত্রী জিয়ার বিধবা পত্নী খালেদা এবং তাদের দুই ছেলের বিরম্নদ্ধে শেখ হাসিনার অবিরাম বিষোদ্গার ও নির্যাতন স্বভাবতই তাদের ব্যথিত করে। শেখ হাসিনার সরকারের দেয়া সম্মাননা নিতে তাদের অনেকেই বিব্রত বোধ করেন।

ফ্যাসিবাদের নগ্ন চেহারা
এবারে যারা সম্মাননা নিতে এসেছেন কী দেখেছেন তারা? তারা দেখেছেন স্বাধীনতাকে দলীয়করণ, আত্মীয়করণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা শহীদ স্মৃতিসৱম্ভে শ্রদ্ধা জানাতে গেছেন কিন' হাসিনার চেয়েও বেশি দিন যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং যার স্বামী স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন সেই খালেদা জিয়াকে স্মৃতিসৱম্ভে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে বের হতে বাধা দিয়েছে, তার অনুসারীদের স্মৃতিসৱম্ভে যেতে পদে পদে বাধা দেয়া হয়েছে। বিদেশীরা স্বদেশে বসেও শেখ হাসিনা সরকারের ফ্যাসিবাদী নির্যাতন-নিপীড়নের খবর পান। স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশে এসে তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ দেখলেন তারা, তারা দেখলেন শাসকদলের গুণ্ডারা বিরোধী দলের সমর্থকদের মারধর করে তাদের শহীদ স্মৃতিসৱম্ভে যেতে বাধা দিয়েছে।

এখানেই শেষ নয়। পত্রিকা সম্পাদক ও জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস'াপক শফিক রেহমান পাঁচটি পুসৱক প্রকাশ করেছেন। বইগুলোর মোড়ক উন্মোচনের কথা ছিল বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার। প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মারক রচনাও ছিল। প্রথমে সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠানের স'ান ধার্য করা হয়েছিল। কিন' হোটেল কর্তৃপৰ পরে সে বুকিং বাতিল করে। বিকল্প স'ান নির্ধারণ করা হয় রূপসী বাংলা হোটেলে। অনুষ্ঠানের দিন সে হোটেলও বুকিং বাতিল করে। জানা গেছে, একটি সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ (অবশ্যই দলীয়কৃত) উভয় হোটেল কর্তৃপৰকে হুমকি দিয়ে বুকিং বাতিল করতে বাধ্য করে।

শেখ হাসিনার ‘কৃতজ্ঞতা’ নিতে যারা বাংলাদেশে এসেছিলেন তাদের নাকের ডগায় ঘটেছে এই কলঙ্কময় ঘটনাগুলো। তারা স্বচৰে দেখে গেলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য তারা অবদান রেখেছিলেন সে দেশ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র বিরোধী একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পথে কতখানি এগিয়ে গেছে। মনে করার কোনো কারণ নেই, যারা আসেননি কিংবা আসতে চাননি বর্তমান সরকারের নির্যাতননিপীড়ন সম্বন্ধে তারাও অবগত নন।

বাংলাদেশের মানুষ পাকিসৱানিদের সামরিক স্বৈরতন্ত্র, রৰীবাহিনী ও বাকশালী নির্যাতন, এরশাদের সামরিক স্বৈরতন্ত্র- সবই দেখেছেন, বহু অত্যাচারনির্যাতন সহ্য করেছেন। কিন' শেষ পর্যনৱ সে সব এরা অতিক্রম করেছেন। আমাদের কবির মহাবাণী এরা অনৱরে পোষণ করে : ‘ওদের বাঁধন যত শক্ত হবে মোদের বাঁধন টুটবে, বাঁধন টুটবে।’ হিটলারমুসোলিনির ফ্যাসিস্ট শাসন ইতিহাস দেখেছে এবং সে ফ্যাসিবাদের পতনও ইতিহাসের অজানা নয়।
লন্ডন, ২৭.০৩.১২
serajurrahman@btinternet.com
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সরকার দায়িত্ব এড়াতে পারে না


অপহরণ আতঙ্ক

অপহরণ ও গুম নিয়ে বিতর্ক চলছে অনেক দিন ধরে। ক্রসফায়ার-এনকাউন্টার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরম্ন হওয়ায় অপহরণ ও গুমের মধ্য দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যার নতুন প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও সরকার নির্বিকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অপহরণ, হত্যা ও গুম নিয়ে নানা কথা বলছেন। এমনকি এ কথাও বলা হয়েছে- এসব ঘটনার শিকার সন্ত্রাসীরা। সরকারের এই মনোভাব যে কী পরিণতি ডেকে আনতে পারে, তার নমুনা আমরা দেখছি রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এমনকি শিশুদের অপহরণ, হত্যা ও গুমের ব্যাপকতায়।
নয়া দিগনেৱ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে, দেশে অপহরণের ঘটনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কখনো দুর্বৃত্তরা, আবার কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। অপহরণের পর কারো লাশ মিলছে, আবার কেউ কেউ বছরের পর বছর ধরে নিখোঁজ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরম্নদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও উদ্ধার হচ্ছে না অপহৃতরা। তাদের মধ্যে শিশু, ছাত্র, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। কোনো কোনো অপহরণের ক্লু উদ্‌ঘাটন হচ্ছে। আবার কোনো কোনোটি সম্পর্কে কিছুই জানা যাচ্ছে না। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নামে যেসব অপহরণের ঘটনা ঘটছে, সেসব বিষয় নিয়ে মামলা দায়ের হলেও কোনো তদনৱ হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। অপহৃত ব্যক্তিদের উদ্ধারেও কোনো তৎপরতা লৰ করা যায় না।
গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে অপহৃত হন ঝিকরগাছা থানা বিএনপি সভাপতি নাজমুল ইসলাম। পরদিন সকালে তার লাশ পাওয়া যায় গাজীপুরের সালনা এলাকায়। স্বজনেরা ওই রাতেই পুলিশ ও র‌্যাবকে ঘটনাটি জানিয়েছিলেন; কিন' তাকে অৰত উদ্ধারের কোনো ব্যবস'া নেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ রকম ঘটনা অনেক। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো শিশু অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়া।
পঞ্চগড় থেকে সমপ্রতি অপহৃত স্কুলছাত্র জুয়েলের লাশ গত মঙ্গলবার রংপুর ক্যাডেট কলেজসংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়ির ভাড়াটে মুন্না শিশুটিকে অপহরণ করে। রাজধানীর মিরপুর দারম্নসসালাম এলাকার মডেল একাডেমীর দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র সাত বছর বয়সী সিফাত আলী তন্ময় সোমবার নিখোঁজ হওয়ার একদিন পরই তার লাশ পাওয়া যায় তাদেরই বাড়ির ভাড়াটিয়া জহিরম্নল ইসলামের লাগেজ থেকে। অপহরণের পর তন্ময়ের মুক্তিপণ বাবদ জহিরম্নল আট লাখ টাকা দাবি করেছিল তন্ময়ের বাবা হজরত আলীর কাছে।
আমরা অতীতেও বলেছি, বিচারবহির্ভূত হত্যার যেকোনো প্রক্রিয়ার অনুমোদন বন্ধ না হলে তা দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রৰার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে বাধ্য। অপহরণ ও হত্যা ঘটনার বিস-ৃতি সে কথারই সাৰ্য দেয়। সরকার কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সমাবেশে পুলিশের বাধা : ১০ জুনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক না হলে সরকার পতন আন্দোলনের হুশিয়ারি



১২ মার্চ চারদলীয় জোটের ঢাকা চলো কর্মসূচি ও মহাসমাবেশ বানচালে সরকারের ষড়যন্ত্র, পথে পথে বাধা দান, গণপরিবহন বন্ধ করে রাজধানী ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, হামলা-মামলা-গ্রেফতার, ২৬ মার্চে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যেতে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে বাধা দান এবং বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান সরকারের নির্দেশে বন্ধের প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল অনুষ্ঠিত এসব বিক্ষোভ সমাবেশে বিভিন্ন স্থানে বাধা দিয়েছে পুলিশ। বিস্তারিত আমাদের আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে :
খুলনায় বিএনপির প্রতিবাদ : সরকারবিরোধী দলের রাজপথের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে ন্যক্কারজনক পন্থায় পদে পদে বাধাগ্রস্ত করার পর এবার দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমানের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার নামে বানচাল করে স্বাধীন মত প্রকাশের পথ চূড়ান্তভাবে রুদ্ধ করেছে। এভাবে জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে মসনদ টিকিয়ে রাখা যাবে না উল্লেখ করে ১০ জুনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেয়া না হলে ফ্যাসিবাদী সরকার পতনে এক দফার আন্দোলন শুরু হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি নেতারা।
১২ মার্চ চারদলীয় জোটের ঢাকা চলো কর্মসূচি ও মহাসমাবেশ বানচালে সরকারের ষড়যন্ত্র, পথে পথে বাধাদান, গণপরিবহন বন্ধ করে রাজধানী ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, হামলা-মামলা-গ্রেফতার, ২৬ মার্চে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যেতে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে বাধা দান এবং বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান সরকারের নির্দেশে বন্ধের প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির যৌথ প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপি নেতারা ওই সব কথা বলেন। গতকাল বিকালে নগরীর কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি। প্রধান অতিথি ছিলেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই। এতে বক্তৃতা করেন মনিরুজ্জামান মনি, অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা, সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, অধ্যাপক ড. গাজী আবদুল হক, অ্যাডভোকেট স ম বাবর আলী, শেখ মোশারফ হোসেন, কওসার জমাদ্দার, মীর কায়সেদ আলী, অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুর রহমান দীপু, শেখ মোশারফ হোসেন, জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, জলিল খান কালাম, সিরাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ফজলে হালিম লিটন, অ্যাডভোকেট বজলার রহমান, ফখরুল আলম, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, আরিফুজ্জামান অপু, মনিরুজ্জামান মন্টু, শেখ আবদুর রশিদ, আসাদুজ্জামান মুরাদ, সিরাজুল হক নান্নু, এসএম আরিফুর রহমান মিঠু প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিশাল মিছিল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বরিশালে জেলা ও মহানগর বিএনপির বিক্ষোভ : দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখলে বাঁকা পথে চলছে। কারচুপি ও ষড়যন্ত্র করে জয়ের লক্ষ্যে সর্ব মহল স্বীকৃত তত্ত্বাবধায়ক সকরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশের মাটিতে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। জনগণের দাবি আদায়ে কোনো হামলা-মামলা-নির্যাতন জিয়ার সৈনিকদের রুখতে পারবে না। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বরিশালে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন। নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জেলা ও মহানগর বিএনপি পৃথক পৃথকভাবে এ বিক্ষোভ-সমাবেশের আয়োজন করে।
গতকাল দুপুরে মহানগর বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। মহানগর সম্পাদক কামরুল আহসান শাহিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান ফারুক, জিয়াউদ্দিন শিকদার, আলহাজ মন্টু খান, মাহবুবুর রহমান পিন্টু, আফরোজা খানম নাসরিন প্রমুখ। এর আগে একই স্থানে কেন্দ্রীয় মত্স্যবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি আহসান হাবিব কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় জেলা বিএনপির সমাবেশ। এতে বক্তৃতা করেন জেলা বিএনপির সম্পাদক ও সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান নান্টু, অ্যাডভোকেট সাইয়্যেদ আহম্মেদ মধু, হাবিবুর রহমান টিপু, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা মোমেন সিকদার, অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান শামিম, জিএম আতায়ে রাব্বি, জাহাঙ্গীর সিকদার, রুস্তুম আলী মল্লিক, জাহিদুর রহমান রিপন, নুরুল আমিন কয়েস, আমিনুল ইসলাম লিপন, মিজানুর রহমান পলাশ, নাজমুল হাসান সবির, সাইফুল ইসলাম সুজন, মুশফিকুল হাসান মাসুম প্রমুখ। উভয় সমাবেশ শেষে পৃথক পৃথকভাবে দুটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
সিলেটে বিক্ষোভ সমাবেশ : নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগেও গতকাল সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম। এতে বক্তৃতা করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শফি আহমদ চৌধুরী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী, জেলা সহসভাপতি মোজাহিদ আলী, আলহাজ শেখ মো. মকন মিয়া চেয়ারম্যান, তারেক আহমদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন আশুক, আলী আহমদ, মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়ছল, অ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ, আজমল বখত চৌধুরী ফয়েজ, আনহার মিয়া, গৌছ খান, যুবদল নেতা নজিবুর রহমান নজিব, ছাত্রদল নেতা সালাউদ্দিন মামুন, রায়হান আহমদ প্রমুখ।
ধামরাইয়ে পুলিশের ধাওয়া আহত ১০ : ঢাকার ধামরাইয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসূচি হিসেবে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিল শেষে সমাবেশে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ১০ বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের সাভার ও ধামরাইয়ে চিকিত্সা দেয়া হয়েছে।
বিএনপি কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা জেলার বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ ধামরাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি ধামরাই থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক রকিবুর রহমান খান ফরহাদ, যুবদল নেতা আনোয়ার জাহিদ তালুকদার, জালাল আহমেদ, আবদুল হাই, আবদুল কাদের, এনায়েত হোসেন, সিরাজুল ইসলাম, আবদুল মান্নান প্রমুখ। সমাবেশের একপর্যায়ে ধামরাই থানা পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে।
চুয়াডাঙ্গায় পুলিশি বাধা : বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে পুলিশি বাধার মধ্য দিয়ে চুয়াডাঙ্গায়ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সকালে সাড়ে ১১টায় শহরের শহীদ আবুল কাশেম সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের শহীদ হাসান চত্বরে পৌঁছালে পুলিশ মিছিলটিতে বাধা দেয়। বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এ সময় সমাবেশে বক্তৃতা করেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি এম জেনারেল ইসলাম, মজিবুল হক মালিক মজু, শহিদুল ইসলাম রতন, শরীফ-উর-জামান সিজার প্রমুখ।
রাজশাহী জেলা বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিকালে রাজশাহী জেলা বিএনপি নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। বিকাল ৫টার দিকে মিছিল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সাহেববাজারে সমাবেশ করে। সমাবেশে রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল মনির বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ যখন দিশেহারা, তখন সরকার অযৌক্তিকভাবে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
সরকার জনগণকে গ্যাস, বিদ্যুত্ ও পানি দিতেও ব্যর্থ হয়েছে, ফলে তাদের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। তিনি আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতের তাঁবেদার এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি গত ৩০ জানুয়ারি বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর দ্রুত বিচার আইনে মিথ্যা মামলা দেয়া এবং উপজেলা পর্যায়ের ছাত্রদল নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের নিন্দা জানান। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাদের মুক্তির দাবি জানান।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

নগরকান্দার ইউএনও অফিস কিনল আওয়ামী লীগ নেতারা




ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা পরিষদের পুরনো ভবন নিলাম ছাড়াই নামমাত্র মূল্যে কিনে নিলেন আওয়ামী লীগের সাত নেতা। এ ঘটনায় খোদ আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ বিক্ষুব্ধ হলেও দলের চাপে চুপ থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এদিকে পুরনো ভবন ভেঙে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, নগরকান্দা উপজেলার পুরনো ভবন ভেঙে নতুন একটি ভবনের কাজ দ্রুত শুরু হবে। ওই স্থানে ছোট-বড় মিলিয়ে বেশ কয়েকটি ভবন রয়েছে। সম্প্রতি পুরনো এসব ভবন ভাঙার জন্য নিলাম আহ্বানের উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতে বাদ সাধে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মুন্নু মাতব্বর, বাবলু চেয়ারম্যান, মিজান, লিয়াকত, নিয়ামতসহ কয়েকজন নেতা। জানা গেছে, তারা নিলাম ডাকা থেকে বিরত রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। ফলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়ে এবং কোনো প্রকার নিলাম না করে পুরনো কয়েকটি ভবন মাত্র আড়াই লাখ টাকায় কিনে নেন আওয়ামী লীগের সাত নেতা। এদের মধ্যে একজন অন্যদের কাছ থেকে পুরনো ভবনের মালামাল কিনে নেন। এ ঘটনায় নগরকান্দাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েকদফা যোগাযোগ করা হলে তারা কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি। স্থানীয় কয়েক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, যেসব ভবন মাত্র আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে তার দাম কম করে হলেও পনের লাখ টাকা হবে। তাছাড়া সরকারি সম্পত্তি কোনো প্রকার নিলাম ছাড়া কীভাবে বিক্রি করা হলো তা জনসম্মুখে প্রকাশ হওয়া দরকার। স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিলাম ছাড়াই পুরনো ভবনগুলো বিক্রি করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এ ব্যাপারে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম কাদেরের মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এদিকে, ক্রেতা মুন্নু মাতব্বর বলেন, 'আমি ভাই মুরবি্ব মানুষ। এত প্যাঁচগোজ বুঝি না। আমাকে সঙ্গে রেখেছে তাই আমি আছি। এখানে কোনো অন্যায় হয়ে থাকলে আমার কোনো দোষ নেই।'বাংলাদেশ প্রতিদিন ৩০ মার্চ ২০১২ 
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মেজর জিয়ার বিদ্রোহ ঘোষণার সাক্ষী আমি : আলাপচারিতা : মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহসান উল্লাহ



একাত্তরের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে মেজর জিয়ার বিদ্রোহ ঘোষণার বীরত্বপূর্ণ ঘটনা এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন সৈয়দ আহসান উল্লাহর চোখে। তিনি বলেন, এই বিদ্রোহ ঘোষণার মধ্য দিয়েই পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে শুরু হয় বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ সংগ্রাম, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধ। মেজর জিয়া সেদিন ‘বিদ্রোহ ঘোষণা’ করেই দায়িত্ব শেষ করেননি, কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণাটিও দেন। তিনি বাঙালি সৈনিকদের একত্রিত করেন এবং একটি সামরিক পরিকল্পনাও দেন। এই পরিকল্পনাতেই আমরা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। সেদিন আমরা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল জানজুয়াসহ পাকিস্তানি অফিসারদের হত্যা করি এবং বেলুচ রেজিমেন্টকে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অস্ত্রশস্ত্র দেয়া ঠেকিয়ে দিই। সেদিন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শে বেলুচ রেজিমেন্টকে অস্ত্র সরবরাহ ঠেকিয়ে দিতে আমরা সক্ষম হয়েছিলাম। নইলে আমাদের বিপদ আরও বেড়ে যেতো।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন সৈয়দ আহসান উল্লাহর কাছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এখনও তরতাজা হয়ে আছে। দৈনিক আমার দেশ-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় ওইসব ঐতিহাসিক ঘটনাই তুলে ধরেন।
ক্যাপ্টেন আহসান উল্লাহ বলেন, সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী হলেও পাকিস্তানিরা যে ক্ষমতা দেবে না তা নির্বাচনের পর থেকেই বুঝতে পারছিলাম। একাত্তরের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর আমরা মোটামুটিভাবে নিশ্চিত হয়ে যাই, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়তেই হবে। আমরা বাঙালি সৈনিকদের কাছে ৭ মার্চের ভাষণ ছিল একটি ‘গ্রিন সিগন্যাল’। তাছাড়া পাকিস্তানিদের গতিবিধি এবং তাদের আচরণও আমাদের সন্দিগ্ধ করে তোলে। পাকিস্তানিরা আমাদের কৌশলে কীভাবে নিরস্ত্র করবে, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছিল। একইসঙ্গে তারা বাঙালি সৈনিকদের অন্য কাজে ব্যস্ত রাখার কৌশল নিচ্ছিল। ষোলশহর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্যাটালিয়নে বাঙালি অফিসার এবং সৈনিকদেরই প্রাধান্য ছিল। এই ব্যাটালিয়নের পাকিস্তানি কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল জানজুয়া ২৪ মার্চ হঠাত্ করেই আন্তঃকোম্পানি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশ অনুযায়ী ফুটবল, হকি, অ্যাথলেটিক্সসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হলো। ২৪ মার্চ বিকালে আমরা মাঠে খেলাধুলা করছি। এ সময় দেখি, ২৪ বেলুচ রেজিমেন্টের সাঁজোয়া গাড়িসহ পাকিস্তানি সৈন্যরা চট্টগ্রাম রিয়াজ উদ্দিন বাজারের দিকে যাচ্ছে। ষোলশহর সিডিএ মার্কেটে ছিল আমাদের ব্যাটালিয়ন। এ সময় ব্যাটালিয়নের কোয়ার্টার মাস্টার ছিলেন ক্যাপ্টেন অলি। কর্নেল জানজুয়া তাকে অর্ডার দিয়েছে বেলুচ রেজিমেন্টের কাছে যেন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের অস্ত্রশস্ত্র তুলে দেয়া হয়। এর আগে অবশ্য অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে পাকিস্তানের খারিয়ায় বদলি করার আদেশ করানো হয়। আমাকেও সেখানে বদলি করা হয়। যা-ই হোক, আমরা দেখলাম ক্যাপ্টেন অলি অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের অস্ত্র বেলুচ রেজিমেন্টের কাছে হস্তান্তরে বাধ্য হয়েছেন। তখন আমার সঙ্গের বাঙালি সৈনিকরা আমাকে বলল, ওস্তাদ আপনি গোয়েন্দা ইউনিটের লোক। এ তথ্যটি সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর জিয়া স্যারকে জানান। সৈনিকদের কথায় আমি মেজর জিয়ার বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। বাসায় যাওয়ার পথে হঠাত্ মাথায় বুদ্ধি এলো, আগে রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারকে বলে যদি রেললাইনে একটি ব্যারিকেড করানো যায়, সেটা তো কাজে লাগবে। তাই রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের কাছে যাই। তার কানে কানে পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত করে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের অস্ত্রগুলো আটকানোর ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিই। তিনি খুব ভালো লোক ছিলেন। আমার কথায় পুরোপুরি একমত হলেন। তত্ক্ষণাত্ তিনি একটি রেলওয়ে কার পাঠিয়ে ট্রেনের অনেকগুলো বগি দিয়ে রেলগেট আটকে দিলেন। এরপর আমি গেলাম মেজর জিয়ার বাসায়। কিন্তু বাসায় স্যারকে পেলাম না। তখন শহরে জ্বালাও-পোড়াও চলছে, ব্যারিকেড চলছে। শুনলাম জিয়া স্যার লে. মাহফুজকে নিয়ে কালো পতাকা লাগিয়ে শহরে বের হয়েছেন। বাসায় ছিলেন ম্যাডাম খালেদা জিয়া। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কেন এসেছেন? আমি বললাম, ব্যাটালিয়নের অস্ত্র কর্নেল জানজুয়ার নির্দেশে ক্যাপ্টেন অলি সাহেব বেলুচ রেজিমেন্টকে তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তখন ম্যাডাম খালেদা জিয়া আমাকে বললেন, আপনি গিয়ে বলুন মেজর সাহেব না আসা পর্যন্ত যেন অস্ত্র না দেয়া হয়। আমি ম্যাডাম খালেদা জিয়ার এ পরামর্শ নিয়ে দ্রুত ব্যাটালিয়নে যাই এবং সৈনিকদের বলি, জিয়া সাহেব না আসা পর্যন্ত অস্ত্র যেন না যায় সে সম্পর্কে ম্যাডাম জিয়া পরামর্শ দিয়েছেন। একথা শুনে বাঙালি সৈনিকরা নারায়ে তাকবির আল্লাহ আকবর ধ্বনি দিয়ে বেলুচ রেজিমেন্টের গাড়ি থেকে ভারী অস্ত্রগুলো পুনরায় নামিয়ে ফেলে। অলি সাহেবকে দেখলাম যেন দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছেন। এক ঘণ্টা পর কমান্ডিং অফিসারের একটি অর্ডার এল আমি যেন জিয়া সাহেবকে জানিয়ে দিই ২৫ মার্চ সকালে মাঠে হকি খেলার রেফারি করবেন জিয়া সাহেব। আবার আমি জিয়া সাহেবের বাসায় যাই। কিন্তু তখনও তিনি বাসায় ফেরেননি। ম্যাডামকে অর্ডার সম্পর্কে জানিয়ে আসি। আমরা যে অস্ত্র বেলুচ রেজিমেন্টকে দিইনি সে কথাও তাকে জানাই। ২৫ মার্চ সকালে মেজর জিয়া হকি খেলার রেফারি করলেন। ষোলশহর সিডিএ মার্কেটের পূর্ব মাঠে খেলা চলছে। কর্নেল জানজুয়াও খেলা দেখতে এসেছেন। আসলে আমাদের খেলায় ব্যস্ত রেখে পাকিস্তানিরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছিল। যাই হোক, খেলা শেষ হওয়ার পর কর্নেল জানজুয়া বললেন, সবাইকে রেলওয়ে গেটে গিয়ে রেলওয়ে কার সরাতে হবে। আমরা সবাই গেলাম। পাঞ্জাবি সৈন্যও ছিল। কিন্তু দেখা গেল কর্নেল জানজুয়ার নির্দেশ ঠিকমত পালন করা হচ্ছে না। পাঞ্জাবিরা রেলওয়ে কারের যেদিকে ধাক্কা দিচ্ছে, বাঙালিরা তার উল্টো দিকে ধাক্কা দিচ্ছে। এ অবস্থায় রেলওয়ে কার একটুও হেলল না। কর্নেল জানজুয়া রাগ হলেন। কিন্তু তার কিছুই করার ছিল না। তিনি ব্যারাকে চলে যান। ডাকেন পানিওর প্লাটুনের (গোলাবারুদ যাদের হাতে থাকে) হাবিলদার ইউনূসকে। তাকে বলা হয়, মাইন দিয়ে ট্রেন উড়িয়ে দিতে। কিন্তু বাঙালি পানিওর হাবিলদার ইউনূস বললেন—স্যার মাইন দিয়ে উড়ালে আমাদের বাসাবাড়ি ক্ষতি হবে। সব গিয়ে পড়বে আমাদের বিল্ডিংয়ে। আমরা বসবাস করতে পারব না। কর্নেল জানজুয়া তখন ডাকল ইএমই আরমোরার একজন পাঞ্জাবি সৈনিককে। তাকে বলা হলো, রেঞ্জ দিয়ে ট্রেনের বগির জোড়া ভেঙে দিতে। নির্দেশ মতে, ইএমই’র পাঞ্জাবি সৈনিকরা ট্রেনের বগির জোড়া খুলে দিল এবং এক কোম্পানি সৈন্য ট্রেন সারিয়ে রেলগেটের ব্যারিকেড সরালো।
ক্যাপ্টেন সৈয়দ আহসান উল্লাহ বলেন, পাকিস্তানি কমান্ডিং অফিসার কর্নেল জানজুয়ার বড় ভয় ছিল মেজর জিয়াকে নিয়ে। মেজর জিয়াই বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের নিয়ে একটা কিছু করে ফেলতে পারেন সেটা তার বিশ্বাস ছিল। সে জন্য জানজুয়া ব্যারিকেড সরানোর নাম করে মেজর জিয়াকে হত্যার এক পরিকল্পনা নেন। ষোলশহর রেলগেট থেকে ট্রেনের বগিগুলো সরানোর পর কর্নেল জানজুয়া পুরো ব্যাটালিয়নকে দু’ভাগ করলেন। ক্যাপ্টেন অলি ও ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামানকে এবি আলফা ও ব্যাভো কোম্পানি সঙ্গে দিয়ে বললেন, তারা যেন ষোলশহর রেলগেট থেকে ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত যাবতীয় ব্যারিকেড সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে।
অন্যদিকে মেজর জিয়াউর রহমান ও ক্যাপ্টেন সাদেকুর রহমানকে দায়িত্ব দেয়া হয় চার্লি ও ডেল্টা অর্থাত্ সি এবং ডি কোম্পানি নিয়ে তিনি যেন ষোলশহর থেকে বন্দর পর্যন্ত সব ব্যারিকেড সরিয়ে বন্দরে গিয়ে ব্রিগেডিয়ার আনসারির কাছে রিপোর্ট করেন। ২৫ মার্চ রাত ১১টায় কর্নেল জানজুয়া নিজে এসে মেজর জিয়াকে গাড়িতে তুলে দেন। পরিকল্পনা ছিল ব্যারিকেড সরিয়ে তারা বন্দরে যাবে। সেখানে জাহাজ থেকে অস্ত্র নামানোর পরপর মেজর জিয়াসহ সবাইকে হত্যা করা হবে। ওই সময় চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্রসহ চারটি জাহাজ এসেছিল। এগুলো হলো—সোয়াত, এমভি শামস, শফিনা-ই-আরব এবং আওরঙ্গজেব। ব্যারিকেডের কারণে অস্ত্র খালাস করা যাচ্ছিল না। যাই হোক, মেজর জিয়া চার্লি ও ডেল্টা কোম্পানি নিয়ে বন্দরের পথে বের হলেন। রাস্তা পরিষ্কার করে ঠিক সময়ে বন্দরে পৌঁছা যায়নি। শুধু চার্লি কোম্পানি বন্দরে পৌঁছে গিয়েছিল। ওই সময় ব্যাটালিয়নে আমার টেলিফোন ডিউটি ছিল। হঠাত্ দু’জন রিক্রুট সৈনিক গুলিতে আহত হয়ে কাতরাতে কাতরাতে এলো। তাদের কাছে শুনলাম, পাকিস্তানিরা বাঙালি সৈনিকদের হত্যা শুরু করেছে। ক্যান্টনমেন্টে বহু বাঙালিকে তারা মেরেছে ঘুমন্ত অবস্থায়। একদিকে রাগে কাঁপছিলাম, অন্যদিকে অজানা শঙ্কায় অসহায় হওয়ায় মতো অবস্থা। অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তখন অ্যাডজুটেম্লট ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী। আল্লাহর মর্জি টেলিফোন করে তাকে পেলাম। স্যারকে ঘটনা বলতেই তিনি একটি এম৩৮ ছোট জিপ নিয়ে সিডিএ মার্কেটে সৈনিকদের ব্যারাকে এসে হাজির হলেন। সব ঘটনা শুনে বুঝতে পারলেন মেজর জিয়াকে এই সংবাদ দেয়া প্রয়োজন। না হলে তারা মেজর জিয়াকেও গ্রেফতার করে মেরে ফেলবে। তিনি দ্রুত চলে গেলেন। আমাদের বললেন, সাবধানে থাকতে, তিনি আসছেন। এরই মধ্যে এসব ঘটনা কোয়ার্টার মাস্টার ক্যাপ্টেন অলিও জেনে গেছেন। তার সঙ্গে কাজ করছিলেন ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান। তিনি ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামানকে বার্তা দিয়ে পাঠালেন মেজর জিয়ার কাছে। ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান আগ্রাবাদের কাছে গিয়ে মেজর জিয়াকে পাকিস্তানিদের বাঙালি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানাতেই মেজর জিয়া বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নিলেন ওই আগ্রাবাদের রাস্তায়। তিনি তার সঙ্গে পাকিস্তানি সৈন্যদের কাবু করে গাড়ি ফেরালেন এবং ষোলশহর সিডিএ মার্কেটে ব্যাটালিয়নের দিকে রওয়ানা হলেন। ওই সময় আমার সঙ্গে ডিউটিতে ছিল কোয়ার্টার গার্ডের ছয় সিপাহী, দু’জন গার্ড কমান্ডার, একজন বিউগলার, হাবিলদার ইউনুস ও ব্যাটালিয়নের সুইপার। গুলি খাওয়া রিক্রুটদের আমরা ফাস্ট এইড দিলাম। এ সময় বিমান বাহিনীর চারজন অফিসার এলেন। তাদের একজন আমাদের ব্যাটালিয়নের পাঞ্জাবি অফিসার লে. আজম। এরা চারজন কোয়ার্টার গার্ডে এসে গার্ড কমান্ডার আলী হোসেনকে বললেন—বাইরের অবস্থা ভালো নয়। আমাদের একজনের কাছে রাইফেল আছে। অন্যদের হাতেও অস্ত্র দরকার। কোয়ার্টার গার্ডের চাবি দাও, তাদের অস্ত্র দিতে হবে। তখন আলী হোসেন বলল—আপনি ডিউটি অফিসারও নন, জেসিও নন। আপনাকে চাবি দিতে পারব না। ওই চারজনের মধ্যে যার কাছে অস্ত্র আছে সে আলী হোসেনকে গুলি করতে রাইফেল উঠাল। সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি সিপাহিরা তার রাইফেল কেড়ে নিল। আমি গিয়ে বললাম—সবাইকে ধরে কোয়ার্টার গার্ডের খাঁচায় ঢুকিয়ে ফেল। ফলে বাঙালি গার্ড ও সিপাহীরা তাদের ধরে খাঁচায় ঢুকিয়ে ফেলল। কিছুক্ষণ পরই এলেন মেজর জিয়া ও মেজর মীর শওকত। মেজর জিয়া কোয়ার্টার গার্ডে বন্দি চারজনকে দেখে উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন—মেহমানরা কারা? আমরা ঘটনা খুলে বললাম। তিনি আমাকে বললেন— আহসান আমাকে ‘এক তিন গার্ড’ দাও। অর্থাত্ একজন কমান্ডার ও তিনজন সিপাহি অস্ত্রসহ। আমি মেজর জিয়াকে এক তিন গার্ড দিলাম। মেজর জিয়া কমান্ডিং অফিসারের গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন কর্নেল জানজুয়ার বাসায়। এর আগে তিনি গার্ডদের ব্রিফ করলেন। বাসায় পৌঁছে তিনি কলিংবেল চাপলেন। বাসার ভেতর থেকে কর্নেল জানজুয়া বললেন—‘তুম কোন হ্যাঁ?’ জিয়া বললেন—মে জিয়া হোঁ। তুম কিসলিয়ে আয়া হে? জিয়া বললেন—‘স্যার বাহার হালত আচ্ছা নেহি হ্যায়, আপকা পাছ সাজেশন লেনে কি লিয়ে আয়া হ্যায়।’ অর্থাত্ বাইরের অবস্থা ভালো নয়। আপনার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে এসেছি। এ অবস্থায় দরজা খুলতেই মেজর জিয়া কর্নেল জানজুয়ার কলার গলাসুদ্ধ ধরে ফেলেন। সঙ্গে গার্ডরাও তার চারদিকে অস্ত্র ধরে তাকে বাসা থেকে টেনে বের করে গাড়িতে তোলেন। তার পরনে ছিল পায়জামা। মেজর জিয়া জানজুয়াকে বলেন, তুমি আমাকে বন্দরে পাঠিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিলে? এখন লক্ষ্মী সোনার মতো গাড়িতে উঠো। কর্নেল জানজোয়াকে নিয়ে তিনি কোয়ার্টার গার্ডে এলেন এবং খাঁচায় ভরলেন। কোয়ার্টার গার্ডের রেজিস্ট্রার টেবিলের ওপর বসলেন জানজুয়া। ওই খাঁচায় পাঞ্জাবি লে. আজমসহ আটককৃত আরও চারজন। জিয়াউর রহমান সবগুলো কোম্পানিকে একত্রিত করার নির্দেশ দিলেন। মেজর জিয়াকে নিয়ে যে দুটি কোম্পানি বন্দরের দিকে গিয়েছিল তার মধ্যে চার্লি কোম্পানি বন্দরে ঢুকে যাওয়ায় তারা আর ফিরতে পারেনি। পরে শুনেছি তাদের হত্যা করা হয়েছে। হাশেম নামের একজন সৈনিক সমুদ্রে ঝাপ দিয়ে পড়ে বেঁচে যায়। যাই হোক, বাঙালিরা ব্যাটালিয়নে একত্রিত হলো। ব্যাটালিয়নের পাকিস্তানি অফিসার, সৈনিক ও অন্যদের গ্রেফতার করা হলো। এ সময় কোয়ার্টার গার্ডের খাঁচার সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন মেজর জিয়া। খাঁচার ভেতর থেকে কর্নেল জানজুয়া পাঞ্জাবি লে. আজমকে চিন্তিত দেখে বলছিলেন— ‘আজম তুম কিয়া সুস্তা হ্যায়, আউর পাঁচ মিনিট হ্যাঁয়, পাঁচ মিনিট কা বাদ এইট বেঙ্গল কা কুই নিশানা নেহি মিলে গা।’ অর্থাত্ আজম তুমি কি চিন্তা করছ? পাঁচ মিনিট পর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। মেজর জিয়া কর্ণেল জানজুয়ার দম্ভোক্তি শুনেই উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন—ওদের বের করে কমান্ডিং অফিসারের কক্ষে ঢোকাও। সঙ্গে সঙ্গে সব বন্দিকে সিও’র অফিসে নিয়ে যাওয়া হলো। মেজর জিয়া আদেশ দিলেন ফায়ার করো। সিও’র রানার আবদুল মতিন ফায়ার করলেন। সঙ্গে সঙ্গে অন্যরাও ফায়ার করা শুরু করল। এ সময় বন্দিদের মধ্য থেকে একজন এয়ারফোর্সের অফিসার চিত্কার করে বললেন—‘আমি বাঙালি, আমাকে মারবেন না।’ তাকে বের করে বাকিদের ওপর চালানো হলো ফায়ার। ওখানে ২০ থেকে ২৫ জন পাকিস্তানি ছিল।
রাত তখন প্রায় ২টা। ২৫ মার্চ গিয়ে ২৬ মার্চের সূচনা। মেজর জিয়া সব বাঙালি অফিসার, গার্ড, জেসিও, সিপাহিদের একত্রিত করলেন। ষোলশহর ব্যাটালিয়নে কয়েকশ’ বাঙালি সৈনিক আমরা সমবেত হলাম। মেজর জিয়া বললেন—‘উই রিভোল্ট’। আমরা বিদ্রোহ করলাম। আজ থেকে আমরা আর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে নেই। আমরা বাংলাদেশের আনুগত্য স্বীকার করে আমাদের এই মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিলাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনে আমরা সবাই জীবন দেব। সবাই এক বাক্যে আমরা আমাদের একই শপথের কথা জানালাম। এরপর মেজর জিয়া একটি সামরিক পরিকল্পনা বা যুদ্ধ কৌশল আমাদের দিলেন। তিনি বলেন, আত্মরক্ষার জন্য ইউনিফর্ম আমরা পরিত্যাগ করে সিভিল ড্রেস পরব। যে কোনো সময় হামলা হতে পারে, তাই এখানে থাকা আমাদের আর ঠিক হবে না। এই জায়গা দ্রুত ছেড়ে দিতে হবে। ২৬ মার্চের সূচনায় তার ঐতিহাসিক বিদ্রোহ ঘোষণা সম্পন্ন করে ভাষণ দেয়ার পর ব্যাটালিয়নে অস্ত্র নিয়ে সবাই ষোলশহর ত্যাগ করলাম। সারারাত আমরা রেললাইন ধরে কালুরঘাটের দিকে অগ্রসর হলাম। যাওয়ার পথে মেজর জিয়ার বাসা পাশেই ছিল। কেউ একজন মেজর জিয়াকে বললেন— স্যার পাশেই আপনার বাসা। ম্যাডামের সঙ্গে একটু সাক্ষাত্ করে গেলে ভালো হয়। মেজর জিয়া বললেন—তোমরা কি তোমাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যার সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে পারবে? আমরা এখন দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে নেমেছি। দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত ফিরে তাকানোর আর সুযোগ নেই। সামনে এগিয়ে যাও।
রেললাইন ধরে সারারাত হেঁটে ২৬ মার্চ ভোর পাঁচটার দিকে আমরা কালুরঘাট ব্রিজ পার হলাম। কক্সবাজার রোডে ব্রিজের কাছে ইপিআরের একটি কোম্পানি নিয়ে মেজর রফিক সাহেব আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন। সবাইকে নিয়ে একটি পাহাড়ের ভেতর আমরা পুরো দিন কাটালাম। পাহাড়ের পাশের গ্রাম থেকে লোকজন আমাদের জন্য খাবার সরবরাহ করলেন। সন্ধ্যার পর কালুরঘাট ব্রিজের কাছে একটি স্কুলে এসে অবস্থান নেয়ার পর মেজর জিয়া সবাইকে বললেন আর্মি পোশাক ছেড়ে সিভিল পোশাক পরতে। গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে কাপড় আনা হলো। এক বাড়ি থেকে মেজর জিয়ার জন্যও ফতুয়া এবং লুঙ্গি আনা হলো। লোকজন খুশি হয়ে আমাদের জন্য পোশাক দিলেন। এরপর কর্ণফুলী নদী পার হয়ে আমরা ডিফেন্স নিলাম। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে গেলেন। মেজর জিয়াকে পেয়ে বেতার কেন্দ্রের কর্মীরা বেশ উত্ফুল্ল হলেন। মেজর জিয়া বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণাটি দেন। পরবর্তীকালে তার এই ঘোষণাটি কিছুক্ষণ পর পর বেতার থেকে নিউজ বুলেটিন আকারে পড়ে শোনান ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও লে. শমসের মবিন চৌধুরী। মেজর জিয়ার এই ঘোষণা সেদিন দিকনির্দেশনাহীন জাতির মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছিল এবং তারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
২৭ মার্চ আমরা কালুরঘাট ব্রিজের হিন্দুপাড়ায় রাতযাপন করি। ২৮ মার্চ খবর আসে পাকবাহিনী কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মেজর জিয়ার নির্দেশে আমরা কুমিরায় গিয়ে ডিফেন্স নিই। দেখতে পাই পাকিস্তানিরা বাঙালি সাধারণ মানুষকে সামনে ঢাল হিসেবে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। অ্যামবুশ অবস্থা থেকেই আমরা চিত্কার করে বাঙালিদের শুয়ে পড়তে বলি। বাঙালিরা মাটিতে শুয়ে পড়লে আমরা ফায়ার শুরু করি। পাকিস্তানিদের সঙ্গে কুমিরার এই যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় যুদ্ধ। এই যুদ্ধে শতাধিক পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়েছিল। অবশ্য বেশিক্ষণ আমরা এই প্রতিরোধ ব্যুহ টিকিয়ে রাখতে পারিনি। পাকিস্তানিরা ফায়ার করতে করতে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে ঢুকে আমাদের ঘিরে ফেলার অবস্থা করে। আমরা খাল দিয়ে বেরিয়ে যাই। এরপর আমরা অনেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি।
ক্যাপ্টেন সৈয়দ আহসান উল্লাহ বলেন, বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেশ কিছুদিন পর আমি ভারতে যাই। কলকাতার থিয়েটার রোডে জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি আমাকে আবার মেঘালয়ে তুরা পাহাড়ে মেজর জিয়াউর রহমানের জেড ফোর্সে পাঠিয়ে দেন। মেজর জিয়া আমাকে তার অফিসের কাজে দায়িত্ব দেন। প্রথম ইস্ট বেঙ্গল, তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল এবং অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল নিয়ে ‘জেড ফোর্স’। একাত্তরের রণাঙ্গনে ‘জেড ফোর্সের’ যুদ্ধগুলো ছিল স্মরণীয়। মেজর জিয়াকে দেখেছি প্রতিটি যুদ্ধে নিজে অংশ নিয়েছেন, তদারকি করেছেন।
একবার সিলেটের কানাইঘাট এলাকায় যুদ্ধ করে ক্লান্ত আমরা। দু’দিন কেউই কিছু খাইনি। বড় বিল পার হয়ে টিলার মাঝখানে বিশ্রাম নিচ্ছি। হঠাত্ জিয়া সাহেব আমাকে ডেকে বললেন আহসান উল্লাহ দেখ তো কোথাও থেকে এক কাপ চায়ের ব্যবস্থা করা যায় কি-না। আমি চায়ের জন্য প্রথম বেঙ্গলে খোঁজ নিলাম, পেলাম না। জেড ফোর্স ডিফেন্স প্লাটুনে গেলাম। প্লাটুন কমান্ডার সুলতান সাহেব বললেন কিছু চা পাতা ছিল, সেটা দিয়ে আমরা চা করে খেয়েছি। পরিত্যক্ত পাতা দিয়ে যদি কিছু চা করা যায় চেষ্টা করুন।
আমি তা-ই করলাম। পরিত্যক্ত পাতা গরম করে একটি মগে করে জিয়া সাহেবের জন্য আনলাম। আসার পথে একটি বেগুন ক্ষেত পেলাম। সেখান থেকে বেগুন পেড়ে আমি কাঁচা খেলাম এবং জিয়া সাহেবের জন্য দুটি নিয়ে এলাম। জিয়া সাহেবকে বললাম, স্যার আমি কাঁচা বেগুন খেয়েছি, আপনি কি খেতে পারবেন? তিনি আমার হাত থেকে দুটি বেগুন নিয়ে খেলেন। এরপর চা খেলেন। অবশ্য সেটা চা ছিল না, চায়ের নামে গরম পানি।
abdal62@gmail.com। সুত্র আমারদেশ ২৯ মার্চ ২০১২শুক্রবার শুক্রবার ৩০ মার্চ ২০১২৩০ মার্চ ২০১২

Ads