স্বাধীনতার ঘোষক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩১তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ। দেশের জনপ্রিয় দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।
শোকাবহ এ দিনটি স্মরণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণসহ ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন। জাতি আজ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
শহীদ জিয়াউর রহমান আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। জাতির প্রতিটি সঙ্কটময় মুহূর্তে তিনি বার বার দাঁড়িয়েছেন নির্ভয়ে, মাথা উঁচু করে। বিপর্যস্ত জাতিকে রক্ষা করেছেন সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে। ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিশাহারা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস জুগিয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই তিনি ক্ষান্ত থাকেননি, দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য হানাদারদের বিরুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার এ অতুলনীয় ভূমিকা ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত এক পরিস্থিতি থেকে দেশ মুক্তি পায় ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক সিপাহি-জনতা বিপ্লবের মাধ্যমে। আর এ বিপ্লবের প্রাণপুরুষ ছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি একদলীয় শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই দেশে নিশ্চিত করেন বাক-ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা জিয়া জাতির নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরেন। তার অন্যতম উপহার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তিনি ছিলেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল এলাকার বাংলাদেশের অতন্দ্র প্রহরী, অকুতোভয় বীর। তিনি ছিলেন আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকে শকুনের থাবা থেকে মুক্ত রাখার লড়াকু সৈনিক। সম্প্রসারণবাদীদের ষড়যন্ত্র রুখতে জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিলেন তিনি। আমৃত্যু যুদ্ধ করেছেন ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শ্রেণিবৈষম্য ও নিরক্ষতার বিরুদ্ধে। বাঙালি জাতিকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশকে তিনি গণতন্ত্রের আস্বাদ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি জিয়া খালকাটা কর্মসূচি, সবুজ বিপ্লব, শিল্প উন্নয়ন এবং যুগোপযোগী ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশের ভিত রচনা করেন। নারীসমাজের উন্নয়ন ও শিশুদের বিকাশে তার আগ্রহ জাতিকে নতুন দিকনির্দেশনা দেয়। তার সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃত। মুসলিম বিশ্বে, জোটনিরপেক্ষ বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজোদীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সার্কের সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে শহীদ জিয়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে এক টগবগে রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সাড়ে তিন বছরের দুঃশাসন, লুটপাটের পর সিপাহি-জনতার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে ক্ষমতায় এসে স্বল্প সময়ের শাসনকালে তিনি বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছিলেন।
৩০ মে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতে গোটা জাতি শোকাভিভূত হয়ে পড়েছিল। এ শোকের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল শেরেবাংলানগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জানাজায়। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সেদিন জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। আজ এক প্রতিকূল সময়ে পালিত হচ্ছে এ মহান নেতার শাহাদাতবার্ষিকী।
বিএনপির বাণী : রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩১তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণী দিয়েছে বিএনপি। গতকাল দলটির সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি স্বাক্ষরিত এ বাণীতে বলা হয়—বিএনপির স্থপতি, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩১তম শাহাদাতবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে। একই সঙ্গে দলটি শহীদ জিয়ার অম্লান আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচিকে সমুন্নত রেখে এর ভিত্তিতে সংগ্রাম পরিচালনা এবং বাস্তবে রূপায়িত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করছে।
বাণীতে বলা হয়, আমরা জাতির ঘোর দুঃসময়ে শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার অকুতোভয় ঘোষণা, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা, রাষ্ট্র গঠনে তার অনন্যসাধারণ কৃতিত্বের কথা গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছে। জাতীয় জীবনের চলমান সঙ্কটে শহীদ জিয়ার আদর্শকে প্রবলভাবে প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে বিএনপি সঙ্কট নিরসনে তার নির্দেশিত পথ অনুসরণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে। জাতীয় স্বার্থ, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার সুরক্ষায় শহীদ জিয়ার দর্শনকে কেন্দ্র করে লৌহদৃঢ় গণঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে বিএনপি।
শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তির ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণের পটভূমিতে তার অম্লান স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে এবার ৩০ মে মহান নেতার শাহাদাতবার্ষিকী সব স্তরে ব্যাপকভাবে ও যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে এবং নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ সব স্তরের সর্বসাধারণের প্রতি বিএনপি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
কর্মসূচি : জিয়ার ৩১তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গতকাল অনুষ্ঠিত বিএনপির আলোচনা সভার মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আজ ভোরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সহযোগী সংগঠন কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শোকাবহ এ দিনটির কর্মসূচি শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। দিনভর শোকের প্রতীক কালোব্যাজ ধারণ করবেন দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী। সকাল থেকে শেরেবাংলানগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে কোরআন খতম শুরু হবে। সকাল ১০টায় শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে শরিক হবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এছাড়া একই সময় ড্যাব-এর উদ্যোগে মাজার প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ড্যাব-এর উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিত্সাসেবা প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করা হবে।
মাজার প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ মাহফিল। সকাল থেকে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে শহীদ রাষ্ট্রপতির রুহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল, কোরআন খতম, বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচি : রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ৩০ ও ৩১ মে এবং ১ ও ২ জুন ঢাকা মহানগরীতে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করবেন খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র নেতারা। প্রথমে মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় খাদ্য বিতরণের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হবে। ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য সচিব ও দলের অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম জানান, দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের ৪ দিনের কর্মসূচি রয়েছে। এবার খাবার বিতরণ করবেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র নেতারা। তিনি জানান, ৪ দিনে প্রায় দেড়শ’ স্পটে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে।
প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন আলাদা আলাদা পোস্টার প্রকাশ করেছে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন আলাদা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোয় জিয়ার কর্মময় জীবনের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রচারের কথা রয়েছে।
শোকাবহ এ দিনটি স্মরণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণসহ ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন। জাতি আজ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
শহীদ জিয়াউর রহমান আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। জাতির প্রতিটি সঙ্কটময় মুহূর্তে তিনি বার বার দাঁড়িয়েছেন নির্ভয়ে, মাথা উঁচু করে। বিপর্যস্ত জাতিকে রক্ষা করেছেন সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে। ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিশাহারা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস জুগিয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই তিনি ক্ষান্ত থাকেননি, দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য হানাদারদের বিরুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার এ অতুলনীয় ভূমিকা ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত এক পরিস্থিতি থেকে দেশ মুক্তি পায় ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক সিপাহি-জনতা বিপ্লবের মাধ্যমে। আর এ বিপ্লবের প্রাণপুরুষ ছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি একদলীয় শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই দেশে নিশ্চিত করেন বাক-ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা জিয়া জাতির নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরেন। তার অন্যতম উপহার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তিনি ছিলেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল এলাকার বাংলাদেশের অতন্দ্র প্রহরী, অকুতোভয় বীর। তিনি ছিলেন আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকে শকুনের থাবা থেকে মুক্ত রাখার লড়াকু সৈনিক। সম্প্রসারণবাদীদের ষড়যন্ত্র রুখতে জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিলেন তিনি। আমৃত্যু যুদ্ধ করেছেন ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শ্রেণিবৈষম্য ও নিরক্ষতার বিরুদ্ধে। বাঙালি জাতিকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশকে তিনি গণতন্ত্রের আস্বাদ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি জিয়া খালকাটা কর্মসূচি, সবুজ বিপ্লব, শিল্প উন্নয়ন এবং যুগোপযোগী ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশের ভিত রচনা করেন। নারীসমাজের উন্নয়ন ও শিশুদের বিকাশে তার আগ্রহ জাতিকে নতুন দিকনির্দেশনা দেয়। তার সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃত। মুসলিম বিশ্বে, জোটনিরপেক্ষ বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজোদীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সার্কের সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে শহীদ জিয়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে এক টগবগে রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সাড়ে তিন বছরের দুঃশাসন, লুটপাটের পর সিপাহি-জনতার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে ক্ষমতায় এসে স্বল্প সময়ের শাসনকালে তিনি বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছিলেন।
৩০ মে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতে গোটা জাতি শোকাভিভূত হয়ে পড়েছিল। এ শোকের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল শেরেবাংলানগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জানাজায়। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সেদিন জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। আজ এক প্রতিকূল সময়ে পালিত হচ্ছে এ মহান নেতার শাহাদাতবার্ষিকী।
বিএনপির বাণী : রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩১তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণী দিয়েছে বিএনপি। গতকাল দলটির সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি স্বাক্ষরিত এ বাণীতে বলা হয়—বিএনপির স্থপতি, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩১তম শাহাদাতবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে। একই সঙ্গে দলটি শহীদ জিয়ার অম্লান আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচিকে সমুন্নত রেখে এর ভিত্তিতে সংগ্রাম পরিচালনা এবং বাস্তবে রূপায়িত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করছে।
বাণীতে বলা হয়, আমরা জাতির ঘোর দুঃসময়ে শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার অকুতোভয় ঘোষণা, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা, রাষ্ট্র গঠনে তার অনন্যসাধারণ কৃতিত্বের কথা গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছে। জাতীয় জীবনের চলমান সঙ্কটে শহীদ জিয়ার আদর্শকে প্রবলভাবে প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে বিএনপি সঙ্কট নিরসনে তার নির্দেশিত পথ অনুসরণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে। জাতীয় স্বার্থ, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার সুরক্ষায় শহীদ জিয়ার দর্শনকে কেন্দ্র করে লৌহদৃঢ় গণঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে বিএনপি।
শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তির ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণের পটভূমিতে তার অম্লান স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে এবার ৩০ মে মহান নেতার শাহাদাতবার্ষিকী সব স্তরে ব্যাপকভাবে ও যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে এবং নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ সব স্তরের সর্বসাধারণের প্রতি বিএনপি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
কর্মসূচি : জিয়ার ৩১তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গতকাল অনুষ্ঠিত বিএনপির আলোচনা সভার মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আজ ভোরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সহযোগী সংগঠন কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শোকাবহ এ দিনটির কর্মসূচি শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। দিনভর শোকের প্রতীক কালোব্যাজ ধারণ করবেন দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী। সকাল থেকে শেরেবাংলানগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে কোরআন খতম শুরু হবে। সকাল ১০টায় শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে শরিক হবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এছাড়া একই সময় ড্যাব-এর উদ্যোগে মাজার প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ড্যাব-এর উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিত্সাসেবা প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করা হবে।
মাজার প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ মাহফিল। সকাল থেকে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে শহীদ রাষ্ট্রপতির রুহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল, কোরআন খতম, বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচি : রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ৩০ ও ৩১ মে এবং ১ ও ২ জুন ঢাকা মহানগরীতে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করবেন খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র নেতারা। প্রথমে মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় খাদ্য বিতরণের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হবে। ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য সচিব ও দলের অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম জানান, দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের ৪ দিনের কর্মসূচি রয়েছে। এবার খাবার বিতরণ করবেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র নেতারা। তিনি জানান, ৪ দিনে প্রায় দেড়শ’ স্পটে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে।
প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন আলাদা আলাদা পোস্টার প্রকাশ করেছে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন আলাদা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোয় জিয়ার কর্মময় জীবনের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রচারের কথা রয়েছে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন