বিরোধী মতের লোকদের দমন-পীড়নে পারদর্শী পুলিশ সদস্যদের পদোন্নতিসহ নানাভাবে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা, নেতাকর্মীদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে রক্তাক্ত করা, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার, আটক করে চোখ বেঁধে থানায় নিয়ে ঝুলিয়ে নির্মম নির্যাতন, তল্লাশির নামে বাসাবাড়িতে ঢুকে নাজেহাল করার মতো গুরুতর অভিযোগ থাকার পরও বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতা ও পারদর্শিতা যাচাই না করে শুধু দলীয় বিবেচনায় তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। এতে সত্, কর্মঠ ও যোগ্য পুলিশ সদস্যদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের প্রায় সাড়ে তিন বছরে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগের পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্যদের নানাভাবে খুশি করছে সরকার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা সেই তেজগাঁও জোনের এডিসি (বর্তমানে এসপি) হারুন-উর-রশিদ, মোহাম্মদপুর জোনের এসি বিপ্লব কুমার সরকার (বর্তমানে তেজগাঁও জোনের এডিসি), খুলনায় ছাত্রদল নেতাদের হাত-পা ও চোখ বেঁধে থানায় ঝুলিয়ে বর্বরভাবে নির্যাতনকারী খুলনা সদর থানার ওসি এসএম কামরুজ্জামান, গুলশান জোনের একজন এসি, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন এডিসিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনকে সুবিধাজনক স্থানে বদলি করা হয়েছে। হারুনকে পুলিশ সুপার (এসপি), বিপ্লব কুমারকে এডিসি, ডিবির একজন এডিসিকে ডিসি করে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এডিসি হারুন জয়নুল আবদিন ফারুককে নির্যাতনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলেন। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনার কোনো তদন্তই হয়নি। দেখা গেছে, শাস্তি তো দূরে থাক, ছাত্রলীগের সাবেক এ নেতার দাপট এতটাই যে এত বড় অপরাধ করার পরও যোগ্যতার বিবেচনায় অনেককে ডিঙিয়ে তার পদোন্নতি হয়েছে। শুধু হারুনই নন, আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তাধীন থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। কিছু দিন আগে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নাতিকে থানায় ধরে নিয়ে মারধর করায় গুলশান থানার ওসি ও জোনের এসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। গুলশান থানার সেই ওসিকে রমনা থানার মতো গুরুত্বপূর্ণ থানায় বদলি করা হয়েছে। একই অভিযোগে প্রত্যাহার করা গুলশান জোনের এসি আশরাফুল আজীমকে দেয়া হয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি)।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৯ মার্চ ১১৪ জন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে এসি বিপ্লবকে এএসপি করে পদোন্নতি দেয়া হয়। হারুন-উর-রশিদকে গোপনে পদোন্নতি দেয়া হয়। তাকে মানিকগঞ্জ জেলার এসপি করে বদলি করা হলেও তিনি সেখানে যাননি। পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হারুন মানিকগঞ্জে না গিয়ে ডিএমপির গুলশান অথবা তেজগাঁও জোনের ডিসি হতে চাচ্ছেন। এই দুই জোনের পোস্টিংয়ের জন্য বর্তমানে জোর তদবির চালাচ্ছেন তিনি। অপর একটি সূত্র জানায়, হারুনকে মানিকগঞ্জে না পাঠাতে রেঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তাসহ আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ সদস্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ করেন। সূত্রমতে, হারুনের কর্মকাণ্ড এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে সিনিয়র অনেকেই তার ওপর অখুশি। সে কারণে সিনিয়র কর্মকর্তারা তাকে এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করেন।
প্রসঙ্গত, গত বছর ৬ জুলাই হরতালে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুককে সংসদ ভবনের সামনে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করেন হারুন ও বিপ্লব কুমার সরকার। সেদিন সংসদ ভবনের সামনের রাস্তায় মিছিল করলে হারুন-উর-রশিদ ও বিপ্লব কুমার তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারা জয়নাল আবদিন ফারুকের কলার চেপে ধরে ধাওয়া করে গায়ের পোশাক খুলে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। এমনকি তিনি দৌড়ে গিয়ে ন্যাম ভবনে সংসদ সদস্যের কক্ষে গিয়েও নিস্তার পাননি। সেখান থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে রাস্তায় এনেও পিটিয়েছে হারুন ও বিপ্লবসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা। সেদিনের এই নৃশংসতা ছিল চরম ঘৃণিত। এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা জঘন্য এবং বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুককে রক্তাক্ত যখম করে। লাঠি দিয়ে আঘাত করে বিরোধী নেতার মাথা ফাটিয়ে দেয়। বুকের ওপর উঠে বুট দিয়ে লাথি মারে দুই পুলিশ কর্মকর্তা। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। শুয়োরের বাচ্চা, চর মেরে দাঁত ফেলে দেব বলে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো তেড়ে গেছে। সংসদ ভবনের কাছে বিনা উসকানিতে একসময়ের ছাত্রলীগের ক্যাডার এই পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয় চড়াও হয়ে ওঠেন ফারুকের ওপর। এসময় কয়েকজন মহিলা এমপিকেও লাঞ্ছিত করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় ফারুককে এমপি হোস্টেলে নিয়ে গেলে সেখানে গিয়েও হামলা চালায় পুলিশ। ২০তম বিসিএস ক্যাডারে পুলিশের চাকরি নেয়া হারুন ১৯৯৮ সালে ছাত্রলীগের বাহাদুর-অজয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে একসময় চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ দিয়ে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে চাকরি নেয়ার পর থেকেই ঘুষবাণিজ্যেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকার পরও রহস্যজনকভাবে পার পেয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে মোহাম্মদপুর জোনের এসি বিপ্লব কুমারের বিরুদ্ধে চাকরি জীবনের শুরু থেকেই শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। ২১তম বিসিএস ক্যাডারে চাকরি নেয়া বিপ্লব সরকার ছিলেন ছাত্রলীগের জগন্নাথ হল শাখার ছাত্রলীগের সেক্রেটারি। পুলিশ বিভাগে চাকরি হওয়ার পর নিজের অতীত কৃতকর্মের কথা ভেবে ২০০৩ সালের অক্টোবরে সারদায় ট্রেনিং করেই তিনি ডিভি ভিসা নিয়ে আমেরিকা চলে যান। ৭ বছর আমেরিকায় থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দেশে আসেন। পুলিশের ভাষায় এসময় তিনি ছিলেন ফেরারি। দীর্ঘ ৭ বছর অনুপস্থিত থেকে দেশে ফিরে রহস্যজনকভাবে ফের চাকরি ফিরে পান তিনি। রহস্যজনক কারণে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এছাড়া খুলনায় ছাত্রদল নেতাদের চোখ বেঁধে থানায় ঝুলিয়ে বর্বরভাবে নির্যাতনকারী খুলনা সদরের সেই ওসি এসএম কামরুজ্জামানকেও পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাকে মহানগরীর লাভজনক বলে খ্যাত সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি করা হয়েছে। থানায় নির্যাতনের অভিযোগে গত ২৪ এপ্রিল ওসি কামরুজ্জামানসহ চার পুলিশ সদস্যকে সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। আগের দিন ২৩ এপ্রিল সকালে মহানগর ছাত্রদলের সদস্য বিএল কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র মাহমুদুল হক টিটো এবং সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের ছাত্র ফেরদাউসুর রহমান মুন্নাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে থানায় টিটোকে পা ও চোখ এবং দড়ি দিয়ে দুই হাত বেঁধে ছাদের হুকের সঙ্গে ঝুলিয়ে পেটান ওসি, এসআই ও কয়েকজন কনস্টেবল। এ ঘটনায় ওসি ছাড়াও তিন কনস্টেবল আবু সুফিয়ান, মামুন আক্তার ও ওসির গাড়িচালক সুধাংশুকে প্রত্যাহার করা হয়। ঘটনার ২০ দিনের মাথায়ই ওসি কামরুজ্জামানকে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার দায়িত্ব দেয়া হয়! স্থানীয়রা বলছেন, ছাত্রদল নেতাদের নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করার বিষয়টি ছিল ‘আইওয়াশ’ মাত্র। অভিযোগ রয়েছে, খুলনা ও ঢাকার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার তদবিরে কামরুজ্জামানকে মডেল থানায় পোস্টিং দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের সাবেক আইজি মো. শাহজাহান বলেন, কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তার সঠিকভাবে তদন্ত হওয়া উচিত। ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার আছে। তবে অভিযোগ থাকার পরও তদন্ত চলাকালে পদোন্নতি ও পুরস্কৃত করা কোনো অবস্থাতেই সঠিক কাজ হতে পারে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা সেই তেজগাঁও জোনের এডিসি (বর্তমানে এসপি) হারুন-উর-রশিদ, মোহাম্মদপুর জোনের এসি বিপ্লব কুমার সরকার (বর্তমানে তেজগাঁও জোনের এডিসি), খুলনায় ছাত্রদল নেতাদের হাত-পা ও চোখ বেঁধে থানায় ঝুলিয়ে বর্বরভাবে নির্যাতনকারী খুলনা সদর থানার ওসি এসএম কামরুজ্জামান, গুলশান জোনের একজন এসি, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন এডিসিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনকে সুবিধাজনক স্থানে বদলি করা হয়েছে। হারুনকে পুলিশ সুপার (এসপি), বিপ্লব কুমারকে এডিসি, ডিবির একজন এডিসিকে ডিসি করে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এডিসি হারুন জয়নুল আবদিন ফারুককে নির্যাতনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলেন। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনার কোনো তদন্তই হয়নি। দেখা গেছে, শাস্তি তো দূরে থাক, ছাত্রলীগের সাবেক এ নেতার দাপট এতটাই যে এত বড় অপরাধ করার পরও যোগ্যতার বিবেচনায় অনেককে ডিঙিয়ে তার পদোন্নতি হয়েছে। শুধু হারুনই নন, আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তাধীন থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। কিছু দিন আগে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নাতিকে থানায় ধরে নিয়ে মারধর করায় গুলশান থানার ওসি ও জোনের এসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। গুলশান থানার সেই ওসিকে রমনা থানার মতো গুরুত্বপূর্ণ থানায় বদলি করা হয়েছে। একই অভিযোগে প্রত্যাহার করা গুলশান জোনের এসি আশরাফুল আজীমকে দেয়া হয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি)।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৯ মার্চ ১১৪ জন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে এসি বিপ্লবকে এএসপি করে পদোন্নতি দেয়া হয়। হারুন-উর-রশিদকে গোপনে পদোন্নতি দেয়া হয়। তাকে মানিকগঞ্জ জেলার এসপি করে বদলি করা হলেও তিনি সেখানে যাননি। পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হারুন মানিকগঞ্জে না গিয়ে ডিএমপির গুলশান অথবা তেজগাঁও জোনের ডিসি হতে চাচ্ছেন। এই দুই জোনের পোস্টিংয়ের জন্য বর্তমানে জোর তদবির চালাচ্ছেন তিনি। অপর একটি সূত্র জানায়, হারুনকে মানিকগঞ্জে না পাঠাতে রেঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তাসহ আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ সদস্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ করেন। সূত্রমতে, হারুনের কর্মকাণ্ড এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে সিনিয়র অনেকেই তার ওপর অখুশি। সে কারণে সিনিয়র কর্মকর্তারা তাকে এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করেন।
প্রসঙ্গত, গত বছর ৬ জুলাই হরতালে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুককে সংসদ ভবনের সামনে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করেন হারুন ও বিপ্লব কুমার সরকার। সেদিন সংসদ ভবনের সামনের রাস্তায় মিছিল করলে হারুন-উর-রশিদ ও বিপ্লব কুমার তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারা জয়নাল আবদিন ফারুকের কলার চেপে ধরে ধাওয়া করে গায়ের পোশাক খুলে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। এমনকি তিনি দৌড়ে গিয়ে ন্যাম ভবনে সংসদ সদস্যের কক্ষে গিয়েও নিস্তার পাননি। সেখান থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে রাস্তায় এনেও পিটিয়েছে হারুন ও বিপ্লবসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা। সেদিনের এই নৃশংসতা ছিল চরম ঘৃণিত। এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা জঘন্য এবং বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুককে রক্তাক্ত যখম করে। লাঠি দিয়ে আঘাত করে বিরোধী নেতার মাথা ফাটিয়ে দেয়। বুকের ওপর উঠে বুট দিয়ে লাথি মারে দুই পুলিশ কর্মকর্তা। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। শুয়োরের বাচ্চা, চর মেরে দাঁত ফেলে দেব বলে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো তেড়ে গেছে। সংসদ ভবনের কাছে বিনা উসকানিতে একসময়ের ছাত্রলীগের ক্যাডার এই পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয় চড়াও হয়ে ওঠেন ফারুকের ওপর। এসময় কয়েকজন মহিলা এমপিকেও লাঞ্ছিত করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় ফারুককে এমপি হোস্টেলে নিয়ে গেলে সেখানে গিয়েও হামলা চালায় পুলিশ। ২০তম বিসিএস ক্যাডারে পুলিশের চাকরি নেয়া হারুন ১৯৯৮ সালে ছাত্রলীগের বাহাদুর-অজয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে একসময় চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ দিয়ে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে চাকরি নেয়ার পর থেকেই ঘুষবাণিজ্যেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকার পরও রহস্যজনকভাবে পার পেয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে মোহাম্মদপুর জোনের এসি বিপ্লব কুমারের বিরুদ্ধে চাকরি জীবনের শুরু থেকেই শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। ২১তম বিসিএস ক্যাডারে চাকরি নেয়া বিপ্লব সরকার ছিলেন ছাত্রলীগের জগন্নাথ হল শাখার ছাত্রলীগের সেক্রেটারি। পুলিশ বিভাগে চাকরি হওয়ার পর নিজের অতীত কৃতকর্মের কথা ভেবে ২০০৩ সালের অক্টোবরে সারদায় ট্রেনিং করেই তিনি ডিভি ভিসা নিয়ে আমেরিকা চলে যান। ৭ বছর আমেরিকায় থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দেশে আসেন। পুলিশের ভাষায় এসময় তিনি ছিলেন ফেরারি। দীর্ঘ ৭ বছর অনুপস্থিত থেকে দেশে ফিরে রহস্যজনকভাবে ফের চাকরি ফিরে পান তিনি। রহস্যজনক কারণে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এছাড়া খুলনায় ছাত্রদল নেতাদের চোখ বেঁধে থানায় ঝুলিয়ে বর্বরভাবে নির্যাতনকারী খুলনা সদরের সেই ওসি এসএম কামরুজ্জামানকেও পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাকে মহানগরীর লাভজনক বলে খ্যাত সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি করা হয়েছে। থানায় নির্যাতনের অভিযোগে গত ২৪ এপ্রিল ওসি কামরুজ্জামানসহ চার পুলিশ সদস্যকে সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। আগের দিন ২৩ এপ্রিল সকালে মহানগর ছাত্রদলের সদস্য বিএল কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র মাহমুদুল হক টিটো এবং সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের ছাত্র ফেরদাউসুর রহমান মুন্নাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে থানায় টিটোকে পা ও চোখ এবং দড়ি দিয়ে দুই হাত বেঁধে ছাদের হুকের সঙ্গে ঝুলিয়ে পেটান ওসি, এসআই ও কয়েকজন কনস্টেবল। এ ঘটনায় ওসি ছাড়াও তিন কনস্টেবল আবু সুফিয়ান, মামুন আক্তার ও ওসির গাড়িচালক সুধাংশুকে প্রত্যাহার করা হয়। ঘটনার ২০ দিনের মাথায়ই ওসি কামরুজ্জামানকে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার দায়িত্ব দেয়া হয়! স্থানীয়রা বলছেন, ছাত্রদল নেতাদের নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করার বিষয়টি ছিল ‘আইওয়াশ’ মাত্র। অভিযোগ রয়েছে, খুলনা ও ঢাকার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার তদবিরে কামরুজ্জামানকে মডেল থানায় পোস্টিং দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের সাবেক আইজি মো. শাহজাহান বলেন, কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তার সঠিকভাবে তদন্ত হওয়া উচিত। ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার আছে। তবে অভিযোগ থাকার পরও তদন্ত চলাকালে পদোন্নতি ও পুরস্কৃত করা কোনো অবস্থাতেই সঠিক কাজ হতে পারে না।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন