শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০১৩

পুলিশের দায়িত্ব



পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী তথা জনগণের সেবক। সরকার ও জনগণের সম্পদ এবং মানুষের জীবনরক্ষার দায়িত্ব পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সরকারি সম্পদ মানে জনগণের সম্পদ। সরকারের নিজস্ব সম্পদ বলে কোনও কিছু নেই। আর সরকারও জনগণের। সরকার জনগণের জানমালের হেফাজতকারী। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের জানমালের হেফাজতের দায়িত্ব পুলিশ এবং তদরূপ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর। সরকারি কর্মচারী, দায়িত্বপ্রাপ্ত বা নির্বাচিত ব্যক্তি, পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বেতন দেয়া হয় সরকারি কোষাগার থেকে। সরকারি কোষাগার মানে জনগণের কোষাগার। প্রকৃত অর্থে সরকার বা সরকারি কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সকলেই জনগণের কর্মচারী।
জনগণের সেবা এবং তাদের জীবনরক্ষার দায়িত্ব হচ্ছে সরকারি কাজে নিয়োজিত সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের সকল সহযোগী সংস্থার সদস্যদের। জনগণের জানমালের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজে সরকারি কর্মচারী বা আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ অংশ নিতে পারে না। তবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি সরকারি সম্পদ কিংবা জনগণের জানমালের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার বিধি রয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ বা কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য প্রয়োজনে অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে। সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জীবন যদি হুমকির মুখোমুখি হয় তাহলেও তারা অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারে।
সীমাহীন দুর্নীতি, দেশ পরিচালনায় অযোগ্যতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, জুলুম-নির্যাতন ও অগণতান্ত্রিক আচরণের ফলে দেশের জনগণ এখন ফুঁসে উঠেছে। তাই বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ওপর ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ মানুষ। তারা স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে দলে দলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পুলিশ বিক্ষুব্ধ মানুষের ওপর সরাসরি বুলেট ছুঁড়ছে। তাদের প্রতিবাদের ভাষা কেড়ে নিচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের উস্কানিতে গণতন্ত্রের দাবি অনুসারে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে দেয়া হচ্ছে না। প্রজাতন্ত্রের পুলিশ নির্বিচারে বুলেট চালিয়ে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে দেশের দেড় শতাধিক নাগরিককে হত্যা করেছে। অসংখ্য মানুষকে মারাত্মকভাবে করেছে আহত। অনেককে হাতকড়া পরিয়ে থানায় এনে গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে বুলেটবিদ্ধ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন ছবি দেশের প্রিন্ট মিডিয়াসহ টেলিভিশনের ফুটেজেও দেখা গেছে। তাছাড়া সরকারের মন্ত্রী দেখামাত্র বুলেটবিদ্ধ করে মারবার নির্দেশ দিয়েছেন প্রকাশ্যে। ফলে পুলিশ এখন বেপরোয়া।
বিশেষত সরকারি দলের সমর্থক পুলিশ ক্ষমতাসীনদের খুশি করতে দ্বিধাহীনভাবে মানুষ হত্যা করবার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। পুলিশের এ হত্যাকা- ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে ‘গণহত্যা’ বলে বিবেচিত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এ হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের চোখে অমানবিকভাবে হত্যার শিকার মানুষগুলো যেন মানুষই নয়। অথচ দেশে পশু-পাখি বেআইনিভাবে হত্যা করলেও বিচারের ব্যবস্থা আছে। অথচ সৃষ্টিরসেরা মানুষকে এদেশের এক শ্রেণীর পুলিশ নির্বিচারে বুলেটবিদ্ধ করে মেরে ফেলছে। সরকারি তরফ থেকে বিক্ষুব্ধ মানুষকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করবার দুঃসাহস দেখানো হচ্ছে।
আমরা মনে করি, পুলিশের এ নিষ্ঠুর আচরণ প্রজাতন্ত্রের কোনও সচেতন মানুষ আশা করে না। এছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশে ক্ষমতাসীনদের খুশি করতে বা তাদের নির্দেশ পালন করতে প্রজাতন্ত্রের পুলিশ কিংবা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কোনো সদস্যের এমন আচরণ দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। প্রকৃত অপরাধীকে সর্বাত্মক চেষ্টার মাধ্যমে গ্রেফতার করে আইনের কাছে সোপর্দ করাই পুলিশ বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের দায়িত্ব। জীবনের জন্য হুমকি না হলে তারা বিনা বিচারে কাউকে হত্যা করতে পারে না। আমরা মনে করি, পুলিশ তার-ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পন্ন করে এ সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং গুরুত্বপূর্ণ এ বাহিনীর ভাবমর্যাদা রক্ষার্থে দলনিরপেক্ষভাবে তৎপর থাকবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads