শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৩

ক্ষমতায় থাকার জন্যে আর কত শহীদের রক্ত চাই ?



 আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,‘যারা আল্লাহ তা’য়ালার পথে নিহত হয় তাদেরকে তোমরা কখনো মৃত বলো না (তারা শহীদ); বরং তারাই (এ শহীদ এরাই) হচ্ছে আসল জীবিত মানুষ, কিন্তুু এ বিষয়ে তোমরা কিছুই জানো না’ (সূরা বাকারা-১৫৪)। আল্লাহ তা’য়ালা আরো ঘোষণা করেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহর পথে (সংগ্রাম করতে যেয়ে) নিহত হও অথবা সে পথে থেকেই তোমাদের মৃত্যু হয়, তাহলে আল­vহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে তোমরা যে রহমত ও ক্ষমা লাভ করবে, তা হবে কা’ফিরদের সঞ্চিত (দুনিয়ার) অর্থ সামগ্রীর চাইতে অনেক বেশী উত্তম’। আল­vহর পথে যদি তোমরা তোমাদের জীবন বিলিয়ে দাও, অথবা তাঁরই পথে তোমাদের মৃত্যু হয়, তাহলেই তোমাদের কি-ই বা করার থাকবে? কারণ, তোমাদের তো একদিন আল্লাহর সমীপে এমনিতেই একত্রিত করা হবে’ (সূরা ইমরান-১৫৭-১৫৮)। যারা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে শহীদের তামান্না বুকে নিয়ে অন্যায় অত্যাচার, যুলুম, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরচদ্ধে আর আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজপথে রক্ত দিচ্ছে তাদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না।
বর্তমান জোট সরকার সেনা সমর্থিত অবৈধ তত্বাবধায়ক সরকারের নীল নক্শার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল। কোথাও কোথাও শতভাগেরও বেশী ভোট পাওয়ারও অভিযোগ ছিল। কোন কোন কেন্দ্রে অতিরিক্ত ব্যালট পেপারের মুড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেলেও তা প্রচারের ওপর তখন নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। আর বলা হয়েছিল কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান বা মিডিয়া যার কাছে অতিরিক্ত ব্যালট পেপারের মুড়ির সন্ধান পাওয়া যাবে তার বিরচদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মহাজোটের সদস্যরাও তাদের পক্ষে এতো বিশাল বিজয় ভাবতেও পারেনি। মহাজোট ক্ষমতায় আসার প্রকৃত রহস্য অবশ্যই বর্তমান সরকারের জানা আছে। সেনা সমর্থিত অবৈধ তত্বাবধায়ক সরকারের অবৈধ কর্মকান্ডের দায় মুক্তির শর্তে নীল নক্শার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসলেও জোট নেতারা তাদের জনসমর্থনের ব্যাপারে ভালোভাবেই অবগত আছেন। যার ফলে তাদের হাত থেকে ক্ষমতা চলে গেলে তার পরিণতি সম্পর্কে তারা দারচণভাবে চিন্তিত। যে জন্যে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই দলীয় বিচারপতির মাধ্যমে আর উপঢৌকনের বিনিময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে।
জনসমর্থনহীন স্বৈরাচারী সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা, বিডিআর হত্যা, শেয়ার মার্কেট লুট-পাট, গ্রামীণ ব্যাংক, হলমার্ক, ডেসটিনি, যুবক সহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, কুইকরেন্টাল কেলেঙ্কারী, হত্যা-গুম, ফ্যাসীবাদী আচরণ, লাগামহীন যুলুম-নির্যাতন আর নিপীড়ন আড়াল করতে, বিরোধী দল ও জোট তথা সাধারণ জনগণের তত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে, একটি বিতর্কিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে জনসাধারণকে ধোঁকা দেয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের ধোঁকা যখন জনগণের কাছে ধরা পড়ে গেল তখন তারা তড়িঘড়ি করে কথিত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবী তুলে কতিপয় নষ্ট ও ভ্রষ্ট তরচণ-তরচণীর দ্বারা শাহবাগে রম্যনাট্য মঞ্চ তৈরী করা হলো। সরকারের সার্বিক সহযোগিতায়, আল­vহ, তাঁর রাসূল (সা.) ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতা, আলেম-ওলামা এবং ইসলামের প্রতি কটূক্তি ও মিথ্যাচার ছড়ানো হচ্ছে।
এ হেন অবস্থায় যাদের অন্তরে সমান্যতম ঈমান আছে, তারা ঘরে বসে থাকতে পারেন না। কারণ আল­vহ তা‘য়ালা ঈমানদারদের প্রতি প্রশ্ন রেখে ঘোষণা করছেন,‘‘আর তোমাদের কি হলো ! কেন তোমরা আল­vহর পথে সংগ্রাম করছো না ঐ সকল নির্যাতিত-নিপীড়িত নর-নারী ও অসহায় শিশুদের বাঁচানোর জন্যে, যারা নির্যাতন আর নিপীড়নের কারণে কাতর হয়ে আল­vহর দরবারে ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে এ যালেম অধ্যুষিত জনপদ থেকে বের করে অন্য কোথাও নিয়ে যাও, অতঃপর তুমি আমাদের জন্যে তোমার কাছ থেকে একজন অভিভাবক পাঠিয়ে দাও, আর তোমার কাছ থেকে আমাদের জন্যে একজন সাহায্যকারী পাঠাও’’(সুরা আন নিসা-৭৫)।
সীমাহীন ব্যর্থ সরকারের লেজে-গোবরে অবস্থা। এ হেন অবস্থায় জনগণের দাবি মেনে নিলে তাদের পালানোর কোন পথ নেই। হয় তাদের আত্মহত্যা করতে হবে, না হলে তাদের পাতা ফাঁদে তারা কঠিন বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। আমরা সকলেই জানি ‘আত্মহত্যা মহাপাপ’। আর মানুষ হত্যা সে তো আরো বড় পাপ। এ কথা মিথ্যা কথার জনক গোয়েবলস ও বিশ্বের নিকৃষ্টতম খুনি হিটলারও জানতেন। যেহেতু গোয়েবলস মিথ্যাকে সত্য আর সত্যকে মিথ্যায় পরিণত করতেন তাই তিনি ‘আত্মহত্যা মহাপাপ’ এ সত্য কথাটি জানলেও মানতে রাজি ছিলেন না। তাই হয়তো তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। আবার অনেকে এমনও মনে করে থাকেন, সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করার মধ্যে যে পাপ আছে সে পাপের সীমা পরিসীমার কথা ভেবে বা পাপ বোধের কারণে তিনি আত্মহত্যা করে পাপের গ­vনি মোচন করতে চেয়েছেন। এই মিথ্যা কথার জনক গোয়েবলস কিন্তুু বিশ্বের এখনো সর্বোচ্চ ও নিষ্ঠুরতম খুনী হিসেবে বিবেচিত হিটলারের তথ্যমন্ত্রী ছিলেন। আমাদের দেশের শিক্ষিত ও রাজনৈতিক সচেতন সকলেই ইতিহাসের এ অধ্যায়টুকু সম্পর্কে অবগত থাকার কথা। তারপরও কেন যে মিথ্যার ছড়াছড়ি আর খুনের নেশার ঘোর কাটছেনা তা হয়তো তারা নিজেরাই বলতে পারেন। প্রচলিত আছে যে, একটা মিথ্যা কথাকে প্রতিষ্ঠিত করতে আরো হাজারটা মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। এতো মিথ্যার পরও যখন স্বস্তির কোন পথ পাওয়ার কোন উপায় থাকেনা তখনই খুনের ঘটনা ঘটে।  
আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী থেকে শুরচ করে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী বিশেষ করে পুলিশ, কিছু কিছু ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়া খুনি হিটলারের সেবাদাস তথ্যমন্ত্রী ও মিথ্যা কথার জনক গোয়েবলসের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন। নিম্নে সরকার, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী ও কতিপয় নাস্তিক ও জন্মান্ধ মিডিয়ার মিথ্যাচারের নমুনা তুলে ধরা হলো।
গত ৬ মার্চ জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৩শ বিধিতে চলমান (গণহত্যার) ঘটনার ওপর দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছেন। তার বিবৃতির পুরোটাই ছিল উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মত মিথ্যাচার। তার একটি নমুনা হলো তিনি পবিত্র সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন দেশের চলমান পরিস্থিতিতে (৫ ফেব্রচয়ারী থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত) সহিংসতায় মোট ৬৭ জন লোক নিহত হয়েছে। এদের সকলেই জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী ও বিএনপির হাতে নিহত হয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশ আত্মরক্ষার্তে গুলী চালিয়েছে। এ সকল হত্যাকান্ডের সকল দায় বিএনপি ও জামায়াতকেই নিতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। কিন্তুু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে শুধু মাত্র ২৮ ফেব্রচয়ারীতেই সারা দেশে পুলিশের গুলীতে ৭০ জন মানুষ নিহত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার তথ্য মতে চলমান পরিস্থিতিতে গত ৫ মার্চ পর্যন্ত পুলিশসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১৫৫ জন লোক নিহত হয়েছে। এদের অধিকাংশই পুলিশের গুলীতে নিহত হয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামীর দাবী তাদের ১৭৭ জন নেতা-কর্মীকে পুলিশ নির্বিচারে গুলী করে হত্যা করেছে।
৮ মার্চ শাহবাগের কথিত প্রজন্ম চত্বরে ককটেল বিস্ফোরিত হলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন সেখানেও নাকি মৌলবাদীরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সরকারের ও সরকারি দলের ভাষায় মৌলবাদীরা জংগী! এ জংগীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালো কিন্তুু কেউ মারা গেল না? দেশবাসীর এ কথা বুঝতে মোটেও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। 
ঐ দিনে অর্থাৎ ৬ মার্চ নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ছিল তাদের পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ। সমাবেশ চলাকালিন সময়ে হঠাৎ গুলী আর ককটেল মেরে বিএনপির সমাবেশ পন্ড করে দেয়া হলো। টিভি ফুটেজে দেখা গেল বিএনপির নেতাদের লক্ষ্য করে পুলিশ নির্বিচারে গুলী ছুঁড়ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর নেতা সহ ৬০/৭০ জন নেতা-কর্মী আহত হলেন। কিন্তুু নয়া পল্টন এলাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশের কর্মকর্তা বললেন ভিন্ন কথা! পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে শিবিরের সন্ত্রাসীরা জামায়াতের ব্যানার বের করেই  শে­vগান দিতে দিতে বিএনপির সমাবেশে ইট-পাটকেল ও ককটেল মারতে শুরচ করে! সার্বিক দিক বিবেচনা করে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও বিএনপির নেতাদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ টিয়ার সেল, কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলী ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে। আরো আর্শ্চযের বিষয় হলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র তিনি সাংবাদিকদের বললেন পুলিশ আগ থেকেই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবগত ছিলো যে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা  বিএনপির সমাবেশে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারে! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএনপির সমাবেশে হামলা সম্পর্কে বললেন, এ ঘটনা নাকি বিএনপিই ঘটিয়েছে !
অথচ বিএনপির আহত নেতা-কর্মীরা বললেন ভিন্ন কথা। তারা অভিযোগ করে বললেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিনা উসকানিতে পুলিশ ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। আমরা যারা টেলিভিশনের দর্শক আমরাও দেখলাম পুলিশ হামলা করছে। পুলিশের ভাষ্য মতে ‘শিবিরের সন্ত্রাসীরা জামায়াতের ব্যানার বের করেই শে­vগান দিতে দিতে ইট-পাটকেল ও ককটেল মারতে শুরচ করে ! পুলিশের কথা যদি সত্য হতো তা হলে, এমন কি কোন টিভি চ্যানেল ছিল না যারা এই ভিডিও চিত্র ধারণ করেছে ? আর সে চিত্র কেন দেখানো হলো না?
ঐ একই দিনে অর্থাৎ ৬ মার্চ গোয়েবলসের শিষ্যত্ব গ্রহণকারী কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সংবাদে বলা হলো রাজশাহীতে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সন্ত্রাসীদের গুলীতে সেখানকার জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। কিন্তুু টিভি ফুটেজে দেখানো হলো পুলিশ গুলী করছে! শিবিরের সন্ত্রাসীরা গুলী করছে সে দৃশ্য দেখানো হলো না। এটাকে কি ধরনের মিথ্যাচার বলা যায়, ভাবতে পারেন? এ সকল মিডিয়াগুলো সত্যের অপলাপ করতে, বিশেষ করে মিথ্যাচার করতে বা উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মত অপকর্ম করতে তাদের বিবেকে এতটুকুও বাধে না।
জামায়াত-শিবিরের বিরচদ্ধে হাজার হাজার বায়বীয় অভিযোগ। তারা জঙ্গী, তারা সন্ত্রাসী, তারা রগ কাটা পার্টি, তারা পুলিশের ওপর হামলাকারী, তারা সংখ্যালঘুদের মন্দিরে হামলা করে, তারা হিন্দুদের দেব-দেবীর মূর্তি ভাংচুর করে, তারা শহীদ মিনার ভাংচুর করে, জাতীয় পতাকার অবমাননা করে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তুু এযাবৎ এসকল বায়বীয় অভিযোগের কোন একটিকেও সরকার বা অভিযোগকারীরা প্রমাণ করতে পারেনি। 
বাস্তবে দেশবাসী ও মিডিয়ার কারণে বিশ্ববাসী যা দেখছেন তা কি বর্তমান সরকার অস্বীকার করতে পেরেছে ? মহেশখালী, রাউজান আর পটিয়ায় কারা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করেছে তা যারা ক্ষতিগ্রস্ত আর ভুক্তভোগী তারা সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কিছু সাহসী ও সত্যাশ্রয়ী মিডিয়ার কারণে প্রকৃত সত্য প্রকাশ করে দিয়েছে। তারপরও নির্লজ্জ ফ্যাসীবাদী সরকার জামায়াত-শিবিরের ও বিরোধী দল বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
গত ৫ মার্চ বগুড়া জেলার শেরপুর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক তবিবর রহমান টিপুর নেতৃত্বে একদল যুবলীগ কর্মী শেরপুর শহীদিয়া কামিল মাদ্রাসায় স্থাপিত শহীদ মিনার ভাংতে যায়। স্থানীয় জনতা টিপুকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। ঘটনা স্থানীয় এমপিও স্বীকার করেন। কিন্তুু পরবর্তীতে পুলিশ তার বিরচদ্ধে কোন মামলা না নিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন বা পাগল বলে ছেড়ে দেয়? ঘটনা কি ঘটতে যাচ্ছিল পাঠক তা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন।
৫ মার্চ সাতক্ষীরার কলারোয়ার আওয়ামী লীগের নেতা ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর অফিসে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এব্যাপারেও বোধ হয় দেশবাসীর বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে ঘটনা কি ঘটেছে।
চট্টগ্রামে গত ৪ মার্চ হরতাল চলাকালিন একটি সিএনজি অটোরিক্সায় তল­vশী করে পুলিশ বেশ কিছু চাইনিজ কুড়াল, হাসুয়া, রামদা, চাপাতি ও ছুরিসহ চার ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী আটক করে। পরে অবশ্য থানা থেকে তাদেরকে কসাই বলে সে সকল অস্ত্রসহ সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দেয়া হয়। সরকার ও সরকারি পেটুয়াবাহিনী পুলিশ ভাবছে দেশবাসী কিছুই বুঝে না বা দেখে না। চতুর কাক যেমন কোন কিছু লুকোনোর সময় চোখ বন্ধ করে লুকায় আর মনে করে, যেহেতু আমি (কাক) চোখ বন্ধ করে রেখেছি সবাই আমার মতোই চোখ বন্ধ করে রেখেছে। সরকার, সরকারি দল ও সরকারি বাহিনীর লোকেরাও বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর লোকেরা চতুর কাকের মতো চোখ বন্ধ করে মিথ্যাচার করছে, আর তারা ভাবছে যে দেশবাসীও সকলে চোখ বন্ধ করে রেখেছে, অতএব আর কেউ দেখতে পাচ্ছে না। আর কেউ দেখলেও তা প্রকাশ করার সাহস পাবে না। কারণ পুরনো বা পেইন্ডিং মামলা আছে না! যে কোন একটাতে ঢুকিয়ে দিলেইতো হলো।
বাংলাদেশের জনগণ ভালো করেই জানে এ দেশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে কোন দলটি জড়িত। কারা সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের বাড়ী-ঘর দখলের জন্যে তাদের মন্দির ভেঙ্গেছে, বাড়ী-ঘরে আগুন দিয়েছে। আমি শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের শতকরা ৮০-৯০ ভাগ ঘর-বাড়ি আওয়ামী লীগের লোকেরা দখল করে রেখেছে। তারপরও হিন্দুরা তিনটি কারণে আওয়ামী লীগের সাথে আছে, (১) হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে দুর্গা পূজা। হিন্দু ধর্মমতে তাদের মা দুর্গা গজে অর্থাৎ হাতীতে চড়ে আসে, কিন্তুু যাওয়ার সময় নৌকায় চড়ে যায়। নৌকা হচ্ছে হিন্দুদের মা দুর্গার প্রিয় ও নিরাপদ বাহন। বাস্তবেও আমরা দেখি দুর্গাপূজার দশমীকে পানিতে ফেলার জন্যে বা বিসর্জন দেয়ার জন্যে নৌকায় উঠানো হয়। আর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক হচ্ছে ‘নৌকা’ তাই অধিকাংশ হিন্দু তাদের দেবতার বাহন নৌকা মার্কায় ভোট দেয়। (২) হিন্দু ধর্মমতে শিব পূজা বা শিব লিঙ্গ পূজা অথবা শিব রাত্রিতে যে সকল কুমারীরা মা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে, তাদের গর্ভের সন্তান ভগবানের অবতার হিসেবে দুনিয়ায় আবির্ভূত হয়। তাদের এ ধারণার সাথে আওয়ামী লীগের মধ্যে এমন ভগবানের ধর্মাবতারের সম্পর্ক আছে। তাই তারা আওয়ামী লীগের সাথে আছে, (৩) আমাদের দেশের অধিকাংশ হিন্দু অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত ও গরীব। বিশেষ করে হিন্দুদের মধ্যে মোটেও ধর্মীয় শিক্ষা নেই। তারা নিজেদেরকে অসহায় ভাবেন। অসহায়ত্ব, অশিক্ষিত ও গরীব এই তিনটি কারণে হিন্দু জনগোষ্ঠীর লোকেরা গ্রামের দুষ্ট ও প্রভাবশালী লোকদেরকে ভয় করে চলে আর তাদের আশ্রয়ে থাকে। আমাদের দেশে যারা আওয়ামী লীগ করে তারাও গ্রামের দুষ্ট ও প্রভাবশালী লোক। এ কারণেও হিন্দুরা আওয়ামী লীগের সাথে থাকে।
প্রসঙ্গক্রমে একটি বাস্তব ঘটনা মনে পড়ে গেল। আওয়ামী লীগের বিগত ১৯৯৬-২০০১ ইং শাসনামলে পার্বত্য চট্রগ্রামের শান্তি চুক্তির দায়িত্বে ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় তৎকালিন চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল­vহ। তিনি সফলভাবে সে চুক্তি সম্পাদন করার পর তার নির্বাচনী এলাকা, বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দরে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। সংবর্ধনা সভা শেষে  টরকী বন্দরের জনৈক ব্যবসায়ী জনাব মৌজে আলীকে চীফ হুইপ সাহেব ডেকেছিলেন। তিনি জনাব মৌজে আলীকে টরকী বন্দরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দেখভালের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন। তিনি বলে ছিলেন, আপনি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি। অতএব আমি আপনাকে এ দায়িত্ব দিতে চাই। জনাব মৌজে আলী জবাবে বলেছিলেন, আপনি আমাদের মাথার মুকুট, এলাকার গর্ব। আপনার কথা রক্ষা করা আমার কর্তব্য। তবে জনাব আমার ৭ টি ছেলে। বড় ছয় জন মোটামুটি লেখাপড়া শেষ করে কিছু না কিছু করছে। কিন্তুু ছোট ছেলে তাকে কোন অবস্থাতেই লেখা পড়া শিখাতে পারলাম না। এ হারামজাদা পরিবারের কারো কোন কথা শোনে না। ওই আবার আমলীগ করে। তারেই আমি দেইখা রাখতে পারি না। আর আপনার এতো নেতা-কর্মী আমি কিভাবে দেখভাল করবো বলেন ? আমার কি আর সে বয়স আছে ?
স্কাইপি সংলাপে বাংলাদেশের একজন বিচারপতি তার প্রবাসি বন্ধুকে বলেছিলেন, (বাংলাদেশ) সরকার ‘পাগল’ হইয়া গেছে। বাস্তবেও আমরা তা-ই দেখছি! তা না হলে প্রায় দুইশত লোক গত কয়েকদিনে সরকারের পেটুয়া বাহিনী পুলিশ ও সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা হত্যা করলো, আন্দোলনকারীদের হাতেও পুলিশ নিহত হলো, তারপরও সরকার বলছে, দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে আছে! যদি তা-ই হয় তা হলে আর কত লোক মরলে বা মারলে সরকার পরিস্থিতি অস্বাভাবিক বলবে ? কথায় আছে,‘পাগলে কি না বলে’?
বর্তমান মহাজোট সরকার আসলেই পাগল হইয়া গেছে! সরকারের ঘাড়ে ভূত চেপেছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান আছেন। যারা সালাত বা নামাজ আদায় করেন, সিয়াম বা রোজা পালন করেন, জাকাত দান করেন, হজ্জ করেন। হিন্দু বৌদ্ধ ও খৃষ্টানদের মধ্যেও এমন অনেক আছেন যারা তাদের ধর্ম পালন করেন। আওয়ামী লীগ একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দানকারী একটি দল। ইনু, বাদল, দিলিপ মেনন আর সুরঞ্জিত বাবুরা মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন? তা দেশের জনগণ ভালো ভাবেই জানেন। তাদের মত বামপন্থী নাস্তিকদের কথায় সংবিধান থেকে ‘আল­vহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ মুছে দিয়ে আওয়ামী লীগ এদেশের ধর্মপ্রাণ বৃহত্তর জনগোষ্ঠী মুসলমানদের কলিজায় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা আর সমাজতন্ত্র পুনঃস্থাপন করে সে আগুনকে আরো তেজোদীপ্ত করেছে। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র ইসলামের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট কুফরি। ধর্মনিরপেক্ষতা কোন ধর্মকেই স্বীকার করে না। যে সকল নাস্তিক আর ধর্মদ্রোহীদের কথায় আওয়ামী লীগ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উল্টো পথে চলছে তাদের জনসমর্থন শূন্যের কোঠায়। যার ফলে সাধারণ মানুষ যারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামী লীগকে পছন্দ করতেন তারা আজ আওয়ামী লীগকে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী মনে করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এটা সরকারের বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে একটি বড় ব্যর্থতা।
এ সকল ব্যর্থতার গ­vনি মুছতেই সরকার শাহবাগে নষ্ট তরচণ, ভ্রষ্ট তরচণী, মুরতাদ, মুশরিক ও নাস্তিকদের দিয়ে দেশের প্রচলিত আইন-আদালত ও সংবিধান উপেক্ষা করে নিরীহ ধর্মপ্রাণ ও ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে আর সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা আড়াল করতেই কথিত গণজাগরণের নামে রঙ্গ নাট্য মঞ্চ তৈরি করেছে।
সরকারের ভিত এতোটাই নড়বড়ে যে, যেকোন সময় এ সরকার ভেঙ্গে পড়তে পারে। এমন আশঙ্কায় জনসমর্থন হীন সরকার কতিপয় ভারতের উচ্ছিষ্টভোগী দালালের পরামর্শে হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। বিশেষ করে সরকার ও ইসলামের শত্রচরা জামায়াত-শিবির আতংকে ভূগছে। জামায়াত-শিবিরের যারা মরতেছে তারাও সরকারের যুলুম-নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা-গুম, লুট-পাট আর ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের বিরচদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে তাদেরকে হত্যার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেই তারা মরতেছে। আর এ মৃত্যুকে আল­vহ তা’য়ালা শহীদের মৃত্যু বলে আখ্যায়িত করেছেন। জীবন মৃত্যুর মালিক আল্লাহ। আল্লাহ তা’য়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তা’য়ালা মু’মিনদের কাছ থেকে জান্নাতের বিনিময়ে তাদের জান ও মাল খরিদ করে নিয়েছেন, এরা (মু‘মিনগণ) আল্লাহর পথে সংগ্রাম (বা জিহাদ) করে, অতঃপর এ সংগ্রামে (বা জিহাদে) কখনো তারা কাফিরদেরকে মারে, আবার কখনো কা‘ফিরদের (শত্রচর) হাতে তারা নিহত হয়; তার ওপর আল্লাহ তা’য়ালার খাঁটি ওয়াদা আছে, তাওরাত এবং ইনজিলে আর এ ওয়াদা কুরআনেও করা হয়েছে, এ ওয়াদা পালন করা আল্লাহ তা’য়ালার নিজস্ব দায়িত্ব, আর আল্লাহর চাইতে কে বেশী ওয়াদা পুরণ করতে পারে ? অতএব, হে মু’মিনগণ তোমরা আল­vহর সাথে কেনা-বেচার কাজ সম্পন্ন করলে তাতে সুসংবাদ গ্রহণ করো, কেননা এটাই হচ্ছে মহাসাফল্য’’(সুরা তওবা-১১১)।
আল্লাহ তা‘য়ালার ঘোষণা অনুযায়ী যারা সফল জীবন লাভ করতে চায় এমন কত লোকের প্রাণ কেড়ে নেবে এ সরকার তা কারো জানা নেই ! তারপরও  প্রশ্ন আসে আর কতো শহীদের রক্ত চাই ? আমরা যতো রক্ত চাই দিতে প্রস্ত্তত। তবুও এ দেশের নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষকে উদ্ধারের জন্যে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমরা জীবন বাজী রেখে এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।  

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads