রবিবার, ৯ জুন, ২০১৩

উদার গণতন্ত্র ও আমরা

যাকে আমরা এখন বলছি উদার গণতন্ত্র, তার ভিত্তি হলো অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। যে দল বেশি ভোট পাবে, তারা গঠন করবে সরকার। আর যারা তা পাবে না, পার্লামেন্টে তারা পালন করবে বিরোধী দলের ভূমিকা। আমরা এখন আমাদের দেশে পার্লামেন্টারি বা সংসদীয় গণতন্ত্রকে সুস্থভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান করতে চাচ্ছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংসদীয় গণতন্ত্র নেই। সে দেশে চলছে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির গণতন্ত্র। কিন্তু এই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। বলা হয়, গণতন্ত্রের মূল হাতিয়ার হলো তিনটি। জনমত, রাজনৈতিক দল এবং অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। শেখ হাসিনা বলছেন, তিনি ভোট না পেলে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন। ভোট না পেলে ক্ষমতা তাকে ছেড়ে দিতেই হবে। কিন্তু ভোট যদি অবাধ ও নিরপেক্ষ না হয়, তবে সেই ভোটের মাধ্যমে হতে পারবে না জনমতের যাচাই। জনমত যাচাই হতে হলে ভোট হতে হবে নিরপেক্ষ। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস গণতন্ত্রের অনুকূল নয়। ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে শেখ মুজিব সম্ভবত গড়তে চেয়েছিলেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুকরণে দেশে একদলের রাজত্ব। আওয়ামী লীগ এখনো বলছে না, এই এক দলের রাজত্ব করার চেষ্টা ছিল গণতন্ত্রের পরিপন্থী। তাই দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কার্যকলাপ বাংলাদেশের উদার গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্টি করতে পারছে সংশয়। ইংরেজরা যদি এই উপমহাদেশে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারত, তবে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস কেমন দাঁড়াত, সেটা জল্পনারই বিষয়। কিন্তু ব্রিটেনের সাথে এই উপমহাদেশের ইতিহাস সংযুক্ত হয়ে পড়েছে। আর সেই সুবাদেই এসেছে এই উপমহাদেশে গণতন্ত্রের ধারণা। এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে গণতন্ত্রের ধারণা বিকাশ লাভ করত কি না, সেটা বলা যায় না। ব্রিটিশ শাসন বদলে দিয়েছে আমাদের প্রাচীন বিচারব্যবস্থাকে। বদলে দিয়েছে ন্যায়-অন্যায়ের ধারণাকে। আর বয়ে এনেছে উদার গণতন্ত্রের ধারণা। এই উপমহাদেশের ভোটের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করলে আমরা দেখি, সর্বপ্রথম কলকাতা করপোরেশনে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন সামান্য কিছু প্রতিনিধি। কিন্তু এর দ্বারা ভোটের ধারণা সাধারণভাবে ব্যাপ্ত হতে পারেনি। ভোটের ধারণা গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছিল জেলা বোর্ডের নির্বাচনের মাধ্যমে। কারণ জেলা বোর্ডের কিছু সদস্য ভোটের মাধ্যমে হতে থাকেন নির্বাচিত। জেলা বোর্ড গঠিত হয় লর্ড রিপনের শাসনামলে (১৮৮০-১৮৮৪)। অর্থাৎ স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে সূচনা হয়েছিল ভোটের। ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে দেশ শাসনের ধারণা এই উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠা পায় প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন আইন পাস হয় ১৯৩৫ সালে। এই আইনানুসারে প্রাদেশিক আইনসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩৭ সালে। তখনকার বাংলা প্রদেশে মুসলিম লীগ এতে অংশগ্রহণ করে। এরপর পাকিস্তান হওয়ার প্রাক্কালে ১৯৪৬ সালে আবার প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, যা পাকিস্তান আন্দোলনকে প্রদান করে বিশেষ জঙ্গমতা। ব্রিটিশ শাসনামলে দেশ চলেছে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সে সময় দেশে যে সামান্য গণতন্ত্রটুকু ছিল এই উপমহাদেশের মুসলমানসমাজ তার সুযোগ নিতে চেয়েছেন। ভোটের রাজনীতিকে তারা চাননি অবহেলা করতে। এ হলো আমাদের উদার গণতন্ত্র অনুশীলনের পটভূমি। মুসলমানেরা চেয়েছেন প্রধানত নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি করতে। পাকিস্তান হওয়ার পর তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় যে প্রাদেশিক সরকার গঠিত হয়, তা ছিল ১৯৪৬ সালের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত সরকার। পাকিস্তানের ইতিহাসে ব্রিটেনের রেখে যাওয়া ঐতিহ্য থেকেছে প্রবহমান। গণতন্ত্র সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটি সতেজ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। এটা পূর্ব পাকিস্তানে কিছু পরিমাণে ছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল এর ঘাটতি। সাবেক পাকিস্তানে যতগুলো কারণে সামরিক শাসন আসতে পেরেছে, তার একটি কারণ ছিল এটাই। কিন্তু সামরিক শাসন এলেও গণতন্ত্রের ধারণা যে একেবারেই পরিত্যক্ত হয়েছে, তা কিন্তু নয়। সাবেক পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ধারণা হয়নি বিলুপ্ত। তাই ১৯৭০ সালে হতে পেরেছিল নির্বাচন। এই নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়নি। তাই আওয়ামী লীগ লাভ করতে পেরেছিল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। আওয়ামী লীগ দুটি আসন ছাড়া তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে লাভ করেছিল আর সব আসন। তবে আওয়ামী লীগ তদানীন্তন পাকিস্তানের আর কোনো প্রদেশের একটি আসনও পেতে পারেনি। ফলে সৃষ্টি হয় সরকার গঠন নিয়ে জটিলতা। শেখ মুজিব ঠিক কী চেয়েছিলেন আমাদের কাছে, তা এখনো স্বচ্ছ নয়। কারণ, শেখ মুজিব নির্বাচন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট আগা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের প্রদত্ত ১৯৭০ সালের লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও) মেনে। এতে বলা হয়েছিল, পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেশন এবং এই ফেডারেশন হবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের আদর্শে গঠিত। শেখ মুজিব স্বীকৃত হয়েছিলেন এই ইসলামি প্রজাতন্ত্রের আদর্শকে (Islamic Ideology) গ্রহণ করতে। আজ আওয়ামী লীগ বলছে, তিনি সব সময় চেয়েছেন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়তে। কিন্তু শেখ মুজিব মেনে নিয়েছিলেন ইসলামি মতাদর্শকে। অনেকে ভাবতে পারেন, ধর্মবিশ্বাস উদার গণতন্ত্রের পরিপন্থী। কিন্তু যে বিলাতের গণতন্ত্রকে আমরা আমাদের আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছি তার সাথেও জড়িত আছে ধর্মবিশ্বাস। বিলাতে এখনো কোনো ক্যাথলিক খ্রিষ্টান রাজা অথবা রানী হতে পারেন না। রাজা বা রানী হতে হলে তাকে হতে হয় অ্যাংলিকান খ্রিষ্টান। কিন্তু তা বলে ব্রিটিশ গণতন্ত্র উদার গণতন্ত্র নয়, এটা বলা যায় না। রাষ্ট্রের সাথে ধর্মবিশ্বাস জড়িত থাকলেই সেই রাষ্ট্র উদার গণতন্ত্রী হবে না, তা বলা চলে না। ইউরোপে সুইডেন একটি খুবই উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ। সুইডেনের রাজা বা রানীকে এখনো হতে হয় লুথেরান খ্রিষ্টান গির্জাভুক্ত। নরওয়ে ও সুইডেনও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নয়। কিন্তু উদার গণতন্ত্র এ দুটি দেশে বিশেষভাবেই প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে। গণতন্ত্রের ইতিহাস আসলে মানুষের ধর্মবিশ্বাসের সাথে এক পর্যায়ে থেকেছে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মূল্যবোধ এখনো মানুষের নীতিচেতনাকে করে চলেছে নানাভাবেই নিয়ন্ত্রিত। অনেক সমাজবিজ্ঞানীর মতে ধর্ম আর কিছু নয়, মানুষের আবেগজড়িত নীতিচেতনা মাত্র (Emotionalized ethics)মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী হবহাউজ (Hobhouse) বিষয়টি নিয়ে করেছেন বিশেষ আলোচনা।
১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতা চলে গিয়েছিলেন ভারতে। কিন্তু শেখ মুজিব ও ড. কামাল হোসেন ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। শেখ মুজিব গ্রেফতার হন পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর হাতে, আর চলে যান তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানে। যেখানে আওয়ামী লীগের প্রথম শ্রেণীর আর সব নেতারা ভারতের কলকাতা শহরে চলে যেতে পেরেছিলেন, সেখানে শেখ মুজিব ও ড. কামাল হোসেন ইচ্ছা করলেই যে কলকাতায় চলে যেতে পারতেন সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা মনে হয় অবান্তর। তবে এটা কেন ঘটেছিল, তা আমরা এখনো জানি না। ভারতে গঠিত হয়েছিল অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার। যা চলেছিল মূলত ভারত সরকারের নির্দেশে। খন্দকার মোশতাক ছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু তাকে কলকাতায় ১৯৭১ সালে কার্যত থাকতে হয়েছিল গৃহবন্দী হয়ে। তার স্থানে বাস্তবে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে উঠেছিলেন আবদুস সামাদ আজাদ। শোনা যায়, তিনি এটা হতে পেরেছিলেন মস্কোর অনুরক্ত হওয়ার কারণে। এ সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সরদার শরন সিং। তিনিও ছিলেন মস্কোঘেঁষা। ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী চলতেন প্রধানত দুই ব্যক্তির উপদেশ শুনে। এদের একজন হলেন দুর্গাপ্রসাদ ধর এবং আর একজন হলেন পি এন হাকসার। এরা উভয়ই ছিলেন মস্কোপন্থী। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট বুদ্ধিজীবীদের। যারা উদার গণতন্ত্রের আদর্শে আদৌ আস্থাবান ছিলেন না। সেই থেকে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট চিন্তাচেতনার দ্বারা, যা নয় উদার গণতন্ত্রের অনুকূল। অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন এখন আর টিকে নেই। খোদ রাশিয়ায় মানুষ চাচ্ছে উদার গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু বাংলাদেশে মস্কোর ঐতিহ্যবাদীরা এখনো উদার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে নন। বাংলাদেশে উদার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এ কারণেই হয়ে উঠেছে সমস্যাসঙ্কুল। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছে উদার গণতন্ত্রের পরিপন্থী শক্তি। এটাই এখন আমাদের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা।
শেখ মুজিব সারা জীবন আন্দোলন করেছিলেন দেশে উদার গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু তিনি কেন কী কারণে ঝুঁকে পড়েছিলেন সোভিয়েত কমিউনিস্ট শাসনের কায়দায় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গড়ার দিকে, আমরা তা জানি না। এর একটা কারণ হতে পারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছিল মোশতাক আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করতে। মার্কিন চেষ্টাকে প্রতিহত করতে যেয়ে শেখ মুজিব অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঝুঁকে পড়েন তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে। ভারতের রাজনৈতিক অবস্থাও ভালো যাচ্ছিল না। মনে হয়, শ্রীমতী গান্ধী শেখ মুজিবকে বলেছিলেন বাকশাল গঠন করতে। ১৯৭৫ সালে ২৬ জুন শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী সারা ভারতে ঘোষণা করেন জরুরি অবস্থা। হরণ করেন পত্রপত্রিকার স্বাধীনতা। কিন্তু এই জরুরি অবস্থার ঘোষণা তার রাজনৈতিক জীবনে এনে দিয়েছিল বিরাট বিপর্যয়। শ্রীমতী গান্ধী আবার ফিরে আসেন উদার গণতন্ত্রের দিকে। ভারতের গণতন্ত্র জাতিসত্তার সমস্যার এখনো সমাধান করতে পারেনি। বিরাট শক্তিধর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়েছে প্রকৃত গণতন্ত্রের অভাবে এবং জাতিসত্তার সমস্যার সমাধান না করতে পারার ফলে। ভারতে শিখরা চাচ্ছিল পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে। শ্রীমতী গান্ধী শিখদের স্বাধীনতার আন্দোলনকে দমন করেন সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে। এতে নিহত হন অনেক শিখ। ইন্দিরা গান্ধীর শিখ দেহরক্ষীরা দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করেন গুলি করে। শিখ স্বাধীনতা আন্দোলন আপাতত বন্ধ থাকলেও আগামীতে তা আবার হয়ে উঠতে পারে সক্রিয়। বর্তমানে ব্রিটেনে স্কটল্যান্ড চাচ্ছে স্বাধীন হতে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এই দাবিকে অস্বীকার না করে স্কটল্যান্ডে চাচ্ছেন গণভোটের আয়োজন করতে। স্কটল্যান্ডবাসী যদি স্বাধীন পৃথক রাষ্ট্র গড়তে চায়, তবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস্ তাতে আপত্তি করবে না। ব্রিটেন চাচ্ছে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী শিখ সমস্যার এ রকম কোনো শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চাননি। এটা ভারতের গণতন্ত্রের জন্য হয়ে আছে একটি দুষ্ট দৃষ্টান্ত। ইন্দিরা গান্ধীর পিতা ভারতের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরু প্রথমে কাশ্মিরে চেয়েছিলেন গণ-অভিমত গ্রহণ করতে, কিন্তু পরে আর তিনি তার এই নীতি অনুসরণে রাজি হননি। জোর করে কাশ্মিরকে করা হয়েছে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য। কেউ বলতে পারে না, বাংলাদেশকেও ভারত ভবিষ্যতে কাশ্মিরের মতো একটি অঙ্গরাষ্ট্র করে তোলার উদ্যোগ নেবে কি না। ভারতের সংবিধানে ৩৬৭ নম্বর ধারার ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ভারত ছাড়া ভারতের কাছে সব রাষ্ট্রই বিদেশী রাষ্ট্র, কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রপতি কোনো রাষ্ট্রকে বিদেশী রাষ্ট্র নয় বলে ঘোষণা করতে পারেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ রকম কোনো ঘোষণা আসার সম্ভাবনাকে একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। ভারত নারায়ণগঞ্জে তার আপন ইচ্ছায় গ্রহণ করেছে গুদাম গড়ার পরিকল্পনা। পত্রপত্রিকায় এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। জানি না, কী করে ভারত তার একক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের মধ্যে, ঢাকার কাছে এ রকম গুদাম নির্মাণের পরিকল্পনা করতে পারে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার হয়ে উঠেছে বিশেষভাবে ভারতবান্ধব। আওয়ামী লীগকে এ দেশের মানুষ তাই কেবল অগণতান্ত্রিক অভিলাষী দল হিসেবেই মনে করছে না, ভাবতে শুরু করেছে জাতীয় স্বার্থবিরোধী একটা দল হিসেবে।
আগামী নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী লীগের পক্ষে যাবে, যদি না নির্বাচন হয় কোনো নির্দলীয় অস্থায়ী সরকারের তত্ত্বাবধানে। তাই উঠছে নির্বাচনের সময় অস্থায়ী নির্দলীয় সরকারের দাবি। সব দেশেই উদার গণতন্ত্র ঠিক একই রকম নয়। যেমন ব্রিটেনে পার্লামেন্টের সভাপতি বা স্পিকার নির্বাচিত হতে হয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত নির্দলীয় সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে। কারণ মনে করা হয়, স্পিকার কোনো বিশেষ দল থেকে হলে অন্য দলের সদস্যরা পার্লামেন্টে বক্তব্য প্রদানের জন্য যথাযথ সময় পাবেন না এবং তাদের ওপর হতে পারে অবিচার। কিন্তু আমাদের দেশে এ রকম বিধান নেই। বিলাতে কেউ মন্ত্রী হওয়ার পর ছেড়ে দেন তার দলের কোনো নির্বাহী পদ। কিন্তু আমাদের দেশে এই রীতি নেই। শেখ হাসিনা কেবল দেশের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি আওয়ামী লীগেরও প্রধান। তিনি দলীয় পদ পরিত্যাগ করেননি। তাই তিনি যদি আগামী নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী থাকেন, তবে নির্বাচনে নিরপেক্ষ হতে পারবেন বলে ধারণা করা যাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় থাকতেই আর এক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত কোনো প্রেসিডেন্টই ক্ষমতায় থেকে ভোট কারচুপি করার কথা ভাবতে পারেননি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগে নিয়ম ছিল কোনো ব্যক্তি যতবার ইচ্ছা প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারবেন। কিন্তু এখন আইন করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি দুইবারের বেশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির গণতন্ত্রে প্রেসিডেন্ট হলেন দেশের প্রশাসক (Executive)কিন্তু আমাদের গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রী হলেন প্রধান শাসনকর্তা। আমাদের গণতন্ত্রে এমন কোনো আইন নেই যে, দুইবারের বেশি কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী (অর্থাৎ ১০ বছরের বেশি) হতে পারবেন না। রাজনীতির প্রশ্ন ক্ষমতার প্রশ্ন। ক্ষমতা মানুষকে জেদি, কর্তৃত্বপ্রবণ এবং স্বার্থপর করে তুলতে চায়। রাজনীতিতে তাই ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ হয়ে উঠেছে সব দেশেই বাঞ্ছিত।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads