মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৩

এ কোন দেশে আমরা বাস করছি?

ইলিয়াস আলী ১১ মাস ধরে নিখোঁজ

দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক এমপি এবং সম্ভাবনাময় রাজনীতিবিদ ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর ১১ মাস চলে গেছে। এখনো তার কোনো হদিস মেলেনি। সরকার এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আশার বাণীও শোনাতে ব্যর্থ হয়েছে। গত বছর ১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসার অদূরে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন রহস্যজনকভাবে। নিজ গাড়িতে করে ফেরার পথে তিনি নিরুদ্দেশ হলেন তার গাড়িচালকসহ। বিএনপিসহ দেশের বিরোধী দলগুলো ছাড়াও ইলিয়াসের পরিবার-পরিজন এবং দেশের মানুষের ধারণা, সরকারের কোনো বাহিনীই তাকে অপহরণ ও গুম করেছে। এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে সরকার তেমন জোরালো উদ্যোগ নেয়নি আজ পর্যন্ত। এমনকি ইলিয়াস আলী কিভাবে নিখোঁজ হলেন, সে রহস্যও উদঘাটন না করায় সন্দেহের তীর মূলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে। প্রায় এক বছর ধরে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের একই সাফাই, ‘তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি’। ইলিয়াস বেঁচে আছেন কি মারা গেছেন, কোথায় কী অবস্থায় রয়েছেন, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র তথ্য বা ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি সরকারের কাছ থেকে। এই পরিস্থিতিতে তার পরিবার ও নিকটজনেরা এ নিয়ে আর দাবি জানাতে কিংবা কোনো কথা বলতেও আগ্রহ বোধ করছেন না। ইলিয়াস আলীকে অবিলম্বে উদ্ধারের দাবিতে বিএনপি এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করেছে। কিন্তু সরকার এর কোনো গুরুত্ব দিয়েছে বলে প্রশাসনের তৎপরতায় প্রতীয়মান হয়নি। গত সোমবার নয়া দিগন্তের একটি নিজস্ব প্রতিবেদনে ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ রহস্যের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

আমাদের দেশে অতীতে রাজনৈতিক নেতাকর্মী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা খুব কম। কিন্তু গত কয়েক বছরেÑ বিশেষত বর্তমান শাসনামলেÑ একের পর এক হারিয়ে যাচ্ছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। তাদের বেশির ভাগই সরকারবিরোধী আন্দোলনে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। এ ছাড়া নিখোঁজদের অনেকের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে কয়েক দিনের মধ্যে। তাদের কেউ কেউ ক্রসফায়ারের সময় নিহত হওয়ার কথা প্রচারিত হলেও মানুষ এ ভাষ্য গ্রহণ করেনি। ২০১০ সালের জুন মাসে ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমকে রাজপথ থেকে অপহরণের পর গুম করে দেয়া হয়েছে। ইলিয়াস নিখোঁজ হওয়ার কিছু দিন আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন মেধাবী ছাত্র ঢাকা আসার পথে সাভারে র‌্যাবের হাতে অপহৃত হয়েছিল। তাদের খবর এখন আর জানে না কেউ। কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে নিখোঁজ হওয়ার এমন ঘটনা বারবার ঘটা অকল্পনীয়। ইলিয়াস নিখোঁজ হওয়ার পর সরকারের স্ববিরোধী ও দায়সারা আচরণ তার রাজনৈতিক পক্ষপাতপূূর্ণ চরিত্রই তুলে ধরেছে বলে জনগণ মনে করে।
যা হোক, দেশের কোনো নাগরিক শুধু নয়, বিদেশী কেউ এখানে এসে এভাবে হারিয়ে গেলেও দায়টা প্রকৃতপক্ষে সরকারের ওপর বর্তায়। আমরা চাই না আর কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে, মা-বাবা তাদের সন্তানকে কিংবা সন্তানেরা তাদের বাবাকে হারিয়ে ফেলুক। সরকার এ ব্যাপারে দায়িত্ব পালন না করে আপাতত পার পেলেও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের এক দিন এ জন্য কঠিন মাশুল দিতে হবে। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads