বিরোধী দলকে চাপে রাখতে চায় সরকারি দল ওদিকে আমাদের রাজনৈতিক সংবাদদাতা জানান, বিরোধী দলের আন্দোলন কর্মসূচিতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে সরকারি দল। এ মুহূর্তে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলা করতে চান না তারা। এজন্য ইলিয়াসের নিখোঁজ ঘটনার পর বিরোধী দলের টানা হরতালেও কোন কর্মসূচি দেয়নি আওয়ামী লীগ। হরতালে প্রশাসনিক ও আইনি শক্তি প্রয়োগেই নজর ছিল সরকারের। এখন হরতালে জ্বালাও পোড়াও এবং ককটেল ও হাতবোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের নামে দায়ের করা মামলাকে সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ায় নেতারা যাতে সহজে ছাড়া না পান সেজন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মামলায় নেতারা জামিন পেলেও বিচার প্রক্রিয়ায় যাতে ছেদ না পড়ে তারও নির্দেশনা রয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। সামনে বিরোধী দল আর কি ধরনের কর্মসূচি দিতে পারে তা অনুমান করে সরকারি দলের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিও নিয়ে রাখা হয়েছে। আপাতত বিরোধী দলের কর্মসূচি মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থাকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে বিশেষ কোন পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকারি দল মহাজোটের শরিকদের নিয়ে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবে। তবে এ মুহূর্তে তা করলে সংঘাত-সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশে ও দেশের বাইরে তা নেতিবাচক হিসেবে প্রচার হলে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে এ ধরনের কর্মসূচি না দেয়ার পক্ষে দলের বেশির ভাগ নেতা। তাই হরতালে মাঠে থাকার কথা বলা হলেও নির্ধারিত এলাকায় মিছিল করা ছাড়া নেতাকর্মীদের তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। এর আগে গত ১২ই মার্চ বিরোধী দলের ঢাকা চলো কর্মসূচির সময় বলা হয়েছিল বিরোধী দলের ঢাকা অচলের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে। এজন্য বিশেষ প্রস্তুতিও ছিল সরকারি দলের। কিন্তু প্রশাসনের কঠোর তৎপরতায় দলীয় নেতাকর্মীদের তেমন কোন ভূমিকা রাখতে হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণেই ঢাকার বাইরে থেকে তেমন লোকসমাগম করতে পারেনি বিরোধী দল। এছাড়া ওই কর্মসূচিকে ঘিরে সরকারি দলের অতি তৎপরতাও বেশ সমালোচনা কুড়ায়। ১২ই মার্চের আগের দু’দিন ঢাকার বাইরে থেকে যানবাহন আসতে না দেয়ায় তখন অনেকে বলেছিলেন, ক্ষমতায় থেকে সরকারি দল হরতাল দিচ্ছে। হরতালে গাড়িতে আগুন ও সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের দিনই সরকারি দলের নেতারা এ মামলার বিষয়ে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন। ওইদিন বিকালে এক সমাবেশে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছিলেন, শুধু মামলা দায়েরই নয়, জ্বালাও পোড়াওয়ের জন্য বিচার থেকে বিরোধী দলের নেতারা রেহাই পাবেন না। একই অনুষ্ঠানে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী ওই মামলার বিষয়ে বলেন, মামলা হয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এ মামলা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতারা প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিলেন সারা দেশে আগুন জ্বলবে বলে। এরপর হরতালে জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে। এজন্য তারা তো হুকুমের আসামি। তিনি বলেন, কোন দলের বড় নেতা বলে মামলা থেকে ছাড় পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এদিকে বিরোধীদল আরও বড় কর্মসূচি দিতে পারে এমনটি ভেবে সরকারি দলের তরফে প্রস্তুতিও নিয়ে রাখা হয়েছে। এদিকে আগামী ৫ই মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং ৬ই মে ভারতের অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। একই সময়ে ঢাকায় আসছেন জাপানের উপ প্রধানমন্ত্রী। এই তিন ভিআইপির সফরের সময় বিরোধী দল হরতাল বা অবরোধের মতো বড় কোন কর্মসূচি না দিতে পারে সেদিক থেকে চাপে রাখতেই হরতালের পর বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক মামলা করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। সামনে হরতাল বা অন্য রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে একই ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটলে এখন থেকে সরকার আইনি প্রক্রিয়াকেই গুরুত্ব দেবে বলে সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে। সরকারের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চায় না। বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও সরকার বাধা দিতে চায় না। তবে বিরোধী দল কর্মসূচি নামে মানুষের জানমালের ক্ষতি করতে চাইলে, জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালালে তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচিতে বিশ্বাস করে না। তবে বিরোধী দল কর্মসূচির নামে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এদিকে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ইস্যুতে শুরুতে সরকারি দল নমনীয় থাকলেও বিরোধী দলের কর্মসূচী দীর্ঘ হওয়ায় শক্ত অবস্থান নিয়েছে সরকার। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর সরকারি দলের নেতারাও এ নিয়ে তাদের উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন ইলিয়াস আলীর বাসায় গিয়ে তার পরিবারের খোঁজখবর নেন। তবে এ ইস্যুতে বিরোধী দল পাঁচ দিন হরতাল করার পরও অবস্থানে অনমনীয় হওয়ায় সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বাসে আগুন এবং সচিবালয়ের মতো সুরক্ষিত এলাকায় দু’টি ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় সরকারি দলেই সমালোচনা আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে। এ নিয়ে খোদ সরকারি দলের অনেক নেতা প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে। এমন অবস্থায় চাপে পড়েই বিরোধী দলের কর্মসূচির প্রশ্নে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান নিতে হয়। এর আগে ১২ই মার্চের ঢাকা চলো কর্মসূচিতেও কৌশলী অবস্থান নিয়েছিল সরকারি দল। ফলে বিরোধী দলের ওই কর্মসূচি প্রত্যাশিত হতে পারেনি। এর আগেই রাজপথে আওয়ামী লীগের ব্যাপক তৎপরতা বিরোধী দলের কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘাত সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়। ফলে বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মী সমাবেশে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এছাড়া ওই কর্মসূচি আগের তিন দিন বাইরে থেকে ঢাকায় আসার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও কড়াকড়ি আরোপ করার ফলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতেই পারেননি। বিরোধী দলের ওই কর্মসূচিকে ঘিরে সরকারি দল প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও কার্যত তাদের রাজপথে নামতে হয়নি। গত বছর সংবিধান সংশোধন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর বিরোধী দলের কর্মসূচিও একই ভাবে স্থিমিত করে দিয়েছিল সরকারি দল। তখন মামলা দিয়ে নেতাদের মুখ বন্ধ করা হয়। ওই সময় সংবিধান নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন তৎকালীন চারদলীয় জোটের নেতা ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি ফজলুল হক আমিনীর বিরুদ্ধে। এরপর থেকে আমিনী দাবি করে আসছেন তিনি কার্যত গৃহবন্দি হয়ে আছেন। দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে জামায়াত-শিবিরের একাধিক শোডাউন সহিংস রূপ নেয়ার পর তাদের বিরুদ্ধেও শক্ত আইনি ব্যবস্থা নেয় সরকার। এরপর থেকে রাজপথে জামায়াতের তৎপরতাও অনেক কমে গেছে। |
বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১২
আগাম নির্বাচন দিতে পারে সরকার
Posted on ১১:০৫ AM by Abul Bashar Manik
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন