বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৩

আইনানুগ ও মানবিক হতে বাধ্য



গ্রেফতারের নিষ্ঠুর কৌশল প্রসঙ্গে একটি খবর মুদ্রিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। খবরটিতে বলা হয়, এক বছরের শিশুকে বাসায় রেখে চিকিৎসক মা গত শনিবার কাশিমপুর কারাগারে গিয়েছিলেন আটক অসুস্থ পিতাকে দেখতে। পিতা রাজশাহীর জনপ্রিয় জামায়াত নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আতাউর রহমান কিছুদিন ধরে কারাগারে বন্দী। তিনি চিকিৎসার জন্য রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসছিলেন। পুলিশ গত ১৯ ফেব্রচয়ারি কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে তাকে গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়। আতাউর রহমান ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে ভুগছেন। তার প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহের জন্য কন্যা ডা. জাকিয়া ফারহানা কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পিতার সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। ওষুধপত্র প্রদান শেষে বাসায় ফেরার পথে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা।
একটি দুগ্ধপোষ্য শিশুর জীবন বিপন্ন করে নিরপরাধ মাকে আটক করার ঘটনা খুবই অমানবিক ও অন্যায়। এ ঘটনায় মানবাধিকার সংস্থা পর্যবেক্ষক মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আটকের কারণ প্রসঙ্গে সংশি­ষ্টরা বলছেন, শিশুটির পিতা জামায়াত নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ একজন পলাতক আসামী। তাকে ধরতেই এ অমানবিক ও নিষ্ঠুর পন্থা অবলম্বন করেছে তারা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর  সদস্য আজকাল অমানবিক ও দৃষ্টিকটু এমন বহু ঘটনায় নিজের মতো করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও বেপরোয়া বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন। তাদের এ বক্তব্য কতটা আইনসম্মত ও মানবিক হচ্ছে, তা তারা বিবেচনায় আনছেন না। একজন বন্দী ও অসুস্থ রাজনৈতিক নেতাকে ওষুধ সরবরাহ শেষে বাসায় ফেরার পথে কন্যাকে গ্রেফতারের ঘটনা সম্পূর্ণ অমানবিক ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। গ্রেফতারকৃত ডা. জাকিয়া ফারহানা ১ বছর বয়সী একটি শিশুর মা। শিশুটিকে মায়ের বুকের দুধ খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়। এমতাবস্থায় র‌্যাব মাকে গ্রেফতার করে শিশুঅধিকার ও মাতৃঅধিকারের উপর আঘাত হেনেছে। র‌্যাবের এই আচরণ নারী ও শিশু আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে শিশুটির মায়ের সাহচার্য থেকে বঞ্চিত করেছে, আইনের দৃষ্টিতে তা সম্পূর্ণ অন্যায় ও গর্হিত কাজ। একটি স্বাধীন দেশের নির্বাচিত সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন কেমন করে এমন নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে তা ভাবতে গেলে বিস্মিত হতে হয়। এ কারণেই হয়তো আজকাল রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু গণতান্ত্রিক মোড়কে নির্বাচিত হলেই সরকার গণতান্ত্রিক হয়ে যায় না। জানি না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ঠুর আচরণের হুকুমতাদারা কখন এ বক্তব্যের মর্ম উপলব্ধি করবেন।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, সুশাসন ও দিনবদলের শ্লোগান দিয়ে ক্ষমতা আরোহণকারী বর্তমান সরকারের আমলে শুধু ভিন্ন মতের নেতা-কর্মীরা লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হচ্ছেন না, শিশু-নারী ও বৃদ্ধা নির্বিশেষে কারোই নিরাপত্তা নেই বর্তমান সময়ে। এমন দুঃসময়ে সরকার ভ্রষ্টনীতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ঠুরতার বিরচদ্ধে দেশের সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর যে ন্যায়সঙ্গত ভূমিকা পালনের কথা তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অথচ অতীতে ছোটখাট ঘটনায়ও আমাদের সুশীল সমাজ ও তথাকথিত সুমনা প্রগতিশীলদের কতভাবেই না সরব  পঞ্চমুখ হতে দেখা গেছে। এদের আচরণে এমন রকমফের দেখে প্রশ্ন জাগে সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলার মতো সাহসী মানুষের দুর্ভিক্ষের মাত্রা কি ক্রমেই বেড়ে চলেছে? সব কিছুই কি এখন রাজনীতির হিসেব-নিকেশ ও ক্ষুদ্র স্বার্থের চাতুর্যে নির্ণীত হচ্ছে? একটি সমাজের যখন এমন অবস্থা হয়, তখন শিশু-মায়ের অধিকারকে সুরক্ষা দেবে কে? সমাজের এমন অবস্থাকে অস্বাভাবিক অবস্থা হিসেবেই বিবেচনা করতে হয়। এমন অবস্থা সমাজকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার সংগ্রাম শুধু ন্যায়সঙ্গতই নয়, সময়ের অনিবার্য দাবিও বটে। তাই পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, দলমত নির্বিশেষে বিবেকবান সব মানুষের এখন উচিত দেশকে সাংবিধানিক পথে ও গণতান্ত্রিক চেতনায় বিকশিত করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের পথ বেছে নেয়া  কারণ  জনতার শক্তিই বড় শক্তি। জনতার আকাঙক্ষা ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের পথ বেছে নিলে বর্তমান বেপরোয়া সরকার ও তার পুলিশ বাহিনী হয়তো স্বাভাবিক ও ন্যায়সঙ্গত আচরণে ফিরে আসতে পারে। বিষয়টি উপলব্ধি করলেই দেশের ও জাতির মঙ্গল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads