সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০১৩

ভারতের ভিসা এবং শাহবাগ চত্বর প্রসঙ্গ-



আজকাল পত্রিকার অনেক শিরোনাম দেখে চমকে উঠতে হয় যেমন, ‘শাহবাগে না গেলে দিলি­র ভিসা হচ্ছে না’। এই শিরোনামের খবরে বলা হয়, দিলি­ যাওয়ার জন্য ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে ভিসার আবেদন করেছিলেন তাবলীগ জামাতের কর্মী আবদুল্রাহ মাহমুদ। সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে ভিসা অফিসার তার কাছে শাহবাগ সম্পর্কে জানতে চান। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে গিয়েছেন কিনা। মাহমুদ জানান, তিনি শাহবাগে যাননি। ভিসা অফিসার তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে পাসপোর্ট ফেরত দেন। মাহমুদকে বলা হয়, আগে শাহবাগ যান তারপর ভারতে যাওয়ার ভিসার জন্য আবেদন করচন। এ ঘটনা শুধু মাহমুদের একার ক্ষেত্রেই ঘটেনি। তাবলীগ জামাতের আরো বেশ কয়েকজন বলেছেন, শাহবাগ যাননি বলে তারাও ভারতে যাওয়ার ভিসা পাননি। সাক্ষাতের সময় তাদেরও প্রশ্ন করা হয়েছে শাহবাগে গিয়েছেন কিনা। শাহবাগ সম্পর্কে ভারতীয় হাইকমিশনের এমন দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাবলীগ জামাতের অনেক দায়িত্বশীল। তাবলীগ জামাতের লোকদের শাহবাগের কথিত গণজাগরণ মঞ্চে যাওয়ার ব্যাপারে ভারতীয় হাইকমিশনের এ ধরনের পীড়াপীড়িতে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন, তাবলীগ জামাতের মুরচববীরা। তবে এ ব্যাপারে উপর্যুপরি চেষ্টা করেও ভারতীয় হাইকমিশনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে উলে­খ করেছেন সংশি­ষ্ট পত্রিকার রিপোর্টার।
ভারতে যাওয়ার ভিসার ব্যাপারে যে অভিনব শর্ত আরোপ করা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের নাগরিকরা বিস্মিত। শাহবাগ মঞ্চতো বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বাংলাদেশে শাহবাগ মঞ্চের পক্ষের লোক যেমন আছে, তেমনি আছে বিপক্ষের লোকও। বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন দেশেই মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এমন মতপার্থক্য ভারতেও দেখা যায়। তাই বলে কি বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশ ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে সেদেশের কোনো মঞ্চ বা চত্বর ঘুরে আসার শর্ত আরোপ করেছে? এ জাতীয় কোনো শর্ত আরোপ করা হয়নি, কারণ এমন শর্ত আরোপ করা যায় না। সবাই জানে, এমন শর্ত আরোপ করা হলে সংশি­ষ্ট রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বে অাঁচড় কাটা হয়। অথচ এমন অন্যায় ও অনাকাঙিক্ষত আচরণ করলো ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন অফিস। বিষয়টি বাংলাদেশের জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, শুরচতে শাহবাগ মঞ্চের কর্মকান্ডকে কিছু ব­গারের দলনিরপেক্ষ শোভন আচরণ হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু দিনে দিনে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শাহবাগ মঞ্চের কার্যক্রমের সাথে শুধু ১৪ দলীয় জোটের ছাত্র সংগঠনগুলোই জড়িত নয়, তার সাথে জড়িত রয়েছে ১৪ দলীয় জোটের রাজনৈতিক দলসমূহ এবং সরকারও। এখন অনেকেই বলছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা বিষয়ে ব্যর্থ সরকারের ডুবন্ত ইমেজকে পুনরচদ্ধারের উদ্দেশ্যে শাহবাগ মঞ্চকে তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চের সংগঠকরা জনগুরচত্বপূর্ণ অন্যসব ইস্যু থেকে নাগরিকদের দৃষ্টি সরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, শাহবাগ মঞ্চকে অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশ সরকারই নয়, মদদ দিয়ে যাচ্ছে ভারতও। এমন বক্তব্য মুদ্রিত হয়েছে ভারতের প্রখ্যাত পত্রিকায়ও। এখন ভারতীয় হাইকমিশনের আচরণে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তারা ভিসা প্রদানের বিষয়টিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশী নাগরিকদের শাহবাগ-মঞ্চে যাওয়ার জন্য বাধ্য করতে চাইছে। তাদের এমন আচরণ শুধু অসৌজন্যমূলক নয়, কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূতও বটে। বিষয়টি বিশে­ষণ করলে উপলব্ধি করা যায়, ভারতীয় কর্তাব্যক্তিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান প্রদর্শনেই শুধু ব্যর্থ হয়নি তারা আমাদের নাগরিকদের স্বাধীন চেতনা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতিও অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে। আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের এমন ঔদ্ধত্য ও আগ্রাসী মনোভাবের নিন্দা জানাই। আমরা আশা করবো বাংলাদেশ সরকার এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ভারতীয় কর্তৃপক্ষের এমন অন্যায় আচরণের ব্যাপারে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করবেন এবং যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন। আমরা জানি, বাংলাদেশের জনগণ অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছে। তারা কোনোভাবেই চান না যে, কোনো দেশ কিংবা কোনো কর্তৃপক্ষ তাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অবমাননা করচক কিংবা জনগণের স্বাধীন চেতনাকে অবজ্ঞা করচক। বাংলাদেশের জনগণ কোনো আগ্রাসনকে কখনো মেনে নেয়নি, এখনো মানবে না। এই সত্যটি সংশি­ষ্ট সবাই উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads