শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০১৩

স্বাধীনতাযুদ্ধ ও দেশ গড়ায় জিয়া


বহু উত্থান-পতন ও চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি বিশ্ব দরবারে আজ পরিপূর্ণতা পাচ্ছে। এর পেছনে লুকিয়ে আছে ইতিহাসের এক সুদীর্ঘ কালক্রম। আজকের এই পরিপূর্ণ বাংলাদেশকে বুঝতে হলে, আমাদের দৃষ্টিপাত করতে হবে ইতিহাসের সেই কালক্রমের দিকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দিকে নজর দিলে দৃশ্যপটে জিয়াউর রহমানের নামটি আসে অবধারিতভাবে।

জিয়াউর রহমান ইতিহাসের কিংবদন্তি। তিনি এ দেশের দু’টি ক্রান্তিলগ্নে ইতিহাসের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করেন। দুই েেত্রই সে দায়িত্ব পালনে তিনি প্রস্তুত ছিলেন না, অথচ অনিবার্য বাস্তবতা হলো দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। একটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ, অন্যটি ’৭৫ সালের ৭ নভেম্বর।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বিভীষিকাময় রাতে এ ভূখণ্ডের নিরীহ মানুষের ওপর চলছিল পৃথিবীর অন্যতম সুশৃঙ্খল ও সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক সব অস্ত্রের ব্যবহার, গুলিতে তাদের বুক হচ্ছিল ঝাঁজরা। ঠিক সেই মুহূর্তে নিজের জীবন বাজি রেখে এবং পরিবারকে নিশ্চিত অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে রেখে জিয়া এগিয়ে আসেন এই বর্বর হত্যাযজ্ঞের প্রতিরোধের প্রত্যয় নিয়ে; রুখে দাঁড়ান এই সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। জিয়া অনেক সৌভাগ্যের সমাহার ও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে একজন নাম না জানা মেজর থেকে লে. জেনারেল ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার গৌরব অর্জন করতে সম হয়েছিলেন।
নতুন রাষ্ট্র জন্মের সাথে জিয়া এবং তার পরিবারের সবার জীবন-মরণের সম্পর্ক জড়িত ছিল। ’৭১ সালে এই রাষ্ট্রের জন্ম না হলে, জিয়া ও তার পরিবার এই পৃথিবীর মানচিত্র থেকে হয়তো হারিয়ে যেত। এটিই বাস্তব সত্য, এর বাইরে যত তর্ক-বিতর্ক ও যার যার ব্যক্তিগত মতামত আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান আছে ; প্রকৃতির নিয়মেই এক সময় এসব তর্ক-বিতর্ক ও যার যার ব্যক্তিগত মতামত মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যাবে।
সরকারের অত্যন্ত দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে জিয়ার বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, তাতে ’৭১-এর মুজিবনগর সরকারসহ পুরো মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী এবং অংশগ্রহণকারী সামনের সারির ব্যক্তিবর্গকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। জিয়া পাকিস্তানের দোসর হলে, মুজিবনগর সরকারও পাকিস্তানের দোসর ছিল, কেননা মুজিবনগর সরকার কর্তৃকই জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন। কার্যত মুক্তিযুদ্ধে যাদের অবদান নেই এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে যাদের কোনো রাজনৈতিক প্রাপ্তি নেই, কেবল তারাই সব জেনে-শুনে উদ্ভট, কাল্পনিক ও দায়িত্বহীন এসব অভিযোগ করছেন। উদ্দেশ্য মহান মুক্তিযুদ্ধে পুরো অর্জনকে অত্যন্ত সুকৌশলে ধ্বংস করে দেয়া। এটিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্রও বলা যায়।
একজন সৈনিক হয়ে ৬৫ মাসের দেশ শাসনে, জিয়া একজন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। মাটির সাথে পানি ও মানুষের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে জিয়া সৃষ্টি করেন দেশে কৃষিবিপ্লব। কল-কারখানার চাকার সাথে শ্রমিকদের ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে সৃষ্টি করেন শিল্পবিপ্লব। ব্যবসায়-বাণিজ্যে বিনিয়োগ, দেশ-বিদেশে বেকার যুবকদের চাকরির সুযোগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও জিয়া সৃষ্টি করেন বিপ্লব। এক কথায় চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে রাষ্ট্রকে তুলে এনে পৃথিবীর মানচিত্রে নাম লেখান উন্নয়নশীল সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রের তালিকায়। ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ উন্নত বিশ্বের সাথে খুলে যায় বাংলাদেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের দুয়ার।
রাজনীতিবিদ জিয়া এ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অত্যন্ত কঠিন কিছু ধাপ অতিক্রম করে গেছেন। জিয়ার ওপর অর্পিত হয় সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজন এবং রাষ্ট্রের সব কাজে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা সমুন্নত রাখার দায়িত্ব এবং এ দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করেন জিয়া। জিয়ার ওপর অর্পিত হয় শৃঙ্খলিত ও বন্দী গণতন্ত্রকে মুক্ত করে দেয়ার দায়িত্ব, এটিও জিয়া দৃঢতার সাথে পালন করেন; যার সুফল রাজনৈতিক দল ও দেশের সবাই ভোগ করছে। জিয়া বন্ধ সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে উন্মুক্ত করে দেন। জিয়ার হাত ধরেই এ দেশে স্বাধীন গণমাধ্যমের নবযাত্রা শুরু হয়, যার সুফল আজ গণমাধ্যম ভোগ করছে। জিয়া পালন করেন সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিকদের নতুন জাতীয় পরিচয় তৈরি করে দেয়ার কঠিন দায়িত্বটিও, যেটি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হিসেবে পরিচিতি; যেটি বাংলাদেশের উচ্চ আদালত কতৃক স্বীকৃত হয়েছে।
সবচেয়ে উল্লেখ করার মতো যে দায়িত্বটি জিয়া সম্পন্ন করেন তা হলো, রাজনৈতিক অঙ্গনে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা। আর এর জন্য নতুন একটি রাজনৈতিক শক্তির আবির্ভাব ঘটানো। প্রথমে জাগদল, তারপর ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে যার আত্মপ্রকাশ ঘটে। রাজনৈতিক অঙ্গনে ভারসাম্য সৃষ্টিতে প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বিপরীতে বর্তমানে এ জাতীয়তাবাদী দল সমানতালে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে এ দেশের রাজনৈতিক েেত্র তৈরি হয়েছে বুনিয়াদি ভারসাম্য, যা একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে রেখে যাচ্ছে কার্যকর ভূমিকা। জিয়ার সৃষ্টি বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের পৃষ্ঠাকে উজ্জ্বল করে রেখেছে।
রাষ্ট্র সৃষ্টি থেকে রাষ্ট্র রা ও রাষ্ট্র গড়ায়, জিয়ার রেখে যাওয়া অবদান এ দেশের কোটি কোটি নর-নারীর চেতনায় ধারণ করা সুস্পষ্ট দালিলিক সত্য ঘটনা। এসব জ্বলন্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ সত্য ঘটনা কোনো যুক্তিসম্পন্ন মানুষ অস্বীকার করতে পারে না। এ সত্যকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস নির্মিত হতে পারে না। সৃষ্টিকুলের প্রত্যেকটি জীবনের যৌক্তিক আবেগ-অনুভূতিই ইতিহাস সৃষ্টির উপাদান। মানব কল্যাণে কোনো মানুষের ত্যাগ, পরিশ্রম ও আত্মদান বৃথা যায় না। এটি আল্লাহ তায়ালার সুস্পষ্ট ঘোষণা।
জিয়ার কর্মময় জীবন মানব কল্যাণের দৃষ্টান্তে ভরপুর। মানুষের হৃদয়ে জিয়ার অস্তিত্ব প্রবহমান, রাষ্ট্রের পরতে পরতে জিয়ার অস্তিত্ব দৃশ্যমান। কোটি কোটি নর-নারীর ধ্যানে-জ্ঞানে ও হৃৎকম্পনের সাথে জিয়ার আবেগ অনুভূতি মিশ্রিত।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads