বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৩

রাজনৈতিক অমীমাংসার সেই ‘ট্র্যাডিশন’ সমানে চলছে


সরকারের মেয়াদের শেষ বছরে এসে একরকম নগ্নভাবেই ভারত-সমর্থিত একটি নির্বাচনী কৌশল অবলম্বন করেছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মসনদের ‘খাসবরদার’ বা ‘একান্ত প্রহরী’রা। একটা দু’মুখো চালের চৌকস কৌশল ছিল সেটা। ল্য ছিল : চার বছরের দুর্নীতি দখলবাজি দুঃশাসন দলীয় দুর্বৃত্তায়ন দুরাচারের পাহাড় প্রমাণ আলামত থেকে সন্ধানী মিডিয়ার দৃষ্টি ফিরিয়ে অস্থিরমতি তরুণদের দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও শত্র“পরে ঘৃণার নাটকীয় পুনর্জাগরণের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন প্রাক-নির্বাচনী প্রচারের জোয়ার সৃষ্টি; একই সাথে ধিক্কারের ধাক্কায় জামায়াত-শিবিরকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন করে মহাজোট-বিরুদ্ধ ভোটব্যাংককে বিভক্ত করা এবং সেই ধাক্কায় এ দেশের মাটি থেকে জামায়াত-শিবিরের ‘ইসলামি জাগরণের রাজনীতি নির্মূল’ করে ভারতশক্তির প্রচ্ছন্ন বা প্রকাশ্য হিন্দুত্বের ধর্মনিরপেতাবাদের পরীা পাস। একটা সুপ্ত আশঙ্কার তাগিদও ছিল, পাছে সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতার বোঝার কারণে মতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে পুনর্নির্বাচনের অযোগ্য সাব্যস্ত করে ভারতশক্তি তার ভূরাজনৈতিক বোঝাপড়ার জন্য এ দেশে মতার পরীতি প্রতিদ্বন্দ্বী সংসদীয় বিরোধী দলনেতার দিকে বাস্তবিক ঝুঁকে না পড়ে।

প্রধানমন্ত্রীর খাসমুনশিরা ভেবেছিলেন, বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালের হাজতবন্দী নেতাদের মুক্তির জন্য ঝটিকা মিছিল-বিােভ-হরতালে নিযুক্ত জামায়াত-শিবিরকে ‘প্রতিহত’ করতে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের ‘ফাঁসির রায়’ নিশ্চিত করতে ৫ ফেব্র“য়ারি থেকে মাসাধিককাল ধরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যালয়ের সুনজরে, ২৪ ঘণ্টার কড়া নিরাপত্তা পাহারায় চৌরাস্তা বন্ধ করে, দুটো বড় হাসপাতালের রোগী আর দর্শনার্থীর ভিড় জিম্মি করে আর একুশের বইমেলাকে জব্দ করে শাহবাগে সুশীলসমাজের তরুণ প্রজন্মের যে আনন্দমেলা নাট্যোৎসব স্লোগানবাজি রাত্রিজাগরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে গণজাগরণ ঘটেছে বলা যাবে। মূল্যস্ফীতিকাতর জনসমাজের সাথে ‘ডিজিটাল’ বাংলাদেশের ওই জাগরণ মঞ্চ যে মোটেও সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেনি, মিডিয়ার তৈরি ধাঁধায় সেই বাস্তবতার উপলব্ধি শুধু সরকারের নয়, প্রথম দিকে প্রধান বিরোধী দলেরও ছিল না বলতে হবে। আর সেই ধাঁধায় ওই খাসমুনশিরাও বাড়াবাড়ি করে ফেললেন।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় বা অনুষ্ঠানে দোয়াদরুদ পড়তে বা কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে অভ্যস্ত। শাহবাগে ভারতীয় কায়দায় প্রদীপ জ্বালিয়ে উপাসনার ভঙ্গিতে ‘জাগরণ’ মঞ্চের আমদরবার তাদের ভালো লাগেনি। তারপর যখন ওই আনন্দমেলার নায়ক কিছু ব্লগারদের ইন্টারনেট বার্তায় নিয়মিতভাবে মহানবী সা: ও ইসলামের অবমাননা এবং কুৎসা রটনার কাহিনী ফাঁস হলো, তখন ক্রোধে বেদনায় ফেটে পড়েছে জনসমাজের ‘পবিত্র ঘৃণা’। জাগরণ মঞ্চের বন্দর যাত্রা রুখে দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম নামে আল্লামা- মাশায়েখ-ইমাম-মুদাররেসদের সংগঠন। নেতৃত্বে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার ওলামায়ে কেরাম। তাদের প্রতিজ্ঞা মহানবী সা: নিয়ে কটূক্তিকারী শাহবাগীদের পীর দরবেশ অলি আউলিয়ার পীঠস্থান চট্টগ্রামে পা ফেলতে দেয়া হবে না। তাতে শুধু যে ১৩ মার্চ চট্টগ্রামে জাগরণ মঞ্চের বিজ্ঞাপিত সমাবেশ স্থগিত হলো তাই নয়, হেফাজতে ইসলামের আমিরের সাথে আলোচনাপ্রত্যাশী জাগরণ মঞ্চ নেতা ডা: ইমরান সরকারের ডেলিগেশনকেও চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে নিরাপত্তার জন্য ফেনী থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
‘শাহবাগী ব্লগার’দের প্রতিরোধে চট্টগ্রামের মতো অন্যান্য জেলাতেও ফুঁসে উঠেছে ‘তৌহিদি জনতা’র ুব্ধ প্রতিক্রিয়া। ৬ এপ্রিল সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম। বাধা পেলে লাগাতার হরতাল। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: তথা ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তিকারী শাহবাগের ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ১৫ এপ্রিল শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিােভ-সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম, ইত্তেফাকুল উলামা, ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতা। যেকোনো মূল্যে ব্লগারদের উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ ঠেকানো হবে বলে ঘোষণা করেছে রাজশাহী হেফাজতে ইসলাম। শাহবাগীদের প্রতিহত করতে রাজশাহীর ৩১৩ ইমাম শহীদ হওয়ার শপথ নিয়েছেন।
অন্য দিকে সরকারের পুলিশ মাওলানা সাঈদীর ফাঁসির আদেশ রদ আর আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে সরকারের পুলিশ আন্দোলনকারী জামায়াত-শিবির কর্মীদের সারা দেশে পিটিয়েই চলেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশকে আদেশ দিয়েছেন, জামায়াত-শিবিরকে পিকেটরত দেখলেই গুলি করা যাবে। পুলিশ সে আদেশ পালন করে চলেছে। তাতে ১৫ দিনে ১৭০ জনের মৃত্যু ঘটেছে বলে দাবি করেছেন সংসদীয় বিরোধী দলনেতা ও ১৮-দলীয় বিরোধী জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। একাত্তরে যেমন বাংলাদেশের বাসিন্দাদের ভয় দেখিয়ে কাবু করতে গণহত্যা করেছিল ইয়াহিয়ার দখলদার বাহিনী, তেমনি শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনীও ইসলামি চেতনার মানুষকে ভয় দেখিয়ে কাবু করতে গণহত্যায় নেমেছে বলে জানান দিলেন খালেদা জিয়া। বাস্তবিক, শাহবাগের মেকি ‘জাগরণ’-এর প্রচারবাদ্য দেশব্যাপী ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রকৃত গণজাগরণের উদ্ভব ঘটিয়েছে। মতার লড়াইয়ে তার পুরো ফায়দা নিতে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে নেমে পড়েছেন সংসদীয় বিরোধী নেতা ও তার জোট। ১১ মার্চ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে পুলিশি হামলা এবং কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বিরোধী জোটের ১৫৪ জন নেতাকর্মীকে ঢালাওভাবে আটক করার প্রতিবাদে ১৮-দলীয় জোট ১২ মার্চ হরতাল পালন করেছে। ১৯ ঘণ্টা পর তিন শীর্ষ বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল-সাদেক হোসেন খোকা-আলতাফ চৌধুরীকে মুক্তি দেয়া হলেও বাকি নেতাদের মুক্তির দাবিতে তাদের নির্বাচনী এলাকার জেলাশহরগুলোতে হরতাল হয়েছে, ১৮-১৯ মার্চ দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে বিরোধী জোট। ১৩ মার্চ ঢাকায় নয়াপল্টনে প্রধান কার্যালয়ে এসে উপস্থিত নেতাকর্মী ও সমবেত জনতাকে খালেদা জিয়া বলেন, ‘গণহত্যার দায় প্রধানমন্ত্রীর। এই হত্যাকাণ্ডে ১৭০ জন নিহত হয়েছে। সরকারের এক নম্বর থেকে সব ক’টি মানবতাবিরোধী অপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।’
এভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির পুনর্জাগরণের ল্েয পাতা ফাঁদে প্রধানমন্ত্রীর খাসমুনশিদেরই ফেলে দিয়েছে মরমি বাংলাদেশের লোকজ মূল্যবোধের পুনর্জাগরণ। সেই সুবাদে সঙ্ঘাত, দলবাজি আর দোষারোপের রাজনীতির রেওয়াজ আর সাংবিধানিক সঙ্কট যে কী নিদারুণভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তার নমুনা দিতে সংসদীয় বিরোধী দলনেতা ও প্রধানমন্ত্রী উভয়কেই অরে অরে উদ্ধৃত করছি।
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে ২৪ ফেব্র“য়ারি হরতাল সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে হতাহতদের পরিবার পরিজনকে দেখতে গিয়ে বিরোধী জোটনেত্রী খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকার একটি খুনি সরকার, জালিম সরকার। তারা প্রতিদিন বাংলাদেশের মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে। তারা দেশের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করছে। শেয়ারবাজারের টাকা লুট করেছে, হলমার্কের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক লুট করেছে, ডেসটিনির টাকা আত্মসাৎ করেছে। সব টাকা বিদেশে পাচার করেছে।
দেশবাসী মনে করেছিল সব দুর্নীতি, ব্যর্থতার মধ্যে এ সরকার অন্তত একটি ভালো কাজ করবে। তারা পদ্মা সেতুটি তৈরি করবে। কিন্তু দুর্নীতিবাজ সরকারের লোকজন সেতুর কাজ শুরুর আগেই কমিশন গ্রহণ ও দুর্নীতি করেছে। তাই বিদেশীরা এ সরকারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। বিদেশী ঋণ শোধ করতে হবে জনগণকে কিন্তু টাকা লুট করছে সরকারের লোকজন। তাই বিশ্বব্যাংকসহ আর্থিক সংস্থাগুলো টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার এখন মালয়েশিয়া থেকে টাকা আনার কথা বলছে। এসব ভাঁওতাবাজি। তারা পদ্মা সেতু করতে পারবে না। তবে ভবিষ্যতে আমরা পদ্মা সেতু করব। একটি নয় দুটি। একটি পাটুরিয়া, অন্যটি মাওয়ায় হবে।
এ সরকার একটি বিধর্মী সরকার। এরা না মুসলমান, না হিন্দু, না খ্রিষ্টান। তারা কোনো ধর্মই বিশ্বাস করে না। এ জন্য তারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা করে। আমাদের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মুসলমানদের ঢুকতে বাধা দেয়। পুলিশ তালা দিয়ে রাখে। মুসল্লিরা মসজিদে নামাজ পড়তে পারে না। অন্য দিকে শাহবাগীদের পাহারা দেয়। হিন্দু ভাইদের মন্দির ভাঙচুর করে, সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করছে। বাড়িঘরে লুটপাট করছে। এর আগে রামুতে বৌদ্ধদের উপাসনালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে। আওয়ামী লীগের লোকেরাই এর নেতৃত্ব দিয়েছে। পত্রপত্রিকায় তাদের ছবিও ছাপা হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সে হামলাকারীকেই পুরস্কার হিসেবে বিদেশ সফরে নিয়েছেন।
বিশ্বজিৎ। অবরোধে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে এ সংখ্যালঘু যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে। হাসপাতালে তাকে ঠিকমতো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। সেদিন আমাদের জনপ্রিয় নেতা পাবনার ইব্রাহিম মৃধাকে হত্যা করেছে। এ সরকার পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারছে। আমরা এভাবে মরতে পারি না, মরতে দিতে পারি না। তাই সারা দেশে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
এ সরকারের আমলে কোনো ধর্মের মানুষ নিরাপদ নয়। আমাদের সময়ে সব ধর্মের মানুষ সমান সুযোগ পেত। আমরা মসজিদে যেমন টাকা দিয়েছি মন্দির-গির্জায়ও টাকা দিয়েছি। সব ধর্মকে সমান গুরুত্ব দিয়েছি। ব্যর্থ হয়ে বর্তমান সরকার শাহবাগের পরিকল্পনা করল।
তারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। এ কারণেই হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দির ভাঙচুর করে এবং ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে। এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা মুসলমানের জন্য ফরজ ও ঈমানি দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালন করতেই সেদিন গোবিন্দল গ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষ আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছিল। আর সে জন্যই দলীয় ও বিশেষ এলাকার পেটোয়া পুলিশ বাহিনী দিয়ে গুলি করে তাদের হত্যা করেছে সরকার। তাই এ সরকারের সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই। তাদের পতনই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়। এ জন্য হয়তো কিছু প্রাণ যাবে। তারপরও সবাইকে রাস্তায় বের হয়ে আসতে হবে।
আজ দেশের এমন পরিস্থিতি, কৃষক কৃষিপণ্যের মূল্য পাচ্ছে না। গরিব মানুষ ঠিকমতো খেতে পারছে না। চাল-ডাল সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। আওয়ামী লীগের সাথে দুর্ভিরে সম্পর্ক আছে। আপনারা জানেন, ’৭৪ সালের দুর্ভিে ৭০ লাখ মানুষ মারা গেছে। আওয়ামী লীগ মানুষ মারতে ওস্তাদ। ’৭২-’৭৫ সালে রীবাহিনী দিয়ে ৪০ হাজার মানুষ হত্যা করেছে। এবার পুলিশ বাহিনী দিয়ে এক মাসে ১৭০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এ গণহত্যার দায়ে এ সরকারের বিচার অবশ্যই হবে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে শেখ হাসিনাকে হুকুমের আসামি করে বিচার করা হবে। খুনি সরকারকে আর মতায় থাকতে দেয়া যায় না।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা কেউ কেউ খালেদা জিয়ার এই ‘সরকার পতনের এক দফা’ লড়াইয়ের অর্থ করেছেন : তার ১৮-দলীয় জোট এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে মহাজোট নেতৃত্বের সাথে মীমাংসার অপো করবে না; নব্বই সালের মতো সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন সমর্থিত যেকোনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে মতা ছেড়ে দিতে শেখ হাসিনাকে বাধ্য করবে হরতাল অবরোধ আর টানা অস্থিরতার মাধ্যমে।
অন্য দিকে বাহ্যত অবিচলিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফর্দ জাহির আর ফলক উন্মোচনের প্রাক-নির্বাচনী অভিযানের ফাঁকে ১৮-দলীয় জোটের লাগাতার ৩৬ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিন ১৮ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় বলেছেন : ‘‘বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া মানুষের জীবন ও রক্ত নিয়ে খেলা করে বাংলাদেশকে ধ্বংস করে মতার মসনদে বসতে চান। তার রক্ত পিপাসা এখনো মেটেনি। যুদ্ধাপরাধীদের রা করার জন্য দেশকে ধ্বংস করতে তিনি আরো রক্ত চান।
অনেক জীবন নিয়েছেন। আপনি নিয়েছেন, আপনার স্বামীও নিয়েছেন। একের পর এক বিরোধীদলীয় নেতাকে হত্যা করেছেন, সেনা অফিসারদের বিনাবিচারে ফাঁসি দিয়েছেন, এমনকি নিজ দলের নেতাদেরও হত্যা করেছেন। খুনিদের রা, লালনপালন ও মদদ দেয়াই জন্মলগ্ন থেকে তাদের চরিত্র। কিন্তু বাংলার মাটিতে আর একটিও প্রাণ ঝরুক, তা আমরা চাই না।
বিরোধীদলীয় নেতার ভালো একটা গুণ হলো- সর্প হয়ে দর্শন করে ওঝা হয়ে ঝাড়া। তিনি নিজেই তাণ্ডব সৃষ্টি করে আবার সহানুভূতিও জানাচ্ছেন। সারা দেশে মন্দিরে হামলা চালাচ্ছেন। তবে জনগণ তার এ নাটক বুঝতে পেরেছে। তাণ্ডবের দায়ভার খালেদা জিয়াকেই নিতে হবে। জুমার নামাজ শেষে সালাম ফেরানোর আগেই যারা তাণ্ডব শুরু করে তারা কেমন মুসলমান?
পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে কাজ করছে। আর আপনারা কি না তাদের ওপরই হামলা করছেন। যারা জনগণের জানমালের বিঘœ ঘটানোর চেষ্টা করবে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।’’
‘বাংলার মাটিতে আর কোনো রক্তপাত ঘটুক, আর একটি মানুষের প্রাণ যাক, আর কোনো মায়ের কোল খালি হোক, আমরা তা চাই না। মানুষ হত্যার চেষ্টা বন্ধ করতে সরকার যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা কেউ কেউ শেখ হাসিনার এই শেষোক্ত বক্তব্যের অর্থ করেছেন, রাজনৈতিক বিরোধিতা ও অস্থিরতা দমনে ‘ যেকোনো ব্যবস্থা’ বলতে প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সামরিক বাহিনী তলবের চরম ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বাভাস দিয়েছেন। তার দলের কেউ কেউ কিংবা তারই ঘরানার নাগরিক সমাজের যে যাই বলুন না কেন, তার দেয়া শর্তের নির্বাচন ছাড়া কোনো রাজনৈতিক মীমাংসার পথ খোলা রাখতে তিনি রাজি নন।
এই অমীমাংসার পরিণতি ’৭৫, ’৮২, ’৯০ আর ২০০৭ সালের মতো আবারো একটা রাষ্ট্রীয় ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ হস্তেেপর রেওয়াজকে পুনরুজ্জীবিত করবে কি না, সে সম্পর্কে শেখ হাসিনার মহাজোটেরই দোসর জাতীয়তাবাদ আর ইসলামি ভাবধারার যুগের মুখোশধারী জোটবদল প্রয়াসী সাবেক রাষ্ট্রপতি জাঁদরেল এরশাদ একরকম খোলাসা করেই কথা বলেছেন। ১৬ মার্চ রাত দুপুরেতথা ১৭ মার্চ প্রহর গণনার শুরুতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একুশে টিভির ‘টকশো’ -তে দীর্ঘ সাাৎকারে বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, আমিই বাংলাদেশের শেষ সেনাশাসক। আমার পর আর কোনো সেনাশাসক আসবে না। এখনো বলছি, বাংলাদেশে আর কোনো সেনাশাসন আসার সম্ভাবনা নেই, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মতা হস্তান্তরের জন্য তৃতীয় শক্তির সমর্থন প্রয়োজন হতে পারে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এ ছাড়া আর  কোনো উপায়ও থাকবে না।’
ইতোমধ্যে ভারতের দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় ১৪ মার্চ অনলাইনে মন্তব্য প্রতিবেদন বেরিয়েছে : ‘(বাংলাদেশের) স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে এক মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন চলছে।… তবে ঢাকার অন্য অংশগুলোর রাজপথ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে রণেেত্র পরিণত হয়েছে। এর এক পে রয়েছে জামায়াত-ছাত্রশিবির। অন্য পে রয়েছে পুলিশ। জামায়াত-শিবির ও বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বেশ কতগুলো হরতাল ও ধর্মঘট করেছে। শাহবাগের আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগের পাল্টা পদপে এতে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।… আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেক রকম কথা আছে। অনেকে বিশ্বাস করেন, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নির্বাচনমুখী।… তবে অন্য আরেকটি প মনে করে, শাহবাগের আন্দোলন ও জামায়াতের সাথে মুখোমুখি অবস্থান অতিমাত্রায় রাজনীতিকেরণ করা হয়েছে। এর দায় মতাসীন আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। বাংলাদেশ এখন গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির দ্বারপ্রান্তে। এ অবস্থা গণতন্ত্র ও অর্থনীতির জন্য শুভ নয়। এই প বিশ্বাস করে, পরিস্থিতির দিকে ঘনিষ্ঠ নজরদারি করছে দেশের সেনাবাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা কার্যকর পদপে নিতে পারে। এমনকি, তা হতে পারে ঢাকায় সামরিক হস্তপে।’ অধিক মন্তব্য নি®প্রয়োজন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads