বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কেন্দ্রীয় কারাগারের সাত নম্বর সেলের মেঝেতে শুয়ে-বসে চরম দুর্ভোগে দিনকাটাচ্ছেন। রাজনীতির মাঠে সদা ব্যস্ত এই নেতা ফ্যান ছাড়া গরমে অনেকটা না ঘুমিয়েই থাকছেন। ডান পা ও বাম হাতের ভেতরে রড থাকায় তিনি একা বসতে পারেন না। কিছু একটা ধরে বসতে হয়। কারাগারে কখনও শিকল আবার কখনও রড জাতীয় কিছু ধরে তিনি মেঝেতে বসেন। কমোড ছাড়া বাথরুমে বসতে পারেন না। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কারাগারে রিমান্ডের চেয়েও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রিজভী ভয়াবহ জীবন ভোগ করছেন।
তার স্ত্রী আরজুমান্দ আরা রিজভী জানান, ১৯৮৪ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বিডিআরের গুলি এবং ২০০৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনার পর এভাবেই অর্ধপঙ্গু জীবন কাটান তিনি। তার ডান পা ও বাম হাতের হাড়ের সঙ্গে রড রয়েছে। যে কারণে তিনি বসতে পারেন না। চেয়ারে নিজে নিজেই বসতে পারেন কিন্তু মেঝেতে বসতে হলে কারও সাহায্য নিয়ে বসতে হয়। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কারাগারে রিজভী দুঃসহ জীবনকাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেনতিনি। আরজুমান্দ আরা জানান, দেখা-সাক্ষাতেও প্রশাসন ব্যাপক জটিলতার সৃষ্টি করছে। সপ্তাহে কেবলএকজনকে একবার সাক্ষাত্ করতে দেয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
রুহুল কবির রিজভীকে কারাগারে ডিভিশন দেয়ার আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার শুনানি হয়। একজন অসুস্থ রাজনীতিককে কারাগারে ডিভিশন না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রিজভীর স্ত্রী বলেন, সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, এক-এগারোর চেয়েও দুঃসহ পরিস্থিতি চলছে। কারাগারে দেখা-সাক্ষাতেও কড়াকড়ি। অসুস্থ নাগরিককে আদালত ডিভিশন দেন না। রিজভীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে ‘অনেকটা ছেলে-খেলা’ অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘যিনি লাঠি নিয়েহাঁটেন, তাকে বাসে আগুন দেয়ার অভিযোগে কারাগারে নেয়া হয়েছে। এর চেয়ে নিচু মানসিকতা কী হতে পারে।’
কারা সূত্র জানায়, সাত নম্বর সেলে রুহুল কবির রিজভী অধিকাংশ সময় বই পড়ে কাটাচ্ছেন। ফ্যান ছাড়া মেঝেতে শুয়ে থাকায় গরমে তার গায়ে ফোস্কা উঠেছে।
স্ত্রী আরজুমান্দ আরা গত শনিবার রিজভীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। তখন রিজভীরবড় বোন ও ভাই সাক্ষাতের চেষ্টা করলেও কর্তৃপক্ষ সুযোগ দেয়নি। রাজশাহী থেকেভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসে গত এক সপ্তাহ ছোট ভাই ঢাকায় অবস্থান করছেন। আজ রিজভীর স্ত্রী আবারও সাক্ষাত্ করতে যাবেন বলে তিনি আমার দেশকে জানান। ১৭ মে রিজভীর জামিনের আবেদনেরশুনানি হবে।
বিএনপির দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে অংশ নেন। খুব কম সময়ের মধ্যে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) ভিপি নির্বাচিত হন।নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বেশ কিছু সময় রিজভীছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরে প্রত্যক্ষ ভোটে তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা সভাপতি এম ইলিয়াস আলী। ছাত্ররাজনীতি ছেড়ে রুহুল কবির রিজভি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বিগত চারদলীয় জোট আমলে তিনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
এক-এগারো সরকারের আমলে বিএনপির আপদকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের দক্ষিণহস্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রুহুল কবির রিজভী। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথের লড়াইয়েও তিনি অসম্ভব সাহসের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আপসহীন নেতৃত্ব দিয়েগত সবক’টি হরতালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটক আগলে রাখেন রিজভী। প্রতি হরতালেই হাতেগোনা কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে তিনি নয়াপল্টনে হরতালের সমর্থনে মিছিল বেরকরেন। কখনও অতি ভোরে রিজভীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল বের হয়েছে। আবার কখনও ডান হাতে লাঠিতে ভর দিয়ে রিজভী পুলিশি বাধার মুখেও মিছিল বের করার চেষ্টা করেছেন।
সর্বদা রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত রুহুল কবির রিজভী সংবাদ কর্মীদের কাছেও একজন বিশ্বস্ত সংবাদউত্স। ৩০ এপ্রিল মামলা কাঁধে নিয়েই তিনি বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে দু’দফাসংবাদ সম্মেলনে সারা দেশে হরতাল চিত্র তুলে ধরেন তিনি। ওইদিন সন্ধ্যায় কার্যালয় থেকে বাসায় ফেরারপথে কাকরাইলে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার গ্রেফতারে অনেকটা ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী আরজুমান্দ আরা রিজভী। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি চাকরিজীবী। তাকে সাহস যোগাতে রাজধানীরআদাবরের বাসায় প্রতিদিনই বিএনপি নেতাকর্মী ও পেশাজীবীরা ভিড় জমাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেয়ারদাবিতে ২২, ২৩, ২৪ এবং ২৯ ও ৩০ এপ্রিল হরতাল পালন করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। ২৯ এপ্রিল বিকেলে একযোগে সচিবালয়ের গেটে বোমা বিস্ফোরণ এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় এলাকায় একটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় পরের দিন ৩০ এপ্রিল পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ ও তেজগাঁও থানায় দু’টি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ ৫৭ নেতাকে আসামি করা হয়। দুই মামলায়ই রুহুল কবির
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন