বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৩

খালেদা জিয়ার ট্রাইব্যুনাল গঠনের হুঁশিয়ারি


সিরাজুর রহমান


আমার ছ্টোবেলায় নোয়াখালীর আমিশাপাড়া বাজারে হাটের দিন এক পাগল আসত। হাটের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে সে আঙুল তুলে সবাইকে বলত, ‘তুই পাগল, তুই পাগল, সব পাগল।’ তার নিশ্চয়ই মনে হতো হাটের জমজমাট জনতার মধ্যে সে একলাই সুস্থবুদ্ধির ছিল, আর সবাই উন্মাদ।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গত সোমবারের সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বিরোধী দলের নেতা, বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের নেত্রী এবং ইতোপূর্বে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বলেছেন, তিনি জয়ী হবেন না, কেননা তিনি জনসাধারণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন।’ আওয়ামী লীগের এখন দুর্দিন, নৌকা ডোবে-ডোবে। খুন-খারাবি, গুম, লুটপাট আর সর্বময় দুর্নীতিতে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ, বিদেশীরা সমালোচনামুখর।
এই সরকার একদলীয় বাকশালী শাসন এবং আজীবন ক্ষমতা চান। কিন্তু বিদেশী পৃষ্ঠপোষকেরাও বলছেন, সরকারের মেয়াদ শেষে নির্বাচন দিতেই হবে এবং বিশ্ব সমাজের গ্রহণযোগ্য করার জন্য সে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ থাকতেই হবে। সেখানেই হয়েছে মুশকিল। সরকারও জানে নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক আনুমানিক দশ শতাংশ ছাড়া আর কেউ এ দল আর এ সরকারকে ভোট দেবে না। বিশেষ কারো তত্ত্বাবধানে মাস্টারপ্ল্যানের নির্বাচন করেও বড়জোর ২০-৩০ শতাংশ ভোটের হেরফের করা যায়, কিন্তু অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ ভোট চুরি করা তো খুব সহজ নয়।
স্বাভাবিক অবস্থায় বাংলাদেশের ভোট মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক-তৃতীয়াংশ ভোট বিএনপির, এক-তৃতীয়াংশ জামায়াতে ইসলামীসহ বর্তমানে সরকারের বিরোধী অন্য সব দলের, আর আওয়ামী লীগ পায় এক-তৃতীয়াংশ। আওয়ামী লীগের অংশ তাদের ভোট ব্যাংক এবং উপজাতীয় ও অন্য সংখ্যালঘুদের বাদ দিয়ে সংখ্যাগুরু ভোটের ১৬-১৭ শতাংশ মাত্র পড়ে। বিগত সোয়া চার বছরে এ সরকার শোষণ ও নির্যাতনের জন্য জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ সংখ্যাগুরুদেরই বেছে নিয়েছে। নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসের পরবর্তীকালে মার্কিন সমাজের ইসলামি জুজুর ভয়ভীতির অপসুযোগ নিতে এই সরকার প্রথম দিন থেকেই ‘ইসলামি সন্ত্রাস’ দলনের নামে টুপি-দাড়ি পরিহিত লোকদের ধরে ধরে জেলে পুরেছে। এমন সব নামের গঠনের লোকজনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে সরকার দাবি করছে, যাদের নাম কেউ কখনো শোনেনি।
ভারতকে করিডোর আর সামুদ্রিক বন্দর ব্যবহারের অবাধ অধিকার দেয়ায় বাংলাদেশের মানুষ ুব্ধ, ক্রুদ্ধ। তারা সেটাকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অঞ্চল বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার শামিল বলেই মনে করে। ভারত সরকারের বিবেচনায়, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মানুষকে ভারতবিরোধী করে তুলছে বলেই তারা করিডোরের এমন ঘোরতর বিরোধী হয়ে উঠছে। সুতরাং জামায়াত এবং ইসলামপন্থী দল ও গোষ্ঠীগুলোকে খতম করার কাজে উঠেপড়ে লাগল নতজানু বাংলাদেশ সরকার।
 সরকারের পরিকল্পনায় চালুনির ফুটো
জামায়াতকে ঘায়েল করার লক্ষ্যে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে সরকার সুবিধাজনক বিবেচনা করেছিল। কিন্তু সে বিবেচনার সারা গায়ে চালুনির মতো ফুটো। প্রথমত, হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান জঘন্যতম যুদ্ধাপরাধী বলে শনাক্ত করা ১৯৫ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে ক্ষমা করেছিলেন এবং দেশের ভেতরের মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা (অ্যামনেস্টি) ঘোষণা করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে জামায়াতের সাথে হাত মিলিয়ে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি চালুর দাবিতে আন্দোলন করেছিরেন। সরকার গঠনের পরও তখন  যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত সদস্যদের বিচার করা প্রয়োজনবোধ করেননি প্রধানমন্ত্রী হাসিনা।
তৃতীয়ত, সোয়া চার বছর আগে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য এমন কয়েকজনকে বেছে নিলেন, যারা বর্তমানে তার দলের রাজনৈতিক বিরোধী, অর্থাৎ জামায়াত এবং বিএনপির সদস্য। যেসব রাজাকার ও আল বদর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন তাদের কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কারো ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং মন্ত্রিসভার সদস্যও আছেন কেউ কেউ।
চতুর্থত, যুদ্ধারাধীদের বিচারের জন্য সরকার যে পদ্ধতিতে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে এবং যে পদ্ধতিতে সে বিচার চলছে দেশে ও বিদেশে আইন-বিশেষজ্ঞেরা তার কঠোর সমালোচনা করেছেন। সরকারের নিযুক্ত প্রসিকিউটরের তৎপরতার পরও সরকারের নিয়োজিত বিচারকেরা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার সে রায়ও মানেনি। বিচারপতিদের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে শাহবাগে একটা কৃত্রিম প্রতিবাদ ক্যাম্প গঠন করে তাণ্ডব সৃষ্টি করা হয়। স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এ বিচার রাজনৈতিক লক্ষ্যে এবং সরকার বিচারকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ইচ্ছেমতো রায় আদায় করতে বদ্ধপরিকর।  এটা স্বাধীন বিচার প্রক্রিয়াকে কর্দমাক্ত করা ছাড়া আর কিছু নয়।
বলা হয়, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। শাহবাগী তাণ্ডবেও হয়েছে তাই। ধরা পড়ে যায় যে, এ তাণ্ডবের নেতাদের অনেকে ইসলামবিরোধী। তাদের কেউ কেউ ব্লগে আল্লাহ রাসূল সা: আর  ইসলামকে নিয়ে পর্নোগ্রাফি প্রচার করেছে। আরো কেউ কেউ ধর্মদ্রোহী ও নাস্তিক। আমার দেশ পত্রিকা এই তথ্যগুলো ফাঁস করে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও সরকার রেগে টং হয়ে আছেন। সরকারের উচিত ছিল কালবিলম্ব না করে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দিয়ে দেশবাসীর ক্রোধের আগুন প্রশমিত করার চেষ্টা করা। সেটা সরকার করেনি, কেননা তারা মনে করেছিল তাদের বিদেশী পৃষ্ঠপোষকেরা সেটাকে ইসলাম-তোষণ বলেই দেখবে। তাছাড়া সরকার আশা করেছিল, পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি এবং ছাত্রলীগ ক্যাডারদের প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিলে ভয় পেয়ে তারা পিছপা হয়ে যাবে। এই সরকার যে দেশের মানুষকে চিনতে কতখানি ব্যর্থ এটা হচ্ছে তার প্রমাণ। ইসলামের অপমানের প্রতিবাদ করতে গিয়ে একদিনেই ৬৬ জন পুলিশের গুলিতে মারা যায়, অন্য দিকে সরকার ধর্মদ্রোহীদের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেয়।

সরকার ভীত, আতঙ্কিত
এ পরিস্থিতিতে মুসলিম ভোটদাতারা আরো একটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে বলে কল্পনা শুধু উন্মাদেই করতে পারে। অন্তত এটুকু উপলব্ধি আওয়ামী লীগ নেতাদেরও  আছে। তারা এখন ভীত, আতঙ্কিত। সেটা চাপা দেয়ার জন্যই প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীরা সকাল-সন্ধ্যা বিএনপির বিরুদ্ধে আবোল-তাবোল বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে বেড়াচ্ছেন; দেশবাসীর প্রতিবাদকে ‘জামায়াতের সন্ত্রাস’ বলে জাহির করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মন্ত্রীরাও এখন বুঝে গেছেন যে, তাদের বিবৃতি আর হুঙ্কারে কেউ কান দিচ্ছে না।
বর্তমান সরকারের মেয়াদে তোফায়েল আহমেদ এ যাবৎ তেমন মুখ খোলেননি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সোমবারের সভায় তার বক্তৃতা দেয়া সে কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ। সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য যেন একটা নতুন কামান আমদানি করল। কিন্তু রোগীর নাভিশ্বাস উঠলে হোমিওপ্যাথির বড়ি খাইয়ে লাভ হয় না। আওয়ামী লীগের নতুন কামান হোমিওপ্যাথিক কামান মাত্র। ‘খালেদা জিয়া’ গণবিচ্ছিন্ন বলে তোফায়েল আহমেদ আমার ছোটবেলায় দেখা পাগলটার মতো মানুষ হাসাবেন মাত্র। খালেদা জিয়া যেখানেই যাচ্ছেন দূর-দূরান্ত থেকে লাখে লাখে মানুষ আসছে তার কথা শুনতে। তিনি ইচ্ছান্ধ, চোখ থাকতেও তিনি দেখেন না।
আলোচ্য সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অহেতুক কিছু অসৌজন্যপূর্ণ কটূক্তি করেছেন। তাতে কেউ বিস্মিত হয়নি। শেখ হাসিনা ও তার ছোটবোন প্রায় ছয় বছর দিল্লিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন। তখন তাদের অভিভাবক ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র। বস্তুত র-এর লোকজন ছাড়া আর কারো সাথে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ ছিল না দু’বোনের। তাদের যা যা বাতলে দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাস সম্বন্ধে, তাদের জ্ঞান মূলত তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দু’বোনকে নির্বাসন থেকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। কিন্তু দেশে ফিরেই সেই যে তিনি জিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে গালিগালাজ শুরু করেছিলেন, আজো এর বিরতি নেই। জিয়ার পরিবার এবং তার প্রতিটি রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে গালিগালাজ না করলে বাংলাদেশের যেন তাদের পেটের ভাত হজম হয় না।
 জিয়া হত্যার ষড়যন্ত্র
হাসিনার দেশে ফেরার ১৩ দিনের মাথায় এক সামরিক ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। সেদিন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কারো কারো ভূমিকা ছিলো রহস্যজনক। হাসিনার দল দেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধকে মূলনীতিতে পরিণত করেছে, তিনি সংসদ বর্জন করে ও লাগাতার হরতাল দিয়ে রাজনীতিকে সংসদ থেকে পথে টেনে নামিয়েছিলেন। সশস্ত্র ক্যাডারব্যবস্থা আওয়ামী লীগ চালু করেছেন। প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাদের তিনি শাড়ি পরতে বলে পরিহাস করেছিলেন তখন, একটির বদলে দশটি লাশ ফেলার তাগিদ দিয়েছিলেন।
সে সরকারের আমলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গডফাদার পদ্ধতি চালু হয়। ফেনীর জয়নাল হাজারী, লক্ষ্মীপুরের আবু তাহের, নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান এবং ঢাকার মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার কার্যকলাপে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টা উত্থাপন করায় প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের রীতিমতো ধমক দিয়েছিলেন। তাদের প্রথম সরকারের আমলে খুনের অভিযোগে পরবর্তীকালে আদালত প্রাণদণ্ড দিয়েছিলেন, এমন প্রায় দু’ডজন আসামিকে বর্তমান দফায় ক্ষমতায় এসে এই সরকার মুক্তি দিয়েছে।
বর্তমান সরকারের আমলে রাজনৈতিক হত্যা দৈনন্দিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারেরা বেছে বেছে সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী ও সমালোচককে হত্যা করেছে। সাংবাদিকই নিহত হয়েছেন ১৭ জন। বাংলাদেশের পুলিশ বিরোধী ঠ্যাঙানোর ফুলটাইম কাজে ব্যস্ত। তাই সরকারের সমর্থক দুর্বৃত্তদের খুন-খারাবির প্রতিকার, এমনকি সংখ্যা নিরূপণের সময়ও তাদের যেন নেই। অন্য দিকে বহু ক্ষেত্রে এসব হত্যার সাথে কোনো কোনো বাহিনী সরাসরি যুক্ত বলে অভিযোগ হয়েছে। ‘ক্রসফায়ারের’ নামে দুই শতাধিক রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গুম করা হয়েছে বহু মানুষকে। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কারো কারো লাশ পাওয়া গেছে নদীতে কিংবা জলাভূমিতে। অনেকেরই কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
 মশা বনাম ড্রাকুলা
একাত্তরে ঠিক এ ধরনের ঘটনার জন্যই ট্রাইব্যুনাল করে বিচার চলছে। বনানী থেকে গুম করা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী কিংবা গাড়ির ড্রাইভারের কোনো হদিস আজ অবধি পাওয়া যায়নি। ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম প্রায় দু’বছর ধরে আজো নিখোঁজ। এই গুম আর খুনের ঘটনাগুলোর জন্য বিশেষ বাহিনীই দায়ী বলে সর্বসাধারণের বিশ্বাস। অনেক ক্ষেত্রে তার সাক্ষ্য-প্রমাণও পাওয়া গেছে। এত কিছুর পরেও আওয়ামী লীগ যখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনের সভায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ তোলেন, তখন মশাকে রক্তচোষা বলে ড্রাকুলার মুখে অভিযোগের মতোই হাস্যকর শোনায়।
খালেদা জিয়া একাধিক সভায় বলেছেন, ইসলামের অমার্যাদার প্রতিবাদকারীদের গণহত্যার বিচারের জন্য, ক্ষমতায় গেলে তিনি ট্রাইব্যুনাল গঠন করবেন। এ ঘোষণা নানা কারণে অভিনন্দনযোগ্য। বিএনপি নেত্রী প্রতিপক্ষের মতো প্রতিশোধ-লিপ্সু কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ নন। জাতীয় ঐক্য এবং দেশের শান্তির খাতিরে তিনি প্রায়ই অতীতের অন্যায়-অবিচারের কথা ভুলে গিয়ে ভবিষ্যতের জন্য গঠনমূলক চিন্তা করে থাকেন। কিন্তু তার প্রতিপক্ষ তেমন কোনো মাহাত্ম্য কিংবা ঔদার্য দেখাতে পারেনি। বহু সহৃদয় পাঠক ইমেইলে এবং টেলিফোনে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতা পেয়েও পূরবর্তী সরকারের জঘন্যতম অন্যায়েরও বিচার করেননি। এমনকি তার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যার ষড়যন্ত্রেরও তদন্ত করেননি।
 তথ্য সংগ্রহের এখনি সময়
শুধু এ মাসের গণহত্যাই নয়, আরো অনেক গুরুতর অপরাধের জন্যই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং এ সরকারের বিচার অত্যাবশ্যকীয়। এগুলোর একটা অবশ্যই বিডিআরের বিদ্রোহ। এ বিদ্রোহের ঘটনায় সরকারের এবং তাদের বিদেশী পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা সম্বন্ধে কোনো তদন্ত হয়নি। অথচ সে ঘটনায় ৫৭ জন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাসহ প্রায় ৮০টি মূল্যবান প্রাণ নষ্ট করা হয়েছে। হত্যায় জড়িত, মাথায় রুমাল বাঁধা বিদেশী লোকগুলোর রহস্যও উদঘাটিত হয়নি। তখন মন্ত্রীদের কারো কারো ভূমিকা সম্বন্ধেও ব্যাপক অভিযোগ আছে। যেসব অভিযোগ অন্তত তদন্ত করা প্রয়োজন।
বর্তমান সরকারের আমলের বিচারবহির্ভূত হত্যাগুলোর বিচার অবশ্যই করতে হবে। বিশেষ করে ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমকে গুম করার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বিচার ও শাস্তি দৃষ্টান্তমূলক হতে হবে। বিএনপির উচিত, অবিলম্বে তাদের প্রধান কার্যালয়ে একটা শাখা স্থাপন করা, যেখানে বর্তমান সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য সংগৃহীত হবে। জনসাধারণেরও কর্তব্য হলো, গণহত্যা ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং অন্যদের পরিচয়সহ ঘটনাগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিখে রাখা। বেগম খালেদা জিয়া তার প্রতিশ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠন করলে সেসব বিবরণ খুবই মূল্যবান প্রমাণিত হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads