শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১২

ইলিয়াসের স্ত্রী’র প্রশ্ন, গভীর রাতে কি কারণে এমন আচরণ



স্টাফ রিপোর্টার: গভীর রাতে অস্ত্র হাতে ইলিয়াস আলীর বাসায় কারা হানা দিয়েছিল? কেন জোর করে বাসার গেট খুলতে চেয়েছিল? গণমাধ্যম কর্মীদের আসার খবর শুনে কেনই বা সটকে পড়েছিল? গতকাল পর্যন্ত এসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। বনানী থানা পুলিশ বলেছে, নিখোঁজ বিএনপি নেতা  ইলিয়াস আলীর বাসায় হানা দিয়েছিল ডিবি পুলিশের একটি টিম। ডিবি পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মনিরুল ইসলাম বলেছেন, আমাদের কোন টিম ইলিয়াস আলীর বাসায় যায়নি। ইলিয়াস আলীর ঘনিষ্ঠজনরা জানান, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ ঘটনা ভিন্নদিকে প্রবাহের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবেই ইলিয়াস আলীর পরিবারকে হয়রানি করছে। এ প্রেক্ষিতে গতকাল বিকালে বনানীর সিলেট হাউজে  নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া একটার দিকে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে ৫ সদস্য অস্ত্র নিয়ে গেট ভাঙ্গার চেষ্টা করে। ধাক্কাধাক্কি করে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। এতে বাড়ির সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এক মাস পরও ইলিয়াস আলীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে গভীর রাতে বাসায় কারা এলো, কি কারণে এমন আচরণ করলো কিছুই বুঝতে পারছি না। এহেন ঘটনায় আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই আমি বনানী থানার একজন এসআইকে ফোন করি। তাকে বিষয়টি জানাই। ওই এসআই বলেন, আমি ওসিকে জানচ্ছি। এরপর ওসিকে ফোন দেই। ওসি বলেন, আমাদের কেউ যায়নি। গিয়েছে ডিবি পুলিশের একটি টিম। তারা ভুল করে সেখানে পিকেটারের খোঁজ করতে গিয়েছে। তখন আমি বলেছি, এ বাসায় এতবড় একটা ঘটনা ঘটেছে। এরপরও তাদের এতবড় ভুল হলো কিভাবে? এ প্রশ্ন এড়িয়ে যান ওসি মামুন অর-রশীদ। তাহসিনা রুশদীর বলেন, আমরা খুবই অসহায়। চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। একদিকে এক মাস ধরে স্বামীর খোঁজ পাচ্ছি না। অন্যদিকে আরও বিপর্যস্ত করে তোলার জন্য একের পর এক হয়রানি করা হচ্ছে। কেন তারা এমন করছে কিছুই বুঝতে পারছি না। নিখোঁজ  ইলিয়াস আলী প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রুশদীর বলেন, যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেছি, সেখানে দলের কাছে আর কিছুই বলার নেই। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পর এখন পর্যন্ত কোন খবর পাচ্ছি না। সিলেট হাউজের গাড়ি চালক তাজ উদ্দিন বলেন, তখন আমার চোখে ঘুম ঘুম ছিল। হঠাৎ অপরিচত লোকজনের গেট ধাক্কা-ধাক্কি ও চিৎকারের শব্দ শুনে এগিয়ে যাই। কারা ও কেন এসেছে জানতে চাই। তারা বলে, এই বাসায় তল্লাশি করতে এসেছি। কারা থাকে তাদের তালিকা করবো, দরজা খোল। এ সময় ফের তাদের পরিচয় জানতে চাইলে নিজেদের ডিবি পুলিশ বলে পরিচয় দেয়। এ সময় তাড়াতাড়ি ৫ম তলায় উঠে ম্যাডামকে জানাই। নিচে নেমে বলি, সাংবাদিকদের খবর দিয়েছি। যা করার তাদের সামনেই করবেন। একথা শোনার পরপরই তারা চলে যায়। তিনি বলেন, গেটের কাছে তিনজন ছিল। আর গলির প্রবেশমুখে আরও একাধিক লোকজনের শব্দ পাওয়া গেছে। ওই তিনজনের প্রত্যেকের কাঁধে অস্ত্র ছিল। তাদের বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ বছর। প্রত্যেকেই সুঠাম দেহের অধিকারী। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হরতালে ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি পোড়ানো মামলার চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামিদের খুঁজতে ডিবি পুলিশের টিম গিয়েছিল। পরে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর দ্রুত তারা সটকে পড়ে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মনিরুল ইসলাম বলেন, ওই রাতে আমাদের কোন টিম ইলিয়াস আলীর বাসায় যায়নি। ওই বাসায় পলাতক আসামি কিংবা পিকেটার খোঁজার প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় আরও কয়েকজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা বর্তমানে পলাতক রয়েছে। গুলশান জোনের ডিসি লুৎফুল কবীর বলেন, গভীর রাতে ইলিয়াস আলীর বাসায় থানা পুলিশের কোন টিম যায়নি। তবে কারা, কেন গিয়েছিল তা খুঁজে বের করা হবে। বনানী থানার ওসি মামুন-অর রশীদ বলেন, এখন এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবো না। উল্লেখ্য, গত ১৭ই এপ্রিল মধ্যরাতে বনানী থানাধীন সাউথ পয়েন্ট স্কুল সংলগ্ন ২ নম্বর সড়ক থেকে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়। তবে ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালক আনসার আলীর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ সংক্রান্তে ১৮ই এপ্রিল ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা বনানী থানায় একটি জিডি করেন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads