সোমবার, ২১ মে, ২০১২

দুর্নীতির অভিযোগসহ সরকারকে বিশ্বব্যাংকের চিঠি : বিষবৃক্ষের ফল পাকতে শুরু করেছে



যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে সংঘটিত দুর্নীতির ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে তা দূরীকরণে মহাজোট সরকারের নির্লিপ্ততার মুখে আবারও চিঠি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। চিঠির জবাব দেয়া না হলে বিশ্বব্যাংকের পক্ষে পরবর্তী কোনো প্রকল্প সহায়তা দেয়া হবে না বলেও প্রচ্ছন্ন হুমকি রয়েছে। এ সংক্রান্ত রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে গতকালের আমার দেশ-এ। জানা যায়, ইআরডি’র মাধ্যমে চিঠিটি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়। এতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ৬টি প্রকল্পের নাম উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্ট লিওনার্দ এফ মেকেন্সি ক্রেথি কর্তৃক আনীত অভিযোগের উল্লেখ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠী সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই ঢালাও অভিযোগ করে থাকে বলে বর্তমান মহাজোট সরকার বরাবরই তাদের হাত ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করে আসছে। পদ্মা সেতু ইস্যুতে পূর্বতন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক সন্দেহের খড়্গ উত্তোলিত হলে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে সরকার নিজেদের ভাবমূর্তি উদ্ধারে দুদকের মাধ্যমে আবুল হোসেনকে স্বচ্ছতার সার্টিফিকেট দিয়ে একে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল এবং বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এবার সরকার কী করবে? সরকারের যদি অতই বুকের পাটা থেকে থাকে তবে তাদের বিশ্বব্যাংকের চিঠির জবাব দিতে এত কুণ্ঠা কেন? ইন্টিগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্ট কর্তৃক আনীত অভিযোগে ছয়টি প্রকল্প চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। এবার কোন দুদক দিয়ে সরকার বিশ্বব্যাংক কর্তৃক আনীত এই অভিযোগে নিজেদের দুধে ধোয়া তুলসীপাতা প্রমাণ করবে? যদি প্রমাণ করতে পারে ভালো কথা, কিন্তু কেলেঙ্কারি যে মহাজোট সরকারের মহারথিদের পিছু ছাড়ছে না। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির কোনো সুরাহা না হতেই রেল মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংঘটিত ৭০ কোটি টাকার দুর্নীতির যে কালো বিড়াল বেরিয়ে এসেছে তাকে সাদা বানানোর জন্যও হেন কোনো অপকৌশল নেই সরকার প্রয়োগ করছে না। রেল মন্ত্রণালয় ও রেল বিভাগের অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে নামকাওয়াস্তে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে সুরঞ্জিত সেনকে ‘নিষ্পাপ’ সনদ দিয়ে দেয়া হলো। এখন তাকে রেল মন্ত্রণালয়ে পুনর্বহাল করার চিন্তাভাবনাও চলছে।
নানা কৌশলে জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে দুর্নীতিকে আশ্রয় করে সরকার যেভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে তাতে দেশের ভাবমূর্তি দিন দিন যে তলানিতে গিয়ে ঠেকছে তাতে তাদের কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই। জনবিচ্ছিন্ন এই সরকার বাংলাদেশকেও বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার অপতত্পরতায় লিপ্ত হয়েছে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মহোত্সবে। সৈয়দ আবুল হোসেন এবং বাবু সুরঞ্জিত সেনকে মন্ত্রী হিসেবে বহাল রেখে পুরস্কৃত করার মাধ্যমে তারা শুধু দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে না, দেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশকে বহির্বিশ্বে ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। এর নেতিবাচক প্রভাবে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর আশীর্বাদ বঞ্চিত হতে চলেছে বাংলাদেশ। আমার দেশ-এর রিপোর্টে জানা যায়, বর্তমান অবস্থায় জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ও যোগাযোগ খাতে অর্থ বরাদ্দ দিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে।
নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে দেশকে এমন বেকায়দায় ঠেলে দিতে জনগণ সরকারকে ভোট দেয়নি। সরকারের প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতির বিষবৃক্ষ যেভাবে শিকড় গেড়েছে, তাকে উপড়ে না ফেললে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads