চট্টগ্রামে বিএনপি-জামায়াতসহ ১৮ দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দেড়শতাধিক নেতাকর্মী এবং সাংবাদিক, পুলিশসহ আহত হয়েছেন দু’শতাধিক।
বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি থেকে নাসিমন ভবন এলাকায় মিছিল নিয়ে আসার সময় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও যোগ দেয়। সংঘর্ষ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী টানা সংঘর্ষকালে বিক্ষুব্ধ জনতা নাসিমন ভবনের সামনে, লালখান বাজারে ও ওয়াসা মোড়ে তিনটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। রাত সাড়ে আটটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নগরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে পুলিশি তল্লাশি চলছিল। যানবাহন চলাচল ছিল কম।
সংঘর্ষের সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাংচুর করা হয়। এ সময় পুলিশ নাসিমন ভবন বিএনপি কার্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কমপক্ষে ৫০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে।
মিছিলে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা ও ভাংচুরে নগরীর টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার, ইস্পাহানি মোড়, দামপাড়া ওয়াসা মোড়, আলমাস সিনেমা মোড়, বহদ্দারহাট, এনায়েতবাজার, রিয়াজউদ্দিনবাজার, তিনপোল চত্বর, সিআরবি চত্বর, চট্টেশ্বরী মোড়, বৌদ্ধমন্দির পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ জনতার ইটপাটকেল নিক্ষেপের ফলে পুলিশকে বারবার পিছু হটতে হয়। এ সময় পুলিশ শতাধিক টিয়ারশেল, রাবার বুলেটসহ ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান অভিযোগ করেছেন, পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে নেতাকর্মীদের পিটিয়েছে। এতে কমপক্ষে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। চট্টগ্রাম নগর বিএনপি সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপিসহ ১৮ দলের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ দানবের মতো হামলা চালিয়েছে। পুলিশ দলীয় কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত মসজিদে জুতা পায়ে প্রবেশ করে নামাজরত সাধারণ মুসল্লিদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। তিনি বলেন, পুলিশ পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। দেশের মানুষ এখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কবলে।
কোতোয়ালি অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ দাবি করেন, সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫০ পুলিশ আহত হয়েছেন। তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শতাধিক টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, কাজীর দেউড়ি থেকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বিএনপির গণমিছিলে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে পুলিশ ওই মিছিলে বাধা দেয়। এ সময় জামায়াতের নেতাকর্মীরা মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পুলিশ টিয়ারশেল ছোড়ে। উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ একপর্যায়ে নাসিমন ভবনের সামনেও ছড়িয়ে পড়ে। নাসিমন ভবনে বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থান নেয় বিএনপিসহ ১৮ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সহকারী কমিশনার তানভীরের নেতৃত্বে পুলিশ নেতাদের ওপর হামলা চালাতে এগিয়ে গেলে নেতাদের রক্ষায় কর্মীরা এগিয়ে আসেন। এ সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। নাসিমন ভবনে অবস্থান নেয়া কেন্দ্রীয় নেতাসহ নেতাকর্মীদের পুলিশ অবরুদ্ধ করে রেখে কক্ষের ভেতরে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার, সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, রোজী কবির, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত, উত্তর জেলা বিএনপির আসলাম চৌধুরী, শামসুল আলম, নগর জামায়াতের আমির শামসুল ইসলাম এমপি, জাগপা সভাপতি আবু মোজাফফর মোহাম্মদ আনাস, আবু সুফিয়ান, মাহবুবের রহমান শামীম, আবুল হাসেম বক্কর, মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, সালাউদ্দিন, আঁখি সুলতানাসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আটকা পড়েন। দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা আটক থাকার পর দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে সিনিয়র নেতাদের উদ্ধার করে। এ সংঘর্ষে আহত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন আবদুল্লাহ আল নোমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গোলাম আকবর খন্দকার, রোজী কবির, ওয়াহিদুল আলম, আসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক জসিম, শামসুল ইসলাম এমপি, শামসুল আলম, মাহবুবের রহমান শামীম, ডা. শাহাদাত, আবু সুফিয়ান, মোশারফ হোসেন দীপ্তি, সাইফুদ্দিন সালাম মিঠুসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী।
সংঘর্ষ চলাকালে ৭ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আহত সাংবাদিকরা হচ্ছেন দিগন্ত টেলিভিশনের জয়নাল আবেদিন, নাসিরুল আলম, দৈনিক স্বাধীন মতের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সাইফুল ইসলাম শিল্পী, বিডি নিউজের ফটো সাংবাদিক সুমন বাবু, যায়যায়দিন পত্রিকার মশিউর রেহমান, বাংলা নিউজের উজ্জ্বল ধর। দিগন্ত টেলিভিশনের জয়নাল আবেদিনের পায়ে পুলিশের ছোড়া তিনটি রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়।
নেতাদের হত্যার উদ্দেশে এ হামলা—বিএনপি : বিএনপি-জামায়াতসহ ১৮ দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিলে পুলিশের হামলা, শত শত নেতাকর্মীকে আহত করার ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় বিএনপি চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় আহূত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা বলেছেন, পুলিশ উপরের নির্দেশে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেয়া সিনিয়র নেতাদের হত্যার উদ্দেশে অবরুদ্ধ করে মুহুর্মুহু টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংবাদ সম্মেলনে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, দেশ এখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কবলে। শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশে পুলিশের এ হামলা পরিকল্পিত। আমীর খসরু বলেন, সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশ নির্লজ্জ বর্বর দানবের মতো নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। তিনি বলেন, দেশের মানুষ আজ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের যাঁতাকলে আবদ্ধ। বেশিদিন এভাবে সরকার টিকে থাকতে পারবে না। পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আজ চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলেছেন, তাদের শত শত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। নগরীর হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ছিল আহতদের ভিড়। বিএনপি নেতারা বলেছেন, দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে আলাপ করে হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা গোলাম আকবর খন্দকার, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, জামায়াত ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি শামসুল ইসলাম এমপি, বিএনপি নেতা শামসুল আলম, আসলাম চৌধুরী, এএম নাজিম উদ্দিন, বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান, মাহবুবের রহমান শামীম, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল হাশেম বক্কর, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশ : এদিকে পুলিশি হামলার আগে নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় একটি ট্রাকে বিএনপি ও জোটের নেতারা সমাবেশ চালাতে থাকেন। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিএনপির জনসমর্থন দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই পুলিশ দিয়ে বাধা দিচ্ছে। হামলা-মামলা নিপীড়ন-নির্যাতন যত তীব্র হবে, আন্দোলনও তত জোরদার হবে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার দেশকে অসভ্য, অগণতান্ত্রিক ও পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। পুলিশ যেভাবে নির্বিচারে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে তা কল্পনাও করা যায় না। একটি গণতান্ত্রিক দেশে পুলিশের এ ভূমিকা মাস্তানিকেও হার মানিয়েছে।
নগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা গোলাম আকবর খন্দকার, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, বেগম রোজী কবির, জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আলহাজ শামসুল ইসলাম এমপি, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী, এএম নাজিমউদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোট সভাপতি মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী, জাগপা কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আবু মোজাফফর মোহাম্মদ আনাস, নেজাম ইসলামী সভাপতি আবদুর রহমান, বিজেপি সভাপতি নুর মোহাম্মদ খান, বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল হাশেম বক্কর, এসএম সাইফুল আলম, মোশারফ হোসেন দীপ্তি, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, ইয়াছিন চৌধুরী লিটনসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।
বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি থেকে নাসিমন ভবন এলাকায় মিছিল নিয়ে আসার সময় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও যোগ দেয়। সংঘর্ষ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী টানা সংঘর্ষকালে বিক্ষুব্ধ জনতা নাসিমন ভবনের সামনে, লালখান বাজারে ও ওয়াসা মোড়ে তিনটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। রাত সাড়ে আটটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নগরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে পুলিশি তল্লাশি চলছিল। যানবাহন চলাচল ছিল কম।
সংঘর্ষের সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাংচুর করা হয়। এ সময় পুলিশ নাসিমন ভবন বিএনপি কার্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কমপক্ষে ৫০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে।
মিছিলে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা ও ভাংচুরে নগরীর টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার, ইস্পাহানি মোড়, দামপাড়া ওয়াসা মোড়, আলমাস সিনেমা মোড়, বহদ্দারহাট, এনায়েতবাজার, রিয়াজউদ্দিনবাজার, তিনপোল চত্বর, সিআরবি চত্বর, চট্টেশ্বরী মোড়, বৌদ্ধমন্দির পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ জনতার ইটপাটকেল নিক্ষেপের ফলে পুলিশকে বারবার পিছু হটতে হয়। এ সময় পুলিশ শতাধিক টিয়ারশেল, রাবার বুলেটসহ ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান অভিযোগ করেছেন, পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে নেতাকর্মীদের পিটিয়েছে। এতে কমপক্ষে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। চট্টগ্রাম নগর বিএনপি সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপিসহ ১৮ দলের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ দানবের মতো হামলা চালিয়েছে। পুলিশ দলীয় কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত মসজিদে জুতা পায়ে প্রবেশ করে নামাজরত সাধারণ মুসল্লিদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। তিনি বলেন, পুলিশ পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। দেশের মানুষ এখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কবলে।
কোতোয়ালি অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ দাবি করেন, সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫০ পুলিশ আহত হয়েছেন। তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শতাধিক টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, কাজীর দেউড়ি থেকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বিএনপির গণমিছিলে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে পুলিশ ওই মিছিলে বাধা দেয়। এ সময় জামায়াতের নেতাকর্মীরা মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পুলিশ টিয়ারশেল ছোড়ে। উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ একপর্যায়ে নাসিমন ভবনের সামনেও ছড়িয়ে পড়ে। নাসিমন ভবনে বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থান নেয় বিএনপিসহ ১৮ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সহকারী কমিশনার তানভীরের নেতৃত্বে পুলিশ নেতাদের ওপর হামলা চালাতে এগিয়ে গেলে নেতাদের রক্ষায় কর্মীরা এগিয়ে আসেন। এ সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। নাসিমন ভবনে অবস্থান নেয়া কেন্দ্রীয় নেতাসহ নেতাকর্মীদের পুলিশ অবরুদ্ধ করে রেখে কক্ষের ভেতরে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার, সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, রোজী কবির, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত, উত্তর জেলা বিএনপির আসলাম চৌধুরী, শামসুল আলম, নগর জামায়াতের আমির শামসুল ইসলাম এমপি, জাগপা সভাপতি আবু মোজাফফর মোহাম্মদ আনাস, আবু সুফিয়ান, মাহবুবের রহমান শামীম, আবুল হাসেম বক্কর, মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, সালাউদ্দিন, আঁখি সুলতানাসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আটকা পড়েন। দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা আটক থাকার পর দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে সিনিয়র নেতাদের উদ্ধার করে। এ সংঘর্ষে আহত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন আবদুল্লাহ আল নোমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গোলাম আকবর খন্দকার, রোজী কবির, ওয়াহিদুল আলম, আসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক জসিম, শামসুল ইসলাম এমপি, শামসুল আলম, মাহবুবের রহমান শামীম, ডা. শাহাদাত, আবু সুফিয়ান, মোশারফ হোসেন দীপ্তি, সাইফুদ্দিন সালাম মিঠুসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী।
সংঘর্ষ চলাকালে ৭ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আহত সাংবাদিকরা হচ্ছেন দিগন্ত টেলিভিশনের জয়নাল আবেদিন, নাসিরুল আলম, দৈনিক স্বাধীন মতের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সাইফুল ইসলাম শিল্পী, বিডি নিউজের ফটো সাংবাদিক সুমন বাবু, যায়যায়দিন পত্রিকার মশিউর রেহমান, বাংলা নিউজের উজ্জ্বল ধর। দিগন্ত টেলিভিশনের জয়নাল আবেদিনের পায়ে পুলিশের ছোড়া তিনটি রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়।
নেতাদের হত্যার উদ্দেশে এ হামলা—বিএনপি : বিএনপি-জামায়াতসহ ১৮ দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মিছিলে পুলিশের হামলা, শত শত নেতাকর্মীকে আহত করার ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় বিএনপি চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় আহূত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা বলেছেন, পুলিশ উপরের নির্দেশে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেয়া সিনিয়র নেতাদের হত্যার উদ্দেশে অবরুদ্ধ করে মুহুর্মুহু টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংবাদ সম্মেলনে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, দেশ এখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কবলে। শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশে পুলিশের এ হামলা পরিকল্পিত। আমীর খসরু বলেন, সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশ নির্লজ্জ বর্বর দানবের মতো নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। তিনি বলেন, দেশের মানুষ আজ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের যাঁতাকলে আবদ্ধ। বেশিদিন এভাবে সরকার টিকে থাকতে পারবে না। পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আজ চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলেছেন, তাদের শত শত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। নগরীর হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ছিল আহতদের ভিড়। বিএনপি নেতারা বলেছেন, দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে আলাপ করে হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা গোলাম আকবর খন্দকার, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, জামায়াত ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি শামসুল ইসলাম এমপি, বিএনপি নেতা শামসুল আলম, আসলাম চৌধুরী, এএম নাজিম উদ্দিন, বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান, মাহবুবের রহমান শামীম, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল হাশেম বক্কর, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশ : এদিকে পুলিশি হামলার আগে নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় একটি ট্রাকে বিএনপি ও জোটের নেতারা সমাবেশ চালাতে থাকেন। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিএনপির জনসমর্থন দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই পুলিশ দিয়ে বাধা দিচ্ছে। হামলা-মামলা নিপীড়ন-নির্যাতন যত তীব্র হবে, আন্দোলনও তত জোরদার হবে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার দেশকে অসভ্য, অগণতান্ত্রিক ও পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। পুলিশ যেভাবে নির্বিচারে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে তা কল্পনাও করা যায় না। একটি গণতান্ত্রিক দেশে পুলিশের এ ভূমিকা মাস্তানিকেও হার মানিয়েছে।
নগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা গোলাম আকবর খন্দকার, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, বেগম রোজী কবির, জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আলহাজ শামসুল ইসলাম এমপি, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী, এএম নাজিমউদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোট সভাপতি মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী, জাগপা কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আবু মোজাফফর মোহাম্মদ আনাস, নেজাম ইসলামী সভাপতি আবদুর রহমান, বিজেপি সভাপতি নুর মোহাম্মদ খান, বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল হাশেম বক্কর, এসএম সাইফুল আলম, মোশারফ হোসেন দীপ্তি, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, ইয়াছিন চৌধুরী লিটনসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন