রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৩

সরকারকে হতে হয় জনমন পাঠক


একটি রাজনৈতিক দল যখন গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল আস্থাবান হয়, তখন জনগণই হয় সে দলের সব রাজনৈতিক বিবেচনার কেন্দ্রবিন্দু। জনগণের চাওয়া-পাওয়া আর মঙ্গলের প্রতি মনোযোগী হয়ে দলটির যাবতীয় কর্মসূচি প্রণীত ও চর্চিত হয় জনগণের মন জয় করার প্রয়াসে। কারণ, গণতান্ত্রিক সমাজের যেকোনো রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণের ম্যান্ডেট। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে একটি দলকে ক্ষমতাসীন হয়ে তাদের প্রতিশ্রুত আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হয়। তাই একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার একমাত্র মাপকাঠি হচ্ছে দলটিকে দেশের জনগণ কতটুকু পছন্দ করে তার ওপর। তাই যে দল যত বেশি জনপ্রিয়, সে দল দেশের ভেতরে ও বাইরে ততটুকু গুরুত্বপূর্ণ। জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় থাকলে সে দলের কোনো গুরুত্ব নেই। একটা কথা এ ক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, জনগণের চাওয়া-পাওয়ার সাথে সামঞ্জস্যহীন ও জনকল্যাণের সাথে সংশ্লিষ্টহীন রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল কখনোই জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত হতে পারে না। তাই একটি রাজনৈতিক দলকে সার্থক ও জনপ্রিয় করে তোলার জন্য প্রয়োজন জনদাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করা। এই চাহিদা পূরণ করতে না পারলে একটি দল যেমন জনপ্রিয় দলে পরিণত হতে পারে না, তেমনি একই কারণে একটি জনপ্রিয় দল এর জনপ্রিয়তা দ্রুত হারিয়ে ফেলতে পারে। জনগণের চাওয়া-পাওয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়ে দলটি যখন সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক ভাবনাতাড়িত হয়ে নানা কূটকচালে ক্ষমতায় টিকে থাকার কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার বিতর্কিত নানা খেলায় মেতে ওঠে তখনই দেখা দেয় যাবতীয় বিপত্তি। সূচনা হয় নানামাত্রিক রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার। দলটির যাবতীয় কর্মকাণ্ড তখন চলে শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এসব কর্মকাণ্ড সত্যিকারের জাতীয় উন্নয়ন কতটুকু বয়ে আনবে তা বিবেচনা না করে, এতে ভোটের পাল্লা কতটুকু ভারী হবে সে ভাবনায়ই মত্ত থাকেন দলের নেতাকর্মীরা। আর এ জন্য প্রয়োজনে অবলম্বন করে নানা অপকৌশল। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো কম-বেশি এ ধরনের একটি প্রবণতায়ই ভোগে। ফলে আমরা দেশটিকে একটি জনকল্যাণ রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করা নিশ্চিত করতে পারিনি; বরং উল্টো দেশটিতে জনদুর্ভোগের মাত্রা কেবলই বাড়িয়ে তুলছি। পাশাপাশি দেশটিকে ঠেলে দিচ্ছি নানামাত্রিক অনিশ্চয়তার দিকে। মানুষ ভুগছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। এমনই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট দলটির জনপ্রিয়তার পারদমাত্রা শুধু নিচে নামতেই থাকে। আর তখন দলের নেতাকর্মীরা সভা-সমিতিতে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে শুধু নিজের ঢাকঢোল পেটাতে থাকেন। শুধু বলতে থাকেন আমরা এই করেছি, ওই করেছি। কিন্তু তাতে জন-আস্থা ফেরে না। জনগণের কল্যাণচিন্তার মহাসড়ক ছেড়ে দলীয় চিন্তায় বিভোর হলে এমনটিই হয়। আর এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শুধু দলটিই হয় না, ‘এক ঘরের পাপে শত ঘর ধাপে’ নামের সুপ্রচলিত প্রবাদটির প্রতিফলন ক্ষতির মুখে পড়ে গোটা জাতির সব মহল। আজকের এই সময়টা বাংলাদেশের মানুষ এমনই একটি পরিস্থিতিতে নিমজ্জিত। আজ আমরা জানি না, আমাদের গন্তব্য কোথায়। আজ সবার কাছেই মনে হচ্ছে, আমরা এই মুহূর্তে যে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি সেখান থেকে যেন ফেরার কোনো পথ থাকছে না।

এ দেশের মানুষ দেখেছে, বর্তমান সরকার এবার ক্ষমতায় আসার পর সারাক্ষণ যেন ব্যস্ত রয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন ও নির্মূল করার কাজে। এ কাজে সরকারপক্ষ প্রকাশ্যে যেসব পদ্ধতি-প্রক্রিয়া অবলম্বন করে চলেছে, তা কোনো মতেই গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এসব কর্মকাণ্ড আইনের শাসনকে রীতিমতো লঙ্ঘন করে। তবুও সরকারি দলের অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড থামছে না। বিরোধী দলকে রাজপথে নেমে মিছিল-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। সারা দেশে যেখানেই বিরোধী দল সভা-সমাবেশ ডাকে, সেখানে সরকারি দল বা অঙ্গসংগঠন সমাবেশ ডাকে। এ প্রেক্ষাপটে পুলিশ সমাবেশস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করে কার্যত বিরোধী দলের সমাবেশ করতে না দেয়ার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। আর বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার রীতিমতো এক মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে লুটপাট চলে। অব্যাহতভাবে সরকারের উদ্দেশ্য প্রণোদিত রাজনৈতিক হয়রানি মামলায় বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী হয় কারাগারে, না হয় ফেরারি। শীর্ষ সারির নেতাদের ওপর উপর্যুপরি মামলা, গ্রেফতারও চলছে সমানতালে।
নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করার জন্য এ সরকারের  কূটচালের শেষ নেই। ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভেঙে দু-টুকরো করা, ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে মামলার ফাঁদে ফেলে তা পিছিয়ে দেয়া, জাতীয় নির্বাচনের আসনের এলাকা সরকারি দলের চাহিদামতো পুনর্নির্ধারণ ও আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সরকারি দলের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করাÑ এসবই নির্বাচনী জয় নিশ্চিত করে ক্ষমতায় টিকে থাকার অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। আজ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই যদি হয়, তবে ১৯৯৬ সালে যখন জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কায়েমে ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করে হরতালের পর হরতাল দিয়ে দেশ অচল করে দিয়ে তা বাস্তবায়নে বিএনপি সরকারকে বাধ্য করেছিল, তখন কি আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে সে বোধ জাগেনি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অগণতান্ত্রিক, তখন কি তাদের আক্কেল দাঁত ওঠেনি। মনে হয় এবার তাদের আক্কেল দাঁত উঠেছে। আর এখন এরা বুঝতে পেরেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গণতান্ত্রিক নয়। আসলে আওয়ামী লীগ যখন দেখছে, এ সরকারের চলতি মেয়াদের নানা জনবিরোধী কর্মকাণ্ড সরকারের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে, তখনই সরকার নানা অপকৌশল খুঁজতে থাকে, কী করে দলীয় সরকারের অধীনে যেনতেনভাবে পেশিশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আগামী মেয়াদেও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা যায়। দেশের সাধারণ মানুষও বোঝে, এ চিন্তাতেই সরকার আদালতের দোহাই দিয়ে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা তাড়াহুড়া করে বাদ দিয়েছে। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে আগামী নির্বাচন হোক, সেটাই এখন জনদাবি। কিন্তু সরকার বিরোধী দলের এ দাবির প্রতি কান দিচ্ছে না, বরং আরো জোর দিয়ে বলছে, আগামী নির্বাচন হবে দলীয় সরকারের অধীনেই। কোনো কোনো নেতা বলছেন, বিরোধী দলকে শেখ হাসিনার অধীনে দলীয় সরকারের দেয়া নির্বাচনেই অংশ নিতে হবে এবং বিরোধী দল তা করতে বাধ্য হবে।
এক দিকে সরকারি দল বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ আর নেই। অপর দিকে বিরোধী দলের এক কথাÑ যে নামেই অভিহিত করা হোক, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। সরকার তাতে রাজি না হলে দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। বুঝতে অসুবিধা হয় না, এমনি একটি প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, তা হলে জাতির সামনে বড় ধরনের কোনো বিয়োগান্ত কিছু অপেক্ষা করছে কি? এ প্রশ্নটি আরো জোরালো হয়ে দাঁড়িয়েছে, যখন এরই মধ্যে বিরোধী দল সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের সূচনার কথা বলতে শুরু করেছে। বিরোধী দল বলছে, আর আলোচনা নয়, এবার সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন।
এর বাইরে দেশের রাজনীতিতে গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে সূচনা ঘটেছে আরেক উপসর্গ। এ উপসর্গের নাম শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলে গত ৫ ফেব্রুয়ারি কিছু ব্লগার তাদের নিজেদেরকে তরুণ প্রজন্ম দাবি করে ঘোষণা দেয় ট্রাইব্যুনালের এই রায় মানি না। কাদের মোল্লাসহ অন্য যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিতে হবে। ফাঁসি ছাড়া অন্য কোনো রায় এরা মেনে নেবে না বলেও ঘোষণা দেয়। তাদের ফাঁসি না দেয়া পর্যন্ত এরা শাহবাগ চত্বর ছাড়বে না বলেও জানায়। তাদের এক কথাÑ ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই, ফাঁসির নিচে রায় নাই’। তখনই প্রশ্ন ওঠে, ফাঁসির নিচে কোনো রায় যদি না থাকে, তবে ট্রাইব্যুনাল চালু রেখে লাখো কোটি টাকা খরচ করে এই বিচারকাজ পরিচালনার দরকার কী? যাদের নামে সরকার যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে তাদের একসাথে ধরে নিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলেই সব সমস্যা দূর হয়। তরুণ প্রজন্মের দাবিও শত ভাগ পূরণ হয়। কিন্তু অনেকেই বলেন, শাহবাগের তরুণেরা কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার রায় মানি না, তাকে ফাঁসি দিতে হবে বলে যখন দাবি তুলল, তখনই কার্যত এরা আদালত অবমাননার কাজটি সম্পন্ন করল। এরা ন্যায়বিচার দাবি করতে পারত, কিন্তু তা না করে ‘ফাঁসির নিচে রায় নাই’ দাবি করে বসল।
শাহবাগ প্রজন্ম যখন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলো, তখন দেশের মানুষ বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই নেয়। অনেকটা দল বেঁধে বিভিন্ন মহল তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে শুরু করে। কিন্তু মাত্র ক’দিনেই দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল এরা কারা। বলা হলো, এরা কোনো দলের নয়। এরা দলমত নির্বিশেষে দেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, অচিরেই শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের চালকের আসনে সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের লোকজন। শাহবাগের তরুণ প্রজন্ম পরিচয়টি ঢাকা পড়ে সেখানে এলো গণজাগরণ মঞ্চ। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিলো, সেখান থেকে কেন শুধু একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধীদের ফাঁসির দাবি উঠবে, কেন বিশ্বজিতের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি উঠবে না? কেন সেখানে দলবিশেষকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠবে? কেন দলবিশেষের লোকদের উদ্যোগ আয়োজনে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়ার দাবি উঠবে? কেন এসব প্রতিষ্ঠান বর্জন করার আহ্বান আসবে শাহবাগ মঞ্চ থেকে? কেন সরকারের সাথে ভিন্নমত পোষণকারী পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ার দাবি উঠবে শাহবাগ থেকে? কেন মাহমুদুর রহমানের মতো প্রতিবাদী সম্পাদককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের হুকুম জারি হবে শাহবাগ মঞ্চ থেকে? কেনো সরকার বিরোধী পত্রিকায় শাহবাগ মঞ্চে আগুন দেয়া হবে? কেনো শাহবাগ মঞ্চে উচ্চারিত স্লোগানে উজ্জীবিতরা পত্রিকা অফিসে পত্রিকার ছাপাখানায় আগুন দেবে? কেন সরকারের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিটি দাবির সাথে মিলে যাবে শাহবাগ মঞ্চের দাবি? তাহলে কি এই শাহবাগ মঞ্চ সরকারি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের কোনো গোপন লক্ষ্য নিয়েই সরকারই সৃষ্টি করেছে? তরুণ প্রজন্ম মঞ্চ কী করে এবং কেন হঠাৎ করে হয়ে উঠল গণজাগরণ মঞ্চ? এসব প্রশ্ন জনমনে আরো জোরালো হয়ে উঠল এদের প্রতি সরকারের অভাবনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেখে। খাওয়া-থাকা ও তিন স্তরের নিরাপত্তা দিয়ে রাত দিন শাহবাগে অবস্থানের সুযোগ করে দেয়া হলো। এক দিকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রাস্তায় নামতে দেয়া হচ্ছে না, অপর দিকে শাহবাগ মঞ্চকে স্থায়ী রূপ দিয়ে গোটা এলাকাটিকেই বন্ধ করে দেয়া হলো যান চলাচলের জন্য। এর ফলে এর আশপাশে অভাবনীয় মাত্রায় যানজটের সৃষ্টি হলো। জনদুর্ভোগ পৌঁছল চরমে। এমনকি শাহবাগ এলাকার হাসপাতালগুলোতে রোগী নিয়ে যাওয়াও কষ্টকর হয়ে দাঁড়াল? এরই মধ্যে শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের কোনো কোনো ব্লগারের বিরুদ্ধে মহানবী সা: ও ইসলাম সম্পর্কে অবমাননাকর কর্মকাণ্ডের খবরও প্রকাশ পেল। এভাবে শাহবাগ প্রজন্ম নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হলো নানা বিতর্ক। এসব বিতর্কের কোনো সুরাহা করার দিকে সরকারের পদক্ষেপ এলো না, বরং সরকার মারমুখো পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে গেল শাহবাগ মঞ্চের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের ওপর। এরই মধ্যে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ে বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠে সারা দেশ। সে বিক্ষোভ দমনের নামে সরকারের পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর হাতে নিহত হলো শতাধিক নিরীহ নিরস্ত্র মানুষ। নিহত হলো সাতজন পুলিশ। এখন চলছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মামলা। মামলায় আসামি আড়াই লাখ। এরই নাম জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।
আসলে সরকার বলি, রাজনৈতিক দল বলি তাদের বড় কাজ জনগণের পাশে দাঁড়ানো। জনগণের মন পাঠ করা। এবং সে অনুযায়ী পথরেখা তৈরি করা। তা না করে জনগণের চাওয়া-পাওয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়ালে সরকার বা দল কার্যত জনবিচ্ছিন্নতাকেই বাড়িয়ে তোলে। তখন সরকার ভয় পায় দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে। তখনই সরকার খুঁজে ফেরে নানা ফন্দি-ফিকির, কূটকচাল। এতে আইনের শাসন বাধাগ্রস্ত হয়, গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকতা হারায়, দেশে বিশৃঙ্খলা বাড়ে, জনগণ অকারণ দুর্ভোগের শিকার হয়। আর কোনো অপকৌশলেই সরকারের শেষ রক্ষা হয় না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads