রবিবার, ১০ মার্চ, ২০১৩

মসজিদেও তালা লাগিয়েছে সরকার।


অবশেষে মসজিদেও তালা লাগিয়েছে সরকার। এমন আচরণ প্রকাশিত হয় যখন কোন ক্ষমতালিপ্সু শাসকের স্বৈরমনোভঙ্গি প্রান্ত সীমায় গিয়ে ঠেকে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি মসজিদ ঘিরে বিশেষ করে প্রতি জুমাবারে ইদানীং যে রণপ্রস্ত্ততি দেখা যায় তাতে করে এর বাইরে চিন্তা করার অবকাশ থাকে না। তাছাড়া মসজিদের অভ্যন্তরেও সরকারের লেলিয়ে দেয়া চরদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবেই বৃদ্ধি পেয়েছে সম্প্রতি। গত ক’দিন থেকে বিশেষ করে বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের যে হালত করে রেখেছে সরকার, তাতে করে ফেরাউন-নমরূদের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় দেশবাসীকে। যে মসজিদে জুমাবারে লাখ লাখ মুসলি­র সমাগম ঘটে গত শুক্রবারে সে মসজিদে ছিল অতি নগণ্য সংখ্যক মুসল­xর উপস্থিতি। অন্যদিকে মসজিদকে ঘিরে কামান-বন্দুক নিয়ে রণপ্রস্ত্ততিতে ছিল বেসুমার পুলিশ-র‌্যাবের মহড়া। এ দৃশ্য জাতির জন্য যেমন লজ্জাকর তেমনি কলংকজনকও। মসজিদে পাহারা বসায় কারা, যে শাসক নিজের অস্তিত্বের প্রতি সন্দিহান। নিজেদের কর্মকান্ড এতটাই নিন্দনীয় পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে গেছে যাতে করে দেশের প্রতিটি নাগরিককেই শত্রচর তালিকায় তুলে এনেছে তারা। তা না হলে তো মসজিদে নজরদারির প্রয়োজন পড়ে না।
বলার স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, প্রতিবাদের স্বাধীনতায় বড়সর তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যেই। এ তালা যারাই খুলতে চেষ্টা করছে তাদের দিকেই ছুটে আসছে গুলী, টিয়ারশেল, লাঠি। পাখি শিকারের মতো নিশানায় এখন মজলুম জনতা। গত কদিন থেকেই দেশের মসজিদগুলো উত্তপ্ত। মসজিদে মসজিদে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ। জ্ঞানান্ধ এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী একশ্রেণীর মানুষ বলছে মসজিদ হলো পবিত্র জায়গা উপাসনার স্থল, সেখানে হৈ-হাঙ্গামা করে মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট করা হচ্ছে। দেখতে হবে মসজিদে লাখ লাখ মানুষ কিসের প্রতিবাদ করছে, কিসের প্রতিরোধের হুংকার দিচ্ছে। সে কণ্ঠকে ধরতে না পারলে, বুঝতে না পারলে বা না বুঝার ভান করলে আজীবন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এবং জ্ঞানান্ধতাই তাদের সঙ্গী হবে। মসজিদ থেকে প্রতিবাদ উঠে অন্যায় এবং অসম্য-অসত্যের বিপক্ষে, সে সবের প্রতিরোধ কল্পে। কেউ কেউ বলে মসজিদ তো উপাসনার জায়গা, সে স্থানে বিতন্ডা কিসের। এমন ধারণায় বিভ্রাট নেই বটে। মানুষ তো উপাসনা করে, আল­vহর কাছে প্রার্থনা করে, সাহায্য কামনা করে, শক্তি কামনা করে অন্যায় অবিচার এবং অসত্য প্রতিরোধে এবং তা দূরীভূত করার আশায়। মসজিদ শুধুমাত্র জপতপ করারই স্থান নয়। বহুবিধ ব্যবহার মসজিদের। রসূল মসজিদে প্রথমত আল­vহর সার্বভৌমত্বের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতেন, আইন আদালতের আশ্রয়স্থল হিসাবে ব্যবহার করতেন, সামাজিক দৈশিক অবস্থা-ব্যবস্থা নিয়ে সলাপরামর্শ করতেন তার উপদেষ্টাদের সাথে। যুদ্ধ ঘোষণা করতেন, রণপ্রস্ত্ততি নিতেন। এমনকি কবিতা পাঠেরও আসর বসাতেন মসজিদে। যে আসরে উপস্থিত থাকতেন দেশের বড় বড় কবি-সাহিত্যিক। রসূল পঠিত কবিতার আলোচনা সমালোচনা করতেন। কেবল তা’ই নয় মসজিদের মিম্বারের পাশে কবিতা পাঠের স্থান করে দিয়েছিলেন। তাই মসজিদ সমাজের সব শুভন কর্মেরই আঙিনা বলে বিবেচিত হয়ে আসছে রসূলের সময়কাল থেকেই। মসজিদ সেই আদিকাল থেকেই সুন্দরের আধার। যে কারণে মসজিদ নির্মাণ করা হয় শিল্পের উচ্চতম সুষমা দিয়ে। ইসলামের অনুসারীগণ তাদের উপাসনালয়গুলোকে জগতের শ্রেষ্ঠ শৈল্পিক রেখাচিত্রে অঙ্কন করেন। কারণ তারা তাদের অন্তরের আকুতি ঢেলে দেন সেখানে। মেধার সবটুকু উজ্জ্বলতা মসজিদ নির্মাণ শৈলীতে উপস্থিত করেন। যাদের উপাসনালয়গুলো শিল্পমাধুর্যে এতটা বলিয়ান তাদের ধর্মের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য কতটা দীপ্তিময় তা সহজেই অনুমেয়। মসজিদ নামের এই উজ্জ্বল প্রাঙ্গণ থেকে সুন্দরেরই জয়ধ্বনি উচ্চকিত হয়। যারা সুন্দরকে প্রতিহত করতে চায় শক্তি প্রদর্শন করে তারা আর যাই হোক শান্তি বা সুন্দরের পক্ষের লোক নয় কোন অবস্থায়ই। তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। অশুভ শক্তির প্রেতাত্মা।
ধৃষ্টতারও একটা সীমা থাকে। সে সীমাও লঙ্ঘন করছে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী। ইসলাম অনুসারীদের কাছে প্রতিটি জুমাবার হলো একেকটি মিনি ঈদ। ঈদ যেমন আনন্দের বার্তাবাহী ঠিক তেমনি প্রতিটি শুক্রবার আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে মুসল­xদের ঘরে ঘরে। অন্যদিন যাই হোক না কেন সেদিন মসজিদ উপচে পড়ে মুসল­xতে। এমন আনন্দে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে শাসকশ্রেণী এবং তাদের আজ্ঞাবাহী বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন। তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে রাজধানীর প্রধান মসজিদের প্রধান ফটকে। প্রার্থনা করতে আসা নামাজিরা তল­vশির কবলে পড়ছে। বিভিন্ন বাহিনীর অত্যাচারে রক্তাক্ত হচ্ছে নিরপরাধ মানুষ। অন্যদিকে ধর্ম অবমাননাকারীরা পালিত- লালিত হচ্ছে জামাই আদরে।
জন্ডিসাক্রান্ত রোগীরা প্রতিটি বস্ত্তকেই হলুদরংয়ের আধিক্য উপলব্ধি করেন, এমনকি তাদের মূত্রেও সে হলুদের মিশ্রণ ঘটে। বর্তমানে দেশের কতিপয় সংবাদ মিডিয়ার আচরণে প্রতীয়মান হচ্ছে এরাও জন্ডিসাক্রান্ত রোগীর পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। তাদের সংবাদ প্রচার এবং সংবাদ প্রকাশের যা চেহারা তার প্রায় সবটাই হলুদময়। কারণ এরা আজকাল সবকিছুতেই মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা আবিষ্কার করে ফিরছে। তাদের এই সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদ অর্থ হলো ধর্ম। আশ্চর্যের বিষয় সে ধর্মটি কেবল মাত্র ইসলাম এবং তার অনুসারীরা। এই ধর্মের বিস্তারকে রোধ করতে হবে। এরকমই এদের আবদার। কিন্তু এ ধরনের আবদার হাজার বছরেও কার্যকারির তালিকায় তুলা সম্ভব হয়নি। বরং আবদারকারিগণই বিলীন হয়েছে, লাঞ্ছিত গঞ্জিত হয়ে। এমনটাই সাক্ষ্য দেয় ইতিহাস। জন্ডিস রোগটি নাকি খুবই জটিল। তাই এ রোগ নিরাময়েও তেমন কোন সহজ চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। কেবল স্বচ্ছ পানি এবং ডাব-গেন্ডারির রসেই ডুবে থাকতেই পরামর্শ দেন চিকিৎসকগণ। ধর্মাতংকে যারা তটস্থ কতিপয় সংবাদ মাধ্যমসহ তাদের বিষয়ে চিকিৎসকরা কি চিকিৎসাপত্র রাখবেন কে জানে। তবে রাখাটা জরচরী, তা না হলে তাদের প্রচারিত এবং প্রকাশিত বিভ্রান্ত এবং বিদ্বেষপূর্ণ সংবাদ দেশ এবং জনগণকে এক মহা অন্ধকারে নিপতিত করবে। বিশেষ করে ধর্মপুষ্ট খবরগুলোতে এসেই সেই জন্ডিস তাদেরকে পেয়ে বসে। যা সংক্রমিত হয় পাঠকের চোখে এং মস্তিষ্কেও। ধর্ম এবং ধর্মীয় দল বিশেষ করে ইসলামী দলগুলোর প্রতি বর্তমান সরকারের বৈরী ভঙ্গিকে মান্য করে যে হারে প্রকাশ এবং প্রচারে ব্যতিব্যস্ত  যে সব প্রচার মাধ্যম তাতে নিজেদেরকে এক ধরনের চাটুকার শ্রেণীতে শামিল করে ফেলেছে ওরা। এবং জনতাও ধর্মের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
তামাম দেশের মতো মসজিদও এখন অবরচদ্ধ। বাংলাদেশে শারীরিক পীড়নের সাথে মানসিক পীড়নও অব্যাহত গতিতে চলছে। এই পীড়নের সমাপ্তি টানতেই মসজিদ প্রয়োজন, প্রায়োজন ধর্মীয় উদারতার। এই ঔদার্যের প্রকাশ এবং প্রসার একমাত্র মসজিদভিত্তিক শিক্ষা থেকেই সম্ভব। কারণ সেখানে আল­vহর মহত্ব ঘোষণার সাথে মানুষকে আহবান করা হয় শান্তির পথে, কল্যাণের পথে। দেশের নাগরিকদের সাথে যখন দেশের প্রধান উপাসনালয়গুলোও আক্রান্ত তখন জাতীয় কবি কাজী নজরচলের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ঘোষণা করতে হয়- ‘‘উহারা প্রচার করচক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ/ আমরা বলিব সাম্য, শান্তি, এক আল­vহ জিন্দাবাদ। উহারা চাহুক সঙ্কীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ, আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক প্রেম অভেদ।’’

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads