বিব্রত এক বিচারপতি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপি নেতাদের জামিন আবেদন বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের বেঞ্চে উত্থাপন করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এ সময়ে আদালত বলেন, আমরা আপনাদের এই আবেদন এখন শুনবো না। আপনারা আবেদন করেন। বিষয়টি লিস্টে এলে আমরা শুনবো। ব্যারিস্টার মওদুদ আদালতকে বলেন, বিষয়টি খুবই জরুরি। আজই শুনানি করা প্রয়োজন। এসময় বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি একেএম সাহিদুল হক বিব্রতবোধের কথা বলেন। এ বেঞ্চ থেকে বেরিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ বিএনপির আইনজীবীরা বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চে যান। ওই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জানান, বেঞ্চের ফৌজদারি মোশন শুনানির এখতিয়ার নেই। এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির কোন নির্দেশনা এখনও আসেনি। সেখান থেকে ফিরে এসে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করার জন্য আইনজীবী সমিতি ভবনে বৈঠক করেন তারা। পরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ নেতাদের জামিনের জন্য সকালে একটি বেঞ্চে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই বেঞ্চ আমাদের আবেদন গ্রহণ করতে বিব্রতবোধ করেছে। তার পর আমরা আরেকটি বেঞ্চে যাওয়ার পর ওই বেঞ্চ বললো তাদের জামিন আবেদন শুনানির এখতিয়ার আছে কিনা তা উনারা জানেন না। তারপর আমরা ফিরে এসেছি। ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল প্রমুখ। বিভক্ত আদেশ দুপুরের দিকে বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হক ও বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার বেঞ্চে হাজির হয়ে জামিন চান ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। এসময় আদালত ৩টার দিকে শুনানির সময় ধার্য করেন। ব্যারিস্টার খোকনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তিনি বলেন, মাহবুবউদ্দিন খোকন একজন সংসদ সদস্য এবং আইনজীবী। এ বিবেচনায় তিনি জামিন পাওয়ার যোগ্য। ব্যারিস্টার রফিক বলেন, হরতাল শেষ হয়েছে ৬টায়, ঘটনা ঘটেছে ৯টার পরে। গাড়িচালক মামলা দায়ের করেননি। মামলা করেছে পুলিশ। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেন, মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে করা। এই মামলায় সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন বা অভিযোগপত্র দাখিল করতে হয়। কয়েকদিন তো চলেই গেছে। তাছাড়া বারের সদস্য ও সংসদ সদস্য বিবেচনায় তাকে জামিন দিলে অন্যরা সুযোগ পেয়ে যাবে। শুনানি শেষে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে আগামী ৯ই মে পর্যন্ত জামিন দেন। অপরদিকে কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ওই আবেদন খারিজ করে দেন। আদালতের এই আদেশের পর বিএনপিপন্থি আইনজীবী হৈচৈ করে ওঠেন। এ সময় দুই বিচারপতি এজলাস ছেড়ে চলে যান। তাদের প্রস্থানের পর হৈচৈ আরও বেড়ে যায়। একপর্যায়ে আদালত কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় আইনজীবীরা স্লোগানও দেন। পরে ব্যরিস্টার রফিক-উল হক সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের এই দ্বিধাবিভক্ত আদেশের ফলে নিয়ম অনুযায়ী আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। প্রধান বিচারপতি তৃতীয় বেঞ্চ গঠন করে দিলে সেখানে আবেদনটি নিষ্পত্তি হবে। আদালতের এই আদেশের পর আমরা আবেদনটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হয়রানি না করতে আদালতের কাছে নির্দেশনা প্রার্থনা করি। এ সময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে আশ্বস্ত করেন যে, তাকে হয়রানি করা হবে না। ইলিয়াসের আইনজীবী হওয়ায় প্রতিশোধপরায়ন হয়ে হয়তো খোকনের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে। কনিষ্ঠ বিচারপতির আদেশকে নজিরবিহীন হিসেবে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, এ আদেশ দুর্ভাগ্যজনক। আমার ৫০ বছরের বেশি সময়ের আইন পেশায় আগাম জামিন প্রশ্নে বিভক্তি কখনও দেখিনি। আসামি যারা মামলা দু’টিতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- ১৮ দলীয় জোটের শরিক এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এমপি, এনপিপি সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নীলু, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্রিগেডিয়ার (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রিজভী আহমেদ, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া এমপি, শাম্মী আখতার এমপি, রেহানা আক্তার এমপি, মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব আবদুস সালাম, বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান রতন, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবীব উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর শরফত আলী সপু, মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দল সম্পাদক ইয়াছিন আলী, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান খোকন, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুল, ছাত্রশিবির নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, আবদুল জব্বার, মহানগর উত্তর যুবদলের সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর, মহানগর দক্ষিণ যুবদল সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মজনু, যুবদল সহ-দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল, মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদল সম্পাদক হাবীবুর রশীদ হাবিব, ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল মতিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হক নাছির, মহানগর উত্তর ছাত্রদল সম্পাদক কামাল আনোয়ার, সাবেক কমিশনার আবুল বাসার, ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আনোয়ার হোসেন, মহিলা দল নেত্রী রেহানা আক্তার ডলি, ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি এল রহমান, বিএনপির সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নবী সোলায়মান ও খিলগাঁও থানা বিএনপি সভাপতি ইউনুছ মৃধা। |
স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিরোধী জোটের নেতাদের আগাম জামিনের সুরাহা হয়নি। গতকাল সকালে তাদের জামিন আবেদন শুনতে বিব্রতবোধ করেছেন হাইকোর্টের এক বিচারপতি। আরেকটি বেঞ্চ এখতিয়ার না থাকার কথা বলেন। বিকালে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনের আগাম জামিন প্রশ্নে বিভক্ত আদেশ দেন হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আগাম জামিন মঞ্জুর করলেও অপর বিচারপতি জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এ ঘটনাকে নজিরবিহীন হিসেবে অভিহিত করেছেন। এদিকে বিরোধী জোটের নেতাদের জামিন নিয়ে দিনভর আদালতপাড়ায় ছিল উত্তেজনা। সুপ্রিম কোর্টের প্রতিটি গেটে ভোর থেকেই অবস্থান নেন পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। সারাদিন ধরে বিএনপি নেতাদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হয় প্রতিটি গাড়িতে। আইনজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, স্বৈরাচারী সরকার র্যাব-পুলিশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের চতুর্দিক ঘেরাও করে রেখেছে। সাদা পোশাকের পুলিশে ভরে আছে হাইকোর্ট। তাই জামিনের জন্য বিএনপির নেতারা আদালতে আসতে পারছেন না। এতে আমরা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। রোববার রাতে বিএনপি’র শীর্ষস্থানীয় ৫০ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগে দু’টি মামলা করা হয়। মামলার আসামিরা সোমবারই হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তবে ওই দিন হরতাল থাকায় এবং পরদিন সরকারি ছুটি থাকায় ওই আবেদনের শুনানি হয়নি। বিশেষ বেঞ্চে বিএনপি নেতাদের জামিন আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠানে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের আবেদনও এর আগে প্রধান বিচারপতি নাকচ করে দিয়েছিলেন।
বুধবার, ২ মে, ২০১২
বিব্রত এবং বিভক্ত আদালত
Posted on ৬:২৯ PM by Abul Bashar Manik
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন