শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৩

রক্তসণাত বাংলাদেশ : গণহত্যা ও প্রহসনের বিচার



বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট পর্যবেক্ষণ করলে মনে হয় একটি রাষ্ট্রবিহীন জনপদে বসবাস করছি আমরা। বিশেষ করে প্রতিবাদী ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগোষ্ঠী আজ চরম রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার এবং দলকানা মিডিয়ার দুর্গ্রহে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই নৈরাজ্যকর ও ভীতিকর হয়ে উঠেছে যে, রাস্তায় বেরচলে এই বুঝি পুলিশের গুলী খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম-এমন আশঙ্কা জনমনে বিরাজ করছে। বাংলাদেশে এখন সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই।
মাওলানা সাঈদীকে ফাঁসির রায় দেয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে সাঈদীপ্রিয় লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। প্রবাসে হাজার হাজার সাঈদীভক্তরাও ক্ষেপে ওঠে। মাওলানা সাঈদীর ফাঁসির রায় যে সম্পূর্ণ শাহবাগের দাবির বশবর্তী হয়ে দেয়া হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই সংসদে ট্রাইব্যুনালের বিচারকদেরকে শাহবাগের দিকে তাকিয়ে রায় দিতে বলেছিলেন। এতে নিশ্চিতভাবেই ট্রাইব্যুনালের বিচারের ওপর হস্তক্ষেপ এবং একজন বিচারকের রায় প্রদানের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে। আসক-এর নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেছিলেন, ‘বিচার বিভাগের ওপর চাপ সৃষ্টি করে পছন্দের কোন রায় বের করে আনার প্রবণতা সমাজে কোনোদিন ভালো ফল বয়ে আনবে না’। তাছাড়া সাঈদীর রায় পড়া শেষ হলে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আল­vমা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী স্বাভাবিকভাবেই কিছু বলতে কিংবা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে চাইলে জাবির ভিসি আনোয়ার হোসেন গালিগালাজ করে তাঁর দিকে তেড়ে যান। এরপর উপস্থিত প্রসিকিউশন ও আওয়ামী বুদ্ধিজীবী মুনতাসীর মামুনও সাঈদী সাহেবকে লক্ষ্য করে বলতে থাকেন ‘তুই রাজাকার তোর কোনো কথা নেই’, ‘রাজাকারের আবার কীসের কথা’, ‘তুই রাজাকার চুপ থাক’ ইত্যাকার কটু কথা। তারপর সাঈদী সাহেবকে কিছু বলতে না দিয়েই উপস্থিত পুলিশ তাঁকে হাজতবাসে নিয়ে যায়। এটাই হচ্ছে সরকারের তথাকথিত ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল’-এর নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচারের অবস্থা!!
আরো কথা আছে, সাঈদী সাহেবের রায় পড়া হয়েছে ‘দেইল­v শিকদারে’র নামে। কিন্তু দেইল­v শিকদার আর আল­vমা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এক ব্যক্তি নন। অথচ দেইল­v শিকদার ওরফে দেলু রাজাকারের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে আল­vমা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ওপর। এটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন বৈ কিছু নয়। একটি সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এহেন অমানবিকভাবে একজনের দায় অন্যজনের ওপর নির্বিঘ্নে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে-এটি ভাবতেই বিমূঢ় হয়ে যাই। তাই একদিকে যেমন সরকারের যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে প্রহসনের বিরচদ্ধে গণমানুষের অবস্থান, তেমনি আরেক দিকে শাহবাগ সমাবেশের উদ্যোক্তা কতিপয় নাস্তিক ও মহানবী (স.)-এর অবমাননাকারী ব­গারদের শাস্তির দাবিতে বাংলার তৌহিদী জনতা রাজপথে নেমে এসেছে। সুতরাং এ অবস্থায় তৌহিদী জনতার অব্যাহত প্রতিবাদী আন্দোলন-মিছিলের পরিপ্রেক্ষিতে দিশাহারা জুলুমবাজ ও ইসলামবিরোধী সরকার নিজেদের চূড়ান্ত পরিণামের কথা অনুভব করতে পেরে আজ প্রতিবাদী ধর্মপ্রাণ জনতার ওপর পুলিশ বাহিনীকে নির্বিচারে ‘দেখামাত্র গুলী করা’র নির্দেশ দিয়ে দেশজুড়ে নারকীয় হত্যালীলা চালাচ্ছে। মাত্র একদিনেই পৌনে একশ মানুষকে অতি নির্মমভাবে রাজপথে খুন করেছে পুলিশ। বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া একে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন। আর এখন নিহতের সংখ্যা তো দেড়শতাধিক পেরিয়ে গেছে! প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক মানুষ খুন হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে একাত্তরের পাক হানাদারের নৃশংসতার পর এটাই স্মরণকালের নৃশংস গণহত্যা। তাই কার্যত বাংলাদেশ আজ তৌহিদী জনতার পবিত্র রক্তে ভাসছে। আর ‘রক্ত পিপাসু খুনি’ সরকার চরম ক্ষমতার দাপটে সেই রক্তের নদীতে নৌকা ভাসিয়ে পৈশাচিক নৃত্যে উল­vস করছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ হত্যাযজ্ঞের দায়ভার বিরোধী নেত্রীর ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন। হলুদ মিডিয়া তো বরাবরই জামায়াত-শিবিরের বিরোধিতা করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের পক্ষাবলম্বন করছে, গণহত্যাকে পরোক্ষভাবে উস্কে দিচ্ছে। এহেন শ্বাসরচদ্ধকর ও অবরচদ্ধ অবস্থায় ধর্মপ্রাণ প্রতিবাদী মানুষকে দিন কাটাতে হচ্ছে। গুটিকয়েক নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষী ব­গারকে বাঁচাতে গিয়ে সরকার তাদের বিরচদ্ধে ‘জেহাদে’ নেমেছে। আততায়ীর হাতে খুন হওয়া সর্বজনবিদিত নাস্তিক ও রাসূল (স.)-এর অবমাননাকারী রাজীব হায়দার শোভনকে সরকার ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের শহীদ’ আখ্যা দিয়ে ইসলামে বিধৃত শহীদের মর্যাদার অবমাননা করেছে। তাছাড়া তদন্তে প্রমাণিত না হওয়ার আগেই রাজীব হত্যার জন্য দায়ী করা হয় জামায়াত-শিবিরকে। আর এখন এ নিয়ে ‘জজমিয়া’ নাটক সাজাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পত্রিকায় পড়লাম, ঐ মৃত জঘন্য নাস্তিকের জন্য মসজিদে দোয়া না করার ‘অপরাধে’ কয়েকজন ইমামকে অপদস্থ করে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ভাবতেই বিমূঢ় হয়ে যাই কোন্ দেশে বাস করছি আমরা। অবস্থাদৃষ্টে মনেই হয় না যে এটি নববই শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। নবম-দশম শ্রেণীর ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ে হিন্দুদের দেবদেবীকে আল­vহ্’র সমকক্ষ বানিয়ে চরম ধৃষ্টতার সাথে শিরক্ করা হয়েছে। এটি যে স্পষ্টভাবে পরিকল্পিত তা বলাই বাহুল্য। কারণ হুট করে এ ভুল হওয়ার কথা নয়, নতুন সংস্করণে এটি হয়েছে। সুতরাং যে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের বসবাস সেদেশে কী করে একটি সরকার এভাবে একের পর এক সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে পারে!
সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনের গুন্ডা ও ক্যাডাররা পরিকল্পিতভাবে গোপনে শহীদ মিনার ভেঙে, জাতীয় পতাকা পুড়ে এবং সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ও ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়ে কৌশলে সেসবের দায়ভার বিএনপি-জামায়াত জোটের ঘাড়ে চাপানোর পাঁয়তারা করছে। বাস্তবতা এমনই যে, আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুদের জন্য বরাবরই আশীর্বাদ হিসেবে পরিচিত হলেও আজ তাদের আমলেই সংখ্যালঘুদের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। ফলে অনিবার্যভাবেই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। সর্বত্র আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার ভারতের নরেন্দ্র মোদির মতো ‘সাম্প্রদায়িকতার কার্ড’ নিয়ে খেলতে চাইলেও সেটা ধোপে টিকবে বলে মনে হয় না। কেননা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এতদিনে নিশ্চয়ই বুঝে গেছে যে সরকার আসলে তাদেরকে রাজনৈতিক স্বার্থেই ব্যবহার করছে।
যাইহোক, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্য মূলত দুই ধরনের : এক. শুধু বিএনপি-জামায়াত জোটকেন্দ্রিক তথা একরৈখিক যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও কোণঠাসা করা। দুই. যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা বলে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফেরি করে বর্তমান প্রজন্মকে আওয়ামীপন্থী বানিয়ে ভোটার তৈরি করা। মূলত এই দুই উদ্দেশ্য নিয়েই সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রহসন চালিয়ে যাচ্ছে। এটা জনগণের কাম্য ছিল না। তাছাড়া সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপি সংলাপ ফাঁস হওয়ার কারণে দেশে-বিদেশে ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আরেকটি কথা বলতেই হবে, সেটি হচ্ছে, তথাকথিত সুশীল ও লেফি্টস্ট সেক্যুলার শ্রেণী যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রসঙ্গ তুলে জামায়াতের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন এবং একই সাথে সুকৌশলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধেরও জোর মতপ্রকাশ করেন। এরা যতই আস্ফালন করচক, এদের কথা জনগণ আমলে না নিয়েই সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু ধর্মীয় রাজনীতি তথা ইসলামী রাজনীতির প্রতি জনগণের সমর্থন ষোলকলায় পূর্ণ। এ কারণেই ওদের সেক্যুলার রাজনীতি বারবার ইসলামী রাজনীতির কাছে পরাজিত হয়ে চলছে। তাই বাউন্ডুলে ও অথর্ব সেক্যুলার গোষ্ঠী প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরচদ্ধে সুযোগ পেলেই অনবরত বিষোদ্গার ও বিরোধিতা করে।
শাহবাগের কথিত ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ আজ আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের মুৎসুদ্দীতে পরিণত হয়েছে। সরকারি দলের অনুগত বা অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণাধীন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার যা সিদ্ধান্ত বা হুকুম দিচ্ছে, তা-ই সরকার বাধ্য খুকুর মতো পালন করছে। সঙ্গত কারণেই বলা যায়, ‘রাষ্ট্রের ভেতরে আরেক রাষ্ট্রে’র জন্ম হয়েছে। সুতরাং শাহবাগ আর সরকার এখন প্যারালাল বা সমান্তরাল পর্যায়ে পৌঁছেছে। শাহবাগ তথা গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ভিন্ন মতাবলম্বী সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের বিরচদ্ধে ফ্যাসিবাদী উস্কানি দেয়া হচ্ছে। নির্ভিক ও সত্যবাদী জনপ্রিয় কলামিস্ট মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়েছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানানো হচ্ছে। সুতরাং এসবের পেছনে কারা কলকাঠি নাড়ছে এবং গণজাগরণ মঞ্চটি কাদের স্বার্থবাহী প্রজেক্ট তা এখন আর কারো অজানা নয়। কিন্তু মনে রাখা দরকার, ‘আইনের শাসন আর শাহবাগ এক সাথে চলতে পারে না’। সরকার যখন মহা মহা কেলেঙ্কারিসহ নানা ধরনের ব্যর্থতা ও অক্ষমতায় ধুঁকছিল ঠিক তখনই সরকারের জন্য আশীর্বাদরূপে হাজির হয় শাহবাগ সমাবেশ। মেঘ না চাইতেই জল। এমন সুযোগ কি আর হাতছাড়া করা যায়। ভারতও মদদ দিতে শুরচ করে। সরকারও কোনোমতে খড়কুটো ধরে ডুবন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার পায়। এছাড়া শাহবাগে ছোট ছোট শিশু ও কিশোরদের মুখ দিয়ে প্রতিমুহূর্তেই ফাঁসি চাই, জবাই কর, আগুন জ্বালাও ইত্যাদি প্রকারের বিদ্বেষমূলক ও সহিংস †¯­vগান বের করে তাদের মধ্যে ফ্যাসিবাদের বীজ বপন করে দেয়া হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎপ্রজন্মের জন্য এবং আগামী সমাজ বিনির্মাণে কুফল বয়ে আনবে। 
শাহবাগী লোকদের মানসিকতা সম্পর্কে কিছু কথা না বললেই নয়, শাহবাগ মোড়ে তারা জমায়েত হয়ে সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চায়, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি জানায় কিন্তু সরকারি ষড়যন্ত্রে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে ক্ষুদ্র ও পেশাজীবী ঘারানার লাখ লাখ বিনিয়োগকারীকে সর্বস্বান্ত করে পথে বসানো, ডেসটিনি-হলমার্ক কেলেঙ্কারি ও রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারি সহযোগিতায় দলীয় অনুগতদের ব্যাপক লুটপাটের সুযোগ করে দেয়া, কতিপয় সরকারি উচ্চপদস্থ (মন্ত্রীপদসহ) ব্যক্তির দুর্নীতির দায়ে পদ্মা সেতুর বিদেশী অর্থায়ন ও সাহায্য বন্ধ হয়ে দেশবাসীর মহাস্বপ্ন ধূলিসাৎ হওয়া, সাগর-রচনি হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করতে না পারা, সবার কাঙিক্ষত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির পুনঃপ্রবর্তন ইত্যাদি দাবি ও ইস্যুতে শাহবাগী প্রজন্ম চত্বরে কোনো প্রতিবাদের আওয়াজ শোনা যায়নি। যদি তারা সরকারের যাবতীয় দুর্নীতি ও অন্যায়-জুলুম-শোষণ-নিষ্পেষণের বিরচদ্ধেও প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে জাগ্রত হতো তাহলে সরকার সেসব দুর্নীতি ও হত্যকান্ডের তদন্ত করে চিহ্নিতদের শাস্তি দিতে অবশ্যই বাধ্য হতো। কিন্তু না, শাহবাগী তরচণ প্রজন্মের মানসিকতা এমন ভোঁতা হয়ে আছে যে, ক্ষমতাসীন দলের প্রচার-প্রপাগান্ডায় তারা অন্ধভাবে বিশ্বস্ত হয়ে স্বীয় বোধ ও চিন্তাশক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে। প্রকৃত বাস্তবতা অনুধাবনে তারা দ্বিধান্বিত হয়ে আছে। তাই সরকার তাদের মগজ যেভাবে ধোলাই করেছে তারাও সেভাবে ওয়াশ হয়েছে। ব্যস্ এখানেই সরকারের পোয়াবারো। যুদ্ধাপরাধের বিচার যদি সরকার সত্যিই করতে চায়, তাহলে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে পাকিস্তান আর্মির যে ১৯৫ জন চিহ্নিত খাস্ যুদ্ধাপরাধীকে ছেড়ে দিয়েছিলেন, আগে তাদের বিচারের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে আমরা ক্রাইমের আন্তর্জাতিক আদালতেও যেতে পারি। কিন্তু প্রকৃত ক্রিমিনালদের বিচার না করে শুধু কোলাবোরেটরদের বিচার করলেই কি যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুটির সমাধান হবে? তাই এখন সবার কাছে এটা স্পষ্ট যে, জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করতেই মূলত সরকার একতরফা যুদ্ধাপরাধের বিচার করছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে আজ শাহবাগী তরচণ প্রজন্মকে চরমভাবে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ সরকারের রাজনৈতিক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিকৃত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে শেখ হাসিনার সরকার। একাত্তরে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি মূলত ঔপনিবেশিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিলাভের জন্য, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। অথচ ধর্মনিরপেক্ষতার চর্বিত-চর্বণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ইসলাম ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বিপ্রতীপে দাঁড় করানোর অপপ্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে। আজকে ক্ষমতার দাপটে যারা নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষের শক্তি দাবি করেন এবং প্রতিপক্ষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষ শক্তি প্রমাণপূর্বক নিশ্চিহ্ন করার ফ্যাসিবাদী আকাঙক্ষায় আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন তাদেরকে শুধু একটা কথাই মনে রাখতে বলব, ‘সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়’। বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে রাজনৈতিক বিভক্তি সৃষ্টি করা কোনোক্রমেই দেশের জন্য শুভ নয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads