শনিবার, ৯ মার্চ, ২০১৩

নাস্তিক, মুরতাদ ও ধর্মদ্রোহীদের মিলনমেলা শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ


আসাদুল্লাহ আরসালান :
 অনেকদিন যাবত লিখছি না। সময় এবং মনমানসিকতাই এর প্রতিবন্ধক। তারপরও বিবেকের তাড়নায় এই প্রয়াস। এক মাস হলো গণতন্ত্রের লেবাস ধরে নাস্তিক মুরতাদ, নেশাখোর, জেনাখোর, তথাকথিত ব­গার ও ফ্যাসিবাদীদের মিলনমেলা বসেছে শাহবাগ চত্বরে। সরকারের প্রশ্রয়ে ও প্রটেকশনে তিন স্তর নিরাপত্তা বলয়ে এই ব্যবস্থা। একশ্রেণীর হলুদ সাংবাদিক ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার লাইভ প্রচারণা এই অনৈতিক সমাবেশকে উজ্জীবিত করেছে। তাদের মূল লক্ষ্য ইসলামী দল ও প্রতিষ্ঠানের নাম নিশানা এদেশ থেকে মুছে ফেলা এবং নাস্তিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। এক্ষেত্রে মূল কলকাঠি নাড়ছে র এবং মোসাদের এদেশীয় এজেন্টরা। আমি ঐ  সমাবেশে যাইনি, তবে মিডিয়া এবং প্রত্যক্ষদর্শীর মাধ্যমে যা জানতে পেরেছি সে অনুযায়ী ঐ সমাবেশের মূল কার্যক্রম নিমণরূপ :
(1)               যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের ফাঁসির দাবি। (২) জামায়াত-শিবিরসহ ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। (৩) নারী-পুরচষ দিবা রাত্রি বসবাস। (৪) গান-বাজনা, নৃত্য পরিবেশন এবং মদ, গাঁজা ও ফেনসিডিলের আসর পরিচালনা। (৫) ফ্রি খাবার এবং প্রতিদিন ৪০০/৫০০ টাকা করে নগদ সুবিধা। (৬) ইসলাম ও জাতীয়তাবাদের পক্ষের মিডিয়া বন্ধের দাবি। (৭) ইসলামী ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ সকল ইসলামী প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি। (৮) সরকারি ফরমানের অনুরূপ বিভিন্ন নির্দেশনা জারি (যা সরকারি ব্যবস্থাপনায় কার্যকরি হয়)। উলে­খিত কার্যক্রমের পাশাপাশি ইসলাম বিদ্বেষী ব­গাররা আল­vহ, রাসূল (সাঃ), তাঁর সম্মানিত স্ত্রী ও সঙ্গী সাহাবাদের চরিত্র হননের পাশাপাশি মৌলিক ইবাদত নিয়েও বিদ্রূপ করা হচ্ছে। অর্থাৎ ইসলামের বিরচদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে ইন্টারনেটে তা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী সরকারের কাঁধে ভর করে নাস্তিক মুরতাদরা নির্বিঘ্নে এই অপকর্ম করে যাচ্ছে। ৯০% মুসলমানের দেশে এহেন কাজ কি কল্পনা করা যায়? সালমান রচশদী, দাউদ হায়াদর, তাসলিমা নাসরিনদেরকেও হার মানিয়েছে শাহবাগের তথাকথিত প্রজন্ম চত্বরের এই ব­গাররা। এক লোক প্রশ্ন করেছেন শাহবাগের যুবক-যুবতীদের একত্রে রাত্রি যাপন এবং অবৈধ মিলনের ফসল হিসেবে ৯-১০ মাস পরে যে অবৈধ সন্তান জন্ম নিবে তার দায় নিবে কে? সরকারি কলেজের এক প্রফেসরের সূত্র মতে প্রতিরাতে শাহবাগ এলাকার ওষুধের দোকানে লক্ষাধিক টাকার নানা উপকরণ বিক্রি হয়। জামায়াত শিবিরকে এ জন্য দায়ী করা হবে কিনা কে জানে। এই অবৈধ কাজকে বৈধতা দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদে বিল পাস করানোর জন্য আগামীতে দাবি আসতে পারে। শাহবাগ ঘুরে আসা এক লোক বললেন গাঁজার গন্ধে সেখানে নাক-মুখ চেপে ধরে রাখতে হয়। সকাল হলে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বস্তা বস্তা ফেনসিডিলের খালি বোতল উঠিয়ে নেয় বলে পত্রিকায় প্রকাশ। এই সুযোগে ছাত্রলীগ ও তাদের দোসর চাঁদাবাজদেরও পোয়াবারো। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের নিকট ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় শাহবাগের কর্মসূচির নাম করে কোটি কোটি টাকা চাঁদা উঠাচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি ছেলেমেয়েদের, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংহতি প্রকাশের জন্য জোর করে এখানে এনে মিডিয়ায় বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। কোন কোন মিডিয়া তাহরীর স্কোয়ারের বিকল্প হিসেবে শাহবাগ স্কোয়ার বলে প্রচার চালাচ্ছে, অথচ তাহরীর স্কোয়ার হয়েছিল স্বৈরাচার দূর করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, যার নেপথ্যে ছিল ইসলামী শক্তি। আর শাহবাগের আন্দোলন এর বিপরীত অর্থাৎ গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েমের জন্য যেখানে ইসলামের নাম নিশানা থাকবে না, থাকবে না মতপ্রকাশ ও কথা বলার স্বাধীনতা। শাহবাগ আন্দোলনের নেপথ্য নায়কের পাশাপাশি অতি উৎসাহী এক শ্রেণীর মিডিয়াকেও এ জন্য একদিন আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। রাত যতই গভীর হবে প্রভাত ততই এগিয়ে আসবে। গত ২২ ফেব্রচয়ারি শুক্রবারের তৌহিদী জনতার দেশব্যাপী বিক্ষোভ একটি ঝিলিক মাত্র। শাহবাগের নাস্তিক-মুরতাদদের স্বপ্ন নববই ভাগ মুসলমানের দেশে কখনো পূরণ হবে না। এদেশের মুসলমানরা নামায রোযার ক্ষেত্রে সবাই নিয়মিত না হতে পারে, বিভিন্ন ইসলামী দলে বিভক্ত হতে পারে কিন্তু ইসলামের মূলে আঘাত আসলে কেউ ঘরে বসে থাকবে না, তারই কিঞ্চিৎ নমুনা ছিল দেশব্যাপী শুক্রবারের প্রতিবাদ। দেশপ্রেমিক জনতা সারাদেশে গুঁড়িয়ে দিয়েছে সেই সকল অবৈধ মঞ্চ। যারা মনে করে কলম সৈনিক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার, আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম বন্ধ করলে পথ পরিষ্কার হবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করে।
সরকারি প্রটেকশনে তিন স্তরের নিরাপত্তা দিয়ে শাহবাগের নাটক মঞ্চস্থ করে বলা হচ্ছে জনতার মঞ্চ। অথচ বিরোধীদলকে সভা সমাবেশের লিখিত আবেদন সত্ত্বেও অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। বিরোধীদলকে অনুমতি দেয়া হলে ১ ঘণ্টার ব্যবধানে এর চেয়ে ১০ গুণ লোক সমাগম করতে পারবে বলে বিরোধী দল চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। সরকার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেনি। বাম-রামরা শাহবাগের নাটক মঞ্চস্থ করতে পারলেও এর ফসল ঘরে তুলছে আওয়ামী লীগ। ইতিহাস সাক্ষী শেষ বেলায় রাম-বামরা আওয়ামী লীগের উচ্ছিষ্ট ভোগীই হয়ে থাকে। আরেকটি বিষয়ে জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল­vর বিরচদ্ধে যে রায় দিয়েছে তা জামায়াত মেনে নেয়নি সরকারও মেনে নেয়নি। আমরা জানি যে কোন বিচারে এক পক্ষ সংক্ষুব্ধ হয়ে ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করে। এখানে দুই পক্ষই সংক্ষুব্ধ এবং আপিল করেছে। বাদী-বিবাদী দুপক্ষেরই যদি ট্রাইব্যুনাল বা বিচারকের প্রতি আস্থা না থাকে সেখানে এই ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ বিধায় তাদের পদত্যাগ করা উচিত ছিল। একদিকে বলা হচ্ছে বিচার বিভাগ স্বাধীন অন্যদিকে খোদ প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলছেন শাহবাগের নাস্তিক-মুরতাদের দাবি অনুযায়ী মনোভাব বুঝে যেন রায় দেয়া হয়। এ যেন মগের মুল­yক।
  • রাজনৈতিক বিশে­ষক

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads