রবিবার, ৯ জুন, ২০১৩

রাজনীতি বোঝার প্রশ্ন


গত শনিবার হেফাজতে ইসলামের আমীরের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে আসা হেফাজতের নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধিদের উদ্দেশে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, এ দেশের কিছু ইসলামবিদ্বেষী মানুষ বলেন, আলেমরা রাজনীতি বোঝেন না। ওই মানুষগুলো মূলত অজ্ঞ। তারা জানেন না যে, আলেমরা যে নামায পড়ে তার মধ্যে রাজনীতি আছে, যাকাত আদায়ের মধ্যেও রাজনীতি আছে। ইসলামের প্রত্যেক বিধি-বিধানের মধ্যে রাজনীতি রয়েছে। আর আমরা এসব বিধি-বিধান সর্বত্রই চর্চা করি। তারা যে বলেন, আমরা রাজনীতি বুঝি না, মূলত যারা বলেন তারাই রাজনীতি বোঝেন না। প্রতিনিধিদের উদ্দেশে আল্লামা শফী আরও বলেন, যারা না বুঝে হেফাজতের ১৩ দফা দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তারা মূলত ইসলামবিদ্বেষীদের পক্ষ নিয়ে এই বিরোধিতা করছেন। দেশের তৌহিদী জনতা ইসলাম ও নবীর দুশমনদের কখনও ছাড় দেবে না। যারা মনে করেন, হেফাজত শেষ হয়ে গেছে তারা চরম ভুলের মধ্যে আছেন। কোটি কোটি মুসলমানের ঈমানী শক্তি কখনো নিঃশেষ হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, যতদিন এ পৃথিবী এবং মুসলমানগণ টিকে থাকবে, ততদিন হেফাজতে ইসলাম অটুট থাকবে। চাইলেই ইসলাম বিরোধী কোনো অপশক্তি হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন রুখে দিতে পারবে না।
প্রতিনিধিদের উদ্দেশে হেফাজতে ইসলামের আমীর যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে দু’টি বিষয়ে বার্তা রয়েছে। একটি বার্তা হেফাজতের আন্দোলন সম্পর্কে, অপর বার্তা রাজনীতি প্রসঙ্গে। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, যারা বলেন, আলেমরা রাজনীতি বোঝেন না তারাই আসলে রাজনীতি বোঝেন না। এই অজ্ঞরা জানেন না যে, আলেমরা যে নামায পড়েন তার মধ্যে যেমন রাজনীতি আছে, তেমনি রাজনীতি আছে যাকাতের মধ্যেও। আসলে ইসলামের প্রত্যেক বিধি-বিধানের মধ্যেই রয়েছে রাজনীতি। ইসলামের রাজনীতি প্রসঙ্গে আল্লামা শফী যে বক্তব্য রেখেছেন, সে সম্পর্কে আলোচনা তেমন হয় না। একাডেমিক আলোচনা হয় আরও কম। অথচ নব্বই ভাগ মুসলমানের এ দেশে ইসলামী রাজনীতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়া ছিল খুবই প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক। আর একাডেমিক আলোচনা তেমন না হওয়ায় ইসলামী রাজনীতি নিয়ে কিছু ভুল বুঝাবুঝির যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি অযথা বিতর্কের প্রয়াস পেয়েছে ইসলামীবিদ্বেষী কিছু মহল। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কেউ কেউ প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন, ধর্মের নামে রাজনীতি করা যাবে না। কেউ কেউ বলছেন, রাজনীতিতে ইসলামকে টেনে এনে ইসলামকে অবমাননা করা হচ্ছে। তারা চাইছেন নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাতের মধ্যেই যেন ইসলাম সীমিত থাকে। সমাজ ও রাষ্ট্রনীতিতে যেন ইসলামকে টেনে আনা না হয়। এদের এমন বক্তব্যে প্রশ্ন জাগে, ইসলামকে এভাবে সীমিত করার দায়িত্ব আপনারা কোত্থেকে পেলেন? আপনারা তো দূরের কথা, কোনো আলেমেরও ইসলামকে সীমিত করার কোনো অধিকার নেই।  মানুষের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন ও আন্তর্জাতিক জীবন প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালা যে বিধান দিয়েছেন, তার একটি শব্দও কোনো মুসলিম অস্বীকার করতে পারেন না। এ কারণেই বলা হয়, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান এবং এ কারণেই ইসলামী রাজনীতিও মুসলমানদের জন্য এক অনিবার্য বিষয়। ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.) এই রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন, মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র যার বড় প্রমাণ। এমন উদাহরণ থাকার পরেও যারা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামকে সীমিত করার কথা বলেন, তাদেরকে আমরা কোন নামে অভিহিত করবো? যারা আল্লাহর বাণীকে সীমিত করতে চায়, যারা রাসূল (সা.)-এর আদর্শ ও উদাহরণকে মেনে নিতে কুণ্ঠিত হয়, তাদেরকে আর যাই হোক মুসলিম নামে অভিহিত করা যায় কি না সেই প্রশ্ন জাগতেই পারে।
আমাদের রাজনীতিতে গরমিলের দৃশ্য তো খুবই স্পষ্ট। যারা ইসলামী রাজনীতির বিরুদ্ধে অহরহ কথা বলেন, ভোটের সময় তারাই আবার ইসলামী লেবাস ধারণ করে ইসলামের জন্য আবেগপ্রবণ বক্তব্য রাখেন। আসলে এরাই রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করেছেন। এদের উদ্দেশেই আজ বলা প্রয়োজন যে, ইসলামী রাজনীতি করা আর ইসলামের নামে রাজনীতি করা এক বিষয় নয়। লক্ষণীয়  বিষয় হলো, ইসলামবিদ্বেষী যে মহল রাজনীতিতে মন্দ কর্ম করে বেড়াচ্ছেন, তারাই আজ সাধু সাজার ভান করছেন। নব্বই ভাগ মুসলমানের এ দেশে আজ স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন যে, সমাজবাদ ও পুঁজিবাদকে আদর্শ মেনে যদি এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার মানুষের থাকে, তাহলে ইসলামকে আদর্শ মেনে রাজনীতি করার অধিকারও অবশ্যই এ দেশের কোটি কোটি মুসলিম নাগরিক সংরক্ষণ করেন। কারণ ইসলাম কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের জন্য নাযিল হয়নি। সমগ্র মানবজাতির জন্য ইসলাম একটি শাশ্বত আদর্শ। বিভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করে মহানবী (সা.) তার উজ্জ্বল উদাহরণ রেখে গেছেন। এরপরও ইসলামী রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন করার অবকাশ আছে কি?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads